স্বামীজী বলতেই আমরা বিশেষত বাঙালিরা একজনকেই বুঝি তিনি আমাদের সবার প্ৰিয়, নরেন্দ্রনাথ দত্ত অর্থাৎ স্বামী বিবেকানন্দ|যদিও সন্ন্যাসী জীবনের প্রথমে তিনি ছিলেন স্বামী বিবিদিশা নন্দ|মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্রের শিকাগো তে বিশ্ব ধর্ম সম্মেলনে তিনি যোগ দিয়েছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ তাই ওই নামেই তিনি জগৎ বিখ্যাত|আজ হিন্দু ধর্মের এই সর্ব শ্রেষ্ঠ আইকন জন্মদিন|আজকের দিনেই অর্থাৎ এই 12ই জানুয়ারি তে উত্তর কলকাতায় তার জন্ম|স্বামীজীর বাল্য জীবন, তার আধ্যাত্মিক জীবন,বিদেশ যাত্রা, সন্ন্যাস জীবন, রামকৃষ্ণের সান্নিধ্যে ধীরে ধীরে তার মহা মানবে রূপান্তর এবং তার সারা জীবন ব্যাপী সমাজ সংস্কার নিয়ে অসংখ্য লেখা লেখি হয়েছে, গবেষণা হয়েছে, হয়েছে সিনেমা, থিয়েটার ও তথ্যচিত্র|কিন্তু আজ তার জন্মদিনে তার চরিত্রের একটি বিশেষ দিক আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরবো, আজ লিখবো স্বামী বিবেকানন্দর রসবোধ নিয়ে, জানাবো কয়েকটি ঘটনার কথা|ঠাকুর তার শিষ্য দের বলতেন ” সর্বদা রসে বসে থাকবে, কেঠ সন্ন্যাসী হবে না ” আর এই দিকটি সব থেকে বেশি প্রতিফলিত হয়েছিলো তার প্ৰিয় শিষ্য নরেনের জীবনে|স্বামীজীর রসবোধ ছিলো অতুলনীয়|আপনি কোন সম্প্রদায়ের সন্ন্যাসী? এই প্রশ্ন পরিব্রাজক বিবেকানন্দ কে বহুবার শুনতে হয়েছে আর প্রতিবারই তিনি হেসে উত্তর দিতেন, ” আমি কচুরি সম্প্রদায়ের সন্ন্যাসী ” আসলে কচুরি ছিলো বিবেকানন্দর অন্যতম প্ৰিয় খাদ্য|স্বামী বিবেকানন্দ একদিন অধ্যাপক ম্যাকসমুলারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিলেন। সারদানন্দ স্বামী। অধ্যাপক ম্যাকসমুলারের সঙ্গে তঁরা কী কথাবার্তা বলেছিলেন সে কথা কাউকে বলেননি ঠিকই, কিন্তু মজা করে বিবেকানন্দ ম্যাকস্মুলারদের কণ্ঠস্বর হুবহু নকল করে ঘনিষ্ট মানুষদের সামনে উপস্থাপন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন|আমেরিকায় থাকার সময়ে এক বিদেশী বিবেকানন্দকে জিগ্যেস করলেন, আচ্ছা স্বামীজী, শুনেছি ভারতবর্ষে নাকি শিশু জন্মগ্রহণ করলেই তাকে গঙ্গার জলে ফেলে দেওয়া হয়?বিদেশীটির মুখে এইরকম অশিক্ষিত-প্রশ্ন শুনে স্বভাবতই স্বামী বিবেকানন্দের মাথাগরম হয়ে গেল। তবু তিনি রাগ সংবরণ করে ঠোঁটে কিঞ্চিৎ হাসি লাগিয়ে বললেন, আমি কিন্তু বেঁচে গিয়েছি।বিদেশী ভদ্র লোক থামলেন না। আবার প্রশ্ন করলেন বিবেকানন্দকে, স্বামীজী, আপনাদের দেশে কন্যা সন্তান জন্মালেই নাকি তাকে কুমীরের মুখে ছুঁড়ে দেওয়া হয়? এবার রাগের মাত্রা ছাড়িয়ে গেল| তবু বীর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ মুখে একগাল হাসি নিয়ে বিদেশীকে বললেন, আপনি ঠিকই শুনেছেন মশাই, সেই জন্যই তো আজকাল ভারতে পুরুষ রা সন্তান প্রসব করছে|তার এই রস বোধ ও উপস্থিত বুদ্ধিতে সেখানে উপস্থিত সবাই হেসে উঠেছিলেন|এই প্রসঙ্গে আরেকটি ঘটনার কথা মনে পরে যায়, বিশ্বধর্ম মহাসম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে বিবেকানন্দ উঠেছেন জর্জ হেলের বাড়িতে। স্বামীজী বেশ কিছুদিন হাত, পা-এর নখ কাটার সময় পাননি বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে। নখ কাটতে হবে —তাই তিনি একটি পেনসিল কাটার ছুরি চাইলেন জর্জ হেলের কন্যাদের কাছে। তারা জিগ্যেস করল, ছুরি দিয়ে কী করবেন?স্বামীজী বললেন,’ হাত পায়ের নখ বড় হয়েছে, কাটবো।’ কন্যারা ছুরি এনে নিজেরাই স্বামীজির নখ কেটে দিলো তারপর নখ কাটার জন্যে পারিশ্রমিক চাইলো, বিবেকানন্দ অবাক হলেন এবং সবাইকে অবাক করে দিয়ে বললেন ” এই যে তুমি আমার পা ছোঁয়ার ও নখ কাটার অধিকার পেয়েছ, এর জন্য কী দেবে আমাকে? যে সে আমার পা ছুঁতে পারে না। আমার পা ছুঁলে প্ৰণামী দিতে হয়। পোপদের পা ছুঁলেও টাকা দিতে হয় শুনেছি। এবার বলো তুমি কী করবে, কত টাকা প্ৰণামী দেবে আমাকে? এই উত্তরে চমকে গিয়ে পালিয়ে যায় মেয়েটি, হেসে ওঠেন সেখানে উপস্থিত সকলে|আরো অনেক এমন ঘটনা আছে, সে নাহয় পরে আবার বলা যাবে, তবে বিবেকানন্দর আদর্শ ও বাণী যেমন আমরা মেনে চলবো তেমনই তার রসবোধ থেকেও অনেক কিছু শেখার আছে, ভাববার আছে|নেয়ার আছে অনেক কিছু|এই মহান সন্ন্যাসীর জন্মদিনে আমার শ্রদ্ধা জানাই, প্রনাম জানাই বীর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দকে|ভালো থাকুন|নমস্কার|