Home Blog Page 19

কৃষ্ণ কথা – শ্রী কৃষ্ণ এবং গয়না চোর

কৃষ্ণ কথা – শ্রী কৃষ্ণ এবং গয়না চোর

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

ভগবান শ্রী কৃষ্ণ লীলা ধর।তিনি যে কার সাথে কখন কি লীলা করবেন তা বোঝা দায়। আজ কৃষ্ণ কথায় শ্রী কৃষ্ণের এক অদ্ভুত লীলা অপনাদের শোনাবো।

 

এক সময়ে সময়ে বৃন্দাবনে গোবর্ধন নামে এক কুখ্যাত চোর ছিল। একদিন রাজকর্মচারীরা তাকে ধরার জন্য তাড়া করছিল। পালতে গিয়ে সে এক ভগবত পাঠের আসরে ঢুকে পরে। রাজ কর্ম চারীরা ভগবত পাশের আসরে প্রবেশ না করে ফিরে যায়।

 

সেই সময় সেখানে আলোচনাটি চলছিল ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শৈশব সম্পর্কে। কথাকার উল্লেখ করেছিলেন যে শ্রীকৃষ্ণ একজন সাত বা আট বছরের শিশু। তিনি প্রতিদিন গরু চরানোর সময় একটি সোনার লাঠি বহন করেন এবং একটি সোনার মুকুট পরেন।তার গায়ে থাকে বহু মূল্য সোনার গহনা।সেই চোর মনে মনে ভাবতে লাগলো বনে একা একটি ছোট ছেলেকে ডাকাতি করা সহজ হবে।এ সুযোগ ছাড়া যাবেনা। সেই বালককে খুঁজে বের করতেই হবে।

 

আলোচনা শেষ হলেই চোর বক্তাকে সেই ছেলের ঠিকানা জিগেস করলো।কথাকার বললেন সে অনেক দূরে, মথুরার বৃন্দাবনে থাকে। তার বাবার নাম নন্দ বাবা।তারপর পুরো ঠিকানাও দিলো আর ছলে যাওয়ার সময় তাকে পরামর্শ দিলো যে সে চোরদেরও নেতা। সে এত সহজে ওকে ডাকাতি করতে পারবে না। চোর স্বগর্বে ঘোষণা করল, আমি শপথ করছি, যতক্ষণ না আমি ওই ছেলেটিকে ডাকাতি করি, ততক্ষণ আমি জল স্পর্শ করবো না।তার জেদ দেখে তিনি বললেন কিছু মাখন এবং চিনি তোমার সাথে নিয়ে যাও। এতে সে খুশি হতে পারে।চোর তাই করলো।

 

বেচারা চোর, ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত অবস্থায় বৃন্দাবনের পথে পথে ঘুরতে লাগলো । যাদের জিজ্ঞাসা করেছিল তারা সবাই তাকে বলেছিল যে শ্রী কৃষ্ণ আর নেই এখনে। সে অনেক যুগ আগের কথা। ভগবানের দর্শন পাওয়া এযুগে ওতো সোজা না অনেক তপস্যা করতে হয়।কিন্তু চোর হাল ছাড়বেনা। কৃষ্ণকে তার চাই। সেই সব সোনার গহনা তার চাই।

 

অবশেষে একদিন সে দেখতে পেল অনেক সুন্দর গরু এবং রাখাল তার সামনে এসে হাজির। তাদের মধ্যে সেই মনোমুগ্ধকর শিশু কৃষ্ণও ছিল যার জন্য তার এখানে আসা। সেই সব গহনা। মুকুট এবং সোনার লাঠি সবই আছে।চোর এগিয়ে গিয়ে ভগবানকে বললেন তোমার সমস্ত অলংকার খুলে আমাকে দাও।শ্রী কৃষ্ণ ভীত না হয়ে মৃদু হেসে অসম্মতি জানালেন।চোর এবার বললো আমি তোমার জন্য মাখন এবং চিনি এনেছি। এই কথা শুনে ভগবান খুশি হলেন এবং সব অলংকার এবং সোনার লাঠি তার হাতে দিলেন।

 

সেই মুহূর্তে চোরের বোধদয় হলো।সে বুঝলো এসব তুচ্ছ। স্বয়ং ভগবানের দর্শন পেয়েছে সে। সব ত্যাগ করে নিজের দেহ মন সেই মুহূর্তে ভগবানের চরণে সমর্পন করে উদ্ধার লাভ করলো কুখ্যাত গোবর্ধন চোর। ভগবান ও তাকে কৃপা করলেন কারণ এক জন চোর হয়েও সে ভগবানে আস্থা রেখেছে। সব ভুলে তার জন্য ব্যাকুল হয়ে ছুটে বেরিয়েছে।

 

পরবর্তী পর্বে আরো এক কৃষ্ণ লীলা নিয়ে আপনাদের জন্য ফিরে আসবো কৃষ্ণ কথায়।

পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কৃষ্ণ কথা – নরকাসুর বধ

কৃষ্ণ কথা – নরকাসুর বধ

কৃষ্ণ কথা – নরকাসুর বধ

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

শ্রী কৃষ্ণ এই সৃষ্টিকে একাধিক বার বহু ভয়ঙ্কর অসুরের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। বহু অসুর কে বধ করে তাদের উচিৎ শিক্ষা দিয়েছিলেন। এমনই এক অসুর ছিলো নরকাসুর। আজকের পর্বে জানাবো এই নরকাসুর বধের কথা।

পুরান অনুসারে নরকাসুর নামে এক অসুর তার শক্তি দিয়ে দেবতা ও ঋষিদের সঙ্গে ১৬ হাজার একশত সুন্দরী রাজকন্যাকে বন্দী করেছিল এবং তাদের নিজের দাসী বানিয়ে রেখে ছিলো।
নরকাসুরের অত্যাচারে দেবতা ও সাধুরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শরণাপন্ন হন।কিন্তু নরকাসুরকে বধ করা ভগবানের পক্ষেও সহজ ছিলো না কারন
নরকাসের নিয়তি ছিলো যে সে এক মহিলার হাতে বধ হবে।তাই ভগবান শ্রী কৃষ্ণ তাঁর স্ত্রী সত্যভামার
সহায়তা চান এবং কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশীতে শ্রী কৃষ্ণ এবং তার স্ত্রী সত্য ভামা নরকাসুরকে যুদ্ধে পরাজিত করেন এবং বধ করেন এবং ১৬ হাজার একশত রাজকন্যাকে তাঁদের বন্দিদশা থেকে মুক্ত করেন।

নরকাসুরের মৃত্যুর পর বন্দী দশা থেকে মুক্তি পেয়ে সেই ষোলো হাজার রমণী শ্রী কৃষ্ণের কাছে তাদের উদ্ধার করার প্রার্থনা জানান। স্বামী ছাড়া সেই যুগে রমণীদের সমাজে সন্মান এবং নিরাপত্তা হীনতায় ভুগতে হতো তাই তাদের নিরাপত্তা এবং সন্মান প্রদান করতে শ্রী কৃষ্ণ তাদের শাস্ত্র মতে বিবাহ করেন। এই কারণেই শ্রী কৃষ্ণের ষোলো হাজার স্ত্রীর কথা শাস্ত্রে উল্লেখ আছে।

নরকাসুরকে বধের তিথি আজও নরক চতুর্দশী রূপে পালিত হয়।কথিত আছে যে, শ্রীকৃষ্ণ যখন নরকাসুরকে বধ করেছিলেন, তখন তাকে বধ করার পর তিনি তেল দিয়ে স্নান করেছিলেন তাই আজও নরক চতুর্দশীতে তেল মাখানোর বা তেল অর্পণ করার রীতি প্রচলিত আছে।

ফিরে আসবো কৃষ্ণকথার পরবর্তী পর্ব নিয়ে। থাকবে কৃষ্ণ সংক্রান্ত এরকম অনেক তথ্য এবং পৌরাণিক ঘটনা। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কৃষ্ণ কথা – অঘাসুর বধ

কৃষ্ণ কথা – অঘাসুর বধ

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

জন্ম থেকেই শ্রী কৃষ্ণকে বধ করতে চাইতেন তার মামা কংশ। একের পর এক অসুর এবং দৈত্যকে তিনি পাঠিয়েছেন। একাধিক বার ষড়যন্ত্র করেছেন কৃষ্ণর বিরুদ্ধে। কিন্তু যিনি স্বয়ং ভগবান তাকে বধ করা অসম্ভব। প্রতিবারই শ্রী কৃষ্ণ নিজেকে এবং নিরীহ ব্রজবাসীদের রক্ষা করেছেন। আজকের পর্বে শ্রী কৃষ্ণ কতৃক অঘাসুর বধের বৃত্তান্ত আপনাদের জানাবো।

 

একদিন শ্রীকৃষ্ণ তার বন্ধুদের একত্রিত করে বনভোজনে যান। বনভোজনের আনন্দে তাঁরা সকলেই উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিল।মনের আনন্দে সবাই নানারকম খেলাধুলা করতে লাগলেন সেই সময় কংসের আদেশে অঘাসুর কৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য বৃন্দাবনে আসেন।সম্পর্কে অঘাসুর ছিল পুতনা ও বকাসুরের ছোট ভাই।

 

খুঁজতে খুঁজতে অঘাসুর বনে প্রবেশ করেন এবং কৃষ্ণকে দেখে এক সাধারণ নরশিশুই মনে করেন ওই মহাসুর। ক্রোধে এবং ভীষণ প্রতিশোধস্পৃহায় আগুনের মতো জ্বলতে থাকে সেই ভয়ঙ্কর অসুর । কৃষ্ণকে দেখে অঘাসুর ভাবে, এই ছেলেই তাঁর বোন ও ভাইকে হত্যা করেছে।যেভাবেই হোক কৃষ্ণকে সে বধ করবেই।

 

অঘাসুর নিজের রূপ বদলাতে জানতো।কৃষ্ণকে বধ করার জন্য জঙ্গলের মধ্যে নিজেকে বিশাল অজগর সাপে পরিণত করে পর্বতের গুহাসদৃশ মুখ প্রসারিত করে কৃষ্ণের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। কৃষ্ণ সহ বাকি গোবালকরা অঘাসুরের মায়ায় মোহিত হয়। ভাবে অজগর সাপের মতো দেখতে একটি প্রাকৃতিক গুহা। সেই গুহার ভিতরে যাওয়ার কৌতূহল প্রকাশ করে তাঁরা। সকলেই জানে, তাঁদের রক্ষা করার জন্য কৃষ্ণ তো রয়েছেই। বিপদ এলে সেই তাঁদের রক্ষা করবে। সেই কথামতো গোপ বালকরা ওই অজগর সাপ সদৃশ গুহার ভিতরে প্রবেশ করে।কৃষ্ণ অন্তর্যামী তিনি সব জেনেও না জানার ভান করে বাইরে অপেক্ষা করতে লাগলেন। এদিকে কৃষ্ণের জন্য অপেক্ষা করছিল অঘাসুর। তাই তাঁদের তখনই গিলে ফেলল না।সেঅ অপেক্ষা করতে লাগলো।

 

কিছুক্ষন পর বালক কৃষ্ণ সব বুঝতে পেরে সঙ্গীদের রক্ষা করার জন্য অঘাসুরের মুখগহ্বরে প্রবেশ করেন। সাথে সাথে অঘাসুর অর্থাৎ সেই অজগর সাপটি তার মুখ বন্ধ করে সব পথ বন্ধ করে দিল। এটাই ছিলো তার চরম ভুল।কৃষ্ণ তার দেহ প্রসারিত করে করতে থাকেন। অঘাসুরের পক্ষে আর বেশিক্ষন সেই দেহ ধারণ করা সম্ভব ছিলো না।নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে অঘাসুরের চোখদুটি বাইকে বেরিয়ে আসে।অঘাসুর সেখানেই মৃত্যুবরণ করে।এবং শ্রী কৃষ্ণ সহ তার সখারা বাইরে বেরিয়ে আসে।

 

পরবর্তী পর্বে কৃষ্ণের এমনই এক লীলা নিয়ে আবার ফিরে আসবো কৃষ্ণ কথায়। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কৃষ্ণ কথা – শ্রী কৃষ্ণ এবং ফল বিক্রেতা

কৃষ্ণ কথা – শ্রী কৃষ্ণ এবং ফল বিক্রেতা

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

বৃন্দাবনে আজও শ্রী কৃষ্ণের একটি বাল্য লীলা সবার মুখে মুখে ফেরে যেখানে শ্রী কৃষ্ণ একজন সাধারণ ফল বিক্রেতা রমণীকে খেলার ছলে তার অলৌকিক শক্তি দেখিয়ে ছিলেন।

একদিন শ্রী কৃষ্ণ তার সখাদের সাথে বৃন্দাবনের পথে খেলছিলেন। ঠিক সসময় এক দরিদ্র ফল বিক্রেতা মহিলা এলেন । ক্ষুদার্থ শ্রী কৃষ্ণ ফল
বিক্রেতার কাছে ফল চাইলেন।ফল বিক্রতা বললেন তার ছেলেমেয়েরা তিন দিন থেকে অনাহারে আছি । এই ফল বেচে তাদের জন্য খাবার কিনতে হবে। তাই কিছু অন্নর বিনিময়ে তিনি ফল দিতে পারবেন।এই কথা শুনে শ্রী কৃষ্ণ ঘরে অন্ন অনতে গেলেন।

অন্ন নিয়ে আসার সময়ে ছোট কৃষ্ণের হাতের মধ্যে থেকে সব অন্ন পড়ে গেল। তিনি আবার গেলেন অন্ন আনতে কিন্তু এবার ও ব্যার্থ হলেন।এমন করে বেশ কয়েকবার একই ঘটনা ঘটলো বারবারই সব অন্ন নিচে পড়ে যেতে লাগল।

এই ঘটনা দেখে ফলবিক্রেতা মহিলার মন গলে গেল ।বলল আমারো দুটো ছেলে আছে তাদের ক্ষিধার জন্য কান্না তিনদিন থেকে দেখছি । তুমিও আমার পুত্র সম। তুমিও ক্ষুদার্থ এই নাও আমার ঝুড়ির সব ফল নাও ।কৃষ্ণ আনন্দে সব ফল গ্রহন করলেন।

এদিকে সব ফল দান করে শুন্য ঝুড়ি নিয়ে ঘরে ফিরে আসে ঐ ফল বিক্রেতা মহিলা । তার এক ছেলে সেই ঝুড়ির দিকে এগিয়ে যায় ।ভাবে যদি অন্ন বা অন্য খাদ্য সামগ্রী পাওয়া যায় । কিন্তু গিয়ে দেখে একি সেই ঝুড়ি তো স্বর্নালংকারে ভর্তি ।ফলবিক্রেতা এই লীলা দেখে বুঝতে পারে শ্রী কৃষ্ণ সাধারন মানব না। তিনি অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন দেব শিশু বা হয়তো ভগবান আজ
তাকে কৃপা করেছেন।তার সব কষ্ট দুর হয়েছে।

কৃষ্ণ কথা পরবর্তী পর্ব নিয়ে আবার ফিরে আসবো যথা সময়ে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কৃষ্ণ কথা – রাধা কৃষ্ণর বিবাহ

কৃষ্ণ কথা – রাধা কৃষ্ণর বিবাহ

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

শ্রী কৃষ্ণের প্রেম লীলা নিয়ে এবং শ্রী রাধার সাথে তার সম্পর্ক নিয়ে যতটা আলোচনা হয় তাদের বিবাহ নিয়ে ততটা আলোচনা হয়না কারণ অনেকই মনে করেন বিষয়টি বিতর্কিত এবং শাস্ত্রে নানা রকম যুক্তি এবং ব্যাখ্যা আছে। আজ শ্রী কৃষ্ণ এবং শ্রী রাধার বিবাহ নিয়ে লিখবো।

 

যারা মনে করেন কৃষ্ণ রাধাকে বিবাহ করেননি তাদের মত শ্রী কৃষ্ণ এবং রাধা এক এবং অভিন্ন একই শক্তির দুই রূপ তাই তাদের বিবাহর প্রয়োজন নেই। তবে শাস্ত্রে রাধা কৃষ্ণর বিবাহের কথা আছে। সে বিষয়ে পরে আসছি আগে রাধার সাথে আয়ান ঘোষের বিবাহ নিয়ে বলা প্রয়োজন।

 

আয়ানের আসল নাম অভিমন্যু। গোকুলের বাসিন্দা আয়ান পেশায় ছিলেন দুধের ব্যবসায়ী। সম্পর্কে কৃষ্ণের পালিকা মা যশোদার তুতো ভাই ছিলেন আয়ান। তাঁর সঙ্গে রাধার বিয়ের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন কৃষ্ণের পালক পিতা নন্দ। কালী-ভক্ত আয়ান পুজো-অর্চনা নিয়েই থাকতেন। অন্য কোনও বিষয়ে তাঁর বিশেষ আগ্রহ ছিল না।

তাই বিবাহ হলেও রাধা এবং আয়ান ঘোষের মধ্যে দাম্পত্য জীবন সেই ভাবে গড়ে ওঠেনি।

 

শ্রী রাধা এবং কৃষ্ণের প্রেম পবিত্র এবং তা পূর্ব নির্ধারিত কারণ কৃষ্ণ আসলে নারায়ণের একটি রূপ এবং রাধা লক্ষ্মীর রূপ। রাধা-কৃষ্ণের প্রেম যুগ যুগ ধরে চলে আসছে রাধা-রূপী লক্ষ্মী কৃষ্ণের সঙ্গীনি হতেই মর্ত্যে অবতীর্ণ হয়েছিলেন।

 

আবার শাস্ত্রে এও আছে যে ছোটবেলায় খেলার ছলে রাধা কৃষ্ণের বিবাহ সম্পন্ন হয় এবং সেই বিয়ের আচার সম্পূর্ণ করেন স্বয়ং ব্রহ্মা।

বিয়ের সাক্ষী ছিলেন সব দেবতাগণ। কৃষ্ণের সঙ্গে আগেই বিয়ে হয়ে যাওয়ায় আয়ানের সঙ্গে রাধার বিয়ে বৈধ নয় এবং রাধা কৃষ্ণের সম্পর্ক বিবাহ বহির্ভূত নয়। শাস্ত্র সম্মত।

 

ফিরে আসবো কৃষ্ণ কথা নিয়ে আগামী পর্বে। শ্রী কৃষ্ণ কে নিয়ে আরো অনেক আলোচনা

বাকি আছে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কৃষ্ণ কথা – শ্রী কৃষ্ণের দ্বারকা নগরীর 

কৃষ্ণ কথা – শ্রী কৃষ্ণের দ্বারকা নগরীর

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

শ্রী কৃষ্ণের দ্বারা কংস বধের ঘটনা আমরা অনেকেই জানি|কংস মৃত্যুর পর কংসের শ্বশুর, মগধের রাজা জরাসন্ধ এবং অসুর কাল যবনের

হাত থেকে যাদব বংশ রক্ষা করতে কৃষ্ণ মথুরা ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন এবং নতুন এক নগরী তৈরির সিদ্ধান্ত নেন|এই নগরীই ছিলো দ্বারকা নগরী। দ্বারকা অবস্থিত ছিলো গুজরাটের পশ্চিম সীমানায়।

 

দ্বারকা নগরী প্রতিষ্ঠার জন্য কৃষ্ণ দেব শিল্পী ‘বিশ্বকর্মার’ সাহায্য নেন। বিশ্বকর্মা কৃষ্ণকে জানান, যদি সমুদ্রের দেবতা ‘সমুদ্রদেব’ তাদেরকে কিছু জমি প্রদান করেন শুধুমাত্র তবেই এ কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। কৃষ্ণ তখন সমুদ্রদেবের পূজা করেন এবং সমুদ্রদেব খুশি হয়ে কৃষ্ণকে বারো যোজন জমি প্রদান করেন। জমি পাওয়ার পর বিশ্বকর্মা সেখানে দ্বারকা নগরী নির্মাণ করেন এবং শ্রীকৃষ্ণ দ্বারকায় স্বপরিবারের বসবাস করতে শুরু করেন। দ্বারকার রাজা হিসেবে তার হয় দ্বারকাধীশ।

 

পুরান থেকে ও বিভিন্ন শাস্ত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে জানা যায়, পুরো দ্বারকা নগরী মোট ৬টি ভাগে বিভক্ত ছিল। আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা, চওড়া রাস্তা, নগরচত্বর, সোনা, রূপা ও দামী পাথর দিয়ে নির্মিত বিশাল বিশাল প্রাসাদ, জনগণের সুযোগ সুবিধার জন্য নানা স্থাপনা সহ নানা উদ্যান এবং বিরাট বিরাট দীঘি ইত্যাদি নিয়ে গড়ে উঠেছিল দ্বারকা নগরী।

 

প্রায় ৭ লক্ষ ছোটবড় প্রাসাদ ছিল এ নগরীতে। এখানে ছিল ‘সুধর্ম সভা’ নামের এক বিশাল হলঘর, যেখানে নানা ধরনের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হতো। গোটা নগরীটি ছিল জলবেষ্টিত। এটি ছিল মূলত একটি দ্বীপ-নগর। চারপাশে বেষ্টিত জলরাশি দ্বারকাকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করতো।শ্রী কৃষ্ণের জন্য রাজ প্রাসাদ নির্মিত হয়েছিলো এই নগরের কেন্দ্র স্থলে। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিলো তার চারপাশে। কৃষ্ণের সখা সুদামা এই প্রাসাদে কৃষ্ণের সাথে দেখা করতে এসেছে প্রথমে বাধা প্রাপ্ত হয়ে ছিলো। সেই ঘটনা আপনাদের আগের পর্বে বলেছি।

 

কৃষ্ণ তার বাকি জীবন এ দ্বারকা নগরীতেই অতিবাহিত করেছিলেন। শেষের দিকে তিনি ভাল্কা তীর্থের এক বনে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় দুর্ঘটনাবশত এক শিকারীর তীরের আঘাতে নিহত হন। কৃষ্ণের মৃত্যুর পর যদু বংশ ধ্বংস হয় এবং গোটা দ্বারকা নগরী এক বিশাল বন্যায় সমুদ্রের গভীরে হারিয়ে যায়|এই মহা প্লাবনের পূর্বে অর্জুন দ্বারকায় আসেন এবং যাদব বংশের নারীদের রক্ষা করে হস্তীনাপুরে নিয়ে যান।

 

আবার আগামী পর্বে কৃষ্ণ কথা নিয়ে ফিরবো। থাকবে আরো অনেক পৌরাণিক ঘটনা

এবং তথ্য। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কৃষ্ণ কথা – শ্রী কৃষ্ণর বিশ্বরূপ

কৃষ্ণ কথা – শ্রী কৃষ্ণর বিশ্বরূপ

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

যার মধ্যে সর্বগুন সর্বোচ্চ মাত্রায় বর্তমান তাই তিনি ভগবান। তাই ভগবানের মর্যাদা একমাত্র কৃষ্ণই পান।যদিও কৃষ্ণের বালক রূপ অর্থাৎ গোপাল বা প্রেমিক রূপের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি তবে শাস্ত্রের তাকে নানা রূপে ও নানা ভূমিকায় পাওয়া গেছে। কৃষ্ণের এই রূপ গুলির মধ্যে তার উগ্র রূপ হলো বিরাট রূপ বা বিশ্বরূপ।আজ আলোচনা করবো তার বিশ্বরূপ বা বিরাট রূপ নিয়ে|

মহাভারতে কৃষ্ণ দুবার নিজের বিশ্বরূপ দেখিয়েছেন। মহা যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে যখন কৃষ্ণ পাণ্ডবদের দূত হিসেবে দুর্যোধনের দরবারে যান তখন দুর্যোধন কৃষ্ণকে অপমান করেন এবং বন্দী করার চেষ্টা করেন। তখন ক্রোধে শ্রী কৃষ্ণ তার বিরাট রূপ ধারণ করেন। সবাই ভীত হয়ে পড়েন এবং বিজ্ঞরা সেই সময় মহাভারতের যুদ্ধের ভয়াবহতে এবং পরিনাম আন্দাজ করে নেন।

পরবর্তীতে কুরুক্ষে যুদ্ধে কৃষ্ণ বার বার অর্জুনকে নিজের বিশ্বরূপ দেখার আজ্ঞা দেন, কিন্তু অর্জুন কিছু দেখতে পারেন না|তখন কৃষ্ণ বলেন-কিন্তু তুমি নিজের এই চোখ দিয়ে আমার দিব্য রূপ দেখতে পারবে না। তাই আমি তোমায় দিব্য চক্ষু দিচ্ছি। যার সাহায্যে তুমি আমার ঐশ্বরিক ক্ষমতা দেখতে পারবে|

এরপর অর্জুনকে দিব্য দৃষ্টি দিয়ে শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে নিজের পরম ঐশ্বরিক বিরাট রূপ দেখান।গোটা বিশ্ব ব্রম্ভান্ড যেনো এই রূপের কাছে তুচ্ছ|মনে করা হয় যদি আকাশে একসঙ্গে হাজার সূর্যোদয় হয়, তখনও তাদের সকলের প্রকাশ মিলে সেই বিরাট রূপের প্রকাশের সামনে দাঁড়াতে পারবে না।
শ্রী কৃষ্ণের এই রূপে অনেক মুখ ও চোখ আছে, অনেক অলৌকিক অলঙ্কার আছে, হাতে নানান দিব্য অস্ত্র-শস্ত্র আছে এবং তার গলায় নানান ধরণের দিব্য মালা আছে| তিনি একপ্রকার অলৌকিক বস্ত্র পরে আছেন ও যাঁর ললাট ও শরীরে দিব্য চন্দন, কুমকুম ইত্যাদি লাগানো রয়েছে|

শাস্ত্রে উল্লেখ আছে এমন বিরাট রূপ দেখে অর্জুন আনন্দ পান ভয় ও পানা।তাঁর মধ্যে অদ্ভুত শিহরণ দেখা দেয়। তিনি করজোড়ে এবং মাথা নুইয়ে প্রণাম করে বিরাট রূপ শ্রীকৃষ্ণের স্তুতি করতে শুরু করেন|অনন্ত ব্রহ্মাণ্ড যাঁর শরীরের বর্তমান সেই ভগবান আমার রথের সারথি হয়েছেন এটা ভেবে অর্জুন নিজেকে ধন্য মনে করেন।

আবার পরের পর্বে শ্রী কৃষ্ণের মহিমা এবং তার সাথে সংযুক্ত অন্য একটি পৌরাণিক ঘটনা নিয়ে ফিরে আসবো। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কৃষ্ণ কথা – কৃষ্ণ এবং সুদামা

কৃষ্ণ কথা – কৃষ্ণ এবং সুদামা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

শ্রী কৃষ্ণের আবির্ভাব হয়েছিলো মূলত কংসর অত্যাচার থেকে তার ভক্তদের রক্ষা করতে এবং ধর্ম পুনঃরস্থাপন করতে তবে তার অসংখ্য লীলার মাধ্যমে কৃষ্ণ রূপে তিনি প্রেম এবং ভগবানের প্রতি সম্পূর্ণ অনুগত্যকে প্রাধান্য দিয়েছেন। কৃষ্ণ রূপে তিনি তার ভক্তদের সাথে সখা ভাবে মিশেছেন যার সব চেয়ে বড়ো উদাহরণ কৃষ্ণ এবং সুদামার সম্পর্ক। কৃষ্ণকে বুঝতে হলে এই

সম্পর্ককে ভালো করে বুঝতে হবে।

 

বৃন্দাবনের একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণকারী সুদামা ছিলেন বলরাম এবং কৃষ্ণর সহপাঠী তারা একসাথে বৃন্দাবনে আচার্য সন্দীপনের আশ্রমে অধ্যয়ন করতেন এবং তখন থেকেই তাদের বন্ধুত্ব তৈরী হয়। এরা তিন জন ছিলেন সন্দীপন ঋষির প্রিয় ছাত্র।

 

পরবর্তীতে কৃষ্ণ দ্বারকা রাজ্যের সিংহাসন লাভ করেন অন্যদিকে সুদামা দারিদ্র্যতার জীবনে আবদ্ধ হয়ে পড়েন । এতো কিছুর পরেও তার ভক্তি, অনুরাগ এবং কৃষ্ণপ্রেম অব্যাহত ছিল।তিনি জানতেন বন্ধু তাকে ভুলবেননা। একদিন আবার তিনি তার বন্ধুর সানিধ্য পাবেন।

 

সুদামার সর্বদা অর্থের অভাব ছিল। প্রায়শই তার বাচ্চারা রাতে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। বহু বছর পরেও কৃষ্ণের প্রতি সুদামার ভালোবাসা কমেনি এবং কৃষ্ণের গল্প তার বাচ্চাদের শোনাতেন। তার স্ত্রী সুশীলা একবার তাকে জোর করে ভগবান কৃষ্ণের সাথে দেখা করতে পাঠান।

 

সুদামা তার স্বাভাবিক মলীন এবং ছেঁড়া কাপড় পরে দ্বারকার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। পথে কিছু ভিক্ষা গ্রহন করে সেই সাধারণ খাদ্য দ্রব্য বন্ধুর উদ্দেশ্যে পুটলিতে বেঁধে নিলেন।

 

অবশেষে ক্ষুধার্ত এবং ক্লান্ত সুদামা দ্বারকায় পৌঁছেন।দ্বার রক্ষীরা তাকে প্রাসাদে প্রবেশ করতে দেয়না কারণ তাদের কাছে তিনি এক সাধারণ ভবঘুরে পথিক।

 

এদিকে কৃষ্ণের আগমনের খবর পৌছায় দ্বারকার অন্দর মহলে।সুদামা প্রধান ফটকে দাঁড়িয়ে আছেন শুনে কৃষ্ণ সরাসরি মূল ফটকের দিকে দৌড়ে গেলেন। কৃষ্ণের চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে শুরু করে।আবেগে ভরা হৃদয় নিয়ে কৃষ্ণ সুদামাকে জড়িয়ে ধরে তাঁর সিংহাসন অর্পণ করেন । তিনি তার অশ্রু দিয়ে সুদামার পা ধুয়ে দিলেন।সুদমার আনা খাদ্য সাদরে গ্রহন করলেন।বসালেন স্ত্রী রুক্মিণীর আসনে। কিছু দিন সেবা এবং আতিথ্য গ্রহন করে সুদামা জাগতিক কিছু না চেয়ে খালি হাতেই ফিরে এলেন।কারণ তিনি প্রিয় বন্ধুকে কাছে পেয়ে নিজের সব অভাব অভিযোগ ভুলে গেছিলেন।

 

গ্রামে ফিরে হতবাক হলেন সুদামা।দেখলেন তার পুরানো এবং ভাঙা কুঁড়েঘরটি একটি জমকালো প্রাসাদে রূপান্তরিত হয়েছে। স্ত্রীও রাজ রানী হয়েছেন। দারিদ্রতার অভিশাপ মুছে গেছে।

তিনি হয়তো কৃষ্ণকে তার অভাবের কথা বলতে পারেননি। কিন্ত অন্তর্যামী ভগবান সব বোঝেন। তার কাছে কিছুই গোপন থাকেনা।

ভগবানের প্রতি পূর্ণ আস্থা এবং সমর্পন থাকলে তার অভাব দুর হয়। সব মনোস্কামনা পূর্ণ হয়।

 

ভগবান কৃষ্ণকে নিয়ে আরো অনেক পৌরাণিক ঘটনা এবং তথ্য নিয়ে আবার ফিরে আসবো

আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কৃষ্ণ কথা – শ্রী কৃষ্ণের বাঁশি

কৃষ্ণ কথা – শ্রী কৃষ্ণের বাঁশি

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

মধুসূদন মাস উপলক্ষে শুরু করেছি এই কৃষ্ণ কথা। সনাতন ধর্মে দেব দেবী অনেক থাকলেও ভগবান একজনই তিনি স্বয়ং শ্রী কৃষ্ণ। অনন্ত ভ্রম্ভান্ডর পরিচালনার ভার তার উপরে।কৃষ্ণের সাথে জড়িত প্রতিটি বিষয়ের শাস্ত্রীয় তাৎপর্য আছে। তার বাঁশিও ব্যাতিক্রম নয়।

শ্রী কৃষ্ণের হাতে বাঁশি আমরা সবাই দেখেছি কিন্তু বাঁশির ও ভিন্ন ভিন্ন রূপ আছে আধ্যাত্মিক তাৎপর্য আছে|আজ কৃষ্ণ কথায় কৃষ্ণের বাঁশি

নিয়ে লিখবো।

 

শ্রীকৃষ্ণ তিন প্রকারের বাঁশী ব্যবহার করেন। তার একটিকে বলা হয় বেণু, অন্যটি মুরলী এবং তৃতীয়টি বংশী। বেণু অত্যন্ত ছোট, ছয় ইঞ্চির বেশী দীর্ঘ নয়, এবং তাতে ছয়টি ছিদ্র থাকে। মুরলীর দৈর্ঘ্য প্রায় আঠারো ইঞ্চি। তার একপ্রান্তে একটি ছিদ্র থাকে এবং তার গায়ে চারটি ছিদ্র থাকে। এই মুরলী অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর সুর সৃষ্টি করে। বংশী প্রায় পনেরো ইঞ্চি লম্বা, এবং তাতে নয়টি ছিদ্র থাকে।শ্রীকৃষ্ণ প্রয়োজন অনুসারে এই তিন রকমের বাঁশী বাজান।শ্রীকৃষ্ণের আর একটি বংশী আছে যা আরও লম্বা, যাকে বলা হয় মহানন্দ বা সম্মোহনী বা আকর্ষনী এই বাঁশী কখনো কখনো মণিরত্ন খচিত থাকে, কখনো তা মর্মর দিয়ে তৈরী হয় এবং কখনো কখনো বাঁশ দিয়ে তৈরী হয়। বাঁশী যখন মণিরত্ন দিয়ে তৈরী হয় তখন তাকে বলা হয় সম্মোহনী। আর যখন তা স্বর্ণ দিয়ে তৈরি হয়, তাকে বলা হয় আকর্ষণী।

 

এই বাঁশি বা মুরলী থেকেই শ্রী কৃষ্ণের নাম হয়েছে মুরলীমনোহর বা মুরলীধর।মুরলী শ্রী কৃষ্ণের অত্যন্ত প্রিয় এবং তার লীলা সংগী বলা যায়।

 

বাঁশির সাথে কৃষ্ণর সম্পর্ক নিয়ে একটি সুন্দর পৌরাণিক আছে একেবার ঈর্ষা বসত গোপিনীরা অসতর্ক মুহূর্তে চুপি চুপি বাঁশিটি কে চুরি করলেন।বাঁশি গোপীদের বলিলেন : ” এভাবে আমাকে আপনারা কৃষ্ণের সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত করলেন কেন ?” গোপীরা বলিলেন : ” তোমার এমন কি গুণ আছে যে , তুমি সর্বদা কৃষ্ণের হাতে হাতে ফের আর তাঁর অধর স্পর্শ করে থাকো? বাঁশি বললো গুণের কথা ছেড়ে দিন, আমার তো কোন অস্তিত্ব নেই । আমার আমিত্ব বলে আর কিছু নেই । আমার যা- কিছু সব কৃষ্ণের। কৃষ্ণ ছাড়া আমার অস্তিত্ব নেই। আমি কৃষ্ণের স্মরনাগত। শরণাগতকে তিনি কখনো পরিত্যাগ করেন না । আমার সর্বস্ব তাঁকে অর্পণ করে আমি তাঁর আশ্রয় নিয়েছি। গোপিনীরা কথার মর্মার্থ বুঝলেন|নিজের সব অহং বিসর্জন দিয়ে সম্পূর্ণ ভাবে ভগবানের চরনে সমর্পন করলে তবেই তার সম্পূর্ণ কৃপা পাওয়া যায়।কৃষ্ণের বাঁশি সেই সম্পূর্ণ সমর্পনের প্রতীক স্বরূপ।

 

কৃষ্ণ সংক্রান্ত আরো অনেক শাস্ত্রীয় এবং পৌরাণিক তথ্য নিয়ে ফিরে আসবো আগামী পর্বে|কৃষ্ণ কথায়। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

মধুসূদন মাসের আধ্যাত্মিক তাৎপর্য

মধুসূদন মাসের আধ্যাত্মিক তাৎপর্য

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

বৈশাখ মাস মানেই মধুসূদন মাসের সূচনা। জ্যোতিষ শাস্ত্রে যে সাতাশটি নক্ষত্র আছে তার মধ্যে বিশাখা নক্ষত্রর নাম অনুসারে বৈশাখ মাসের নাম। আবার শাস্ত্র মতে এই মাস শ্রী বিষ্ণুকে উৎসর্গ করা হয়েছে। আজ থেকে মধুসূদন মাস উপলক্ষে শুরু করবো কৃষ্ণ কথা। আজ প্রথম পর্বে মধুসূদন মাসের আধ্যাত্মিক তাৎপর্য ব্যাখ্যা করবো।

 

শ্রী বিষ্ণুর একটি নাম মধুসূদন। মধু ও কৈটভ নামক দুই অসুর যখন প্রবল অত্যাচারী হয়ে ওঠে তখন স্বয়ং বিষ্ণু তাদের বধ করতে চান কিন্তু দীর্ঘ সময় যুদ্ধ করেও তাদের বধ করা যায়না। অবশেষে এই দুজন বিষ্ণু কে বলেন যে তারা জয়ী এবং তারা বিষ্ণুকে বর দিতে চান বিষ্ণু তাদের বধ করতে চাইলেন। তারা শর্ত দিলো যে যেখানে জল আছে সেখানে তাদের বধ করা যাবেনা। বিষ্ণু ব্রম্ভাকে শক্তিরূপিণী এক শিলা খন্ড শুন্যে ধারণ করতে বললেন। সেই শিলা শুন্যে ভাসতে লাগলো এবং তার উপর উঠে বিষ্ণু মধু এবং কৈটভকে বধ করলেন এবং বিষ্ণুর আরেকটি নাম হলো মধুসুদন। এই মাসেই এই যুদ্ধ হয়ে ছিলো তাই এই মাসকে মধুসুদন মাস বলে।

 

স্কন্দ পুরান মতে এই মাস যেকোনো শুভ কার্যের জন্য আদৰ্শ মাস।এই মাসে বিষ্ণু তার ভক্তদের বিশেষ কৃপা করেন এবং এই মধুসুদন মাসে শ্রী বিষ্ণুর আরাধনা করলে সকল অশুভ শক্তি দুর হয় এবং সব মনোস্কামনা পূর্ণ হয়।

 

সমগ্র মধুসুদন মাস জুড়ে আমি আপনাদের সামনে শ্রী কৃষ্ণের সাথে জড়িত বিভিন্ন পৌরাণিক ঘটনা এবং বিশেষ কিছু লীলা ব্যাখ্যা সহ আপনাদের জন্য উপস্থাপন করবো। ফিরে আসবো আগামী পর্বে কৃষ্ণকথা নিয়ে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।