চলছে শ্রাবন মাস। ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা করছি শিব সংক্রান্ত নানা পৌরাণিক বিষয় এবং তার শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা নিয়ে। আজ জানাবো শিবের তৃতীয় নয়নের অদ্ভুত কিছু রহস্য।শেষে থাকবে একটি শিব কেন্দীক শাস্ত্রীয় উপদেশ।শিবের সর্বাধিক প্রচলিত রূপ- মাথায় জটা, হাতে-গলায় রুদ্রাক্ষ এবং গলায় জড়িয়ে থাকা সাপ। আর কপালে ত্রিনয়ন। শিবের তৃতীয় চক্ষুর ব্যাপারে অনেক রকম ব্যাখ্যা হয়।একটি পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে একদা কৈলাসে নিছক মজার ছলে পার্বতী দুহাতে শিবের দু চো ঢেকে দিয়েছিলেন প। তাতে গোটা দুনিয়া অন্ধকারময় হয়ে যায়। সৃষ্টিকে বাঁচাতে তৃতীয় নয়ন মেলেন শিব। গোটা দুনিয়ায় তখন আলোর প্রকাশ ঘটে সৃষ্টি রক্ষা পায়।মনে করা হয় শিবের এই তৃতীয় চোখ সূর্যের সমান। তেজ ও শক্তির আধার।আর একটি পৌরাণিক ঘটনা অনুযায়ী প্রজাপতি দক্ষ যখন যজ্ঞ নিজের অনুষ্ঠানে সতীর সামনেই শিবকে অপমানিত করেন অপমানে আত্মদাহ করেন সতী। এই ঘটনার পর ভেঙে পড়েছিলেন ভোলেনাথ। কয়েক বছর ধরে চলে গিয়েছিলেন গভীর তপে। তন্মধ্যে সতীর পুনর্জন্ম হয় হিমালয়পুত্রী হিসেবে। কিন্তু শিব ধ্যানে মগ্ন। জাগতিক কোনও ব্যাপারেই তাঁর আগ্রহ নেই। সকল দেবতা চাইছিলেন, শীঘ্রই মিলন হোক মহাদেব ও শক্তির। কিন্তু শিবের ধ্যান ভাঙানোর সব চেষ্টাই বিফল হয়। তখন কামদেবের সাহায্য নেন দেবতারা। কাম দেব বান নিঃক্ষেপ করে মহাদেবের ধ্যান ভাঙ্গায়। ক্রোধে তৃতীয় নয়ন সৃষ্টি হয় এবং মহাদেবে সেই নয়ন দিয়ে কাম দেবকে ভস্ম করেন।একটি ব্যাখ্যা অনুযায়ী শিবের তৃতীয় নয়ন আসলে তাঁর দিব্য দৃষ্টি। এই দিব্য দৃষ্টি থেকে কোনও কিছুই বাদ পড়ে না। ভোলানাথের তৃতীয় নয়নকে জ্ঞানচক্ষুও বলা হয়। এই নয়ন আত্মজ্ঞানের প্রতীক। স্বর্গ মর্ত পাতাল এই তিন লোকের গতিবিধির উপর নজর রাখতে পারেন তিনি। তৃতীয় চোখ দিয়ে সমস্ত বিষয় গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন শিব । তৃতীয় নয়ন তাঁর শক্তি কেন্দ্রও। তাই মনে করা হয় যে শিব তৃতীয় চোখ খুললেই ভষ্মীভূত হয়ে যাবে গোটা সৃষ্টি।যারা শিব লিঙ্গ ব্যাতিত শিবের অন্য রুপ গৃহে রেখে পুজো করতে চান তারা ধ্যান মগ্ন রূপ না রেখে শিব পার্বতী ও তাদের কন্যা সন্তান সহ ছবি একসাথে রাখুন। গৃহের কল্যাণ হবে।আগামী পর্বে আবার কোনো নতুন বিষয় নিয়ে আসবো আপনাদে সামনে।থাকবে এমনই গুরুত্বপূর্ণ শাস্ত্রীয় উপদেশ। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।