Home Blog Page 16

জয় জগন্নাথ – জগন্নাথ পত্নী মহালক্ষী

জয় জগন্নাথ – জগন্নাথ পত্নী মহালক্ষী

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

জগন্নাথ দেব প্রসঙ্গে আলোচনা হলে মূলত পুরী ধাম, সুভদ্রা বলরাম রথ যাত্রা নিয়েই বেশি কথা হয়। প্রচারের আড়ালে থেকে যান জগন্নাথদেবের স্ত্রী মহা লক্ষী। আজকের পর্বে মহালক্ষীকে নিয়ে আলোচনা করবো।

মহা লক্ষী স্বয়ং আদ্যা শক্তির রূপ। তিনি বিশ্ব সংসারের আদি শক্তি এবং জগন্নাথ স্বয়ং নিজ বৈভব এবং শক্তির জন্য মহামায়ার উপর নির্ভর করেন। কিন্তু এমন একটি ঘটনা প্রতি বছর পুরীতে ঘটে যেখানে মহা লক্ষীকে ছেড়ে জগন্নাথকে থাকতে হয় এবং মহালক্ষী রুষ্ট হন জগন্নাথের উপরে।

প্রতিবার স্নান যাত্রার পর ত্রীমূর্তি রথে চেপে গুণ্ডিচা বাড়ি বেড়াতে গেলেও জগন্নাথের স্ত্রী মহালক্ষ্মী মন্দিরেই থেকে যান। এতে স্বাভাবিক ভাবেই মহালক্ষ্মী জগন্নাথের উপরে ক্রুদ্ধ হন এবং কথিত আছে দেবী মহা লক্ষী গুণ্ডিচা মন্দিরে এসে যত শীঘ্র সম্ভব মন্দিরে ফেরার জন্য জগন্নাথকে ভয় দেখান। তবে প্রভুর ছুটি কাটানোর এই অবসরে তাঁর স্ত্রীর স্বামী সাক্ষাৎ এর সৌভাগ্য ঘটে না। দূর থেকেই গুন্ডিচায় প্রভুকে দর্শন করে ক্ষান্ত দিতে হয় মহা লক্ষ্মীকে। তবে মন্দিরের সামনে আরতি সম্পন্ন করেন লক্ষ্মীদেবী। তারপরে রাগের চোটে রথের একখান কাঠ ভেঙে শ্রী মন্দিরে ফিরে যান জগন্নাথজায়া এবং রীতিকে বলা হয় রথ ভঙ্গ উৎসব।

যে সাতটি দিন প্রভু মাসির বাড়ি থাকেন তার মধ্যে একটি বিশেষ দিন হল— ‘হেরাপঞ্চমী’। রথযাত্রার চতুর্থ দিনে পঞ্চমী তিথিকে বলা হয় ‘হেরাপঞ্চমী’। ওই দিনই গুণ্ডিচা মন্দিরে রথভঙ্গোত্‍সব হয়।

আবার প্রভু যখন উল্টো রথের সময়ে প্রভু যখন মন্দিরে ফিরে আসেন তিনি মহালক্ষীর জন্য নানাবিধ মিষ্টি এবং উপহার নিয়ে আসেন তার মানভঞ্জনের জন্য এমন জনশ্রুতিও আছে।

ফিরে আসবো পরবর্তী পর্বে। প্রভু জগন্নাথকে নিয়ে আরো অনেক আলোচনা বাকি আছে।
পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

জয় জগন্নাথ – ত্রিমূর্তি রহস্য

জয় জগন্নাথ – ত্রিমূর্তি রহস্য

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

আর কদিন পরেই প্রভু জগন্নাথের স্নান যাত্রা।
সেই উপলক্ষে cজগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা কে নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা করছি।আজ এই ত্রিমূর্তি সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করবো।

জগন্নাথ একা নন বলরাম এবং সুভদ্রা তার সাথেই পুরী ধামে বিরাজমান সুভদ্রা আসলে সেই যোগমায়া, যাঁকে তাঁর জন্মের রাতেই বাবা-মায়ের থেকে সরিয়ে এনে তুলে দেওয়া হয়েছিল কংসের হাতে। সদ্যোজাত কৃষ্ণকে রক্ষা করতে এবং অন্যদিকে বলরাম হলেন কৃষ্ণের জ্যেষ্ঠভ্রাতা। তিনি বলদেব, বলভদ্র ও হলায়ুধ নামেও পরিচিত।

আমরা প্রত্যেকে নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছি যে জগন্নাথ সুভদ্রা এবং বলরামের কারও হাত নেই। এমনকি চোখের পাতাও নেই।

হিন্দু ধর্মের অন্যান্য দেবতাদের মূর্তি বা প্রতিমার সঙ্গে জগন্নাথের বিগ্রহের কিছু পার্থক্য রয়েছে। বিগ্রহের আকারও বিচিত্র। চৌকো মাথা, বড় বড় চোখ এবং অসম্পূর্ণ হাত।

প্রভু জগন্নাথের মূর্তিতে চোখের পাতা নেই|এর একটা কারন তিনি জগতের নাথ এবং তিনি সদা জাগ্রত|একটি মুহূর্তের জন্যও তিনি দেখা বন্ধ করেননা|তিনি পরম দয়ালু তাই প্রতি মুহূর্তে তার ভক্তদের উপর তার কৃপা দৃষ্টি নিক্ষেপিত হয়|
মূর্তির হাত অসম্পূর্ণ কারন দেব শিল্পী বিশ্বকর্মার শর্ত অনুযায়ী নিদ্দিষ্ট দিনের পূর্বেই মূর্তি নির্মাণ কক্ষের দ্বার উন্মুক্ত হওয়ায় মূর্তি অসম্পূর্ণ থেকে যায় এবং সেই অর্ধ সম্পূর্ণ মূর্তি রত্ন বেদীতে স্থাপন করা হয়।

‘নব-কলেবর’ নামের রহস্যময় এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিয়মিত নিদ্দিষ্ট সময়ের ব্যাবধানে দেবতার পুরোনো মূর্তি সরিয়ে নতুন মূর্তি বসানো হয় আর পুরোনো মূর্তির ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে সঞ্চারিত হবে – এটাই পূজারীদের বিশ্বাস।
এ জগন্নাথ মন্দিরে ‘গর্ভগৃহ’ বা মূল কেন্দ্রস্থলে এই অতি গোপনীয় প্রথার সময়ে পুরোহিতদের চোখ আর হাত বাঁধা থাকে – যাতে পুরোনো মূর্তি থেকে ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে গিয়ে ঢুকছে – এটা তাঁরাও দেখতে না পান।

জগন্নাথ দেব সংক্রান্ত আরো অনেক রহস্য এবং পৌরাণিক ঘটনা আপনাদের জানাবো ধারাবাহিক ভাবে। ফিরে আসবো আগামী পর্বে।
পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

জগন্নাদেব এবং ভক্ত রঘুদাস

জগন্নাদেব এবং ভক্ত রঘুদাস

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

একসময় পুরীধামে ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের একজন মহান ভক্ত ছিল।তার নাম ছিলো রঘু দাস।

এই ভক্ত রঘু দাসকে বিশেষ স্নেহ করতেন জগন্নাথদেব। আজকের পর্বে ভক্ত রঘু দাসের জীবনে ঘটা দুটি অলৌকিক ঘটনা আপনাদের জানাবো।

 

একবার পুরীর ভক্ত রঘুদাস পুরীর মন্দিরের বিগ্রহবেদীতে রাম, লক্ষ্মণ ও সীতাদেবীর দর্শন পান এবং উপলব্ধি করেন যে শ্রীজগন্নাথ এবং শ্রীরামচন্দ্র এক এবং অভিন্ন।তারপর থেকে সে জগন্নাথকে শ্রী রাম জ্ঞানেই পুজো করতো।

একবার রঘু শ্রীজগন্নাথের জন্য একটি সুন্দর মালা গেঁথে জগন্নাথকে দেয়ার জন্য পূজারীকে দেয়।কিন্তু পূজারী সেটি ভগবানকে দিতে চাইলেন না কারন মালাটি ছিলো অতি সাধারণ এবং সস্তা।

তাঁর মালাটি জগন্নাথকে দেয়া হল না দেখে রঘু অত্যন্ত দুঃখিত, বিমর্ষ হয়ে মন্দির ত্যাগ করে।

 

সেই রাতে ভগবান শয়নে যাওয়ার পূর্বে জগন্নাথের বড়-শৃঙ্গার বেশের সময় ভগবান কোনও ফুলই গ্রহণ করলেন না। পূজারীরা বুঝলেন যে তারা নিশ্চয়ই কোন গর্হিত অপরাধ করেছেন।

সেই রাত্রেই জগন্নাথ প্রধান পূজারীর নিকট স্বপ্নে আবির্ভূত হয়ে বললেন, “আমার ভক্ত রঘু দাস আমার জন্য একটি ফুলের মালা এনেছিল। সে কত ভক্তি ও প্রীতি সহকারে সেটি গেঁথেছিল! তুমি কেবল বাইরে থেকে সূতোটি দেখে তাঁকে ফিরিয়েছ,আমাকে মালা অর্পণ করার অনুমোদন দেওনি। আমার ভক্তের ইচ্ছাপূরণ হয়নি তাই আমিও বড় শৃঙ্গার ত্যাগ করেছি।

 

তৎক্ষণাৎ পূজারীরা ভক্ত রঘুদাসের কাছে গিয়ে তাদের অপরাধ স্বীকার করলেন এবং শ্রীজগন্নাথদেবকে তাঁর মালা অর্পণ করতে বললেন। রঘু দাস অত্যন্ত খুশি হল এই শুনে যে, ভগবান এতই করুণাময় যে, তিনি স্বয়ং তাঁর মালা গ্রহণের জন্য অপেক্ষা করছেন এবং তার ইচ্ছে আজ পূরণ করবেন।

 

প্রভু জগন্নাথ পরম করুনাময়। শুধু ভাব এবং ভক্তি দিয়েই তাকে সন্তুষ্ট করা যায়। আবার পরের পর্বে জগন্নাথের অন্য একটি লীলা নিয়ে ফিরে আসবো।

পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

জয় জগন্নাথ – গুন্ডিচা দেবীর কথা

জয় জগন্নাথ – গুন্ডিচা দেবীর কথা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আসন্ন স্নান যাত্রা উপলক্ষে শুরু করেছি প্রভু জগন্নাথকে নিয়ে শাস্ত্রীয় আলোচনা। আগের পর্বে। জগন্নাথদেবের মাসির বাড়ি বা গুন্ডিচা মন্দির নিয়ে কিছু তথ্য আপনাদের জানিয়েছি। আজ গুন্ডিচা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত লিখবো।

 

বহু প্রাচীন কাল থেকেই বেশ কিছু লোকশ্রুতি ঘিরে রয়েছে পুরীর গুন্ডিচা মন্দিরকে।

অনেকের মতে এই মন্দির আসলে স্থানীয় এক দেবীর। তাঁর নামই গুন্ডিচা। মনে করা হয়, তিনি দেবী দুর্গার রূপ।আদ্যা শক্তি মহামায়ার একটি রূপের প্রকাশ ঘটেছে গুন্ডিচা রূপে।

 

আবার স্থানীয়রা মনে করেন ওড়িয়া ভাষায় গুটিবসন্ত রোগকে ‘গুন্ডি’ বলা হয়। এই দেবী গুণ্ডিচা আসলে সেই রোগ নিরাময়ের দেবী।

অনেক টা আমাদের মা শীতলার ন্যায় গুন্ডিচ দেবীও এক লৌকিক দেবী।

 

প্রভু জগন্নাথ বছরে সাতদিন কাটাতে আসেন এই দেবীর মন্দিরে এবং স্থানে বিশ্রাম করেন প্রভু সেই সময়ে একাধিক উৎসবের আয়োজন করা হয় গুন্ডিচা মন্দিরে।গোপীদের সঙ্গে লীলায় মত্ত হন জগন্নাথ তাই ছল করে দেবী লক্ষীকে জগন্নাথ মন্দিরে রেখে আসেন তিনি। তাই ফেরার সময়

স্ত্রী লক্ষ্মীর মানভঞ্জন করতে রস গোল্লা নিয়ে আসেন প্রভু জগন্নাথ।

 

জনশ্রুতি আছে পুরীতে থাকা কালীন প্রতিবার রথের আগে নিয়ম করে গুন্ডিচা মন্দির পরিষ্কার করতেন চৈতন্য মহাপ্রভু। সেই রীতি বজায় রেখে এখনও পুরীর সময়ে গৌড়ীয় মঠের সদস্যরা গুন্ডিচা মন্দির পরিস্কার করতে যান।

 

শ্রী ক্ষেত্র পুরী এবং পুরীর রথ যাত্রার সাথে জড়িত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান এই গুন্ডিচা মন্দির। পুরী ভ্রমনের সময় এই মন্দির অবশ্যই দর্শন করবেন।

 

চলতে থাকবে জগন্নাথদেব সংক্রান্ত শাস্ত্রীয় এবং পৌরাণিক এবং শাস্ত্রীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা। ফিরে আসবো আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

জয় জগন্নাথ – জগন্নাথদেবের মাসির বাড়ি

জয় জগন্নাথ – জগন্নাথদেবের মাসির বাড়ি

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

চন্দন যাত্রার মধ্যে দিয়ে শুরুহয়ে গেছে।আগামী রথ যাত্রার প্রস্তুতি।আসন্ন দেব স্নান পূর্ণিমায় হবে স্নান যাত্রা তারপর রথে চড়ে মাসির বাড়ি যাবেন জগন্নাথ। সেখানেই সাত থাকবেন প্রভু। এই মাসির বাড়ি বা গুন্ডিচা মন্দির নিয়ে আমার আজকের এই বিশেষ পর্ব।

গুন্ডিচা মন্দিরের দূরত্ব শ্রীমন্দির থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার। মন্দিরটি চারদিকে সুদৃশ্য বাগান দিয়ে ঘেরা। অনেকেই তাই এই মন্দিরকে জগন্নাথের বাগানবাড়ি বলে থাকেন। হালকা ধূসর বেলেপাথরে তৈরি এই মন্দির কলিঙ্গ স্থাপত্য শৈলীর উৎকৃষ্ট নিদর্শন।

এই মন্দিরেই জগন্নাথ দেবের বেড়াতে আসার নেপথ্যে বেশ কিছু লোককাহিনি প্রচলিত রয়েছে।
পুরীর রাজা ইন্দ্রদুম্ন্যর স্ত্রীর নামই ছিল গুন্ডিচা তাঁকে উদ্দেশ্য করেই এই মন্দির তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন অনেকেই। কথিত আছে দেব বিশ্বকর্মা যখন বন্ধ ঘরে জগন্নাথ মূর্তি তৈরি করছিলেন, গুন্ডিচাদেবী কোনওভাবে তা দেখে ফেলেন। এবং সেই অর্ধসমাপ্ত মূর্তি দেখেই তিনি মোহিত হয়ে রাজাকে অনুরোধ করেন আরও একটি মন্দির নির্মানের জন্য।

রানী গুন্ডিচাই পুরীর রথ যাত্রার অন্যতম স্রষ্টা
বলে মনে করেন। আবার কিছু গ্রন্থে আছে যে
প্রভু জগন্নাথ গুন্ডিচা দেবীর মন্দির দেখে প্রসন্ন হয়েছিলেন। তাই বছরের সাতদিন করে এখানে কাটিয়ে যাওয়ার কথা দিয়েছিলেন। সেই থেকে নাকি রথযাত্রা এবং প্রভুর গুন্ডিচা মন্দিরে সাতদিন কাটানোর রীতির প্রচলন হয়েছে।

গুন্ডিচা মন্দিরের একেবারে অন্দরে গর্ভগৃহ আছে যেখানে রথের সময় প্রভু জগন্নাথ অবস্থান করেন। বাইরে সমাবেশ দালান ও নাটমন্দির। পশ্চিমপ্রান্তে অবস্থিত একটি বিশাল দরজা। এই দরজা দিয়েই জগন্নাথ মূর্তি রথে থেকে নামিয়ে গুন্ডিচা মন্দিরে প্রবেশ করানো হয়। এর ঠিক উলটোদিকে আরও একটি দরজা রয়েছে। পূর্বদিকের ওই দরজা দিয়েই ত্রিমূর্তি পুনরায় রথে আরোহন করেন।

আসন্ন স্নান যাত্রা উপলক্ষে চলতে থাকবে জগন্নাথ সংক্রান্ত নানা বিষয় নিয়ে শাস্ত্রীয় আলোচনা।
ফিরে আসবো আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

জয় জগন্নাথ – দারু ব্রহ্ম রহস্য

জয় জগন্নাথ – দারু ব্রহ্ম রহস্য

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রহস্যর শেষ নেই। জগন্নাথ মূর্তি বা দারুব্রহ্ম মূর্তি সেই রহস্যর অন্যতম।আজকের এই বিশেষ পর্বে লিখবো

এই দারুব্রহ্ম রহস্য নিয়ে।

 

দারুব্রহ্ম বলতে সাধারণ কাঠের তৈরী দেব দেবীর মূর্তি বোঝায় তবে এই দারুব্রহ্ম অনেকটাই আলাদা। জগন্নাথ দেবের মূর্তি কাঠ বিশেষ ধরণের নীম কাঠ দিয়ে তৈরী করা হয়।বহু যুগ ধরে এই প্রথা অপরিবর্তিত আছে। প্রথম দারুব্রহ্ম ভেসে আসে সমুদ্রে এবং তাকে মূর্তির রূপ দেন স্বয়ং দেব শিল্পী বিশ্বকর্মা।

 

বর্তমানে জগন্নাথ দেব ও তার দাদা বলভদ্র এবং বোন সুভদ্রার গায়ের রং অনুযায়ী কাঠ নির্বাচন করা হয়।একাধিক শর্ত এবং বিশেষত্ব থাকতে হয়। প্রথম শর্ত কাঠটি একদম নিখুঁত এবং ত্রুটি মুক্ত হতে হবে। জগন্নাথ দেবের মূর্তি নির্মাণে নিমের যে কাঠটি নির্বাচন করা হয়, সেই নিম গাছটিকে চার শাখা বিশিষ্ট হতে হয়।নিম গাছটির নিচের অংশে গাছের শিকড়ে পিঁপড়ের ঘর কিংবা সাপের গর্ত থাকতে হবে। গাছটিকে শশ্মানে তিন মাথার মোড়ে থাকতে হবে।তা নাহলে তিন দিকে পাহাড় বেষ্টিত জায়গায় বেল গাছের সমন্বয়ে আছে এই ধরণের নিম গাছের কাঠ জগন্নাথ দেবের জন্য নির্বাচন করা যেতে পারে।এই সমগ্র পক্রিয়াটি পুরীর দায়িত্বপ্রাপ্ত দৈতাপতিদের তত্ত্বাবধানে হয়ে থাকে।

 

একটি তত্ত্ব অনুসারে এই দারু ব্রহ্ম মূর্তিতে বিরাজমান শ্রী কৃষ্ণের অক্ষত এবং অমর হৃদপিন্ড যা ব্রহ্ম পদার্থ এবং সেই থেকেই দারু ব্রহ্ম নামকরণ হয়।নব কোলবরের সময় এই ব্রহ্ম পদার্থ পুরোনো দার ব্রহ্ম থেকে নতুন দারুব্রহ্মতে স্থানান্তরিত করা হয়। এই ব্রহ্ম পদার্থ দেখা বা স্পর্শ করা নিষেধ তাই সেই সময়ে কিছু বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়।

 

চন্দন যাত্রার মধ্যে দিয়ে শুরু হয়ে গেছে রথ যাত্রার দিন গোনা আর কদিন পরেই স্নান যাত্রা। আজ থেকে সেই উপলক্ষে চলবে জগন্নাথ দেব সংক্রান্ত শাস্ত্রীয় আলোচনা। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

ফলহারিণী অমাবস্যা এবং গ্রহের প্রতিকার 

ফলহারিণী অমাবস্যা এবং গ্রহের প্রতিকার

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

ফল হারিণী অমাবস্যা কোনো সাধারণ অমাবস্যা তিথি নয়। ফল হারিণী অমাবস্যার সাথে জ্যোতিষ তন্ত্র এবং গ্রহ নক্ষত্রর বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে।

আজকের এই বিশেষ পর্বে আপনাদের ফল হারিণী অমাবস্যা তিথিতে গ্রহ দোষ খন্ডনের গুরুত্ব নিয়ে কিছু বলবো। জানাবো গ্রহ দোষ বলতে জ্যোতিষ শাস্ত্রে কি বোঝায়। গ্রহ দোষ খণ্ডন কি এবং কেনো ফল হারিণী অমাবস্যায় গ্রহ দোষ খণ্ডন হয়।

 

জাতক জাতিকার জন্মছক বিশ্লেষণ করলে অথবা হস্তরেখা বিচার করলে দেখা যায় অনেকেরই কিছু না কিছু গ্রহদোষ রয়েছে। অর্থাৎ কিছু শুভ গ্রহ এবং কিছু অশুভ গ্রহের গ্রহগত সংযোগ। সেটা দৃষ্টি বিনিময় বা অশুভ স্থানে অবস্থানে ফলে হতে পারে আবার অশুভ গ্রহ দ্বারা কোনো গ্রহ পীড়িত হলেও হতে পারে। আবার অশুভ নক্ষত্রর প্রভাবেও হতে পারে।

 

জ্যোতিষ শাস্ত্রে যতরকম গ্রহের প্রতিকারের কথা উল্লেখ আছে তার মধ্যে শাস্ত্র মতে পুজো পাঠ এবং মন্ত্র উচ্চারনের মধ্যে দিয়ে গ্রহদোষ খণ্ডনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কারন প্রতিটি গ্রহের রয়েছে নিজস্ব আধ্যাত্মিক সত্ত্বা এবং অধীস্টাত্রী দেবী।

 

গ্রহের প্রতিকারের সাফল্য এবং

তার স্থায়ীত্ত্ব নির্ভর করে সঠিক তিথি

নির্বাচনের উপর।সঠিক তিথিতে করা শাস্ত্রীয় মতে দোষ খণ্ডন সবথেকে বেশি প্রভাব শালী হয়, এবং এই তিথি গুলির মধ্যে দীপান্বিতা অমাবস্যা, কৌশিকী অমাবস্যা, মৌনী অমাবস্যা এবং ফলহারিনী অমাবস্যা কে অন্যতম শ্রেষ্ঠ তিথি হিসেবে দেখা হয়|

 

জন্ম ছকে অশুভ গ্রহ দোষ সৃষ্টির একটি কারন হচ্ছে জন্ম জন্মান্তরের অর্জিত পাপ। সেই পাপ পূর্ব পুরুষের ও হতে পারে। তাই ফল হারিণী অমাবস্যায় করা গ্রুহ দোষের প্রতিকার সেই

সব কর্ম ফল থেকে মুক্তি দেয় এবং গ্রহের অশুভ

প্রভাব দূর করে সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

ফল হারিণী অমাবস্যার অর্থাৎই হলো জন্ম জন্মান্তরের পাপের ফল থেকে এবং অশুভ শক্তি থেকে চীর তরে মুক্তি লাভ।

 

আবার যথা সময়ে আধ্যাত্মিক এবং পৌরাণিক বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনায় ফিরে আসবো।পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – বড় দেবীর পুজো

কালী কথা – বড় দেবীর পুজো

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজকের কালী কথায় কোচবিহারের বড়ো দেবীর পুজো নিয়ে লিখবো।যে পূজোর বয়স প্রায় পাঁচশো বছর।গোটা উত্তর বঙ্গে এই বড় দেবী অত্যান্ত জাগ্রত এবং জনপ্রিয়।

 

প্রথাগত প্রতিমার থেকে এই প্রতিমা সম্পূর্ণ আলাদা। এখানে দেবী রক্তবর্ণা এবং উগ্ররূপে তিনি বিরাজ করছেন । সঙ্গে থাকেন দুই সখী জয়া এবং বিজয়া। দেবীর বাহন বাঘ এবং সিংহ উভয়।

 

শতাধিক বছর আগে কোচবিহার রাজ বংশের অন্যতম রাজা মহারাজা নরনারায়ণ স্বপ্নে ওই এই দেবীকে দেখেছিলেন সেই রূপেই আজও এখানে পূজিত হন দেবী।

 

আজ থেকে পাঁচশো বছর আগে এই রাজ বংশের বিশ্ব সিংহ এবং তাঁর ভাই শীষ্য সিংহ খেলার ছলে দেবীর আরাধনা শুরু করেন। ময়নার ডালকেই দেবীরূপ দিয়ে পুজো করেন তাঁরা। পরবর্তীতে সেই কাঠ ‘বড় দেবী’র মন্দিরে এনে, তাকে কাঠামো হিসেবে ব্যবহার করে তার উপর শুরু হয় প্রতিমা তৈরির কাজ।

 

শোনা যায় একবার মহারাজা বিশ্ব সিংহ খেলার ছলে এক সাথীকে তরোয়াল দিয়ে আঘাত করেন। সঙ্গে সঙ্গে সেই বালকের মাথা আলাদা হয়ে যায় ধড় থেকে। সেই মাথা দেবীকে নিবেদন করেন বিশ্ব সিংহ। সেই থেকে শুরু হয় এক অদ্ভুত রীতির প্রচলন। আজও ‘বড় দেবী’র পুজোয় একফোঁটা হলেও প্রাণীর রক্তর প্রয়োজন হয় এবং আজও নাকি তাজা রক্ত সংগ্রহ করে দেবীকে উৎসর্গ করা হয়।

 

পুজো হয় তন্ত্র মতে এবং আজও পুজোতে পশুবলি হয়। বিসর্জনের সময় যমুনা দীঘিতে নিয়ে যাওয়া হয় মৃন্ময়ী প্রতিমা এবং দেবী মূর্তি খণ্ডিত করে বিসর্জন দেওয়া হয়।

 

ফল হারিণী অমাবস্যা উপলক্ষে বাংলার বহু এমন ঐতিহাসিক কালীপুজো এবং অলৌকিক ঘটনা নিয়ে আলোচনা করছি কালী কথায় ।

ফিরে আসবো আগামী পর্বে।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – ভবতারিণী কালী

কালী কথা – ভবতারিণী কালী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজ কালী কথার এই পর্বে আপনাদের কলকাতার এমন একটি প্রাচীন কালীর পুজোর কথা আপনাদের জানাবো যেখানে দেবী ভবতারিণী রূপে বিরাজ করছেন।

 

ঐতিহাসিক এই মন্দিরটি ১৮৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত।

বর্তমানে এই মন্দিরটি হেরিটেজ ঘোষিত হয়েছে।

গর্ভগৃহে কষ্টিপাথরের দক্ষিণাকালী ভবতারিণী নামেই নিত্য পূজিতা। মন্দিরের  গর্ভগৃহের একদিকে শ্রীধর অর্থাৎ নারায়ণ শিলা, কৃষ্ণ-রাধিকা মূর্তি, গণেশ, কৃষ্ণ মূর্তিও নিত্য পূজিত হয়।  মন্দিরটি দক্ষিণমুখী। দক্ষিণেশ্বরের আদলে নবরত্নশৈলীতে মন্দিরটি নির্মিত এবং আগেই বলেছি দক্ষিনেশ্বরের ন্যায় এখানেও দেবী কালী ভবতারিণী রূপে বিরাজ করছেন।

 

ঠাকুর রামকৃষ্ণর শিষ্য বলরাম ঘোষের উত্তরসূরি তুলসীরাম ঘোষকে স্বপ্নে দেখা দিয়েছিলেন দেবী।স্বপ্নে দেখা রূপ অনুযায়ীই এখানে দেবী কালীর মূর্তি তৈরি হয়েছে। মন্দিরটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ প্রথম গ্রহণ করেন সারদা প্রসাদ ঘোষের মা দয়াময়ী দাসী। তুলসীরাম ঘোষ স্বপ্নে দেখা কালী মূর্তি অনুযায়ী একটি ছবি আঁকিয়েছিলেন। সেই ছবিটি এখনও মন্দিরে রাখা আছে। তুলসীরামের পুত্রবধূ দয়াময়ী দেবী স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলের সঙ্গে কলকাতায় এসে জমি কিনে মন্দির তৈরি শুরু করেন এবং তুলসীরামের আঁকানো ছবি অনুযায়ী কালী মূর্তি তৈরি করান। পরবর্তীতে মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয় স্থাপিত হয় একটি কষ্টি পাথরের কালী মূর্তি এবং নিয়মিত পুজো

শুরু হয়।

 

ভবতারিণী মন্দিরে বৈষ্ণব মতে পুজো হয়।

প্রতি অমাবস্যায় বিশেষ পুজো হয় তবে

কার্তিক অমাবস্যায় বেশি ধূমধাম করে কালী পুজো হয়। এছাড়াও জন্মাষ্টমী, দুর্গাপুজো এবং জগদ্ধাত্রী পুজো হয়ে থাকে। মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বাসন্তী পঞ্চমীর দিন সেই কারণে, প্রতি বছর বসন্ত পঞ্চমীর দিন মন্দিরের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পুজো হয়।

 

স্থানীয় বাসিন্দারা বিপদে-আপদে মন্দিরে ছুটে আসেন তাদের ভবতারিণী মায়ের মন্দিরে ভক্তদের বিশ্বাস দেবীর কৃপায় যেকোনও বিপদ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

 

ফিরে আসবো পরবর্তী পর্বে অন্য এক কালী মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে। কালী কথায়।

পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – বন কালী

কালী কথা – বন কালী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

বর্ধমানের অখ্যাত রাজকুসুম গ্রামে আজ থেকে আনুমানিক সাড়ে চারশো বছর আগে।বন কালীর পুজো শুরু হয়। প্রাচীন এই কালী পুজো নিয়ে আজকের কালী কথা।

 

ঠিক কবে কে এই পুজো শুরু করেন তা নিশ্চিত ভাবে বলা না গেলেও এটুকু জানা যায় যে

পুজোর পুরোহিত ছিলেন স্থানীয় ভট্টাচার্য্য পরিবারের এক সদস্য। দুর্গম এই অরণ্যে সেই সময় ছিলো বন্য পশু এবং ডাকাতের ভয়।পুজোর সময়ে পুরোহিতকে রীতিমত লাঠিয়াল সাথে করে জঙ্গলে আনা হত। পুজো অনুষ্ঠিত হতো দিনের বেলায়।

 

একবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য পুজোর স্থানে পৌঁছাতে নানা বাঁধার সৃষ্টি হয়।তারপর স্বপ্নাদেশ পান পুরোহিত । দেবী স্বপ্নে দেখা দিয়ে তাকে তার বাড়িতেই রেখে পুজো করতে বলেন। দেবী আরো বলেন জঙ্গলের মধ্যে একটি গাছের গায়ে দুটো চোখের আকৃতি দেখা যাবে সেই গাছেই তিনি বিরাজমান থাকবেন। সেই গাছের গোঁড়ায় মূর্তি ছাড়াই হবে পুজো।সেই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হয়।

 

সেই থেকে ভট্টাচার্য বাড়িতে দেবী অধিষ্ঠান করছেন আবার একই সাথে জঙ্গলে এক গাছে দেবীর শক্তি উপস্থিত। সেখানেও ভক্তরা এসে পুজো দেন। জঙ্গল বা বনের মধ্যে দেবী বিরাজ করছেন তাই নাম হয় বন কালী

 

সাধারণত বাংলার সব কালী মন্দিরে দীপান্বিতা অমাবস্যা বা কালী পুজোর দিনেই বড়ো করে

কালী পুজোর আয়োজন হয় কিন্তু বন কালীর পুজো হয় কালী পুজোর পরদিন।এখানে নেই কোনো মূর্তি তার বদলে আছে গাছ এবং গাছে চোখের আকৃতিও দেখা যায়।পাশাপাশি ভট্টাচার্য বাড়তেও বন কালীর আরাধনা হয়।

 

আবার এমন এক প্রাচীন কালী পুজোর ইতিহাস এবং অলৌকিক ঘটনা নিয়ে ফিরে আসবো

কালীর কথার পরবর্তী পর্বে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।