বাংলার ইতিহাস জানতে হলে মালদার ইতিহাস জানতেই হবে কারন বাংলার প্রথম স্বাধীন রাজা শশাঙ্কের আমল থেকে পাল, সেন, সুলতানি, এবং মুঘল আমল পর্যন্ত একটা দীর্ঘ সময় অবধি মালদা ছিলো পূর্বাঞ্চলের রাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু।
পরবর্তীতে মুর্শিদাবাদে রাজধানী স্থানান্তরিত হওয়ায় মালদা ধীরে ধীরে তার গৌরব হারাতে থাকে। তবে অসংখ্য প্রত্নত্তাত্বিক ও ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে মালদায় যার মধ্যে আছে বহু মন্দির এবং তীর্থ স্থান। পাশাপাশি প্রাচীন বাংলার বহু ঐতিহাসিক স্থাপত্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে সমৃদ্ধ এই মালদা জেলা|রয়েছে প্রাচীন গৌরের ধ্বংসাবশেষ, আদিনা মসজিদ, দাখিল দরজা, ফিরোজ মিনার, বড়ো সোনা মসজিদের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান।
কিছু প্রচিন হিন্দু মন্দিরের কথা আলাদা করে বলা যায় যার মধ্যে অন্যতম জহুরা কালী মন্দির।
মালদার জহুরা কালী মন্দির খুবই প্রাচীন এবং বেশ জাগ্রত এই কালী মন্দিরকে কেন্দ্র করে অনেক রহস্যময় ও অলৌকিক ঘটনা প্রচলিত আছে।কেনো কালী মন্দিরের নাম জহুরা কালী মন্দির তার পেছনেও এক রোমাঞ্চকর গল্প আছে।
আগেই বলেছি জহুরা কালী মন্দিরের ইতিহাস বেশ প্রাচীন এবং কিভাবে এখানে পুজো শুরু হলো ও পরবর্তীতে মন্দির স্থাপিত হলো তানিয়ে একাধিক মতামত রয়েছে|কিছু ইতিহাস বিদ মনে করেন এই দেবীর পুজোর সূচনা হয়েছিলো সেন বংশের রাজা বল্লাল সেনের আমলে আবার মন্দিরের গায়ে যে পাথরের ফলক আছে, তা থেকে অনুমান করা যায়,আজ থেকে তিনশো বছর আগে উত্তরপ্রদেশের কোনো এক মাতৃ সাধক স্বপ্নাদেশ পেয়ে এখানে দেবী জহরা চণ্ডীর বেদি স্থাপন করেছিলেন|
ইংরেজবাজার থানা এলাকায় একটি প্রাচীন আমবাগানের মধ্যে রয়েছে এই প্রাচীন জহুরা কালীমন্দির।শোনো যায় এক কালে এই অঞ্চলে ছিলো ঘন অরণ্য|ডাকাতরাই একপ্রকার শাসন করতো এই এলাকা এবং এই দেবী এক সময়ে ছিলেন ডাকাতদের আরাধ্যা। এখানে দেবী চণ্ডীর পুজো করে ডাকাতরা যেত ডাকাতি করতে। ডাকাতি করে প্রচুর ধনরত্ন আনত তারা, তারপর সেগুলোকে এখানেই মাটির তলায় রাখত। সেই ধনরত্নের ওপরই দেবীমূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয় যেহেতু ধনরত্নকে হিন্দিতে বলে ‘জওহর’। দেবীমূর্তির নিচে প্রচুর ধনরত্ন রাখা থাকত বলেই এখানে দেবী চণ্ডী ‘জহরা’ বা ‘জহুরা’ নামে বিখ্যাত|
শোনা যায় বহুকাল আগে এখানে দেবীর পূর্ণ অবয়ব মূর্তি ছিলো তবে বিদেশী শত্রুর আক্রমণের ভয়ে তা মাটির নিচে লুকিয়ে ফেলেন পুরোহিতরা|
বর্তমানে মন্দিরের অভ্যন্তরে লাল রঙের ঢিবির ওপর রয়েছে এক মুখোশ এবং ঢিবির দু’পাশে আরও দু’টি মুখোশ দেখা যায়। এছাড়া গর্ভগৃহে আছে শিব আর গণেশের মূর্তি|এখানে বৈশাখ মাসের মঙ্গল ও শনিবার থাকে বিশেষ পুজোর আয়োজন|উল্লেখযোগ্য বিষয় অন্যান্য কালীমন্দিরের মতো এখানে রাত্রিবেলা কোনো পুজো হয় না পুজো হয় দিনে|
দেবী জহুরা চন্ডিরই রূপ তিনি অত্যন্ত জাগ্রত ও প্রসিদ্ধ তার পুজো উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চল ছাড়াও বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ সমবেত হন এই মন্দির প্রাঙ্গনে|প্রতিটি অমাবস্যা তিথিতে জহুরা কালী মন্দিরে তন্ত্র মতে পুজো হয় এবং বহু দর্শণার্থী আসেন সেই পুজো দেখতে।
যখনই এই ঐতিহাসিক মালদা সফরের সুযোগ হয় তখনই চেষ্টা করি কিছুটা সময় বের করে দেবী জহুরার মন্দির দর্শন করতে। আজ এই মন্দির সম্পর্কে আমার জানা কিছু তথ্য ও ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথেও ভাগ করে নিলাম যা আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
আবার পরের পর্বে ফিরে আসবো নতুন কোনো আধ্যাত্মিক বিষয় নিয়ে। পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন।ধন্যবাদ।