Home Blog Page 104

ইন্দ্রের বজ্র এক রহস্যময় অস্ত্র

অসুর ও দেবতা,অর্থাৎ শুভশক্তি ও অশুভ শক্তি | এই দুই শক্তির দ্বন্দ্ব চলছে সেই পুরা কাল থেকে |দেবতা দের বলে বলিয়ান হয়ে একের পর এক অসুর আক্রমণ করে বসেছে দেবতাদের কেই |অধিকার করে নিতে চেয়েছে স্বর্গ মর্ত পাতাল | আবার সেই দেবতা দের ই কৌশলে রক্ষা করতে হয়েছে সৃষ্টি কে ভয়ানক সব অসুরদেয় হাত থেকে|এই দেব অসুরের সংঘর্ষ নিয়ে অসংখ গল্প ও ইতিহাস ছড়িয়ে আছে আমাদের পুরান ও অন্যান্য ধর্ম গ্রন্থ গুলিতে, আছে অনেক রহস্যময় ঘটনার উল্লেখ যার কিছু আমি ইতিমধ্যে পৌরাণিক অসুর কাহিনী তে উল্লেখ করছি, আপনারা চাইলে আমার ওয়েবসাইট এ গিয়ে পড়তে পারেন সে সব|আজ বলবো দেবরাজ ইন্দ্র ও তার রহস্যময় অস্ত্রর কথা, জানাবো কিভাবে সেই অস্ত্র সৃষ্টি হলো ও এক ভয়ানক অসুর কে বধ করা হলো সেই অস্ত্র দিয়ে|হিন্দুধর্মে দেবতাদের অনেক ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করতে দেখা যায়, যেমন – আগ্নেয়াস্ত্র, ব্রহ্মাস্ত্র, গরুড়াস্ত্র, কৌমদকী, নারায়ণাস্ত্র, পশুপতাস্ত্র, শিবধনু, সুদর্শন চক্র, ত্রিশূল, বৈষ্ণবাস্ত্র, বরুণাস্ত্র ও বায়বাস্ত্র।যেকোনো যুদ্ধে, যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি তে ইন্দ্র এর সাথে সদা থাকে তার বজ্র |এই জাতীয় অস্ত্র আর কোনো দেবতা কে ব্যবহার করতে দেখা যায়না, হয় তো তিনি দেবরাজ তাই |অসীম শক্তিশালী এই অস্ত্র বহু শত্রুর বিনাশ করে একাধিক বার সৃষ্টি রক্ষা করেছে এই বজ্র | যেমন শিবের ত্রিশূল, কালীর খরগ, তেমনি ইন্দ্রের বজ্র যেন একে ওপরের পরিপূরক|অসুর তৃষিরা সুর এর সাথে যুদ্ধে ইন্দ্রের বজ্র ধ্বংস হয় |তার পর কি হয়? সেই ঘটনায় পরে আসছি তবে এখন যে দেবাসুর দ্বন্দ্বর কথা বলবো সেখানে ইন্দ্রের বজ্রর এক বিশেষ ভূমিকা আছে |ইন্দ্র এক বৈদিক দেবতা | সনাতন ধর্মে তিনি আর সকল দেবতা দের রাজা, তিনি স্বর্গের শাসক |তার রাণীর নাম শচীদেবী এবং হাতীর নাম ঐরাবত। তার বাহন পুষ্পক রথ। অনেক বিশেষজ্ঞ আবার মনে করেন মূলত ইন্দ্র কোন বিশেষ দেবতা নন, যিনি স্বর্গের রাজা হন তিনিই ইন্দ্র। ইন্দ্রের বিশেষ অস্ত্র হল বজ্র বা বিদ্যুৎ।ইন্দ্র আদতে একজন বিশেষ পদাধিকারী |এই শুভ ও অশুভের যুদ্ধে ইন্দ্রের প্রতিপক্ষ বৃত্যাসুর,তিনি প্রজাপতি ত্বষ্টার পুত্র এক অসুর। ইন্দ্র ত্রিশিরাকে বধ করলে ত্বষ্টা ত্রুদ্ধ হয়ে ইন্দ্রকে বিনষ্ট করার জন্য অগ্নিতে আহুতি দিয়ে বৃত্রাসুরকে উৎপন্ন করেন। ত্বষ্টার নির্দেশে বৃত্রাসুর গিয়ে ইন্দ্রকে আতর্কিতে গ্রাস করেন। বৃত্রাসুর মুখ হাঁ করলে ইন্দ্র অবশ্য দেহ সংকুচিত করে বেরিয়ে আসতে পারলেন, কিন্তু বহুকাল যুদ্ধ করেও বিত্রাসুরকে পারাজিত করতে পারলেন না।অবশেষে ঋষিরা বৃত্রকে ইন্দ্রের সঙ্গে সন্ধি করার প্রস্তাব দিলে বৃত্র সব শুনে বললেন যে, তিনি তাতে রাজি আছেন। কিন্তু ঋষিদের কথা দিতে হবে যে, শুষ্ক বা আদ্র্র বস্তু দ্বারা, প্রস্তর কাষ্ঠ বা অস্ত্রশস্ত্র দ্বারা, দিবসে বা রাত্রিতে ইন্দ্র অথবা অন্যদেবতারা ওঁকে বধ করতে পারবেন না। ঋষিরা তাতে রাজি হলে সন্ধি স্থাপিত হল।অর্থাৎ দেবতা দের সব অস্ত্র সস্ত্র বৃত্যাসুর কে বধ করার ক্ষমতা হারালো|এদিকে ক্রমে বৃত্যাসুর যখন অত্যাচারি হয়ে উঠতে লাগলো এবং এক সময় তাকে বধ করা ছাড়া আর কোনো উপায় রইলো না, কিন্তু অস্ত্র নেই | তখন ঋষিরা একটা উপায় বাতলালেন | কোনো ত্যাগী এবং তেজময় সন্যাসীর অস্থি থেকে অস্ত্র তৈরী করে বৃত্যাসুর কে বধ করতে হবে |কিন্তু কে করবেন এই ত্যাগ? ত্যাগের জন্য সদা প্রস্তুত সেই বৈদিক ঋষি হলেন দধীচি | দেবতারা দধীচীর কাছে তার অস্থি চাইলেন | এই অনুরোধ শুনে দধীচি নামক এই মহুমুনি সাধক আত্মত্যাগ করতে রাজি হন। দধীচিকে হত্যা করা হয় এবং তার দেহের হাড় দিয়ে বৃত্তাসুরকে হত্যার জন্য ইন্দ্রের জন্য একটি বিশেষ বজ্র তৈরি করা হয়|তার পর ইন্দ্র ও বৃত্তাসুরের মধ্যে ভীষণ যুদ্ধ হলো |অবশেষে সেই বজ্র দিয়ে ইন্দ্র বৃত্যাসুর কে যুদ্ধে পরাজিত করেন এবং হত্যা করেন |ঋষি দের বর অটুট থাকলো এবং অশুভ শক্তির বিনাশ হলো, রক্ষা পেলো স্বর্গ মর্ত পাতাল |ইন্দ্রের বজ্র একদিকে যেমন ত্যাগের প্রতীক অন্যদিকে শৌর্য ও বীর্যের প্রতীক, মহা বিনাশকারী এই অস্ত্র জন্ম নিয়েছে আত্মত্যাগের মাধ্যমে যা রক্ষা করে চলেছে স্বর্গের সিংহাসন|আবার ফিরবো মকর সংক্রান্তিতে বিশেষ আকর্ষণ নিয়ে, পড়তে থাকুন, দেখতে থাকুন আর অবশ্যই যোগাযোগ করুন জ্যোতিষ ও তন্ত্র সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে, আমাকে ফোন করে সরাসরি কথা বলতে পারেন আমার সাথে, জেনে নিতে পারেন কবে, কখন ও কোথায় আমাকে পাবেন, জানতে পারেন বুকিং সংক্রান্ত সব তথ্য|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

স্বামী বিবেকানন্দর রসবোধ : বিশেষ রচনা

স্বামীজী বলতেই আমরা বিশেষত বাঙালিরা একজনকেই বুঝি তিনি আমাদের সবার প্ৰিয়, নরেন্দ্রনাথ দত্ত অর্থাৎ স্বামী বিবেকানন্দ|যদিও সন্ন্যাসী জীবনের প্রথমে তিনি ছিলেন স্বামী বিবিদিশা নন্দ|মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্রের শিকাগো তে বিশ্ব ধর্ম সম্মেলনে তিনি যোগ দিয়েছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ তাই ওই নামেই তিনি জগৎ বিখ্যাত|আজ হিন্দু ধর্মের এই সর্ব শ্রেষ্ঠ আইকন জন্মদিন|আজকের দিনেই অর্থাৎ এই 12ই জানুয়ারি তে উত্তর কলকাতায় তার জন্ম|স্বামীজীর বাল্য জীবন, তার আধ্যাত্মিক জীবন,বিদেশ যাত্রা, সন্ন্যাস জীবন, রামকৃষ্ণের সান্নিধ্যে ধীরে ধীরে তার মহা মানবে রূপান্তর এবং তার সারা জীবন ব্যাপী সমাজ সংস্কার নিয়ে অসংখ্য লেখা লেখি হয়েছে, গবেষণা হয়েছে, হয়েছে সিনেমা, থিয়েটার ও তথ্যচিত্র|কিন্তু আজ তার জন্মদিনে তার চরিত্রের একটি বিশেষ দিক আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরবো, আজ লিখবো স্বামী বিবেকানন্দর রসবোধ নিয়ে, জানাবো কয়েকটি ঘটনার কথা|ঠাকুর তার শিষ্য দের বলতেন ” সর্বদা রসে বসে থাকবে, কেঠ সন্ন্যাসী হবে না ” আর এই দিকটি সব থেকে বেশি প্রতিফলিত হয়েছিলো তার প্ৰিয় শিষ্য নরেনের জীবনে|স্বামীজীর রসবোধ ছিলো অতুলনীয়|আপনি কোন সম্প্রদায়ের সন্ন্যাসী? এই প্রশ্ন পরিব্রাজক বিবেকানন্দ কে বহুবার শুনতে হয়েছে আর প্রতিবারই তিনি হেসে উত্তর দিতেন, ” আমি কচুরি সম্প্রদায়ের সন্ন্যাসী ” আসলে কচুরি ছিলো বিবেকানন্দর অন্যতম প্ৰিয় খাদ্য|স্বামী বিবেকানন্দ একদিন অধ্যাপক ম্যাকসমুলারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিলেন। সারদানন্দ স্বামী। অধ্যাপক ম্যাকসমুলারের সঙ্গে তঁরা কী কথাবার্তা বলেছিলেন সে কথা কাউকে বলেননি ঠিকই, কিন্তু মজা করে বিবেকানন্দ ম্যাকস্‌মুলারদের কণ্ঠস্বর হুবহু নকল করে ঘনিষ্ট মানুষদের সামনে উপস্থাপন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন|আমেরিকায় থাকার সময়ে এক বিদেশী বিবেকানন্দকে জিগ্যেস করলেন, আচ্ছা স্বামীজী, শুনেছি ভারতবর্ষে নাকি শিশু জন্মগ্রহণ করলেই তাকে গঙ্গার জলে ফেলে দেওয়া হয়?বিদেশীটির মুখে এইরকম অশিক্ষিত-প্রশ্ন শুনে স্বভাবতই স্বামী বিবেকানন্দের মাথাগরম হয়ে গেল। তবু তিনি রাগ সংবরণ করে ঠোঁটে কিঞ্চিৎ হাসি লাগিয়ে বললেন, আমি কিন্তু বেঁচে গিয়েছি।বিদেশী ভদ্র লোক থামলেন না। আবার প্রশ্ন করলেন বিবেকানন্দকে, স্বামীজী, আপনাদের দেশে কন্যা সন্তান জন্মালেই নাকি তাকে কুমীরের মুখে ছুঁড়ে দেওয়া হয়? এবার রাগের মাত্রা ছাড়িয়ে গেল| তবু বীর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ মুখে একগাল হাসি নিয়ে বিদেশীকে বললেন, আপনি ঠিকই শুনেছেন মশাই, সেই জন্যই তো আজকাল ভারতে পুরুষ রা সন্তান প্রসব করছে|তার এই রস বোধ ও উপস্থিত বুদ্ধিতে সেখানে উপস্থিত সবাই হেসে উঠেছিলেন|এই প্রসঙ্গে আরেকটি ঘটনার কথা মনে পরে যায়, বিশ্বধর্ম মহাসম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে বিবেকানন্দ উঠেছেন জর্জ হেলের বাড়িতে। স্বামীজী বেশ কিছুদিন হাত, পা-এর নখ কাটার সময় পাননি বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে। নখ কাটতে হবে —তাই তিনি একটি পেনসিল কাটার ছুরি চাইলেন জর্জ হেলের কন্যাদের কাছে। তারা জিগ্যেস করল, ছুরি দিয়ে কী করবেন?স্বামীজী বললেন,’ হাত পায়ের নখ বড় হয়েছে, কাটবো।’ কন্যারা ছুরি এনে নিজেরাই স্বামীজির নখ কেটে দিলো তারপর নখ কাটার জন্যে পারিশ্রমিক চাইলো, বিবেকানন্দ অবাক হলেন এবং সবাইকে অবাক করে দিয়ে বললেন ” এই যে তুমি আমার পা ছোঁয়ার ও নখ কাটার অধিকার পেয়েছ, এর জন্য কী দেবে আমাকে? যে সে আমার পা ছুঁতে পারে না। আমার পা ছুঁলে প্ৰণামী দিতে হয়। পোপদের পা ছুঁলেও টাকা দিতে হয় শুনেছি। এবার বলো তুমি কী করবে, কত টাকা প্ৰণামী দেবে আমাকে? এই উত্তরে চমকে গিয়ে পালিয়ে যায় মেয়েটি, হেসে ওঠেন সেখানে উপস্থিত সকলে|আরো অনেক এমন ঘটনা আছে, সে নাহয় পরে আবার বলা যাবে, তবে বিবেকানন্দর আদর্শ ও বাণী যেমন আমরা মেনে চলবো তেমনই তার রসবোধ থেকেও অনেক কিছু শেখার আছে, ভাববার আছে|নেয়ার আছে অনেক কিছু|এই মহান সন্ন্যাসীর জন্মদিনে আমার শ্রদ্ধা জানাই, প্রনাম জানাই বীর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দকে|ভালো থাকুন|নমস্কার|

বকুল অমাবস্যা বা পৌষ অমাবস্যা ও শক্তি সাধনা

বৈদিক জ্যোতিষ শাস্ত্রের প্রতিকার বিধানের একটি অন্যতম পন্থা তন্ত্র|বিশেষ মন্ত্র উচ্চারণ ও হোম যজ্ঞের মাধ্যমে জাতক জাতিকার জিবনের গ্রহগতঅশুভ প্রভাব কে দূর করার যে পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়ে আসছে তা মূলত তন্ত্র মতেই হয়ে থাকে|এক্ষেত্রে সময় ওতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সর্বদা|এমনই এক গুরুত্বপূর্ণ সময় এই আসন্ন বকুল অমাবস্যা বা পৌষ অমাবস্যা এবং পরবর্তীতে রটন্তী অমাবস্যা যা নিয়ে যথা সময়ে লিখবো|পৌষমাসের এই বিশেষ অমাবস্যা তিথিকে বলা হয় ‘বকুল অমাবস্যা’৷ পৌরাণিক শাস্ত্র অনুযায়ী অমাবস্যা নিয়ে বহু কথা রয়েছে ৷ আর পৌষমাসের এই অমাবস্যার গুরুত্ব এবং মাহাত্ম্যও প্রচুর|অমাবস্যার কারনে যে বিশেষ গ্রহগত অবস্থান সৃষ্টি হয় তা সরাসরি প্রভাবিত করে আমাদের জীবনকে এবং এই সময়ে তন্ত্র মতে শক্তি সাধনা ও আধ্যাত্মিক উপায়ে গ্রহের প্রতিকার বা গ্রহদোষ খণ্ডন অনেক বেশি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে|আমার নিজের তিন দশকের বেশি পেশাদার জ্যোতিষ জীবনে আমি বহুবার উপলব্ধি করেছি এই অমাবস্যা তিথিতে শাস্ত্র মতে গ্রহদোষ খণ্ডন জাতক জাতিকার জীবনে কিভাবে আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছে, গ্রহ গত শুভ প্রভাব সৃষ্টি করেছে তাদের জীবনে|তন্ত্র ক্রিয়ার গুপ্ত তথ্য জন সমক্ষে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়, উচিত ও নয়|শুধু এটুকু বলবো এই অমাবস্যা উপলক্ষে আপনাদের মা হৃদয়েশ্বরী সর্ব মঙ্গলার মন্দিরে 12ই জানুয়ারি অমাবস্যা চলা কালীন বিশেষ পূজা ও গ্রহ দোষ খণ্ডনের সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে|আপনারা জানেন দেবী সর্বমঙ্গলা আদি শক্তিরই একটি বিশেষ রূপ, যিনি পূজিতা হন হৃদয়েশ্বরী সর্বমঙ্গলা মন্দিরে, বিগত অমাবস্যা গুলিতেও শাস্ত্র মতে মন্দিরে বিশেষ পূজা ও গ্রহ দোষ খণ্ডন হয়েছে যাতে অংশ নিয়েছেন বহু মানুষ|সাফল্যও এসেছে|এবারও তার অন্যথা হবেনা|আপনারা চাইলে এই দুর্লভ সময়কে কাজে লাগিয়ে নিজেদের জীবনের গ্রহগত অশুভ প্রভাবকে কাটিয়ে উঠতে পারেন|শাস্ত্রে বিশ্বাস থাকলে, আমার উপর আস্থা থাকলে ফোন করুন আমার নাম্বারে, সরাসরি কথা বলুন আমার সাথে|কি কি করনীয় তা আমি বিস্তারিত জানাবো|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

বাসুকি নাগ ও দেবাদিদেব মহাদেব

ভগবান শিব কে আমরা যখনি দেখি, তার জটায় দেখতে পাই গঙ্গা আর তার পাশে বাসুকি নাগ, গঙ্গা কিভাবে শিবের জটায় স্থান পেলো সেই পৌরাণিক ঘটনা আমাদের অনেকেরই জানা কিন্তু বাসুকি নাগ কেনো সদা শিবের মাথায় সেই রহস্য অনেকের কাছেই রহস্য|আজ লিখবো এই রহস্য নিয়ে|কশ্যপ ও তার স্ত্রী কদ্রুর জ্যেষ্ঠ্ নাগ-পুত্র বাসুকি, শেষনাগ,আদিশেষনাগ ও বাসুকি – তিন নামেই ইনি পরিচিত। মাতা কদ্রুর অন্যায় আদেশ অমান্য করায় কদ্রু অনন্তকে শাপ দেন যে, তিনি জনমেজয়ের সর্প-যজ্ঞে দগ্ধ হয়ে মারা যাবেন। নানা পবিত্র তীর্থে কঠোর তপস্যার পর অনন্তনাগ ব্রহ্মার দেখা পান। ব্রহ্মা ওঁকে বলেন চঞ্চল পৃথিবীকে নিশ্চল করে ধারণ করতে। অনন্ত বা শেষ নাগ পাতালে গিয়ে মাথার ওপর পৃথিবী ধারণ করলেন। ব্রহ্মার অশীর্বাদে গরুড় তার সহায় হলেন এবং পাতালের নাগগণ তাকে নাগরাজ বাসুকিরূপে বরণ করলেন।বহু উল্লেখযোগ্য পৌরাণিক ঘটনার সাথে জড়িয়ে আছেন এই বাসুকি নাগ |বাসুকীর বিশেষ অবদান ছিলো সমুদ্র মন্থন এর ক্ষেত্রে আবার কারাগারে জন্ম নেয়া কৃষ্ণ কে যখন পিতা বাসুদেব নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিচ্ছিলেন তখন নদী মধ্যে প্রবল বৃষ্টি পাত থেকে বাসুকি তার বিশাল ফনা দিয়ে শ্রী কৃষ্ণ কে রক্ষা করেছিলেন |এই প্রবল পরাক্রমী বাসুকি কিভাবে শিবের মাথায় স্থান পেলো তাই নিয়ে ভবিষ্য পুরানে বলা হচ্ছে যে নাগেরাই প্রথম শিব পূজা শুরু করে এবং নাগ রাজা হিসেবে বাসুকি শিবের তপস্যা করেন ও শিব কে তুষ্ট করে বরদান পান যে তিনি শিবের কণ্ঠে স্থান পাবেন ও সারা জীবন শিবের সবথেকে কাছে থেকে তার স্তুতি করবেন |আরেকটি কাহিনী অনুসারে সমুদ্র মন্থন করে অমৃত সন্ধানের সময়ে বাসুকি রজ্জু হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে ছিলেন ও তার পরবর্তীতে শিব যখন হলা হল পান করেন তখনো বাসুকি শিব কে সাহায্য করেন | বাসুকীর এই ভক্তি দেখে শিব সন্তুষ্ট হন ও বাসুকি কে তার জটায় আশ্রয় দেন |শিব ও বাসুকি কে নিয়ে আরো একটি পৌরাণিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় | মনে করা হয় শিব ও পার্বতীর বিবাহের সময় যখন শিবের অঙ্গ সজ্জার প্রয়োজন হয় তখন বাসুকি তার কণ্ঠে জড়িয়ে যান | শিব এতে এতটাই খুশি হন যে সদা সর্বদা তিনি বাসুকি কে ওই স্থানে ধারণ করে থাকেন |আপাতত আজকের পুরান রহস্য এই টুকুই, আপনাদের জানিয়ে রাখি নিয়মিত লেখা লেখির পাশাপাশি ইউটিউব নিয়েও ফিরে এসেছি নতুন রূপে, জ্যোতিষ চর্চার ক্ষেত্রেও চেম্বার ও অনলাইনে আমি আপনাদের পাশে, কলকাতার বাইরে এমনকি রাজ্যের বাইরেও আগামী দিনে আমাকে পাবেন|প্রয়োজন শুধু একটি ফোন কলের|নাম্বার পোস্টে উল্লেখ করাই আছে|ভালো থাকুন|নমস্কার|

মন্দির রহস্য – কালভৈরব মন্দির

বেশ কিছু দিনের বিরতির পর আবার একটি নতুন মন্দির রহস্য নিয়ে আমি আপনাদের সামনে, আজ বলবো মধ্য প্রদেশের উজ্জ্বয়িনীতে অবস্থিত রহস্যময় কালভৈরব মন্দিরের কথা|

উজ্জয়িনীতে এসে এই মন্দির দর্শন না করলে অসম্পূর্ণ থেকে যাবে উজ্জয়িনী ভ্রমণ। মন্দিরনগরী উজ্জয়িনী আর এই নগরেই রয়েছে জাগ্রত ও প্রসিদ্ধ কালভৈরব মন্দির|শতশত বছর ধরে আজও সারাদিন তীর্থযাত্রী আর ভক্তদের অবিরাম স্রোত বয়ে চলেছে ভৈরবমন্দির অভিমুখে।

মন্দিরের ছোট্ট একটি পূজাবেদিতে অধিষ্ঠিত দেবতা কালভৈরব তিনি কোনও মত্ত মাতালের মতো সুরা পান করেন আকন্ঠ। এ চোখে না দেখলে কানে শুনে বিশ্বাস করা মুশকিল|

আশ্চর্যজনক ভাবে যে কোনও মানুষের দেওয়া সুরা-উপচার প্রকাশ্য দিবালোকে, এমনকি রাত্রিকালেও, যে কোনও সময়ে পান করার ঐন্দ্রজালিক ক্ষমতা কালভৈরবের আছে|আর এখানেই লুকিয়ে আছে এই মন্দিরের রহস্য|

কালভৈরবকে যে কোনও সুরাই পরিবেশন করা চলে। দিশি বা স্কচ, যে কোনও সুরা হলেই হল। কোনওটাতেই কালভৈরবের আপত্তি নেই। মন্দিরের পূজারি একটি স্টেনলেস স্টিলের থালায় সুরা পরিবেশন করে কালভৈরবের উদ্দেশ্যে তন্ত্রের মন্ত্রোচ্চারণ ও তান্ত্রিক অনুষ্ঠানাদির মাধ্যমে প্রার্থনা করে থালাপূর্ণ সুরা দেবতার ঠোঁটের ফাঁকে সামান্য কাত করে ধরলে তা ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যায় চোখের সামনে। এইভাবে বোতলের পর বোতল সুরা দিলে তা নিঃশেষ হয়ে যেতে বেশি সময় লাগে না।তবে একমাত্র পূজারি ছাড়া এই মন্দিরের আর কেউই কালভৈরবকে সুরা পান করাতে সক্ষম হন না|

শোনা যায় সুরা কোনও গর্তের ভিতরে গড়িয়ে পড়ছে কিনা তা জানার সন্দেহ প্রকাশ করে ইংরেজ আমলে একবার গোটা মন্দিরটা জব্বর খোঁড়াখুঁড়ি হয়েছিল। কিন্তু ভৈরবের সুরাপানের রহস্যের ছিটেফোঁটাও মীমাংসা হয়নি|রহস্য রহস্যই থেকে গেছে|

আজকের পর্ব এখানেই শেষ করছি, দেখা হবে আগামী পর্বে|পড়তে থাকুন লেখালেখি আর চোখ রাখুন আমার প্রতিটি অনুষ্ঠানে, আর যারা জ্যোতিষ পরামর্শ বা প্রতিকার চান তারা ফোন করুন উল্লেখিত নাম্বারে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

জগৎ জননী মা সারদা

আজকের দিনটি আমাদের অর্থাৎ রামকৃষ্ণ ও মা সারদার অনুরাগী দের কাছে একটি বিশেষ দিন, আজ দেবী সারদার একশো আটষট্টি তম জন্ম তিথি|আজ মা সারদার ব্যাক্তিত্বের একটি বিশেষ দিক আলোচনা করে তাকে শ্রদ্ধা জানাবো, তার দিব্য চরনে আমার প্রনাম নিবেদন করবো|

আজ আমরা মায়ের এক ভক্ত আমজাদের কথা স্মরণ করতে পারি।মা নিজের হাতে তাকে খেতে দিয়েছিলেন, এমনকী খাওয়া শেষে এঁটো থালা পরিষ্কার করতেও তাঁর কোনও দ্বিধা ছিল না। আমজাদের পরিচয় সম্পর্কে মাকে মনে করিয়ে দেওয়ায় তিনি বলেছিলেন, ‘আমার শরৎ যেমন ছেলে, ওই আমজাদও তেমন ছেলে’, এখানে শরৎ, অর্থাৎ পরবর্তী কালে স্বামী সারদানন্দ মহারাজ।

ভাবতেও অবাক লাগে কত বছর আগে প্রকৃত সমাজসেবী হিসেবে শ্রীশ্রীমা এক বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, ভেঙে দিতে চেয়েছিলেন, ‘আমরা ওরা’র বন্ধন।

এই সামান্য ঘটনাটির তাৎপর্য মোটেও সাধারণ নয়। আজকের এই জটিল আর্থ-সামাজিক দুনিয়ায়, যেখানে অসহিষ্ণুতার একটা বিষময় বাতাবরণ, সেখানে মা সারদার এই সহজ অভিব্যক্তিটা খুব বেশি প্রাসঙ্গিক বলে মনে করি। আজও আমরা সর্বস্তরে জাতপাতের সীমানা লঙ্ঘন করতে পারছি না। আমরা সবাই এক এবং অভিন্ন, এই শাশ্বত বোধ আমাদের সবার মধ্যে আসছে না|কিন্তু পথ দেখাতে পারেন মা সারদা ও তার ত্যাগ এবং আদর্শ, তিনি প্রকৃত অর্থেই সৎ এর ও মা আবার অসৎ এর ও মা|তার কাছে নরেন ও যা রঘু ডাকাত ও তাই|

বিশ্ব জননী, সংঘ জননী মা সারদার চরনে আমার শত কোটি প্রনাম| 

পুরান রহস্য – নারদ মুনি কে?

হিন্দু ধর্মের অসংখ্য দেব দেবী ও পৌরাণিক চরিত্র দের মধ্যে এক রহস্যময় ও ব্যতিক্রমী চরিত্র দেবর্ষি নারদ |তিনি এক জনপ্রিয় পৌরাণিক চরিত্র, আচার আচরণে তিনি পরম বৈস্নব |মুখে সদা হরিনাম, সর্বত্র তার অবাধ যাতায়াত, সব সংবাদ, সব জ্ঞান তার মধ্যে সদা বর্তমান |দেব লোক থেকে জমলোক সব স্থানে তিনি সমান জনপ্রিয় | কিন্তু তিনি দেবতা হিসেবে পূজিত হন না| তাকে নিয়ে আছে হাজার বিতর্ক আছে অনেক বদনাম ও |কিন্তু কে তিনি? কি তার স্বরূপ? কোথাথেকে তার উৎপত্তি? আমরা অনেকেই এই প্রশ্ন গুলির সঠীক উত্তর জানিনা বা কখনো জানার চেষ্টা করিনি | আজ পুরান রহস্যর এই পর্বে জানবো দেবর্ষি নারদের কথা|

সৃষ্টির একদম আদি লগ্নে সৃষ্টি কর্তা ব্রহ্মা প্রজাপতিদের সৃষ্টি করেন সৃষ্টি কার্যে তাকে সাহায্য করার জন্য । এই প্রজাপতিরাই মানবজাতির আদিপিতা।ব্রম্হার মন থেকে এদের সৃষ্টি তাই এদের ব্রম্হার মানসপুত্র বলাহয়, মনুস্মৃতি তে এদের উল্লেখ আছে । এঁরা হলেন মরীচি, অত্রি, অঙ্গিরস, পুলস্ত, পুলহ, ক্রতুজ, বশিষ্ঠ, প্রচেতস বা দক্ষ, ভৃগু ও নারদ। এই ভাবে মহর্ষি নারদ এর জন্ম হয় একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে|কিন্তু ঈশ্বর সাধনা ও ভগবৎপ্রাপ্তিতে বিঘ্ন সৃষ্টির আশঙ্কায় তিনি তাতে রাজি না হওয়ায়, ব্রহ্মার অভিশাপে নারদকে গন্ধর্ব ও মানবযোনিতে জন্মগ্রহণ করতে হয়েছিলো। এছাড়া নারদের জন্ম নিয়ে বিভিন্ন পুরাণে বিভিন্ন উল্লেখ রয়েছে।ব্রহ্মাবৈবর্ত পুরাণে এই ঘটনার সব থেকে সুন্দর বর্ণনা রয়েছে |আবার কোথাও নারদ প্রজাপতি ব্রহ্মা ও দেবী সরস্বতীর সন্তান।

কিছু শাস্ত্রে তার জন্ম বৃত্তান্ত সামান্যআলাদা,এঁর জন্ম হয়ে ছিল ব্রহ্মার কণ্ঠ থেকে।প্রথমে ব্রহ্মা তাঁকে সৃষ্টির ভার দেন। সৃষ্টির কাজে ব্যস্ত থাকলে ঈশ্বর চিন্তা বিঘ্নিত হবে বিবেচনা করে ইনি ব্রহ্মার আদেশ মানতে রাজী হলেন না। ফলে ব্রহ্মা তাঁকে অভিশাপ দিয়ে বলেন যে, নারদকে গন্ধমাদন পর্বতে গন্ধর্বযোনিতে জন্মগ্রহণ করতে হবে।যথা সময়ে ইনি গন্ধর্বযোনিতে জন্মগ্রহ করেন।এই সময় তাঁর নাম ছিল উপবর্হণ।

নারদের বাহন ঢেঁকী, এইরূপ প্রবাদ প্রচলিত, কিন্তু শাস্ত্রে তার বিশেষ প্রমাণ পাওয়া যায় না । এই প্রবাদের মূলে কোন সত্য আছে কি না, তাছা নির্ণয় করা কঠিন ।তবে তার যে চিত্র পুরানে বর্ণনা করা হয়েছে সেখানে তার বাহন সমেত তিনি স্বমহিমায় বিরাজমান |এই বাহন এ চড়েই তাকে এক লোক থেকে আরেক লোকে ছুটে বেড়াতে দেখাযায় সর্বদা

কিছু হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী মতে- ব্রহ্মার মানসপুত্র নারদ একজন ত্রিকালজ্ঞ, বেদজ্ঞ ও তপস্বী|তার বৈরাজ্ঞ ও জ্ঞানের জন্য তিনি দেবর্ষি উপাধিতে ভূষিত ।তার নামের ও একটা অর্থ আছে নার শব্দের অর্থ জল।ইনি সবসময় তর্পণের জন্য জলদান করতেন বলে এঁর নাম হয় নারদ।

বহু গুরুত্বপূর্ণ পৌরাণিক ঘটনার সাথে তিনি ওতপ্রোত ভাবে জড়িত, বিভিন্নস্থানে বিভিন্ন ভূমিকায় দেখা যায় তাকে । ইনি কৃষ্ণের জন্মবৃত্তান্ত পূর্বেই কংসকে জানিয়েছিলেন,ধ্রুবের তপস্যায় মন্ত্রদাতা ছিলেন, মহাদেব-পার্বতীর বিবাহের ঘটক ছিলেন, দক্ষের অহঙ্কার নাশে ইনি বিশেষ ভূমিকা রাখেন। আবার রাময়ণের মূল কাহিনী তিনি বাল্মীকিকে শুনিয়েছিলেন। পরে এই কাহিনী অবলম্বনে বাল্মীকি রামায়ণ রচনা করেছিলেন।

এছাড়া ইনি দূত হিসাবেও বিভিন্ন সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।কথিত আছে ইনি কথা গোপন করে রাখতে পারতেন না, এজন্য তিনি শাস্ত্রে নানা ভাবে বহুবার সমালোচিত হয়েছেন । কখনো কখনো অবিবেচকের মতো কথা বলে, বিপর্যয় ডেকে আনতেন। কংসের কাছে কৃষ্ণের জন্মগ্রহণ এবং কৃষ্ণকর্তৃক কংসবধের কথা বলেছিলেন।যার ফলে ফলে কংস চরম অত্যাচারি হয়ে উঠেছিলো, অন্ধকার নেমে এসে ছিলো দেবকী ও বাসুদেবের জীবনে, এমনকি বিন্ধ্যপর্বতের কাছে সুমেরুর গুণকীর্তন করে, পৃথিবী বিপর্যস্ত করেন।পরে এই বিপর্যয় থেকে অগস্ত্য মুনি পৃথিবী রক্ষা করেন পৃথিবী কে|সে গল্প আমরা পরে কখনো শুনবো |

সব মিলিয়ে অদ্ভুত এক চরিত্র এই দেবর্ষি নারদ দেবলোক আর মানবলোকের মধ্যে এক প্রকার সংযোগসেতু। তিনি মানবের যাবতীয় সংবাদ দেবলোকে পৌঁছন আবার দেব লোকের সংবাদ অন্যত্র পৌঁছে দেন । এমন বর্ণনাই রয়েছে পুরাণাদি গ্রন্থে।বিভিন্ন দেবতা ও মানবের মধ্যে ঝগড়া বাধানোর যে বদনাম নারদের উপরে আরোপ করা হয়, তা প্রকৃত অর্থে সত্য নয়। তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কখনই বৈরিতার জন্ম দেননি। তর্ক ও বিসংবাদের মধ্যে দিয়ে যাতে সত্য উদঘাটিত হয় এবং অধর্মের উপর ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হয় তিনি সেই কাজই করেছেন। এই প্রক্রিয়া ভারতীয় সংস্কৃতিতে মান্যতাপ্রাপ্ত।তাছাড়া তিনি বিষ্ণু ভক্ত, ভগবানের লীলায় তিনি সহায়ক হয়েছেন মাত্র |তিনি সদা কৃষ্ণ নাম করেছেন ও নাম বিলিয়েছেন, ভক্তি মার্গে চলতে উৎসাহ দিয়েছেন সবাই কে, পাপ থেকে দূরে থাকতে বলেছেন সর্বদা |যেকোনো কার্যে তিনি নিমিত্ত মাত্র, যাই হয়েছে তা ভগবান এর ইচ্ছায় হয়েছে |

টিভির পর্দায়, সাহিত্যে বা সিনেমায় তাকে কিছুটা বিকৃত করেই দেখানো হয়েছে মানুষ কে আনন্দ দেয়ার জন্য তাই বর্তমান প্রজন্মের কাছে তার স্বরূপ ধরা দেয়নি সে ভাবে | তিনি প্রকৃত অর্থে ভক্তি, জ্ঞান ও বৈরাজ্ঞর প্রতীক |আজ দেবর্ষি নারদের কথা এখানেই শেষ করছি, ফিরবো আগামী পর্বে নতুন কোনো চরিত্র এবং তার জড়িয়ে থাকা অনেক গল্প ও রহস্য নিয়ে|পড়তে থাকুন, যোগাযোগ করুন উল্লেখিত নাম্বারে ও কথা বলুন জ্যোতিষ সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে, ভালো থাকুন|ধন্যবাদ| 

শক্তিপীঠ – আম্বাজী

অনেক আশা ভরসা নিয়ে একটি নতুন বছরে আমরা পা রাখলাম, আশা করি ভালো আছেন সুস্থ আছেন,পুরান রহস্য ও মন্দির রহস্য নিয়ে নিয়মিত লিখছি, লাইভ অনুষ্ঠান ও শুরু হয়েছে, শিগ্রই আরো কিছু নতুন ধরণের অনুষ্ঠান নিয়ে আসবো আপনাদের সামনে, তবে আজ নতুন বছরের শুরুতেই আপনাদের একটি শক্তিপীঠের কথা বলবো, আজকের পর্বে গুজরাটের আম্বাজী শক্তি পীঠ|আমাদের শাস্ত্রে বর্ণিত একান্নটি শক্তিপীঠের মধ্যে অন্যতম এই আম্বাজী মাতার মন্দির যা গুজরাটের পালনপুর থেকে 65 কিলোমিটার এবং মাউন্ট আবু থেকে 45 কিলোমিটার দুরে অবস্থিত|শাস্ত্র মতে এখানে দেবী সতীর হৃদয় পতিত হয়েছিলো|অত্যান্ত জাগ্রত ও প্রসিদ্ধ এই আম্বাজী মন্দির|সারা বছর লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম হয় এই মন্দিরে|দেবীর কোনো মূর্তি বা প্রতিরূপ এখানে নেই তার বদলে রয়েছে একটি শ্রীযন্ত্র যা ভক্তি ভরে পুজো করেন দর্শনার্থীরা তবে কিছু বিধি নিষেধ মেনে এবং ছবি তোলা কিন্তু কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ|রহস্যজনক ভাবে এই শ্রীযন্ত্র কিন্তু জন সমক্ষে আনা হয়না,পুজোর সময় পুরোহিতের চোখ ও ঢেকে দেয়া হয় বলে শোনা যায়|স্বর্ণ জড়িত এই প্রাচীন শ্রী যন্ত্র টি স্থাপিত আছে মন্দিরের অভ্যন্তরে একটি বিশেষ কক্ষে|এখানে অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় বিশেষ পুজো উপলক্ষে ভিড় হয় বেশি|তবে প্রায় সারাবছরই মানুষ আসেন, মন্দির দর্শন করেন ও দেবীর কাছে প্রার্থনা করেন|আজ এক শক্তি পীঠের কথা এখানেই শেষ করছি, আবার দেখা হবে আগামী পর্বে|টিভির অনুষ্ঠান, ফেসবুক ও ইউটিউব এ নিয়মিত আসছি, নিয়মিত বসছি চেম্বারে, আগামী দিনে শহরের এবং রাজ্যের বাইরেও যাবো আগের মতো, তবে জ্যোতিষ পরামর্শর জন্যে আমাকে প্রয়োজন হলে অনুগ্রহ করে উল্লেখিত নাম্বারে ফোন করে একবার আগে সরাসরি কথা বলে নেবেন আমার সাথে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

পুরান রহস্য – গনেশের মুন্ডুচ্ছেদ

আজ পুরান রহস্যর এই পর্বে আলোচনা করবো সিদ্ধিদাতা গণেশ ও তার অদ্ভুত দর্শন রূপের সাথে জড়িয়ে থাকা কিছু রহস্য ময় ঘটনা, জানবো তার শিরোচ্ছেদ সংক্রান্ত কিছু রোমাঞ্চকর তথ্য|

ভগবান গণেশের জন্ম ও তার শিরোচ্ছেদ এবং পরবর্তীতে তার স্থানে হাতির মাথা প্রতিস্থাপন নিয়ে
পুরান ও শাস্ত্রের নানা রকম ব্যাখ্যা ও ঘটনার উল্লেখ পাওয়াযায়|গনেশ মাতা পার্বতী এবং ভোলানাথের সন্তান। কিন্তু তার জন্ম বৃত্তান্ত একটু আলাদা, আগে জেনে নেওয়া যাক গণেশের জন্মের কাহিনি। কথিত আছে, পরবর্তী খেলার ছলে নিজ গাত্র ধূলি দিয়ে একটি বালকের মূর্তি তৈরি করেন । এর পর তাতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন। জীবনদানের পর ওই বালককে নিজের পুত্র স্বীকার করেন পার্বতী|

গনেশ এর শিরোচ্ছেদ ও হাতির মাথা স্থাপন নিয়ে কয়েকটি পৌরাণিক ঘটনার উল্লেখ রয়েছে বিভিন্ন গ্রন্থে|

একটি পৌরাণিক ব্যাখ্যা অনুসারে একেবারে ভিন্ন এখানে বিষ্ণুর কৃপায় পার্বতীর এক পুত্র হয় এবং পুত্রের অন্ন প্রাসনে আমন্ত্রিত শনির দৃষ্টি পড়ায় মুণ্ডলোপ হল তার। তখন পুনরায় তাকে জীবিত করতে সেখানে বসল হাতির মাথা।সেই থেকে ওই রূপেই বিরাজমান গণেশ |

আরেকটা ব্যাখ্যা আছে যেখানে বলা হয় পার্বতী গাত্রমল নিয়ে এক শিশু গড়ছেন। মাথার মাটি কম পড়েছে। তখন উপায় না দেখে মাথার স্থানে এক পাগলা হাতির মাথা কেটে বসিয়ে দিয়ে মূর্তির সম্পূর্ণ করেন | সেই কারণে এই রুপ |

অন্য একটি পৌরাণিক ঘটনা অনুসারে একদিন শিব কৈলাশ ফেরার পর গুহাদ্বারে একটি বালককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। সেই গুহাতেই ছিলেন স্নান করছিলেন পার্বতী। মা-এর আদেশ মেনে শিবকে ওই গুফায় প্রবেশ করতে দেননি গণেশ। ফলে গণেশের ওপর রেগে যান মহাদেব। এর পরই দেবতাদের সঙ্গে গণেশের যুদ্ধ বাধে। একে একে সমস্ত দেবতাই গণেশের শক্তির সামনে পরাজিত হন। এর পর ত্রিশূল দিয়ে নিজের অজান্তেই পুত্র গণেশের শিরোশ্ছেদ করেন মহাদেব।পরে গণেশের মৃত্যুতে ক্রুদ্ধ পার্বতীকে শান্ত করতে গণেশের প্রাণ ফিরিয়ে দেন শিব এবং তা করতে হাতির মাথা ওই বালকের দেহে যুক্ত করা হয় শিবের নির্দেশে |

মনে করা হয় উত্তরাখণ্ডের পিথোরাগড়ে পাতাল ভুবনেশ্বর গুহা অবস্থিত। এইখানেই রয়েছে গনেশের কাটা যাওয়া মাথা যা দেখতে আসেন বহু মানুষ এমনকি দেবতারাও আসেন পুজো দিতে|

আজ এই পর্ব এখানেই শেষ করছি|ফিরবো আগামী পর্বে নতুন রহস্য নিয়ে|সঙ্গে থাকুন, পড়তে থাকুন আর যারা জ্যোতিষ পরামর্শ বা প্রতিকার চান যোগাযোগ করুন উল্লেখিত নাম্বারে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|