শিব পুরানের সপ্তম অধ্যায়ে অর্জুনের তপস্যা ও শিব এবং অর্জুনের যুদ্ধ ও সর্বপরি শিব কতৃক অর্জুনকে বরদানের উল্লেখ আছে|আজ সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো|দুর্যোধনের সঙ্গে পাশা খেলায় পরাজিত হন পঞ্চপাণ্ডব। তারা পরাজিত হয়ে রাজত্ব হারিয়ে দ্রৌপদীর সঙ্গে অরণ্যমধ্যে বাস করতে লাগলেন। পঞ্চপাণ্ডবের কুটিরে একদিন উপস্থিত হলেন ব্যাসদেব। যুধিষ্ঠির ব্যাসদেবকে বললেন, প্রভু আমাদের এই দুঃখ দূর করার জন্য কোনো উপদেশ দিন। ব্যাসদেব বললেন, আমি সবসময় শিবের সেবা করি, তোমরাও শিবের সেবা কর। তারপরে ব্যাসদেব বিচার করে বললেন, তোমাদের মধ্যে অর্জুনই শিবপূজার যোগ্য ব্যক্তি।অর্জুনকে তিনি বললেন তুমি ইন্দ্রনীল পর্বতে গিয়ে শিবের তপস্যা কর।ব্যাসদেবের উপদেশ মতো অৰ্জুন গেলেন ইন্দ্রনীল পর্বতে। সেখানে সুন্দর অশোকবনে শিবলিঙ্গ তৈরি করলেন। তারপর ব্যাসদেবের উপদেশমত ত্রিকালীন স্নান এবং নানারকম পূজা করলেন এবং তপস্যা শুরু করলেন। সেই তপের ফলে অর্জুনের মাথা থেকে তীক্ষ্ণশ্বর বেরোতে লাগল। দেবতাগণ তা দেখে ভয় পেলেন। তারা ইন্দ্রের কাছে গেলেন।ইন্দ্র অতি বৃদ্ধ জরাজর্জর, জটাধারী হয়ে হাতে লাঠি ধরে টলতে টলতে ইন্দ্র অর্জুনের কাছে গেলেন। ইন্দ্র নিজের কোন পরিচয় দিলেন না। বললেন, তুমি এই নবীন বয়সে কেন তপস্যা করছ? তুমি নিশ্চয় সুন্দরীর আকাঙ্ক্ষায় তপস্যা করছ না, কাউকে নিশ্চয় জয় করতে চাইছো?বৃদ্ধের জিজ্ঞাসা শুনে অর্জুন সব কথা খুলে বললেন। তখন ইন্দ্র অর্জুনের মনোরথ অবগত হয়ে বললেন, তুমি সুখের জন্য এই তপস্যা করছ। এটা কিন্তু তুমি ঠিক করনি, কারণ লৌকিক সুখ স্বপ্নতুল্য, বরং তুমি মুক্তির জন্য কর।অর্জুন বৃদ্ধের কথা শুনে রেগে গিয়ে বললেন, আমি মুক্তি চাই না। আপনি কিজন্য আমার তপস্যায় বিঘ্ন করতে এসেছেন, এখন আপনি যেতে পারেন।অর্জুনের কথা শুনে ইন্দ্র নিজের স্বরূপে দেখা দিলেন। অর্জুন তখন খুব লজ্জা পেলেন। তখন ইন্দ্র হেসে অর্জুনকে বললেন–তুমি ধন্য। তুমি কৃতার্থ, তোমার মন ও নিশ্চয় দেখছি। তাই তোমাকে বলছি–দুর্যোধন, দ্রোণ, ভীষ্ম কৰ্ণা বীর জগতে অজেয়। তাদেরকে জয় করা আর কারো দ্বারা সম্ভব নয়। শিব ছাড়া অন্য কেউই এদের জয় করতে পারবে না। তাই তুমি শিবেরই ভজনা কর। তবে তুমি সিদ্ধিলাভ করতে পারবে। খুব সাবধান হয়ে তপস্যা করবে। ইন্দ্রের নির্দেশে অর্জুন আবার ঘোরতর তপস্যা শুরু করলেন। পুনরায় তার তপস্যায় ব্যাঘাত ঘটালেন এক ব্যাধ এবং অর্জুন তার বান ছিনিয়ে নিলেন ব্যাধ রেগে বললো আমাদের প্রভুকে তুমি চেনো। তার সঙ্গে যুদ্ধে কেউ পারবে না। তাই বলছি, বাণটি ফেরৎ দাও। তা না হলে তোমার কপালে কষ্ট আছে।ক্রোধান্বিত হয়ে অর্জুন বললেন, তোমাদের রাজা এলে তাকে যুদ্ধের দ্বারা উপযুক্ত শাস্তি দেবো। সিংহ ও শৃগালের যুদ্ধ উপহাস করে। কিন্তু সেই যুদ্ধই এখানে হবে।সেই ব্যাধ ছিলো শিবের এক অনুচর সে অর্জুনের কথা শুনে ফিরে গেল শিবের কাছে, শিব সব কথা শুনে একজন দূত পাঠালেন দুতের কথা শুনে অর্জুন ক্রুদ্ধভাবে বললেন, আমি এই বাণ কখনই দেব না, এটা আমার।দূত গিয়ে শিবকে সব বলল। তারপর শুরু হলো শিব আর অর্জুনের যুদ্ধ। শিব অর্জুনের সব অস্ত্র বিনষ্ট করে দিলেন, তার ধনুকের জ্যা ছিঁড়ে গেল, তখন অর্জুনের কেবল শরীরটাই থাকল।তারপর শুরু হল দুজনের মধ্যে মল্লযুদ্ধ। তাতে পৃথিবী কেঁপে উঠল। দেবতারাও খুব ভয় পেল। তখন শিব অর্জুনকে নিয়ে আকাশে উঠে যুদ্ধ করতে লাগলেন তারপর হঠাৎ মহেশ্বর অর্জুনকে আপন রূপ দেখালেন তাকে।ক্ষমা চেয়ে অর্জুন শিবের পায়ে লুটিয়ে পড়লেন। বললেন, হে প্রভু, আমাকে ক্ষমা করুন। শিব শুনে বললেন, ভক্ত, আমি তোমার বীরত্বের পরীক্ষা নেওয়ার জন্যই এমন করেছি। তুমি যে অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেছো আমায়, তা আমি পূজারূপে গ্রহণ করেছি।স্বয়ং শিব অর্জুনকে শত্রু বিজয়ের বরদান দিয়েছিলেন|শিব পুরান অনুসারে অন্য কোনো বিষয় এবং তার শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা নিয়ে আবার ফিরে আসবো আগামী পর্বে|পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|