Home Blog Page 11

বাংলার দূর্গা পুজোর ইতিহাস

দেবী দূর্গা বাংলার প্রধান আরাধ্যা দেবী বললে বেশি বলা হয়না। আর কিছুদিন পরই শুরু হবে দেবী পক্ষ। তার আগের এই সময়টায় আমি ধারাবাহিক ভাবে বাংলার বনেদি বাড়ি গুলির দূর্গা পুজোর কথা লিখবো। থাকবে দূর্গাপুজোর নানা ইতিহাস। পৌরাণিক ঘটনা এবং একাধিক বিখ্যাত পুজোর বিভিন্ন জানা অজানা তথ্য। আজ শুরুতে কিভাবে বাংলায় দূর্গা পুজো শুরু হলো সেই কথা জানাবো।
দেবী দুর্গার মহিমা বর্ণিত হয়েছে মার্কন্ডেয় পুরাণ এবং শ্রীশ্রী চন্ডীতে।শ্রীশ্রী চন্ডীতে বলা হয়েছে তিনি জগত্পালিকা আদ্যাশক্তি ও সনাতনী।মহাভারত, বিষ্ণু পুরাণ, দেবী পুরাণ, ভাগবত পুরানেও দেবীর গুনকীর্তন আছে, মহাভারতের বিরাটপর্বে ও ভীষ্মপর্বেও দুর্গাস্তব আছে। ভীষ্মপর্বে ত্রয়োবিংশ অধ্যায়ে অর্জুন দেবী দুর্গার স্তবপাঠ করেন। বিষ্ণু পুরাণের পঞ্চম অংশে দেবকীর গর্ভে দুর্গার জন্মানোর বৃত্তান্ত আছে।
মহাকাব্য রামায়ণ অনুসারে শারদীয়া দুর্গাপুজো বা অকাল বোধনের সূচনা করেছিলেন শ্রীরামচন্দ্র। তিনি রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করার জন্য লংকা গমন করার আগে অকাল বোধন করে শরত্কালে দুর্গার পুজো করেন। রামচন্দ্রের আরাধনায় সন্তুষ্ট হয়ে তাকে বর দেন দেবী। শ্রীশ্রী চন্ডীতে বর্ণিত আছে প্রাচীনকালে রাজা সুরথ ও সমাধি বৈশ্য সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে বনে যান|সেখানে তারা এক মুনির দর্শন পান|মেধা মুনি নামে ওই ঋষি সব শোনার পর তাঁদের বলেন যে “বিষ্ণুর যে মহামায়া শক্তি তারই প্রভাবে এই রকম হয়। সেই মহামায়া প্রসন্না হলে মানবের মুক্তি লাভ ঘটে ” মুনির উপদেশ পেয়ে সুরথ ও সমাধি মাটির প্রতিমা গড়ে ৩ বছর কঠোর তপস্যা করেন তারপর পর দেবী তুষ্ট হয়ে তাদের দেখা দেন এবং মনোবাঞ্ছনা পূর্ণ করেন।পরবর্তীতে বসন্তকালকে দুর্গাপূজার উপযুক্ত সময় নির্ধারণ করে তারা বাসন্তী পূজার প্রচলন করেন।
বাংলায় কবে ও কারা প্রথম দূর্গাপুজোর প্রচলন করেন তা নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে। তবে কিছু ঐতিহাসিক তথ্য অনুসারে ১৫০০ সালে বাংলায় প্রথম দূর্গাপুজো হয়। দিনাজপুর ও মালদহের জমিদাররা প্রথম দূর্গাপুজোর শুরুর পরিকল্পনা নেন। কারও মতে, তাহেরপুরের রাজা কংসনারায়ণ প্রথম সাড়ম্বের দূর্গাপুজো শুরু করেন।আবার অনেকে মনে করেন নদিয়ার রাজা কৃষ্ণ চন্দ্রের উত্তরসূরি ভবানন্দ ১৯০৬ সালে প্রথম দুর্গা পুজা করেন
বারোয়ারি পুজো সম্পর্কে বলা হয়ে একবার হুগলীর গুপ্তি পাড়ায় এক ধনি ব্যাক্তির বাড়ির দুর্গা পুজায় অংশ নিতে না পেরে বারো জন মানুষ রাগ করে সেখান থেকে বেড়িয়ে আসেন এবং নিজেরাই চাঁদা তুলে শুরু করেন দুর্গা পুজা । এই বারো জন বন্ধুর মাধ্যমে শুরু হয় বাংলার বারোয়ারী দুর্গা পুজা|সেই পুজোয় ক্রমশ শাখা প্রশাখা বিস্তার করে আজকের থিম পুজোর রুম নিয়েছে|
চলতে থাকবে এই ধারাবাহিক লেখনী।পরের পর্বে দেবী দূর্গা সংক্রান্ত আরো অনেক পৌরাণিক তথ্য, ইতিহাস এবং আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা নিয়ে ফিরে আসবো|পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

বিশেষ পর্ব – দেবী কৌশিকী 

বিশেষ পর্ব – দেবী কৌশিকী

 

পন্ডিতজি ভৃগুর শ্রীজাতক

 

জ্যোতিষ শাস্ত্রে বিশেষ করে তন্ত্র শাস্ত্রে

কৌশিকী অমাবস্যা একটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ তিথি।কৌশিকী অমাবস্যার ঠিক প্রাক্কালে আজকের এই বিশেষ পর্বে আসুন জেনে নিই কে এই দেবী কৌশিকী এবং শাস্ত্রে তার সম্পর্কে কি কি তথ্য আছে।

 

শ্রীশ্রীচণ্ডীতে বর্ণিত মহা সরস্বতী দেবীর কাহিনীতে বলা আছে পুরাকালে একবার শুম্ভ ও নিশুম্ভ কঠিন সাধনা করে ব্রহ্মাকে তুষ্ট করলে চতুরানন তাঁদের বর দেন যে কোনও পুরুষ তাঁদের বধ করতে পারবেন না৷ শুধু কোনও অ-যোনি সম্ভূত নারী তাঁদের বধ করতে পারবেন। অর্থাৎ এমন এক নারী, যিনি মাতৃগর্ভ থেকে জন্ম নেননি, তাঁর হাতেই এই দুই অসুর ভাই-এর মৃত্যু হবে। এই বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আবির্ভাব হয় দেবী কৌশিকীর।

 

শাস্ত্রে আছে পূর্ব জন্মে দেবী পার্বতী যখন সতী রূপে দক্ষ যজ্ঞ স্থলে আত্মাহুতি দেন তখন দেবীর গাত্র বর্ণ কালো মেঘের মতো। তাই ভোলানাথ তাঁকে কালিকা ডাকতেন। একদিন দানব ভাইদের দ্বারা পীড়িত ক্লান্ত দেবতারা যখন কৈলাশে আশ্রয় নিলেন, শিব সব দেবতাদের সামনেই পার্বতীকে বললেন, “কালিকা তুমি ওদের উদ্ধার করো।” সবার সামনে ‘কালী’ বলে ডাকায় পার্বতী অত্যন্ত ক্ষুব্ধ, অপমানিত ও ক্রোধিত মনে মানস সরোবরের ধারে কঠিন তপস্যা করলেন।

 

তপস্যান্তে শীতল মানস সরোবরের জলে স্নান করে নিজের দেহের সব কালো রঙ পরিত্যাগ করলেন ও পূর্ণিমার চাঁদের মতো গাত্র বর্ণ ধারণ করলেন।দেবীর দেহ হতে নির্গত ওই কালো কোশিকাগুলি থেকে এক অপূর্ব সুন্দর কৃষ্ণবর্ণ দেবীর সৃষ্টি হয়। ইনি দেবী কৌশিকী| এই কৌশিকী অমাবস্যার তিথিতেই দেবীর উৎপত্তি হয় এবং তিনি শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করেন। তাই এই অমাবস্যার নাম কৌশিকী অমাবস্যা|

 

মৎস পূরাণ এবং মার্কন্ডেয় পূরাণে বলা হয়,অত্যাচারি অসুর দ্বয় শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করতে দেবী পার্বতী সাধনা শুরু করেন। তপস্যার পর, নিজের শ্বেতশুভ্র গায়ের রঙ পরিত্যাগ করে ,উজ্জ্বল কালো বর্ণে ভয়াল রূপ ধারণ করেন দেবী। সেই রূপে দেবী পার্বতী হয়ে ওঠেন ‘কৌশিকী’। আর এই কৌশিকীই অমাবস্যার এক বিশেষ কালক্ষণে দেবী বধ করেন শুম্ভ ও নিশুম্ভ নামের দুই অসুরকে। সেই কালক্ষণকে স্মরণ করেই অনুষ্ঠিত হয় কৌশিকী অমাবস্যার পূজা।

 

সহজ ব্যাখ্যায় কৌশিকী অমাবস্যা অশুভ শক্তির উপর শুভ শক্তির জয়কে উদযাপন করার একটি ধর্মীয় উৎসব যা মহাসমারোহে পালিত হয়ে আসছে দেশের শক্তি উপাসকদের দ্বারা যুগ যুগ ধরে|

 

শাস্ত্র মতে গ্রহ দোষ খণ্ডনের ক্ষেত্রে এই অমাবস্যা অন্যান্য সব অমাবস্যার থেকে অনেকটাই এগিয়ে।

কারন কৌশিকী অমাবস্যার একটি বিশেষ মুহূর্তে সাধকের করা তন্ত্র সাধনা সব দিক দিয়ে সফল হয় এবং দেবী কৌশিকীর আশীর্বাদে সব

অন্ধকার দুর হয়।

 

যারা কৌশিকী অমাবস্যায় গ্রহ দোষ খণ্ডন করাতে চান এখনো যোগাযোগ করতে পারেন। তারাপীঠে এবং হৃদয়েস্বরী সর্বমঙ্গলা মায়ের মন্দিরে থাকছে বিশেষ হোম যজ্ঞর ব্যবস্থা।

 

আবার পরের পর্বে কৌশিকী অমাবস্যা সংক্রান্ত কিছু শাস্ত্রীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা থাকবে।

থাকবে জ্যোতিষ এবং তন্ত্র জগৎ নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – জহুরা কালী

কালী কথা – জহুরা কালী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

বাংলার অন্যতম প্রাচীন কালী মন্দির জহুরা কালীর মন্দির মালদায় অবস্থিত এই কালী মন্দিরে অধিষ্টান করছেন মা জহুরা।আজকের কালী কথায় এই দেবীর মাহাত্মা বর্ণনা করবো।

 

মালদায় ইংরেজবাজার থানা এলাকায় একটি প্রাচীন আমবাগানের মধ্যে রয়েছে জহুরা কালী মন্দির।

 

শোনো যায় এক কালে এই অঞ্চলে ছিলো ঘন অরণ্য|ডাকাতরাই একপ্রকার শাসন করতো এই এলাকা এবং এই দেবী এক সময়ে ছিলেন ডাকাতদের আরাধ্যা। এখানে দেবী চণ্ডীর পুজো করে ডাকাতরা যেত ডাকাতি করতে। ডাকাতি করে প্রচুর ধনরত্ন আনত তারা, তারপর সেগুলোকে এখানেই মাটির তলায় রাখত। সেই ধনরত্নের ওপরই দেবীমূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয় যেহেতু ধনরত্নকে হিন্দিতে বলে ‘জওহর’। দেবীমূর্তির নিচে প্রচুর ধনরত্ন রাখা থাকত বলেই এখানে দেবী চণ্ডী ‘জহরা’ বা ‘জহুরা’ নামে বিখ্যাত|

 

আজও কিছু ইতিহাস বিদ মনে করেন এই দেবীর পুজোর সূচনা হয়েছিলো সেন বংশের রাজা বল্লাল সেনের আমলে আবার মন্দিরের গায়ে যে পাথরের ফলক আছে তা থেকে অনুমান করা যায়,আজ থেকে তিনশো বছর আগে উত্তরপ্রদেশের কোনো এক মাতৃ সাধক স্বপ্নাদেশ পেয়ে এখানে দেবী জহরা চণ্ডীর বেদি স্থাপন করেছিলেন|

 

কথিত আছে এক কালে এখানে দেবীর পূর্ণ অবয়ব মূর্তি ছিলো তবে বিদেশী শত্রুর আক্রমণের ভয়ে তা মাটির নিচে লুকিয়ে ফেলেন পুরোহিতরা|

বর্তমানে মন্দিরের অভ্যন্তরে লাল রঙের ঢিবির ওপর রয়েছে এক মুখোশ এবং ঢিবির দু’পাশে আরও দু’টি মুখোশ দেখা যায়। এছাড়া গর্ভগৃহে আছে শিব আর গণেশের মূর্তি|

 

দেবী জহুরা চন্ডিরই রূপ তিনি অত্যন্ত জাগ্রত ও প্রসিদ্ধ তার পুজো উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চল ছাড়াও বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ সমবেত হন এই মন্দির প্রাঙ্গনে|

 

এখানে বৈশাখ মাসের মঙ্গল ও শনিবার থাকে বিশেষ পুজোর আয়োজন|উল্লেখযোগ্য বিষয় অন্যান্য কালীমন্দিরের মতো এখানে রাত্রিবেলা কোনো পুজো এখানে হয় না পুজো হয় দিনে|

 

আজ লেখা এখনেই শেষ করলাম। শুধু আরো একবার মনে করিয়ে দিই।আগামী ২২ এ আগস্ট কৌশিকী অমাবস্যা। যারা তন্ত্র মতে গ্রহের প্রতিকার চান তাদের জন্য এটি শ্রেষ্ঠ সময়।

ফিরে আসবো কালী কথার পরবর্তী পর্ব নিয়ে। যথা সময়ে।পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – আদ্যা কালী

কালী কথা – আদ্যা কালী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

দক্ষিনেশ্বর কালী মন্দিরের কাছেই রয়েছে আদ্যাপীঠ কালী মন্দির যে মন্দির কে কেন্দ্র করে রয়েছে অনেক জনশ্রুতি এবং কিংবদন্তী। আজকের কালী কথায় এই আদ্যা কালীমাকে নিয়ে আলোচনা করবো।

 

অন্নদা ঠাকুর বা শ্রী অন্নদাচরণ ভট্টাচার্য এই আদ্যাপীঠ কালী মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা।

যৌবনে লেখাপড়ার জন্য কলকাতায় এসেছিলেন। কলকাতায় থাকাকালীন শ্রীরামকৃষ্ণের স্বপ্ন দেখেন। বাংলাদেশের বাড়িতে মা-বাবার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েও দেখেন সেই

শ্রীরামকৃষ্ণের স্বপ্ন।

 

ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব তার ভক্ত তথা শিষ্য অন্নদা ঠাকুরকে নির্দেশ দিয়ে ছিলেন কলকাতার একটি দীঘি থেকে দেবী মূর্তি উদ্ধার করে নিয়ে এসে দক্ষিনেশ্বর এর অদূরে আরিয়া দহে এক মন্দির নির্মাণ করতে এবং শর্ত ছিলো বারো বছরের মধ্যে মন্দির নির্মাণ সম্পন্ন করতে হবে না হলে সর্ব সাধারণের জন্য মন্দিরের দ্বার উন্মুক্ত থাকবেনা|

 

অন্নদা ঠাকুর আদেশ পালন করে ছিলেন কিন্তু বারো বছরের জায়গায় পঁয়ত্রিশ বছর লেগে ছিলো মন্দির নির্মাণ সম্পূর্ণ করতে।সেই মন্দির হলো আজকের আদ্যাপীঠ মন্দির।

যেহেতু বারো বছরে মন্দিরের কাজ সম্পন্ন হয়নি তাই আজও সর্ব সাধারণের জন্য মুল মন্দিরের দ্বার বন্ধই আছে|

 

শোনা যায় এক রাম নবমীর রাতে মা আদ্যা শক্তি অন্নদা ঠাকুর কে দর্শন দিয়েছিলেন এবং আদ্যা স্তোত্র পাঠ করে শুনিয়েছিলেন এবং অন্নদা ঠাকুর এই আদ্যা স্তোত্র লিখে রাখেন যা আজও এই মন্দিরে স্বযত্নে রাখা আছে এবং নিয়মিত তা পাঠ করা হয় মন্দিরে।

 

মাত্র আটত্রিশ বছর বয়সে পুরীতে প্রয়াত হন অন্নদাঠাকুর।তবে তার দ্বারা শুরু হওয়া কর্মকান্ড আজও তার তৈরি প্রতিষ্ঠান নিষ্ঠার সঙ্গে করে চলেছে।অন্নদা ঠাকুর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ সংঘ মন্দিরের পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে।

প্রতি বছর আদ্যা নবমী তে মন্দিরে বিশেষ পূজা এবং কালী পূজা উপলক্ষে মহা পূজার আয়োজন করা হয়|প্রতিদিন দেবী কে সাড়ে বাইশ সের চালের অন্ন ভোগ ঠাকুর রামকৃষ্ণদেবকে সাড়ে বারো সের চালের অন্ন ভোগ দেয়া হয় আদ্যাপিঠে|

 

আদ্যা শক্তি যখন তার ভক্তকে কৃপা করেন এবং তাকে দিয়ে বিশেষ কাজ করাবেন স্থির করেন তখন সেই ভক্ত হয়ে ওঠেন নিমিত্ত মাত্র সমস্ত কাজ অলৌকিক উপায়ে পরিচালিত হতে থাকে। অন্নদা ঠাকুর তার বড়ো প্রমান।

 

আসন্ন কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষে চলতে থাকবে কালী কথা । ফিরবো

আগামী পর্বে আরো একটি কালী কথা নিয়ে।

যারা কৌশিকী অমাবস্যায় শাস্ত্র মতে গ্রহ দোষের প্রতিকার চান তারা এই সময়ে

যোগাযোগ করতে পারেন।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – নৈহাটির বড়মা

কালী কথা – নৈহাটির বড়মা

 

পন্ডিতজি ভৃগুর শ্রী জাতক

 

কৌশিকী অমাবস্যার প্রাক্কালে কালী কথায় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের নানা প্রসিদ্ধ কালী মন্দির গুলিনিয়ে ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা করছি।

আজ বলবো নৈহাটীর বড়মার কথা।

 

এই অঞ্চলের বাসিন্দা হওয়ায় নিজে আমি শৈশব থেকেই নৈহাটির বড়োমার পুজো দেখে আসছি এই বড়ো মাকে নিয়ে বিশেষ কৌতূহল ও তার প্রতি একটা আলাদা রকমের বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধা রয়েছে আমার অন্তরে। বর্তমানে নৈহাটীর বড় মার যে বিশ্ব জোড়া খ্যাতি তার অনেক কারন আছে।

 

শোনা যায় আজ থেকে প্রায় একশ বছর আগে এই বড়মার পুজোর প্রচলন করেছিলেন ভবেশ চক্রবর্তী নামে এক নিষ্ঠাবান মাতৃ সাধক,একবার তিনি নদিয়ার কৃষ্ণনগরে রাস উৎসবে গিয়ে সেই সময় বেশি উচ্চতাবিশিষ্ট দেবী মূর্তি দর্শন করেছিলেন তারপরই ফিরে এসেছে তিনি নৈহাটিতে বড়মা কালী মূর্তি তৈরি করে পুজো করার সিদ্ধান্ত নেন এবং তার ইচ্ছায় ও প্রচেষ্টায় সূচনা হয়ে এই বড়মার পুজো|

 

বড়মার পুজো শুধু নৈহাটি নয়, সারা উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা তথা বাংলার বৃহত্তম কালী পুজোগুলোর মধ্যে অন্যতম|এখানে কালী মূর্তি ১৪ হাত লম্বা অর্থাৎ ২১ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট হয়|

 

প্রত্যেক বছর লক্ষ্মী পুজোর দিন কাঠামো পুজোর মধ্যে দিয়েই বড়মার পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয় এবং রীতি অনুসারে বড়মার পুজো শুরু হওয়ার পরই অন্যান্য বারোয়ারি কালী পুজোগুলি শুরু হয় এবং

একইভাবে বড়মার বিসর্জনের পরই নৈহাটিতে অন্যান্য কালী প্রতিমার বিসর্জন হয়|

 

কথিত আছে নৈহাটির বড়মার কাছে শ্রদ্ধা ভরে কিছু প্রার্থনা করলে সেই মনস্কামনা পূর্ণ করেন দেবী তাই প্রতি বছর কালী পুজো উপলক্ষে এখানে অসংখ্য মানুষ আসেন তাদের মনোস্কামনা নিয়ে|

এছাড়াও দেশ বিদেশ থেকে বহু ভক্তরা আসেন বড়মার পুজো দেখতে|

 

কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষে আগামী দিনে আরো অনেক কালী পুজো ও কালী মন্দিরের কথা নিয়ে আমিও আবার আপনাদের সামনে ফিরে আসবো|কালী কথায়। যারা কৌশিকী অমাবস্যায় শাস্ত্র মতে গ্রহ দোষ খণ্ডন করাতে চান নির্দ্বিধায় যোগাযোগ করতে পারেন।পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – নিরিশা কালী

কালী কথা – নিরিশা কালী

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

সামনেই কৌশিকী অমাবস্যা। কৌশিকী অমাবস্যা মানেই তারাপীঠ এবং তারাপীঠ মানেই বীরভূম। আর এই বীরভূম বিখ্যাত একাধিক শক্তি পীঠের একসাথে অবস্থানের জন্য।

তবে বীরভূমে সতীপীঠ ছাড়াও আছে কয়েকটি জাগ্রত কালী মন্দির, যে তালিকায় জনপ্রিয় নিরিশা মায়ের মন্দির আজকের কালী কথায় এই কালী মন্দির নিয়ে আলোচনা করবো।

আজ থেকে প্রায় ৩০০ বছর আগে এই নিরিশা গ্রাম ছিল জঙ্গল। জনবসতি প্রায় ছিল না বললেই চলে। সেখানেই আশপাশের গ্রামবাসীরা এক অমাবস্যার রাতে জঙ্গলের মধ্যে আলো জ্বলতে দেখেন।পরে দেখা যায়, এক সাধক সেখানে সাধনা করছেন। এই সাধক তাঁর রীতিনীতি মেনে পুজো শুরুর জন্য স্থানীয় বন্দোপাধ্যায় পরিবারকে পুজোর দায়িত্ব দেন। পরবর্তীতে পুজোর ভার পান ওই গ্রামেরই রায় পরিবার।আজও এই দুই পরিবারের সদস্যরা বংশ পরম্পরায় পুজো করে আসছে।

শুরুর দিকে পঞ্চমুণ্ডির আসনে মা কালীর আরাধনা করা হত। এখন প্রত্যেক বছর মন্দির থেকে কিছুটা দূরে মায়ের মূর্তি তৈরি হয়। পুজোর দিনে চক্ষুদানের পরে মুহূর্তের মধ্যেই মাকে মন্দিরে এনে প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই পুজো উপাচার দেখতে আজও এখানে গভীর রাতেও ভিড় করেন
বহু মানুষ।

আশ্চর্যজনক ভাবে প্রতি বছর প্রতিমা তৈরির কারিগর বদলে গেলেও বদলায় না মায়ের মুখমণ্ডল। প্রত্যেক বছর মায়ের রূপ একই থাকে, কোনও বছরই প্রতিমার উচ্চতা ও ওজনের পরিবর্তন হয় না।এই সব অলৌকিক ঘটনা বলেই সবার বিশ্বাস।

আজও নিরিশা কালী মায়ের উপরে অটুট ভক্তি এই অঞ্চলের মানুষের।সবার সব আপদ বিপদে মা নিরিশাই প্রধান ভরসা। মা নিরিশা কাউকেই খালি হাতে ফেরান না বলেই স্থানীয়দের বিশ্বাস।

কৌশিকী অমাবস্যা হলো গ্রহ দোষ খন্ডনের আদর্শ সময়।পাশাপাশি কালী কথা এবং কালী মাহাত্ম বর্ণনার এটা শ্রেষ্ট সময়। তাই ফিরে আসবো পরবর্তী কালী কথা নিয়ে। থাকবে বাংলার অন্য এক প্রাচীন মন্দিরের ইতিহাস এবং অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

জন্মাষ্টমীর আধ্যাত্মিক গুরুত্ব

জন্মাষ্টমীর আধ্যাত্মিক গুরুত্ব

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজ জন্মাষ্টমীর শ্রী কৃষ্ণের জন্ম তিথি।হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, সৌর ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে যখন রোহিণী নক্ষত্রের প্রাধান্য দেখা যায় তখন জন্মাষ্টমী পালিত হয়। |

 

দেবকী ও বাসুদেবের সন্তান কৃষ্ণ|তিনি বিষ্ণুর অবতার আবার মতান্তরে তিনি স্বয়ং ভগবান।তার জন্ম বৃত্তান্ত ও ইতিহাস আমরা কম বেশি প্রায় সকলেই জানি|তাও আজ আরো একবার তাকে নতুন করে স্মরণ করবো তার লীলার মাধ্যমে|

 

ভাদ্রমাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে মথুরায় জন্ম হয় তাঁর। সেই সময় মথুরার রাজা ছিলেন দেবকীর ভাই কংস। তাঁকে ভবিষ্যবাণী করা হয়েছিল, দেবকী ও বাসুদেবের অষ্টম পুত্র তাঁকে হত্যা করবে।

 

কথিত আছে, কংস তাঁর বোন ও ভগ্নি-পতীকে ভালোবাসতেন। কিন্তু, তাঁদের অষ্টম পুত্র তাঁকে হত্যা করবে, এই ভবিষ্যবাণী শোনার পর তাঁদের সব সন্তানকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন কংস। প্রথম ছয় সন্তানকে হত্যা করতে সক্ষমও হন। সপ্তম সন্তানের হদিশ পাননি কংস। অষ্টম সন্তান, অর্থাৎ কৃষ্ণের জন্মের সময় গোটা রাজ্য ঘুমিয়ে পড়েছিল। বাসুদেব গোপনে সেই সন্তানকে বৃন্দাবনের নন্দ বাবা ও যশোধাকে হস্তান্তরিত করেন।তার পরিবর্তে এক কন্যাসন্তানকে নিয়ে আসনে বাসুদেব ও দেবকী। যাতে তাঁদের অষ্টম সন্তান কৃষ্ণের কোনও খোঁজ না পান কংস। ওই কন্যাসন্তানকে নিয়ে এসে অসুরের হাতে তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু, তিনি যখন তাকে হত্যা করতে উদ্যত হন, সেই সময় ওই কন্যাসন্তান দেবী দুর্গায় রূপ ধারণ করেন। তিনি কংসকে সব কুকর্মের জন্য সতর্ক করে দেন।এদিকে বৃন্দাবনে বেড়ে ওঠে কৃষ্ণ। সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর কোনও ধারণা ছিল না। যখন আরও বড় হয়ে ওঠেন, গোটা বিষয়টি তিনি শোনেন। তার পর যথা সময়ে মথুরা চলে আসেন। এখানে এসে কংসকে হত্যা করেন। দেখা হয় মা বাবা দেবকী ও বাসুদেবের সঙ্গে।

 

প্রথমে গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজ ও পরবর্তীতে ইসকনের মাধ্যমে সারা বিশ্বে আজ বিরাট ভাবে ও ব্যাপক উদ্দীপনায় পালিত হয় জন্মাষ্টমী|

 

ভগবান কৃষ্ণের জন্মতিথিতে মথুরা ও বৃন্দাবনের বিভিন্ন মন্দির ফুল, মালা ও অন্যান্য সামগ্রীতে সাজিয়ে তোলা হয়। বিশ্বাস অনুযায়ী, মথুরায় মধ্যরাতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন কৃষ্ণ। বেড়ে ওঠেন বৃন্দাবনে। যেহেতু, মধ্যরাতে তাঁর জন্ম,তাই শিশু কৃষ্ণর মূর্তি স্নানের পর দোলনায় স্থাপন করা হয়। কৃষ্ণর জীবন-কথা নিয়ে বিভিন্ন রকম প্রদর্শনীতে যোগ দেন ভক্তরা। তুলে ধরা হয় তাঁর সাহসিকতা, বন্ধুত্ব এবং রাধার সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কের কথা। এই প্রদর্শনীকে বলা হয়, রাসলীলা।

 

সবাইকে জানাই জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা। সবাই ভালো থাকুন। পড়তে থাকুন।ফিরে আসবো পরের পর্বে কালী কথা নিয়ে। জয় শ্রী কৃষ্ণ।

স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন

স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

স্বাধীনতা দিবস পালন হয় দেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে|এই তিরঙ্গা জাতীয় পতাকার ও একটা ইতিহাস আছে|এই পতাকা সৃষ্টির সাথে জড়িয়ে আছে অনেক ঘটনা ও অনেক গল্প। আসুন আজ সংক্ষেপে জেনে নিই আমাদের জাতীয় পতাকার ইতিহাস।

স্বাধীনতার বছর অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের ২২ জুলাই গণপরিষদের একটি অধিবেশনে আমাদের জাতীয় পতাকার বর্তমান রূপটি ভারত অধিরাজ্যের সরকারি পতাকা হিসেবে গৃহীত হয়েছিল|

স্বাধীনতারা কিছু বছর আগে আগে ১৯১৬ সালে অধুনা অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া একটি সাধারণ জাতীয় পতাকার রূপদানের চেষ্টা করেন|অনেক ঘটনা ও টানা পোড়েনের পর তিনিই হন দেশের জাতীয় পতাকার স্রষ্টা বা রূপকার|

ভেঙ্কাইয়া এই পতাকার জন্য মহাত্মা গান্ধীর অনুমোদন চাইতে গেলে গান্ধীজি তাঁকে “ভারতের মূর্তপ্রতীক ও দেশের সকল অমঙ্গলহারী” চরকার চিত্র পতাকায় যোগ করার পরামর্শ দেন গান্ধীজি|যদিও তা বাস্তবায়িত হয়নি|

পরবর্তীকালে ১৯৩১ সালের করাচি কংগ্রেস অধিবেশনে পতাকা সংক্রান্ত সর্বশেষ প্রস্তাবটি পাস হয়। পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া অঙ্কিত একটি ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা গৃহীত হয়। এই পতাকায় আনুভূমিক গেরুয়া, সাদা ও সবুজের মধ্যস্থলে একটি চরকা খচিত ছিল। গেরুয়া ত্যাগ; সাদা সত্য ও শান্তি এবং সবুজ বিশ্বাস ও প্রগতির প্রতীক তথা চরকা ভারতের অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন ও দেশবাসীর শ্রমশীলতার প্রতীক হিসেবে গৃহীত হয়।

ওই বছরই ২ রা এপ্রিল কংগ্রেস কর্মসমিতি একটি সাত সদস্যের পতাকা সমিতি গঠন করে। পতাকায় ব্যবহৃত তিনটি রং নিয়ে আপত্তি আছে ওঠে কারণ এই রংগুলি সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে চিহ্নিত এই মর্মে একটি প্রস্তাব পাস হয়। পতাকার রঙ আবার পরিবর্তন করা হয়|আবার সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হচ্ছে এই অভিযোগের ভিত্তিতে পতাকার এই রঙ বাতিল করা হয়|

স্বাধীনতা প্রাপ্তির কয়েকদিন পূর্বে ভারতের জাতীয় পতাকার বিষয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য গণপরিষদ স্থাপিত হয় এবং শ্রী রাজেন্দ্র প্রসাদের নেতৃত্বে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে। এই কমিটির সদস্যরা ছিলেন মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, সরোজিনী নাইডু, চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী, কে এম মুন্সি ও বি আর আম্বেডকর। পতাকা কমিটি স্থাপিত হয় ১৯৪৭ সালের ২৩ জুন।

এই কমিটি পতাকা নিয়ে আলোচনা শুরু করে। তিন সপ্তাহ পরে ১৯৪৭ সালের ১৪ জুলাই তাঁরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের পতাকাটি উপযুক্ত সংস্কারের পর সব দল ও সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণীয় করে তুলে জাতীয় পতাকা হিসেবে গৃহীত হবে। পরে এমন প্রস্তাবও গৃহীত হয় যে ভারতের জাতীয় পতাকার কোনো সাম্প্রদায়িক গুরুত্ব থাকবে না। চরকার পরিবর্তে সারনাথ স্তম্ভ থেকে ধর্মচক্র টি গৃহীত হয় পতাকায়।এই পতাকাই ভারতের জাতীয় পতাকা রূপে স্বীকৃত হয় এবং ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট স্বাধীন ভারতে প্রথমবার এই পতাকাটি উত্তোলিত হয়|

স্বাধীনতা দিবস পালন করুন এবং অবশ্যই জাতীয় পতাকাকে যথাযত সন্মান দিন। সবাইকে স্বাধীনতা দিবসের অনেক শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন। জয় হিন্দ। ভারত মাতার জয়।

কালী কথা – পুঁটে কালীর পুজো

কালী কথা – পুঁটে কালীর পুজো

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

বাংলা মানেই কালী ক্ষেত্র। বাংলার প্রায় সব জেলায় রয়েছে কিছু প্রাচীন ঐতিহাসিক কালী মন্দির।তাদের নিয়ে রয়েছে অনেক কিংবদন্তী। এমনই সব মন্দিরের কথা লিখছি কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষে এই কালী কালী কথায়।
আজ কালী কথায় আপনাদের কলকাতার এক অতি প্রাচীন কালী মন্দিরের কথা জানাবো।

কলকাতার বড়ো বাজার অঞ্চলে কালীকৃষ্ণ ঠাকুর স্ট্রিটে অবস্থিত বিখ্যাত পুঁটে কালী মন্দির। ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ এবং প্রাচীন।তখন ভারত শাসন করছেন সম্রাট আকবর। কলকাতা তখন ও শহর হয়ে ওঠেনি । উত্তর কলকাতার আজকের কালীকৃষ্ণ ঠাকুর স্ট্রীট তখন ছিলো গঙ্গা তিরবর্তী এক জনপদ।চারিপাশ ছিল জঙ্গলে ভর্তি।ডাকাত রা নরবলী দিয়ে ডাকাতি করতে যেতো।সেই সময় থেকে হয়ে আসছে পুটে কালীর পুজো।

বর্তমান মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন তান্ত্রিক মানিকচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রথম পাকা মন্দির স্থাপিত হয়েছিল ১৫৫৮ খ্রিষ্টাব্দে|যদিও প্রচলিত জনশ্রুতি অনুসারে এই দেবী মূর্তি এখানে আরো আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত ছিলো|

শোনা যায় তান্ত্রিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বর্ধমানের তৎকালীন মহারাজার দুরারোগ্য ব্যাধি সারিয়ে দিলে মহারাজা তাঁকে ‘রাজা’ উপাধিতে ভূষিত করেন এবং লক্ষ ব্রাহ্মণ ভোজন করান। দেবীর বর্তমান সেবাইতরা রাজা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৌহিত্র বংশ।

১৯৩০ সালে মন্দিরের সংস্কার করা হয়মন্দিরটি চারচালা ও তিনটি চূড়াবিশিষ্ট। চূড়াগুলির উপর চক্র, ত্রিশূল ও পতাকার চিহ্ন আছে। মন্দিরটির তলায় একটি পাতালকক্ষ আছে|মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত কালীমূর্তিটি ছয় ইঞ্চি লম্বা|

মন্দির এবং দেবী মূর্তির এই অদ্ভুত নামকরণ প্রসঙ্গে দুরকম ব্যাখ্যা রয়েছে|কেউ কেউ মনে করেন পুঁটি” অর্থে ছোটো মেয়ে বোঝায়|এই মন্দিরের কালীমূর্তিটির উচ্চতা মাত্র ছয় ইঞ্চি এত ছোটো মূর্তি বোঝাতেই তাই “পুঁটিকালী” বা নামটির প্রচলন হয় এবং পরবর্তীতে লোক মুখে তা বিকৃত হয়ে “পুঁটেকালী” হয়ে যায়|

নামের দ্বিতীয় ব্যাখ্যা অনুসারে একবার মন্দিরে হোম চলা কালীন গঙ্গার খাদ থেকে একটি পুঁটিমাছ লাফিয়ে হোমকুণ্ডের মধ্যে পড়ে যায়|পড়ে অর্ধদগ্ধ মাছটিকে তুলে জলে ফেলে দিতেই সেটি আবার জীবন্ত হয়ে হয়ে ওঠে এবং অলৌকিক ঘটনার জন্য দেবীর নাম হয় “পুঁটিকালী” বা “পুঁটেকালী”|

পুঁটে কালীর মন্দিরে পূজা হয় তন্ত্রমতে। দীপান্বিতা কালীপূজার রাতে প্রতিমার স্বর্ণবেশ হয় এবং ভৈরবী পূজাও অনুষ্টিত হয়|এখানে আজও কালী পূজা উপলক্ষে কুমারী পূজা হয়|এছাড়াও কৌশিকী অমাবস্যাসহ বিশেষ বিশেষ তিথিতে ছাগ বলীর ও ব্যবস্থা করা হয়|দেবীর উদেশ্যে আমিষ ও নিরামিষ দু রকম ভোগ ই নিবেদিত হয়|লক্ষণীয় বিষয় এই মন্দিরে দেবী কালীর পাশে দেবী শীতলার ও পূজা করা হয় নিষ্ঠা সহকারে|

আজকের কালী কথা পর্ব এখানেই শেষ করছি।আবার ফিরে আসবো আগামী পর্বে।পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – শান্তিপুরের মহিষখাগী কালী

কালী কথা – শান্তিপুরের মহিষখাগী কালী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আগামী ২২ এ অগাস্ট কৌশিকী অমাবস্যা। কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষে আজ থেকে আবার শুরু করছি কালী কথা। বাংলার প্রসিদ্ধ সব জাগ্রতা কালী মন্দির এবং কালী পুজো নিয়ে একেকটি পর্বে আলোচনা করবো। আজ শুরু করবো নদিয়ার শান্তি পুরের মহিষখাগী কালী দিয়ে।

 

শান্তিপুর তথা নদিয়ার প্রাচীন কালীপুজোগুলির মধ্যে অন্যতম এই মহিষখাগীর পুজো।দেবীর এই অদ্ভুত নামের কারন এক অলৌকিক ঘটনা।আজ থেকে আনুমানিক সাড়ে পাঁচশো বছর আগে শুরু হয় এই পুজো।বাংলায় তখন নবাবী আমল চলছে। নদীয়া রাজা কৃষ্ণচন্দ্র তখন সিংহাসনে।শান্তি পুরে এক তান্ত্রিক পঞ্চমুণ্ডির আসনে বসে সাধনা করতে করতে মায়ের দর্শন পান।স্বপ্নে দেবী সেই তান্ত্রিককে মহিষের রক্ত দিয়ে তাঁকে পুজো করতে নির্দেশ দেন। অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হয় সেই নির্দেশ।সেই থেকেই দেবীর নাম এখানে ‘মহিষখাগী’।

 

দেবীর কাছে করা সব মনোস্কামনা সত্যি হয় এই কথা শুনে এক বার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র আটটি মহিষ বলি দিতে এসেছিলেন মায়ের কাছে। সেই বিশাল কর্মযজ্ঞ শেষ করতে রাত গড়িয়ে ভোর হয়ে যায়। তাই পুজোকে দুই পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছিল। বলির আগে পর্যন্ত পুজোর প্রথম পর্ব। আর বলির পরবর্তী সময়ে পুজোর দ্বিতীয় পর্ব।

 

এই মহিষখাগীর পুজোয় একটি অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য আছে।এখানে বিয়ের রীতি মেনে মহিষখাগীর পুজো হয়। পুজোর তিথিতে মন্দির প্রাঙ্গণ পরিষ্কার করে সেই দিনই ভোররাতেই বিবাহের ন্যায় দধিমঙ্গল হয়। অমাবস্যা শুরু হলে বিয়ের রীতি মেনে পুজো হয়। আবার পরের দিন বাসি বিয়ের রীতিতে পুজো হয়।সকালে পান্তাভাত এবং খয়রা মাছের রান্না দিয়ে ভোগ দেওয়া হয়।পুজো শেষে কাঁধে করে বিসর্জনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় প্রতিমা।

 

এই রীতিই এখানে পাঁচশো বছর ধরে চলে আসছে।স্বপ্নাদেশ পাওয়া ওই তান্ত্রিকের মৃত্যুর পর স্থানীয় একটি ব্রাহ্মণ পরিবার এই পুজোর ভার নেয়। পরবর্তীতে স্থানীয় বাসিন্দারা এই পুজোর দায়িত্ব নেয় এবং তারাই বর্তমানে মহিষখাগী মায়ের পুজো সুন্দর ভাবে পরিচালনা করছে।

 

কৌশিকী অমাবস্যা তন্ত্র মতে গ্রহ দোষ খন্ডনের আদৰ্শ তিথি। যারা এই তিথিতে গ্রহের প্রতিকার করাতে চান যোগাযোগ করতে পারেন।

 

ফিরে আসবো আগামী পর্বে।এমনই কালী কথা নিয়ে।থাকবে এমন সব অলৌকিক ঘটনা।

পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।