বিশেষ পর্ব – বজরংবলী এবং শনি দেব

149

বিশেষ পর্ব – বজরংবলী এবং শনি দেব

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

শাস্ত্রে আছে হনুমান পুজো করলে শনির খারাপ প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায় কিন্তু কেনো|তার উত্তর লুকিয়ে আছে আমাদের শাস্ত্রে।আজকের পর্বে সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজবো।

 

দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ হয় লঙ্কায়। হনুমানজী যখন প্রথম লঙ্কায় যান রামের দূত হিসেবে তখন তিনি লঙ্কায় রাবনের হাতে বন্দি শনিদেবকে মুক্ত করে দেন।পুত্র ইন্দ্রজিৎ কে অমর এবং অজেয় করতে তার জন্মের সময় রাবন সমস্ত গ্রহকে লংকায় আটকে রেখেছিলেন। শনিদেব অবাধ্য হওয়ায় তাকে আলাদা করে বন্দি করে রাখা হয়েছিলো।

 

এর পর প্রভু রাম যখন লঙ্কায় যাবেন, রাবণকে বধ করে সীতাকে উদ্ধার করার জন্য তখন রামেশ্বরমে সেতুবন্ধন হচ্ছে। ভক্ত বীর হনুমান আছেন তারই তত্ত্বাবধানে, কঠোর প্রহরায়। প্রিয় রামের কাজে কোনো বাধা আসতেই দেবেন না তিনি।এমন সময়, হনুমান একদিন রামের পুজোয় বসেছেন। এমন সময় শনিদেব এলেন তাঁর কাছে। নিজ পরিচয় সদম্ভে ঘোষণা করে কে বেশী শক্তিশালী তা দেখার জন্য হনুমানকে যুদ্ধে আহ্বান করলেন।শান্তভাবে প্রত্যাখ্যান করলেন হনুমান। বললেন, ‘আমি এখন রামের ধ্যানে বসেছি। দয়া করে আমাকে একা ছেড়ে দিন। পুজোর সময় আমাকে বিরক্ত করবেন না’।

 

শনি তো নাছোড়বান্দা! যুদ্ধে শক্তি পরীক্ষা না করে কিছুতেই যাবেন না তিনি। অগত্যা হনুমান আর কি করেন! নিজের লেজটাকেই বড় করে শনিদেবকে পেঁচিয়ে ফেললেন এবং শক্ত করতে লাগলেন লেজের বাঁধুনি। যতই বাঁধন শক্ত করেন, শনিদেব তো ততই হাঁসফাঁস করতে থাকেন ব্যথায়! শেষে হনুমান যখন লেজ ওপর-নীচ করতে লাগলেন, শনিদেবের তখন রীতিমতো কষ্ট পাচ্ছেন, এরপর পাথরের উপর দিয়ে ঘষে তাকে কিছুটা দূর নিয়ে গেলেন হনুমান, সারা গায়ে যখন তাঁর রক্তে ভেসে যাচ্ছে, তিনি মুক্তি চাইলেন, তখন শনির মিনতিতে দয়া হল হনুমানের। ছেড়ে দিলেন তিনি।

 

এরপর শনিদেব সারা শরীরে তেল দিয়ে মালিশ করে যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেয়ে ছিলেন। হনুমানের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে শনিদেবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি আর রামের ভক্তদের বিরক্ত করবেন না।

 

তবে এখানেই শেষ নয় আরো একবার এই দুই মহারথী মুখোমুখি হয়েছিলেন, এবার সেই ঘটনা টা বলি, একবার কলিযুগে হনুমানজী শ্রীরামের ধ্যান করছিলেন। সেই সময় শনিদেব এসে তাকে হুমকির সুরে সাবধান করে বলেন যে এই মুহূর্ত আমার সাড়ে সাতির দশা আপনার ওপরেও পড়তে চলেছে। এর উওরে হনুমানজী বলেছিলেন শ্রীরামের যারা ভক্ত তাদের উপরে গ্রহের কু প্রভাব পড়েনা।তাছাড়া আমার গোটা শরীরেতো শ্রীরামের বাস আপনি বসবেন কোথায়? এর থেকে ভাল আপনি অন্য কোথাও চলে যান। শনিদেব তখন বলেন আমি সৃষ্টি কর্তার বিধানে বাধ্য। আমি আপনার শরীরেও প্রবেশ করছি। হনুমানজী তখন বলেন ঠিক আছে চলে আসুন। এই বলাতে শনিদেব হনুমানজীর মাথায় গিয়ে অবস্থান করলেন।আর হনুমানজীর মাথায় তখন হঠাৎ একটু অসস্ত্বি হতে শুরু হল। হনুমানজী এক পাহাড় তুলে নিজের মাথায় রাখলেন। চাপা পড়ে শনিদেব হনুমানজীকে চিৎকার করে জিজ্ঞেস করলেন এ আপনি কি করছেন? হনুমানজী উওরে বললেন আপনি যেমন সৃষ্টি কর্তার বিধানে বাধ্য তেমনি আমিও আমার নিজের স্বভাবে বাধ্য।

এই বলে তিনি আবার একটি পাহাড় তার মাথায় রাখলেন। শনিদেব আরও চাপা পড়ে বললেন আমাকে নিচে নামতে দিন আমি আপনার সঙ্গে সন্ধি করতে রাজি আছি। হনুমানজী কোন কথা না শুনে তৃতীয় পর্বত তার মাথায় তুলে নেন। শনিদেব আরও চিৎকার করতে করতে থাকে, বলে আমাকে মুক্ত কর পবন পুএ আমি কখনও তোমার আশেপাশেও আসবো না। হনুমানজী এই বার চতুর্থ পর্বত তার মাথায় তুলতে যন্ত্রনায় কাতর শনিদেব চিৎকার করতে থাকেন আমার ভুল হয়ে গেছে রামভক্ত হনুমান। আমি আপনি কেন আপনার কোন ভক্তের ধারেকাছে আমি যাব না কথা দিচ্ছি। এই কথা শোনার পর হনুমানজী পাহাড় নামিয়ে শনিদেবকে মুক্তি দেন।

 

আজকে বজরংবলী কে নিয়ে আলোচনা এখানেই শেষ করছি।ফিরে আসবো আগামী পর্বে।

সঙ্গে থাকুন।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।