জগন্নাথ দেব এবং কর্মাবাই

186

জগন্নাথ দেব এবং কর্মাবাই

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

জগন্নাথ ধাম নানা কারণে প্রসিদ্ধ তার মধ্যে অন্যতম প্রভুর ছাপ্পান্ন ভোগ।কথিত আছে চার ধামের মধ্যে এই জগন্নাথ ধামে বিষ্ণু জগন্নাথ রূপে আসেন আহার করতে। জগন্নাথদেবের অন্যতম প্রিয় খাদ্য খিচুড়ি। তবে এই খিচুড়ি কোনো সাধারণ খিচুড়ি নয়।এই খিচুড়ির নাম কর্মাবাই খিচুড়ি’। কেনই বা এই নাম আর কিবা এই খিচুড়ির ইতিহাস জানবো আজকের পর্বে।

 

পুরীতে এক সময়ে কর্মাবাই নামে একজন বৃদ্ধা বাস করতেন। তিনি জগন্নাথকে নিজের পুত্র রূপে দেখতেন এবং তাঁকে বালক রূপে সেবা করতেন। বৃদ্ধার মনে হত সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই জগন্নাথ দেবের খিদে পেয়ে যায়। তাই তিনিও খুব সকালে ঘুম থেক উঠে স্নান না করেই খিচুড়ি রান্না করতে বসতেন।প্রতিদিন ভোরে বালক রূপ ধরে জগন্নাথদেব কর্মাবাইয়ের খিচুড়ি খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করতেন। এই খিচুড়ির স্বাদ ছিল জগন্নাথদেবের বড়ই প্রিয়।

 

একদিন মন্দিরের এক পূজারী কর্মাবাইকে স্নান

না করেই খিচুড়ি রান্না করে জগন্নাথদেবকে ভোগ নিবেদন করতে দেখেন। তিনি কর্মাবাইকে নিষেধ করে বলেন যে প্রভুর ভোগ রান্না এবং নিবেদনের আগে দেহে এবং মনে বিশুদ্ধ হওয়া জরুরি।স্নান না করে ভোগ রান্না শাস্ত্র বিরুদ্ধ।পরদিন সাধুর কথামতো কর্মাবাই স্নান সেরে নিয়ম মেনে যখন জগন্নাথ দেবকে খিচুড়ি ভোগ দেন।তাতে দেরি হয়ে যায় অনেকটা। সকাল থেকে ক্ষুদার্থ জগন্নাথ দেব

কর্মা বাইয়ের বানানো গরম খিচুড়ি খেয়ে দুপুরে আর ভোগ গ্রহণ করলেন না।পরে অনুসন্ধান করে দেখা যায় প্রভুর মুখে খিচুড়ি লেগে আছে।

 

পরবর্তীতে জগন্নাথদেব স্বয়ং তার বিশেষ এবং ঘনিষ্ট কয়েকজন সেবককে কর্মাবাইয়ের বৃত্তান্ত শোনান এবং তাদের আদেশ করেন তিনি যেন আগের মতোই সকালে স্নানের আগেই জগন্নাথের জন্য খিচুড়ি রান্না করে ভোগ নিবেদন করেন।

সেবকরা কর্মাবাই এর কাছে ছুটে গিয়ে ক্ষমা চান এবং প্রভুর আদেশ শোনান।

 

শুরু হয় খুব সকালে বাল্য ভোগে জগন্নাথ দেবকে খিচুড়ি দেওয়ার নিয়ম।যতদিন কর্মা বাই জীবিত ছিলেন তিনি নিজেই খিচুড়ি বানাতেন।শোনা যায় কর্মাবাইয়ের মৃত্যুতে জগন্নাথদেব কেঁদে ছিলেন।

কর্মা বাইয়ের অনুপস্থিতিতে পুরীর রাজার নির্দেশে পুরী মন্দিরের বাল্যভোগে ” কর্মাবাই খিচুড়ি ” রান্না চালু হয়।সেই প্রথা আজও চলছে।

 

জগন্নাথদেব সংক্রান্ত আরো অনেক এমন তথ্য এবং ইতিহাস নিয়ে ফিরে আসবো আগামী পর্ব গুলিতে। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন।ধন্যবাদ।