রানী রাসমণির বাড়ির দূর্গা পুজো
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
স্বাধীনতারা আগে বাংলার রাজবাড়ি বা জমিদার বাড়ির পূজা গুলির মধ্যে যখন দূর্গাপুজোর জাঁকজমক নিয়ে প্রতিযোগিতা চলছিল তখন তাদের মধ্যে একটি পরিবার ছিলো যারা বাহ্যিক জাঁকজমক থেকে নিষ্ঠা, সারল্য ও শাস্ত্রীয় আচরণকে বেশি গুরুত্ব দিতো|এই পুজো হতো কলকাতার জান বাজারের রানী রাশমনির পরিবারে|এই পুজোর সাথে জড়িত আছে ঠাকুর রামকৃষ্ণ দেবের নাম, রয়েছে অনেক গল্প।
এই বাড়িতে দূর্গা পুজোর সূচনা করেন এই বংশের প্রাণপুরুষ এবং রানী রাসমণির শশুর মশাই শ্রী প্রীতরাম দাস|তার পর পুজোর দায়িত্ব গ্রহণ করেন পুত্র রাজেন্দ্র দাস এবং স্বামীর অবর্তমানে এই পরিবারের জমিদারি, ব্যবসা এবং দুর্গাপূজার দায়িত্বে আসেন রানী রাসমণি ও তার আমলে পুজোর শ্রী আরও বাড়ল|মনে করা হয় সেই সময়েই পুজোয় খরচ হত ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। ধর্ম কর্মের ব্যাপারে রানী রাসমণির বেশ সুনাম ছিলো এবং খরচা করতেন অনেক অর্থ তার সবচেয়ে বড়ো প্রমান তো দক্ষিনেশ্বর মন্দির।
একবার বাবুঘাটে কলা বৌ স্নান করাতে যাওয়ার সময় রানী রাসমণির সাথে বিবাদ বাধে এক ইংরেজ সাহেবের|জল অনেক দূর গড়ায় এবং রানীকে পঞ্চাশ টাকা জরিমানাও করা হয়|কিন্তু দমবার পাত্রী ছিলেন না রানী রাসমণি|ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে তাদের উচিৎ শিক্ষা দিয়েছিলে তিনি এবং আরো বড়ো করে দূর্গা পুজোর আয়োজন করেছিলেন|বেগতিক দেখে পিছু হট তে বাধ্য হয়ে ছিলো ইংরেজরা|
একবার এখানে দূর্গা পুজো করতে এসেছিলেন স্বয়ং ঠাকুর রামকৃষ্ণ তবে ভিড় এড়াতে তিনি এক নারীর ছদ্মবেশ ধারন করেছিলেন|সখি বেশে চামর দুলিয়ে দূর্গাপুজো করেছিলেন রামকৃষ্ণদেব এবং জগদ্ধাত্রী পুজো অবধি তিনি এই বাড়িতেই ছিলেন|
পুজো উপলক্ষে রানী রাসমণির পরিবারে কখনো বাই নাচ বা খানা পিনার আসর বসেনি সেই ভাবে তবে নিষ্ঠা ও ভক্তি সহকারে শাস্ত্রীয় পদ্ধতিতে মাতৃ শক্তির আরাধনার জন্য এই বাড়ির সুনাম ছিলো|পরবর্তীতে রানী রাসমণির জামাতা মথুর বাবু এই পুজোর দায়িত্ব গ্রহণ করেন|বংশ পরম্পরায় সেই ঐতিহ্য আজও চলে আসছে|আজও এখানে সমান ভক্তি ও শ্রদ্ধার সাথে দূর্গা পুজো অনুষ্ঠিত হয়|বাড়ির লোকেরা বিশ্বাস করেন দেবী এখানে সারা বছরই বিরাজ করেন|শোনা যায় এক কালে নাকি মধ্য রাত্রে, বাড়ির ঠাকুর দালানে দেবীর পায়ের নুপুরের শব্দও শোনা যেত|
প্রথা মেনে রাসমণি বাড়িতে কাঠামো পুজো হয় রথের দিন।প্রতিপদথেকে ঘরে পুজো শুরু হয়। ষষ্ঠীর দিন হয় বোধন এবং বেলবরণ। ওইদিনই দেবীর হাতে অস্ত্র দিয়ে গয়না পরানো হয়|সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমী এই তিনদিনই কুমারী পুজো হয়|এক কালে বলী প্রথা থাকলেও বলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে বেশ কয়েকবছর|আজও এই বাড়িতে ভোগে দেবীকে লুচি ও পাঁচরকম ভাজা অর্পণ করা হয় আর থাকে নানা রকম মিষ্টি।
ফিরে আসবো ধারাবাহিক লেখনীর পরবর্তী পর্ব নিয়ে থাকবে বনেদি বাড়ির পুজো নিয়ে আরো একটি পর্ব।পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন।ধন্যবাদ।