শিব পুরান – ঋষি মার্কেণ্ডেয়র কথা

232

শিব পুরানের ষোলো তম অধ্যায়ে আছে ঋষি মার্কেণ্ডেয়র কথা|লেখা আছে তার অমরত্ত্ব প্রাপ্তি নিয়ে একটি গল্প যা আজকের পর্বে আপনাদের জানাবো |

শিব পূরাণ মতে বহুকাল পূর্বে মৃকাণ্ডু নামে এক ঋষি বাস করতেন। তিনি ছিলেন ধর্মপরায়ণ ও জিতেন্দ্রিয়। অর্থাৎ সমস্ত ইন্দ্রিয়কে জয় করতে পেরেছিলেন তিনি। তা সেই মৃকাণ্ড পুত্রলাভের আশায় বসলেন ব্রহ্মার তপস্যায়। দীর্ঘ তপস্যায় খুশি হলেন ব্রহ্মা। দিলেন বরও। তবে ওই একটা কিন্তু রয়েই গেল। প্রজাপতি ব্রহ্মা জানালেন, প্রবল ধার্মিক হওয়া সত্ত্বেও মাত্র সাত বছর বয়সে মৃত্যু হবে সেই পুত্রের|

যথাসময়ে পুত্রসন্তানের মুখ দেখলেন মৃকাণ্ডু।তার নাম রাখা হলো মার্কেন্ডেয়|তবে দিনরাত তাঁকে তাড়া করে বেড়াত একটাই দুশ্চিন্তা। ব্রহ্মার সেই কথাগুলো কিছুতেই মন থেকে তাড়াতে পারছিলেন না মৃকাণ্ডু। ঋষি শুরু করলেন বিষ্ণুর আরাধনা। কিন্তু ঋষি মৃকাণ্ডুকে খালি হাতেই ফিরতে হল বিষ্ণুর কাছ থেকে কারন কিন্তু পুত্রের দীর্ঘজীবন লাভের বর দেওয়ার সাধ্য ছিল না স্বয়ং বিষ্ণুরও এই কাজ একমাত্র শিবই করতে পারেন|

বালক মার্কেন্ডেয় মায়ের কাছ থেকে জানতে পারলেন যে তাঁর স্বল্পায়ুর কারনে সর্বদা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত তাঁর পিতা-মাতা।তাঁকে সাহায্য করলেন তার গুরুদেব ঋষি পুলহ। তিনি সব শুনে তাকে বলেন, জগতের গুরু মহেশ্বরই একমাত্র পারবেন মার্কণ্ডেয়কে দীর্ঘজীবন লাভের বর দিতে। একইসঙ্গে তাঁকে মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করারও পরামর্শ দেন ঋষি। পুলহের কথামতো তপস্যা শুরু করল সেই বালক। গুরুর চরণ বন্দনা করে সে চলে গেল সাগর তীরে। সেখানেই মাটি দিয়ে সে তৈরি করল এক শিবলিঙ্গ। তার সামনে বসে শুরু হল মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রের জপ।

বেশ কিছুটা সময় কেটে গেলো সাতে পা দিলো মার্কণ্ডেয়। বিধির বিধানে মার্কণ্ডয়ের কাল পূর্ণ হয়েছে। তাকে মৃত্যুপুরীতে নিয়ে আসার আদেশ দিলেন ধর্মরাজ। যমের আজ্ঞা পেয়ে একদল যমদূত হাজির হল মার্কণ্ডেয়-র সামনে। ভয়ঙ্কর তাদের মূর্তি। তবে সেদিকে যেন ভ্রূক্ষেপই নেই মার্কণ্ডেয়র। একমনে ধ্যান করে চলেছে সেই ছোট্ট বালক।তারপর যথা সময়ে যমদূতেরা তার প্রাণ নিতে উদ্যত হতেই মাটির ওই শিবলিঙ্গের সামনেই প্রকট হলেন স্বয়ং মহেশ্বর। বিরাট ও বিকট পঞ্চানন রূপ ধারণ করে মহাদেব যমদূত দের সামনে রুখে দাঁড়াতেই ভয়ে চম্পট দিল যমদূতেরা।
এরপর মার্কণ্ডেয়-র প্রাণ নিতে সেখানে হাজির হলেন স্বয়ং যমরাজ। কিন্তু মহেশ্বরের ক্রোধের সামনে পরাজিত হলেন তিনিও উপায় না দেখে ব্রহ্মার দ্বারস্থ হলেন যম। ওদিকে মহাদেবের ক্রোধাগ্নিতে তো তখন তিন লোক কম্পমান । মহাদেবকে শান্ত করতে অগত্যা এগিয়ে এলেন সমস্ত দেবতা। অবশেষে রাগ পড়ে মহাদেবের। দেবাদিদেব জানান যে যদি কোনো ভক্ত শিবলিঙ্গের সামনে বসে মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করে তাহলে সে দীর্ঘজীবন লাভের বর পাবে সে।

বালক মার্কেন্ডেয়র মাধ্যমে এই ভাবে মহাদেব ও মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রের মহিমা জানলো জগৎবাসি|

আগামী পর্বে শিব পুরান অনুসারে অন্য কোনো বিষয় এবং তার শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা নিয়ে আবার ফিরে আসবো|পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|