কালী কথা – কৃষ্ণ কালীর পুজো
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
দীপান্বিতা অমাবস্যায় আমার গৃহ মন্দিরে প্রথা মেনে শ্রী কৃষ্ণকে কালী রূপে সাজিয়ে
পুজো হয়েছে।এই রূপের বিশেষ মাহাত্ম এবং শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা আছে।আজ শ্রী কৃষ্ণের এমন এক লীলার কথা আপনাদের বলবো যেখানে শ্রী কৃষ্ণ স্বয়ং দেবী কালীর রূপ ধরে ছিলেন।
বৃন্দাবনের কুঞ্জবনে কৃষ্ণের বাঁশি শুনে ঘর ছেড়ে রোজ বেরিয়ে যান রাধা। নীরবে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে মিলিত হন কৃষ্ণের সঙ্গে। কেউ কিছু জিগেস করলে বলতেন তিনি কালিন্দী নদীর ধরে শ্যামা মায়ের পুজো করতে যান। প্রসঙ্গত বলে রাখি এই শ্যামা মা অর্থাৎ দেবী কালী রাধার স্বামী আয়ানের পরিবারের ইষ্ট দেবী। তাই তারাও বিষয়টি সহজ ভাবে মেনে নেন।
কিন্তু একদিন রাধার দুই সহচরি জটিলা কুটিলা
আসল কথাটা তুলে দিল রাধার স্বামী আয়ানের কানে। ক্রুদ্ধ আয়ান রাধাকে হাতেনাতে ধরতে চাইলেন। তিনি তক্কে তক্কে থাকলেন সেদিন রাধা বেরোলেই তিনি তাঁর পিছু নেবেন। হলো ও তাই।
কিন্তু ভগবান কৃষ্ণ সর্ব জ্ঞানী। তার কাছে আয়ানের এই আগমন বার্তা গোপন রইল না। তিনি সেদিন রাধা আসতেই তাঁকে বললেন, যা বলছি করো, তুমি দ্রুত আমাকে লতাপাতা ফুল-ফল দিয়ে সাজিয়ে দাও। আর আমার পায়ের কাছে ভক্তের মতো বিনীত ভাবে বসে থাকো।
আশ্চর্য হলেও রাধা প্রশ্ন না করে কৃষ্ণর কথা মতো দ্রুত সবটা করলেন।তারপর চোখের পলকে শ্যাম পরিবর্তিত হলেন শ্যামায়।তার নিজের দ্বিভুজ দেহ একেবারে চতুর্ভুজ রূপ হয়ে গেল। তার উন্মুক্ত কেশ রাশি দুলতে আরম্ভ করলো । তাঁর গলায় থাকা পদ্মের মালা খানি নৃমুণ্ড মালার রূপ নিলো।বাঁশি হল অসি এবং কপালের তিলক চন্দ্র রূপে শোভা পাচ্ছিলো।তিনি কৃষ্ণ থেকে কালীতে সম্পূর্ণ ভাবে রূপান্তরিত হয়েছেন।
আয়ান এসে দেখলেন ঘন বনের মধ্যে এসে তাঁর বউ রাধা তাঁরই ইষ্টের আরাধনা করছেন! তাঁর মনটা আনন্দে ভরে গেল। তিনি রাধার আচরণে খুশিই হলেন এবং নিজের ইষ্ট দেবী শ্যামাকে দর্শন
করে ধন্য হলেন।সেই দিনের এই রুপই
শাস্ত্রে উল্লেখিত কৃষ্ণ কালী রুপ।
সনাতন ধর্মে বৈষ্ণব এবং শাক্ত দুই দর্শনের মধ্যে বিরোধ বহু প্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে।
বৈষ্ণবরা একমাত্র কৃষ্ণের উপাসনায় বিশ্বাস করেন
অন্য দিকে শাক্তরা কালী সাধনা বা শক্তি সাধনা নিয়ে থাকেন।এই বিশেষ কালী রূপ বৈষ্ণব এবং শাক্ত দর্শনের অপূর্ব সমম্মিলিত রূপ।এই কৃষ্ণ কালী রূপ প্রমান করে দেয় যে যিনি কৃষ্ণ তিনিই কালী ভক্তের কাছে তিনি ভক্তের সাধনা অনুযায়ী ধরা দেন মাত্র।
সবাইকে জানাই দীপাবলীর শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন। আজ এই পর্ব এখানেই শেষ করছি। আবার ফিরে আসবো পরবর্তী পর্ব নিয়ে।
পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।