কালীকথা – মন্দিরবসিনী কালী
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
আজকের কালী পর্বে আপনাদের প্রাচীন কালী মন্দির মন্দিরবাসীনি কালী মায়ের মন্দির
প্রসঙ্গে জানাবো।দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন ব্লকের ফিকাহার এলাকায় রয়েছে ছয়শো বছরের প্রাচীন এই মন্দির।
এই কালী মাকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এক মহিলা তান্ত্রিক। লোকশ্রুতি রয়েছে, এই মহিলা তান্ত্রিক কালীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে তাঁর কিশোরী কন্যাকে জীবন্ত কবর দেন এবং তার ওপরই গড়ে তোলেন এই কালী মায়ের মূর্তি। এখানে বসেই তান্ত্রিক তাঁর তন্ত্রসাধনা করতেন। তান্ত্রিকের মৃত্যুর পর এরপর দক্ষিণ দিনাজপুরের এক জমিদার তান্ত্রিকের তন্ত্র সাধনার জায়গাতেই এই মন্দির গড়ে তোলেন। যা ছয়শো বছেরেরও পুরনো।হার হিম করা এই তন্ত্র সাধনার উপখ্যান আজও এই অঞ্চলের মানুষ সত্যি বলেই মানেন।
বিশেষ কিছু রীতি আছে এই মন্দিরে এই মা কালী হলেন অসূর্যস্পর্শা যার অর্থ সূর্যের আলো দেখেননা তিনি। মন্দিরেই বাস এই দেবীর তাই এই দেবীকে মন্দিরবাসীনি দেবী হিসাবে ডাকা হয়।
আজও তার উপস্থিতি ভক্তরা উপলব্ধি করেন।
নিয়ম করে প্রতি বছর কালীপুজোর দিন সূর্যাস্তের পরে কালীর মূর্তি তৈরি করার সঙ্গে সঙ্গে চক্ষু দান সহ মূর্তি তৈরি করে একরাতের মধ্যে পুজো সম্পন্ন করা হয় এবং সূর্যোদয়ের আগেই মাকে বিসর্জন দেওয়া হয়ে থাকে। এই প্রথাই চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। শাক্তমতে পুজো হয় তাই বলি দেওয়ার প্রচলন রয়েছে এই কালী পুজোয়।
বর্তমানে মন্দিরের অবস্থা প্রায় ভগ্নাশেষ। এই পুজোতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল, এখানে মহিলাদের প্রবেশ নিষেধ।যা বাংলার আর কোনো কালী মন্দিরে লক্ষ্য করা যায়না।পুজোর কাজ থেকে শুরু করে সবকিছু পুরুষরাই করে থাকেন।
মনে করা হয় যদি দেবী সূর্যের আলো দেখে ফেলেন তাতে গ্রামের অকল্যাণ হতে পারে।সব নিয়ম অক্ষরে অক্ষরে পালন করে দেবী মন্দির বসিনীর পুজো হয়।
বাংলার প্রাচীন কালী পুজোগুলি নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা চলতে থাকবে। ফিরে আসবো কালী কথার পরবর্তী পর্বে।পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।
.