মহারাজা কৃষ্ণ চন্দ্রর দূর্গা পুজো

26

মহারাজা কৃষ্ণ চন্দ্রর দূর্গা পুজো

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

বাংলার ইতিহাসে বিশেষ করে পলাশী যুদ্ধ এবং তার পরবর্তী সময়ে কলকাতার পাশাপাশি নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্ররা ভূমিকা ছিলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

এই রাজ পরবারের দূর্গাপুজার আলাদা মাহাত্ম আছে। সেই নিয়েই আজকের পর্ব।

 

মনে করা হয় কৃষ্ণচন্দ্র মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গিরকে সাহায্য করেন প্রতাপাদিত্যকে হারাতে। তারপরে কৃষ্ণচন্দ্রকে কৃষ্ণনগরের রাজা করেন জাহাঙ্গীর|রাজত্ব লাভ করে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র জাঁকজমক সহকারে দূর্গা পুজো শুরু করেন যা আজও চলে আসছে বংশ পরম্পরায় আগে এই পরিবারে অন্নপূর্ণার পুজো হতো|

 

এই বাংলায় দূর্গা পুজোর শুরু কবে হয়েছিল তা নিয়ে ঐতিহাসিক দের মধ্যে মতপার্থক্য স্পষ্ট|তবে প্রথম দূর্গা পুজো হয়েছিল কোনো রাজ পরিবারে এবং অনেক পরে বারোয়ারি পুজোর সূচনা হয়|সে ক্ষেত্রে একদম প্রথম পারিবারিক পুজোগুলির অন্যতম কৃষ্ণনগর রাজ বাড়ির পুজো|

 

কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির দুর্গা পরিচিত রাজরাজেশ্বরী হিসেবে|দেবীর এখানে যুদ্ধবেশ পরনে টকটকে লাল শাড়ি|গায়ে বর্ম ও হাতে অস্ত্র। যেহেতু বৈষ্ণব মতে পুজো হয় তাই দেবী ঘোটকাকৃতি সিংহের ওপর আসীন|একচালা প্রতিমার পিছনে থাকে অর্ধচন্দ্রাকৃতি ছটা ও তাতে আঁকা থাকে দশমহাবিদ্যা|

 

রীতি অনুসারে কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে মহালয়ার পর দিন থেকেই শুরু হয় পুজো এবং রাজরাজেশ্বরী পাটে আসীন হন বোধনের সময়ে। প্রাচীন প্রথা অনুসারে তাকে বেহারাদের কাঁধে চড়িয়ে আনা হয়|এই পুজোর অন্যতম আকর্ষণ হল সন্ধিপুজো ও দশমীর দিন সিদুর খেলা|আজও সন্ধিপুজোর সময়ে ধোয়ায় ঢেকে যায় দেবীর মুখ এবং প্রচলিত বিশ্বাস, সেই সময়ে মা আসেন কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে, বিজয়া উপলক্ষেআশেপাশের বহু মহিলা রাজবাড়ির সিদুর খেলাতে অংশগ্রহণ করেন|পুজোতে পশু বলি বা দশমীতে নীল কণ্ঠ পাখি ওড়ানো হয়তো আজ আর নেই তবুও আবেগ ও ভক্তি রয়েছে একই রকম|

 

মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র পলাশীর যুদ্ধে তার ভূমিকা নিয়ে সমালোচিত হতে পারেন তবে তার দান ধ্যান,ধর্ম কর্ম এবং বিশেষ করে দূর্গাপুজোর জন্য তিনি আজও স্মরণীয় হয়ে আছেন এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

 

আজ বিদায় নিলাম আবার ফিরে আসবো যথা সময়ে বনেদী বাড়ির পুজোর ইতিহাস নিয়ে।

পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।