Home Blog Page 20

পয়লা বৈশাখের শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন

পয়লা বৈশাখের শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

আজ পয়লা বৈশাখ শুরু হবে ১৪৩২ বঙ্গাব্দ।এই বৈশাখ মাসের বিশেষ আধ্যাত্মিক তাৎপর্য আছে এবং জ্যোতিষ শাস্ত্রেও বৈশাখ মাস নানা ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সেই সব নিয়েই আজকের পর্বে আলোচনা করবো।তবে প্রথমেই জানাই নব বর্ষের শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।

বাংলার জমিদারির যুগে পয়লা বৈশাখ মানে ছিলো খাজনা আদায়ের শুরু, নতুন ফসল বেচে কৃষকদের হাতে অর্থ আসতো এবং তারা উৎসবে মেতে উঠতেন আবার ভূমির মালিকরা নিজ নিজ অঞ্চলের অধিবাসীদেরকে মিষ্টান্ন দ্বারা আপ্যায়ন করতেন। চড়কের মেলা চলতো।আরো উৎসবের আয়োজন করা হত। কোথায় গম্ভীরা নাচ কোথাও বর্ষ বরণ উৎসব।

ব্যবসা বাণিজ্যর ক্ষেত্রেও পয়লা বৈশাখের ভূমিকা রয়েছে|তখনকার সময় এই দিনের প্রধান ঘটনা ছিল একটি হালখাতা তৈরি করা। হালখাতা বলতে একটি নতুন হিসাব বই বোঝানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে হালখাতা হল বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানপাঠের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে লিপিবদ্ধ করার প্রক্রিয়া। গ্রাম, শহর বা বাণিজ্যিক এলাকা, সকল স্থানেই পুরনো বছরের হিসাব বই বন্ধ করে নতুন হিসাব বই খোলা হয়। হালখাতার দিনে দোকনদাররা তাদের ক্রেতাদের মিষ্টান্ন আপ্যায়ন করে থাকে। এই প্রথাটি এখনও অনেকাংশে প্রচলিত আছে|

সনাতন ধর্মে বৈশাখ মাসকে মাধব মাস বা
মধুসূদন মাস বলা হয়।যার অর্থ ভগবান কৃষ্ণের মাস। এই মাসে ভগবান বিষ্ণুর আরাধনা করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।এই মধুসূদন মাসের
সূচনা হয় আজকের দিন থেকে।

“বৈশাখ” শব্দটি এসেছে বিশাখা নামক নক্ষত্রের নাম থেকে। এই মাসে বিশাখা নক্ষত্রটিকে সূর্যের খুব কাছে দেখা যায়। তাই জ্যোতিষ শাস্ত্রেও এই সময় একটি বিশেষ সময়।

শাস্ত্র মতে সূচনা হোক নতুন বছরের। আজ
সবাইকে জানাই শুভ নববর্ষ।ফিরে আসবো আগামী পর্বে।আগামী কাল থেকে মধুসুদন মাস উপলক্ষে শুরু করবো কৃষ্ণ কথা। থাকবে কৃষ্ণ সংক্রান্ত নানা শাস্ত্রী এবং পৌরাণিক বিষয় নিয়ে আলোচনা। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

চড়ক এবং গাজন উৎসবের ইতিহাস

চড়ক এবং গাজন উৎসবের ইতিহাস

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

চৈত্র মাস হল শিব পার্বতীর বমাস। এই মাসেই তাই গাজনের ধুম। এই গাজনের মাধ্যমে শিব ভক্তরা তাদের আরাধ্য মহাদেব কে এবং দেবী পার্বতীকে স্মরণ করেন।গাজনের শেষ দিনের অনুষ্ঠান চড়ক যা এই উৎসবেরই একটি অঙ্গ।আজকের পর্ব চড়ক এবং গাজন নিয়ে।

 

বাঙালির নব বর্ষের সূচনা হয় গাজন এবং চড়ক উৎসবের মধ্যে দিয়ে। এই গাজন এবং চড়ক দুটি বেশ প্রাচিন কাল থেকেই বঙ্গদেশে প্রচলিত। শিব পার্বতী ছাড়াও বহু লৌকিক দেব দেবী এই উৎসবে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে।

 

কেউ বলেন গর্জন থেকে গাজন, কেউ বলেন ‘গাঁয়ের জন’-এর উৎসব থেকে গাজন।প্রকৃত অর্থ যাই হোক দুটি অর্থই বেশ মানানসই।কারন এককালে ঢাকের বাদ্যি, ভোলা মহেশ্বরের নামে সন্ন্যাসীদের গর্জন ও গাজনগীতিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে উঠতো বাঙালি মেতে ওঠে গাজন উৎসবে। বর্তমান সময়ে গ্রামেই গাজন গানের উৎসব পালন হয়।বহু গ্রামাঞ্চলে আজও বৈশাখী আমেজ মানেই গাজন এবং চড়ক উৎসব।

 

তবে কলকাতার বাবু সমাজেও চড়ক বেশ জনপ্রিয় ছিলো এক সময়ে।

এককালে কলকাতার বাবুরা ঘটা করে চড়ক উৎসব পালন করতো।বাগবাজারের এই চড়ক ছিল কলকাতার বিখ্যাত ও সর্বপ্রধান চড়ক। চড়ক গাছের সঙ্গে উপর উপর চারটি মাচান বেঁধে তার মাঝখানে এক জন করে মহাদেব সাজিয়ে চার কোণে চার জন করে মোট ষোলো জনকে পিঠ ফুঁড়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হত।

 

এই উৎসবে মুখোশ নাচও হতো কোথাও কোথাও।সন্ন্যাসীদের কঠিন সাধনার মাধ্যমে এই উৎসব পালিত হতো।বিশেষ করে উত্তর বঙ্গে গম্ভীরা রূপে পালন হতো এই উৎসব।

 

পরবর্তীতে শারীরিক নৃশংসতার কারণে কোথাও কোথাও গাজনের কিছু উপাচার নিষিদ্ধ হয়। তবে এই চৈত্র উৎসবে সন্ন্যাসীদের নিষ্ঠা এবং

ভক্তি আজও অটুট আছে । বাংলার প্রায় প্রতিটি শিব মন্দিরে এই সব রীতি নীতি দেখা যায়।

আজও বাংলা জুড়ে গাজন এবং চড়কের মেলা বসে।আনন্দ এবং উৎসাহ আগের মতোই আছে।

 

আপনাদের সবাইকে জানাই গাজন এবং

চড়ক উৎসবের অনেক শুভেচ্ছা বাংলা নব

বর্ষ উপলক্ষে একটি বিশেষ পর্ব নিয়ে

ফিরে আসবো আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

বিশেষ পর্ব – নীল ষষ্টির শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা

বিশেষ পর্ব – নীল ষষ্টির শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

সনাতন ধর্মে যতগুলি ব্রত আছে তার মধ্যে অন্যতম হল নীল ষষ্ঠীর ব্রত।

দুরকম ভাবে এই দিনটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করা যায় একটি লৌকিক মতে দ্বিতীয়টি পৌরাণিক মতে।

আজ দুটি দিক নিয়েই লিখবো।

 

বহু কাল আগে এক গ্রামে এক ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণী ছিলেন। তাঁরা ছিলেন অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ। মন দিয়ে ঈশ্বরের আরাধনা করলেও তাঁদের সব ছেলে-মেয়েগুলি একে একে মারা যায়। এই ঘটনায় ঈশ্বরের উপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন ব্রাহ্মণী। তাঁরা দু-জনে ঘরবাড়ি ছেড়ে মনের দুঃখে কাশীবাসী হন। কাশীতে গিয়ে একদিন গঙ্গায় স্নান সেরে মণিকর্ণিকা ঘাটে বসে আছেন, হঠাত্‍ই এক বৃদ্ধা ব্রাহ্মণীকে দেখা দিয়ে একটি উপদেশ দেন। তিনি বলেন – চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন নির্জলা উপবাস রেখে মহাদেবের পুজো করবে। সন্ধেবেলা শিবের ঘরে বাতি দিয়ে তবেই জল খাবে।’ সেই রহস্যময়ী বৃদ্ধার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে ফের সন্তান লাভ করেন ওই ব্রাহ্মণী।

আসলে ওই বৃদ্ধা ছিলেন মা ষষ্ঠী। এবং সেই

থেকে মর্তে নীল ষষ্ঠীর ব্রত প্রচলিত হয়।

 

আবার পুরান মতে দেবাদিদেব শিবের অপর নাম নীলকণ্ঠ বা নীল কারন সমুদ্র মন্থণের সময় উঠে আসা বিষ পান করে তার কণ্ঠ নীল বর্ণের হয়ে যায়।নীল ষষ্টিতে শিবের এই নীল কণ্ঠ রূপের পুজো করা হয় বলে অনেকে বিশ্বাস করেন।

 

শাস্ত্র মতে এই তিথিতে শিবের সঙ্গে নীলচণ্ডিকা বা নীলাবতী পরমেশ্বরীর বিয়ে সম্পন্ন হয়।

দক্ষযজ্ঞে দেহত্যাগের পর সতী পুনরায় নীলধ্বজ রাজার বিল্ববনে আবির্ভূতা হয়ে ছিলেন ৷ এরপর রাজা তাঁকে নিজের মেয়ের মতো করে বড় করে শিবের সঙ্গে ফের বিয়ে দেন ৷ সেই বিবাহের তিথি উদযাপন করা হয় নীল পূজায়।

 

গ্রাম বাংলায় নীল ষষ্ঠীর ব্রত যারা করেন তারা সারাদিন নির্জলা উপোস রেখে সন্ধের পর শিবলিঙ্গে জল ঢেলে, মহাদেবের পুজো করেন এবং প্রসাদ খেয়ে তবে উপবাস ভঙ্গ করেন। সংসারের ও বিশেষ করে সন্তানের কল্যাণের জন্য।

এই ব্রত করা হয়।

 

ফিরে আসবো পরের পর্বে।চড়ক পুজো নিয়ে আলোচনা করবো আগামী দিনে সবাইকে জানাই নীল পূজোর শুভেচ্ছা। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

শুভ হনুমান জয়ন্তী

শুভ হনুমান জয়ন্তী

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

আজ হনুমানজির আবির্ভাব তিথি। এই দিনটিকে ‘হনুমান জয়ন্তী’ হিসেবে পালিত হয় আমাদের দেশে। এই পর্বে আসুন জেনে নিই রূদ্র অবতার হনুমান সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য|

পুরানের একটি ঘটনা অনুসারে একদা দশানন রাবণ কৈলাশে দ্বার পাহারারত নন্দীকে ব্যাঙ্গ করলে, বানর বলে|ক্ষিপ্ত হয়ে নন্দী রাবণকে অভিশাপ দিলেন, নর আর বানরের হাতেই রাবণ আর তার কূল ধ্বংস হবে|এই অভিশাপ সত্য
হয়ে ছিলো যখন হনুমান শ্রী রাম কে লঙ্কা আক্রমণ করতে সাহায্য করেন।

হনুমানের পিতার নাম ছিল কেশরী, মায়ের নাম ছিল অঞ্জনা। হনুমানের পালক পিতা হলেন পবন দেবতা|রাক্ষস বাহিনীর অত্যাচার থেকে ধরিত্রীকে মুক্ত করতে, তথা ভগবান রামের সেবা ও রাম নাম প্রচারের জন্যই রুদ্র অবতার হনুমানের আবির্ভাব।

শাস্ত্র মতে হনুমান চার যুগে অমর, পুরাণে তাই বলা হয়|এমনকি আজও তিনি স্বশরীরে এই পৃথিবীতে বিরাজমান।

রামায়নে রামের সহকারী হিসেবে রাবনকে পরাজিত করতে বিরাট ভূমিকা নিয়েছিলেন বজরংবলী কিন্তু এখানেই শেষ নয় হনুমানজী দ্বাপর যুগেও ছিলেন। মহাভারতেও তার উল্লেখ রয়েছে মনে করা হয় কুরুক্ষে যুদ্ধে অর্জুন ও শ্রীকৃষ্ণের রথের ধ্বজা হিসেবে ছিলেন তিনি সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি শ্রীকৃষ্ণের ইচ্ছায় কিন্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবা করেছেন। হনুমানজীর অনুরোধে শ্রীকৃষ্ণ রামচন্দ্রের রূপ ধারণ করে হনুমানকে একবার দর্শন দিয়েছিলেন।

যেখানে যেখানে রঘুনাথের গুণগান করা হয়, সেখানে সেখানেই তিনি বিরাজমান।
রামকৃষ্ণ মিশনের বহু প্রচলিত একটি রীতি হলো যেখানেই সাধুরা রাম নাম করবেন , কীর্তন ভজন হবে সেখানেই একটি ফাঁকা আসন রাখা হবে, মনে করা হয় ওই ফাঁকা আসনে এসে বসেন স্বয়ং হনুমান তারপর নাম গান শেষ হলে আবার অদৃশ্য হন|

হনুমান চালিসা অনুসারে রোগ ভোগ, ভুত পিশাচ এবং যেকোনো সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া যায় হুনুমানের স্মরণ নিলে, তাকে ভক্তি সহকারে ডাকলে|তিনি অসীম বল শালী কিন্তু সম্পূর্ণ নিরহংকার।রামায়ণে একমাত্র তিনিই নিষ্কাম কর্ম করে গেছেন। প্রভু শ্রী রাম কে সেবা করা ছাড়া তার আর কোনো লক্ষ্য নেই।

জ্যোতিষ শাস্ত্রে বলা হয় হনুমানের স্মরণ নিলে শনি দেবের কুপ্রভাব কেটে যায় কারণ লঙ্কা আক্রমণ করার সময় লঙ্কায় রাবনের হাতে বন্দী শনিদেবকে হনুমান মুক্তি দিয়ে ছিলেন। খুশি হয়ে শনি দেব তার ভক্তদের ক্ষতি না করার প্রতিশ্রুতি দেন।

আজ শাস্ত্র মতে হনুমানজীকে ডাকুন। তার পুজো করুন। তার কৃপায় সংকট দুর হয় মনোস্কামনা
পূর্ণ হয়।সবাইকে হনুমান জয়ন্তীর শুভেচ্ছা জানাই। ফিরে আসবো আগামী পর্বে পৌরাণিক এবং শাস্ত্রীয় আলোচনা নিয়ে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

জয় হনুমান – চিরঞ্জিবী হনুমানজী

জয় হনুমান – চিরঞ্জিবী হনুমানজী

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

আসন্ন হনুমান জয়ন্তী উপলক্ষে শুরু করেছি তিন দিন ব্যাপী বজরংবলী সংক্রান্ত ধারাবাহিক আলোচনা। আজ বজরংবলীর চিরঞ্জিবী সত্ত্বা নিয়ে লিখবো।

শাস্ত্রে যে সাতজন চিরঞ্জিবীর উল্লেখ আছে তাদের মধ্যে অন্যতম হনুমান।ভগবান হনুমান ভগবান ইন্দ্রের বরপ্রদত্ত। বিশ্বাস করা হয়, হনুমান একমাত্র নিজের ইচ্ছেয় মৃত্যুবরণ করতে পারবেন বলে বর দিয়েছিলেন ইন্দ্র।কিন্তু কেনো এমন বর দেয়ার প্রয়োজন হলো তা নিয়ে শাস্ত্রে একটি
ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়।

হনুমান যখন শিশু ছিলেন, তিনি সূর্যকে দেখেছিলেন এবং ভেবেছিলেন এটি একটি লাল ফল, তাই তিনি এটি খাওয়ার চেষ্টায় এর দিকে উড়ে গেলেন। ইন্দ্র যখন হনুমানকে আসতে দেখেন, তখন তিনি তাকে আঘাত করার জন্য তার বজ্র নিক্ষেপ করেন। আহত হন পবন পুত্র হনুমান সেই ক্রোধে পবন দেব পৃথিবীতে বায়ু সঞ্চালন করতে অস্বীকার করেছিলেন। বায়ুর অভাবে জীবকুল যখন শেষ হয়ে যেতে বসে তখন সমস্ত দেবতারা হনুমানকে বর দেন।বর দিয়েছিলেন যাতে যেকোনো ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারা হনুমানের কোনো ক্ষতি না হয়।ভগবান শিব বর দিয়েছিলেন যে তাঁর বা তাঁর কোনো অস্ত্র দ্বারা কখনোই হনুমানের মৃত্যু হবেনা।এই সময়ে দেবরাজ ইন্দ্র বর দিয়েছিলেন যে হনুমানের মৃত্যু কেবল তার নিজের ইচ্ছায় ঘটবে।

ভগবান শ্রী রামও বর দিয়েছেন হনুমানকে। সেই বর অনুযায়ী কলি যুগের শেষ হলে তবেই মুক্তি মিলবে হনুমানের।কলিতে যখন কল্কি অবতার রূপে ভগবান আসবেন তখন আবার দুষ্টের দমন এবং ধর্ম পুনরস্থাপন করতে হনুমানের সাহায্য প্রয়োজন হবে বলেও মনে করা হয়।

আবার সীতাদেবীর বর অনুযায়ী হনুমান চিরঞ্জীবী। তিনি অজর-অমর হওয়ার বর প্রাপ্ত। অর্থাত্‍‌ তিনি কখনও বুড়ো হবেন না। আবার তাঁর কখনও মৃত্যু হবে না। কথিত আছে, রামায়ণের সমস্ত চরিত্র মোক্ষ লাভ করে, কিন্তু হনুমান সব সময়ের জন্য পৃথিবীতে থাকার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, যত দিন মানুষের হৃদয়ে রাম জীবিত আছেন, তত দিন তিনি পৃথিবীতে থাকবেন।

অন্যান্য দেব দেবীদের তুলনায় হনুমান সহজে এবং দ্রুত তার ভক্তের ডাকে সাড়া দেন এবং তাদের মনোস্কামনা পূর্ণ করেন কারন তিনি স্বশরীরে এই পৃথিবীতে বিরাজ করছেন।

ফিরে আসবো পরের পর্বে। বজরংবলী সংক্রান্ত আরো একটি পর্ব নিয়ে। থাকবে হনুমান সংক্রান্ত আরো অনেক তথ্য।পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

জয় হনুমান – বেড়ি হনুমানের কথা

জয় হনুমান – বেড়ি হনুমানের কথা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আর কিছুদিন পরেই হনুমান জয়ন্তী। বজরংবলীর আবির্ভাব তিথি উপলক্ষে এই কটা দিন তার মহিমা বর্ণনা করবো। জানাবো বজরংবলী সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ পৌরাণিক তথ্য এবং ঘটনা। আজ শুরু করবো পুরীর বিখ্যাত বেড়ি হনুমানের মন্দির দিয়ে।

 

বাঙালির বড়ো প্ৰিয় এবং অন্যতম জনপ্রিয় তীর্থ ক্ষেত্র হচ্ছে শ্রীক্ষেত্র পুরী|আমি নিজে কতবার যে গেছি তার হিসেব নেই |যারা পুড়িতে গেছেন তারা নিশ্চই জানেন পুরী ধামে চক্রতীর্থের কাছে বেড়ি হনুমান মন্দির অবস্থিত।

 

পুরীর মন্দির তৈরির সময় বেশ সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল সমুদ্র। ক্রমাগত ঢেউয়ের চোটে, বারবার ব্যাঘাত ঘটছিল মন্দির নির্মাণে। সেই সময় প্রভু জগন্নাথ হনুমানকে মন্দির রক্ষার কাজে নিযুক্ত করেন। মন্দির তৈরী হওয়ার পরেও

কখনও কখনও সমুদ্রের ঢেউ পুরীতে প্রবেশ করত এবং তাতে বহু ভক্ত এবং সাধারণ পুরীবাসীকে ভুগতে হত।ফসলের ক্ষতি হতো।সেজন্য জগন্নাথদেব এখানে পাহারায় হনুমানকে নিযুক্ত করেন, যাতে সমুদ্র পুরী শহরে প্রবেশ করতে না পারে।বজরংবলী হনুমান পুরীতে দ্বার রক্ষক এবং জগতের নাথের ইচ্ছায় তিনি শ্রীক্ষেত্রর সুরক্ষার দায়িত্বে আছেন|

 

পুরীর এই মন্দিরে হনুমানের মূর্তি কেনো একটি বেড়ি দিয়ে আবদ্ধ করা হয়েছে।তার ও একটি কারন আছে|হনুমান তার আরাধ্য শ্রী রাম জন্ম ভূমি দর্শনের জন্য একবার ব্যাকুল হয়ে ওঠেন এবং তার অযোধ্যা পরিদর্শনের জন্য ইচ্ছা হয়। পুরীধাম পাহারার দায়িত্ব ফেলে ঐ স্থান ত্যাগ করে হনুমান অযোধ্যা গেলেন। ফলে সমুদ্রের জল শহরে প্রবেশ করে এবং শহরবাসীর খুব ভোগান্তি হয় ।

অনেকে বলেন সমুদ্র দেব জগন্নাথ দর্শন করতে পুরীর মন্দিরে প্রবেশ করতেন।

 

আসল কারণ যাই হোক।ভক্ত দের দুঃখ দেখে শ্রীজগন্নাথদেব হনুমানকে অযোধ্যা থেকে ফিরিয়ে আনলেন। তাঁকে এখানে বেড়ি দিয়ে আবদ্ধ করে রাখলেন এবং তাঁকে আজ্ঞা দিলেন যে, কখনও যেন সে এই স্থান ছেড়ে না যায় এবং দায়িত্ব সুন্দরভাবে পালন করেন

 

বেড়ি দিয়ে বা শৃঙ্খল দিয়ে আবদ্ধ করার জন্য বজরংবলীকে এখানে বেড়ি হনুমান বলা হয়|যেহেতু হনুমান পুরী ধামকে মহাসাগর বা দরিয়া থেকে সুরক্ষিত রাখতে দরিয়ার নিকটে অবস্থান করছে, সেজন্য তিনি দরিয়া হনুমান নামেও খ্যাত।যারা তীর্থ করতে পুরীতে আসেন তারা জগন্নাথ দর্শনের পাশাপাশি বেড়ি হনুমান দর্শন করতে ভোলেন না। বেড়ি হনুমান ভক্ত ভৎসল এবং তিনি সকল ভক্তের মনোস্কামনা পূরণ করেন।

 

আগামী পর্বে যথা সময়ে আবার ফিরে আসবো

বজরংবলী সংক্রান্ত পৌরাণিক এবং শাস্ত্রীয় আলোচনা নিয়ে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

শিব কথা – শিব এবং তন্ত্র শাস্ত্র

শিব কথা – শিব এবং তন্ত্র শাস্ত্র

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

চৈত্র মাস উপলক্ষে শিব কে নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা করছি আজ শিবের সাথে তন্ত্রের কি সম্পর্ক তা নিয়ে লিখবো।

 

তন্ত্র হিন্দুসমাজে প্রচলিত ঈশ্বর উপাসনার একটি পথবিশেষ। আসলে শিব ও মহাশক্তির উপাসনা সংক্রান্ত শাস্ত্রগুলিকেও তন্ত্র সাধনা নামে অভিহিত করা হয়।তন্ত্র শাস্ত্র অনুযায়ী, এই মহাবিশ্ব হল শিব ও মহাশক্তির দিব্যলীলা।যদিও তন্ত্র শব্দটির অর্থ ব্যাপক। তবে সংক্ষেপে তন্ত্র হচ্ছে “সৃষ্টির পরিচালনার নিয়ম”।

 

সাধারণত তন্ত্র সাধনা বলতেই কালী, তারা বা দশ মহা বিদ্যার কথা বলা হয় তবে তন্ত্রের সঙ্গে মহাদেবের সম্পর্ক অতি গভীর।বলা ভালো মহাদেব থেকেই তন্ত্রের উৎপত্তি কারন শিবের ডমরু থেকে তন্ত্রের জন্ম হয়েছে ডমরু মহাদেবের অন্যতম প্ৰিয় বস্তু।

 

তন্ত্রে যেসব ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও রীতি-নীতির বর্ণনা রয়েছে তার উদ্দেশ্যই হল মানুষকে অজ্ঞানতা ও পুনর্জন্মের হাত থেকে মুক্তি দেওয়া।

আর এই মুক্তি দেবাদিদেব মহাদেবের কৃপা ছাড়া সম্ভব নয়। শক্তি ছাড়া শিব এবং শিব ছাড়া শক্তি অসম্পূর্ণ।

 

আবার সতী বা দেবী দুর্গার দশটি রূপ দশ মহা বিদ্যা।এই দশমহাবিদ্যার উপর ভিত্তি করেই তন্তশাস্ত্রর ব্যাবহারিক দিকটি গড়ে উঠেছে।জ্যোতিষ শাস্ত্রে প্রতিটি গ্রহ দশ মহাবিদ্যার একেকটি বিদ্যার অধীনে আছে।এই দশ মহাবিদ্যার আবির্ভাব শিবের জন্যই হয়েছে। পুরানে সেই বর্ণনা রয়েছে।দেবী কালী বা দেবী কৌশিকীর আবির্ভাবের সাথেও প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ ভাবে শিবের সম্পর্ক রয়েছে।

 

সংক্ষেপে বলা যায় মহাদেব ও আদ্যা শক্তি মহামায়া এই দুই অনন্ত ও অসীম শক্তি তন্ত্রের আধার।

 

ভারতের সর্বাধিক জনপ্রিয় তন্ত্র সাধনার

জায়গা হল নীলাচল পর্বত। যা ‘কামাখ্যাধাম’ নামে পরিচিত।তেমনই মহাদেবের বাস কৈলাশ পর্বতেও বহু অলৌকিক শক্তির উপস্থিতি আছে যাকে অনেকেই তন্ত্রশক্তির সাথে তুলনা করেন।

 

তন্ত্র এমনই একটি শাস্ত্র যার মাধ্যমে নিজেকে অনুসন্ধান করা যায়। নিজের অন্তরের ঈশ্বরকে খুঁজে পাওয়া যায়।স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেব কে প্রসন্ন করা যায়।

 

তন্ত্র জ্ঞানচক্ষু উম্মোচন করে। সৃষ্টির কারন বুঝতে সাহায্য করে তন্ত্র। তন্ত্র সৃষ্টি, স্থিতি ও বিনাশের পরিচালনা শক্তি। ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর এই তিন শক্তির সমন্বয়ে সাধিত হয় তন্ত্র শক্তির অদৃশ্য বৃত্ত যা আমাদের জীবন ও সমগ্র সৃষ্টিকে পরিচালনা ও প্রভাবিত করে।

 

যে অঘোরো পন্থা তন্ত্রের একটি পথ সেই পন্থায় বিশ্বাসীরা শিবকেই আদি অঘোরী বলে মানে।

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে শিব ও তন্ত্র দুটি পরস্পরের সাথে সম্পর্ক যুক্ত।

 

ফিরে আসবো পরের পর্বে। শিব সংক্রান্ত

আরো অনেক কথা বলার আছে।

পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

শিব কথা – ত্রিশূল রহস্য

শিব কথা – ত্রিশূল রহস্য

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

দেবতা দের আরাধ্য দেবতা হলেন দেবাদিদেব মহাদেব।তিনি আবার সংহার কর্তাও। যতো কঠিন কাজের ভার তার উপরেই অর্পণ করা হয়।

মা গঙ্গাকে জটায় ধারণ করা হোক বা হলাহল বিষ পান করা হোক সবই শিবকে করতে হয়েছে।

 

কিন্তু শিবের অস্ত্র ত্রিশুল কে নিয়ে সেই ভাবে আলোচনা হয়না তবে দেবাদিদেব মহাদেবেকে নিয়ে আলোচনা অসম্পূর্ণ থেকে যায় যদি তার চির সঙ্গী ত্রিশূলের কথা না বলা হয়। সংহার কর্তা মহাদেবের প্রধান অস্ত্র তার ত্রিশূল।

 

শুধু অস্ত্র নয় শুভ শক্তির প্রতীক এই ত্রিশূল।

আবার এই ত্রিশূলই তিনি তুলে দেন দেবী দুর্গার হাতে মহিষাসুর বধের সময়ে।কারণ অশুভ শক্তি নাশের ভার ছিলো দেবী দুর্গার উপরে।

 

দেব শিল্পী বিশ্ব কর্মাই সমস্ত দৈব্য এবং স্বর্গীয় নির্মাণ করে থাকেন মহাদেবের অস্ত্র নির্মাণের ভার স্বাভাবিক ভাবেই গিয়ে পরে দেব শিল্পী

বিশ্বকর্মার উপর|

 

বিষ্ণুপুরান অনুসারে সূর্যের তেজ ও রশ্মির ব্যবহার করে দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা ত্রিশূল নির্মাণ করেন এবং তা শিবকে প্রদান করেন|এতে শিব ও তার অস্ত্র পান এবং সূর্যের তেজ কিছুটা কমে তাতে বিশ্বকর্মার কন্যা এবং সূর্যর পত্নী সংজ্ঞা স্বামীর অতিরিক্ত তেজ থেকে কিছুটা স্বস্তি পান|এখানে ত্রিশুল একসাথে দুটি সমস্যার সমাধান করে।

 

ত্রিশুল দিয়ে যেমন শিব ব্রম্ভার একটি মাথা খণ্ডন করেন তেমনই ত্রিশূল দিয়ে শিব দ্বারা গণেশের মুন্ড ছেদের ঘটনারও উল্লেখ আছে শাস্ত্রে। আবার বহু অসুর এবং দৈত্যর প্রাণ গেছে এই ত্রিশুলের আঘাতে।

 

ত্রিশূল শুধু অস্ত্র নয় সনাতন ধর্মে ত্রিশূল সমৃৃদ্ধির প্রতীক আবার ত্রিশূলের তিনটি ফলার আলাদা আলাদা ব্যাখ্যা ও তাৎপর্য রয়েছে|মনে করা হয় তিনটি ফলা যথাক্রমে সৃষ্টি-স্থিতি-বিনাশ কে চিহ্নিত করে আবার অন্য একটি বাখ্যা অনুসারে তিনটি ফলার অর্থ যথাক্রমে অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত যা শিব তথা মহাকালের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে|শিবের ত্রিশূলে সব সময় বাঁধা থাকে ডমরু। এই ডমরু বেদ এবং তার উপদেশের প্রতীক যা আমাদের জীবনে এগিয়ে চলার রাস্তা দেখায়|শুধু হিন্দু নয় বৌদ্ধ ধর্মেও ত্রিশূল একটি পবিত্র প্রতীক হিসেবে সমাদৃত। সনাতন ধর্মের পবিত্র নগরী কাশী অবস্থান করছে এই মহাদেবের ত্রিশূলে।

 

বাস্তু শাস্ত্র মতে গৃহের প্রধান ফটকে ত্রিশূল চিহ্ন বা ত্রিশূল রাখলে গৃহে অশুভ শক্তি প্রবেশ করেনা ও গৃহে সুখ ও সমৃদ্ধি বিরাজ করে|জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে শ্রাবন মাসে এবং নীল ষষ্টির শিব পুজোর সময়ে শিবকে ত্রিশূল অর্পণ করলে শিব সন্তুষ্ট হন এবং মনোস্কামনা পূর্ণ করেন।কবচ আকারে পবিত্র ত্রিশুল ধারন করলেও ভালো ফল পাওয়া যায় বলে অনেকে বিশ্বাস করেন।

 

চৈত্র মাস জুড়ে চলতে থাকবে শিব নিয়ে আলোচনা আগামী পর্বে আবার কোনো নতুন বিষয় নিয়ে আসবো আপনাদে সামনে|

পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

রামনবমীর শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা

রামনবমীর শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

আজ রাম নবমী। দীর্ঘ টানা পোড়েন এবং আইনি জটিলতার পরে রাম লালা তার জন্ম ভূমিতে বিরাজমান হয়েছেন। এই মুহূর্তে সারা দেশ জুড়ে শ্রী রাম কে নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ এবং উদ্দীপনা চোখে পড়ছে তবে এতো কিছুর মাঝে শাস্ত্রকে ভুলে গেলে চলবেনা। আজ আপনাদের রাম নবমীরে শাস্ত্রীয় এবং আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা জানাবো।

শ্রী রাম ছিলেন সূর্য্য বংশীয় রাজা দশরথের অস্বমেধ যোগ্য লব্ধ যেষ্ঠ পুত্র। শৈশব থেকেই তিনি রাজধর্ম পালন করছেন কারন রামের যখন চোদ্দ বছর বয়স তাকে ঋশি বিস্বামিত্র রাক্ষস দের হাত থেকে যজ্ঞ রক্ষা করার জন্য দশরথের কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে যান। সেই থেকে শুরু হয় তার দুষ্টের দমন এবং শিষ্টের পালন যা শেষ হয় রাবন বধের মধ্যে দিয়ে।

বিভিন্ন যুগে ভগবান বিষ্ণু বিশ্ব সংসারের সকল মানুষকে ন্যায়পরায়ণতার ও সত্যের পথ প্রদর্শন করতে মিথ্যার উপর সত্যের জয় প্রতিষ্ঠা করতে
নানা অবতার রূপে আমাদের ধরিত্রী তে অবতরণ করেন|ত্রেতা যুগে রাম ভগবান বিষ্ণুর সপ্তম অবতার রূপে জণ্মেছিলেন।

সনাতন ধর্মে যতজন ভগবানের অবতার আছেন তাদের মধ্যে রামকে এক কথায় সর্বশ্রেষ্ঠ বলা যায়।
তিনি ন্যায় এবং সুশাসনের প্রতীক। তার জীবন এবং দর্শন ভারতের আদর্শ। আজ তার তার জন্ম তিথিকেই আমরা রাম নবমী রূপে পালন করি।রাম নবমী পালন করার মূল উদ্দেশ্য হল অধর্মকে নিক্ষেপ করে ধর্মকে স্থাপন করা। মন্দ শক্তির বিনাশ করে শুভ শক্তির সূচনা করা।

ভগবান রামের উল্লেখ যে শুধুমাত্র প্রাচীন হিন্দু গ্রন্থে পাওয়া যায় তা নয়, জৈন এবং বৌদ্ধ ধর্ম গ্রন্থেও ভগবান রামের উল্লেখ আছে। বিশ্বের বহু দেশেই রামের মন্দির আছে,ইন্দোনেশিয়ায় রয়েছে পৃথিবীর বৃহত্তম রাম মূর্তি|শ্রী রাম সততার প্রতীক, ত্যাগের প্রতীক,অসত্যর উপর সত্যর জয়ের প্রতীক|রাজ ধর্ম পালন করতে তিনি যে আত্মত্যাগ করেছেনতা এক দৃষ্টান্ত|রাম নামকে বলা হয় কলিযুগের সব অন্ধকারকে দূর করে এগিয়ে যাওয়ার প্রধান অস্ত্র|

শাস্ত্রমতে এই রাম নবমী উপলক্ষ্যে ধার্মিক ব্যক্তিরা সমগ্র দিন জুড়ে বৈদিক মন্ত্র পাঠ করেন। সমগ্র দিনজুড়ে ভক্তিমূলক গান গাওয়া বিভিন্ন হিন্দু ধর্মীয় বইগুলি থেকে পাঠ করে শোনাবার রীতি আছে| এই দিনটিতে রাম কথার বর্ণনা করে, রাম কাহিনী পড়ে সহজেই বিষ্ণুর কৃপা লাভ করা যায়, অনেকে মন্দিরে যান, অনেকে বাড়িতে রামের মূর্তিতে পূজা করেন। বহু স্থানে সূর্য দেবকে জল প্রদান করে সূর্য দেবতার আশীর্বাদ গ্রহণ করা হয় আজকের দিনে|

এই কলি যুগে রাম নাম মুক্তির পথ। শুধু মাত্র নাম জপের মাধ্যমে অসাধ্য সাধন হতে পারে। পুরানে আছে দস্যু রত্নাকর শুধু রাম নাম জপ করে সব পাপ থেকে মুক্ত হয়ে ঋষি বাল্মীকিতে রূপান্তরিত হয়ে ছিলেন।

সবাইকে জানাই রাম নবমীর শুভেচ্ছা। ফিরে আসবো আগামী দিনে। শিব সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনায়। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

দেবী অন্নপূর্ণার শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা 

দেবী অন্নপূর্ণার শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা

 

বিশেষ পর্ব

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজ দেবী অন্নপূর্ণার পূজা|আজকের এই বিশেষ পর্বে দেবী অন্নপূর্ণার রূপ এবং তার শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা নিয়ে আলোচনা করবো।

 

তিথি মেনে চৈত্র মাসের শুক্লাপঞ্চমী তিথিতে অন্নপুর্ণার পুজা করা হয়। সাধারণত কালী বা জগদ্ধাত্রী পুজোর মতই তান্ত্রিক মতে এই

পুজো হয়ে থাকে।

 

শাস্ত্র মতে দেবী অন্নপূর্ণা মূলত দ্বিভূজা আবার চতুর্ভূজা রূপেও কোথাও কোথাও তার পুজো দেবীর গায়ের রঙ উজ্জ্বল গৌর বর্ণ। দেবীর বামহাতে সোনার অন্নপাত্র। ডানহাতে চামচ বা হাতা।মাথায় বিরাজিত অর্ধচন্দ্র। তিনি ক্ষুধার্ত মহাদেবকে অন্নদান করছেন স্মিতহাস্যে তার এক পাশে শ্রী ও অন্য পাশে ভূমি|এই হলো দেবীর শাস্ত্রে উল্লেখিত রূপ আবার দেবীকে একা শান্ত এবং সৌম রূপে পদ্মাসনে বিরাজিতা রূপেও দেখা

যায়।

 

সনাতন ধর্মে দেবী অন্নপূর্ণার আধ্যাত্মিক তাৎপর্য অপরিসীম|অন্নদামঙ্গল কাব্য রচিত হয়েছে দেবীর মহিমা কীর্তন করে। আবার প্রাচীন তন্ত্রসার গ্রন্থে দেবীর পূজা পদ্ধতি রয়েছে।

 

দেবী অন্নপূর্ণা সম্পর্কে অনেকে মনে করেন যে তিনি গ্রিক ও রোমান দেবী ‘অন্নোনা’র রূপান্তর। প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যর ধ্বংসাবশেষ থেকে দেবীর যে মূর্তি পাওয়া যায় তাতে তার বামহাতে শিঙ্গা আর ডানহাতে তুলাদণ্ড।যদিও এই মতবাদ যুক্তি গ্রাহ্য নয় কারন। দেবী অন্ন পূর্ণা হাজার হাজার বছর থেকে সনাতন ধর্মে পূজিতা হয়ে আসছেন। তিনি শস্যর দেবী রূপে প্রাচীন হরপ্পা সভ্যতায় পূজিতা ছিলেন।

 

আবার গ্রাম বাংলায় তিনি লৌকিক দেবী। ভালো ফসল পাওয়ার জন্য এবং সংসারে স্বচ্ছলতা প্রার্থনা করে বঙ্গদেশে সাধারণ মানুষ অন্নপূর্ণার পুজো করেন অগ্রহায়ণ মাসের নবান্নের সময়। এটি প্রাচীন পুজো যা পরবর্তীকালে কাশীতে অনুপ্রবেশ করেছিল প্রবাসী বাঙালিদের মাধ্যমেই।

 

তীর্থ ক্ষেত্র কাশীতে দেবী অন্নপূর্ণার বিখ্যাত মন্দির রয়েছে। সেখানে প্রতি বছর ধুমধাম করে অন্নপূর্ণা পুজো হয়ে থাকে। এই মন্দিরে অন্নকূট উত্‍সব বিখ্যাত।

 

দেবী অন্নপূর্ণাকে প্রনাম জানিয়ে আজকের পর্ব শেষ করলাম। ফিরে আসবো শিব সংক্রান্ত আলোচনা নিয়ে আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।