বিশেষ পর্ব – অষ্টসিদ্ধির ব্যাখ্যা

137

বিশেষ পর্ব – অষ্টসিদ্ধির ব্যাখ্যা

 

পন্ডিতজী ভৃগুশ্রী জাতক

 

তুলসীদাস রচিত হনুমান চালিশায় হনুমানজীকে

“অষ্ট সিদ্ধি নবনিধী কে দাতা ” নামে অভিহিত করা হয়েছে।এই অষ্ট সিদ্ধি আটটি ঐশ্বরিক ক্ষমতা যা বজরংবলীর অসীম শক্তির উৎস। আজকের পর্বে আপনাদের জানাবো কি এই অষ্টসিদ্ধি এবং কিভাবে এই আটটি শক্তি হনুমানজী কাজে লাগিয়েছিলেন তার প্রভু রামের সেবায়।

 

প্রথম সিদ্ধি হলো অনিমা। এই সিদ্ধি শরীরকে ক্ষুদ্র আকার ধারণ করার ক্ষমতা দেয়। লঙ্কায় সীতাকে খোঁজার জন্য হনুমান যখন গোপনে প্রবেশ করেছিলেন তখন তিনি এই সিদ্ধি প্রয়োগ করে ক্ষুদ্র দেহ ধারণ করেছিলেন।

 

মহিমা হলো দ্বিতীয় সিদ্ধি। এই সিদ্ধির প্রয়োগে শরীর কে ইচ্ছে মতো বিরাট আকার দেয়া যায়। যখন যুদ্ধে লক্ষন আহত এবং একমাত্র সঞ্জীবনি গাছ প্রয়োজন তার প্রাণ রক্ষার জন্য তখন বজরংবলী এই সিদ্ধি ব্যবহার করে সঞ্জীবনি বৃক্ষ সহ সুমেরু পর্বতকে তুলে এনে ছিলেন।

 

গরিমা হলো তৃতীয় সিদ্ধি। এই সিদ্ধির বলে দেহের ওজন বাড়িয়ে বিপক্ষকে পরাস্ত করা যায়। মহাভারতের যুদ্ধের সময়ে ভিমের অহংকারকে চূর্ণ করতে হনুমান এই সিদ্ধি প্রয়োগ করেছিলেন। ভীম বৃদ্ধ হনুমানের লেজ তুলে তার পথ থেকে সরিয়ে দিতে গিয়ে ব্যার্থ হন। পরে তিনি হনুমানের স্বরূপ বুঝতে পেরে তার কাছে ক্ষমা চান এবং যুদ্ধে সাহায্য করার অনুরোধ করেন।

 

চতুর্থ সিদ্ধি লঘিমা গরিমার ঠিক বিপরীত। এই সিদ্ধি বলে শরীরকে অতিরিক্ত হাল্কা করে তোলা যায়। এই সিদ্ধি ব্যাবহার করে বজরংবলী সহজেই সমুদ্র অতিক্রম করে লঙ্কায় পৌঁছতে পারতেন।

 

পঞ্চমসিদ্ধি প্রাপ্তি এমন এক অলৌকিক ক্ষমতা যা এই সিদ্ধির অধিকারী ব্যাক্তির সব মনোস্কামনা পূর্ণ করে। যা কিছু মনোস্কামনা মনে উদয় হয় তা সাথে সাথে পূর্ণতা পায়।শুন্য হাতে এসে যেতে অস্ত্র।যুদ্ধ ক্ষেত্র সহ একাধিক ক্ষেত্রে বজরংবলীকে এই সিদ্ধি প্রয়োগ করতে দেখা গেছে।

 

প্রকম্য হলো ষষ্ঠ সিদ্ধি এই সিদ্ধি প্রাণ শক্তিকে বাড়িয়ে দেয়। প্রতিকূলতাকে জয় করতে সাহায্য করে। যাদের এই সিদ্ধি আছে তারা জলের মধ্যেও দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকতে পারে।বজরংবলী যে অজেয় এবং চিরঞ্জিবী হন তার একটি বড়ো কারন এই সিদ্ধির অধিকারী হওয়ার।

 

ঈশিত্ব হলো সপ্তম সিদ্ধি যা প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা প্রদন করে। বজরংবলী ছিলেন এই সিদ্ধির অধিকারী। এই সিদ্ধি থাকলে প্রাকৃতিক যেকোনো ঘটনা ঘটানো যায় যেমন বৃষ্টিপাত, বায়ুর গতি, নদীর জল ধারা কে পরিচালনা করা যায়। বজরংবলী তা পারতেন।

 

বশিত্ব এই অষ্টম এবং শেষ সিদ্ধি অন্যর মনের উপরে প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতা দেয়। যার এই সিদ্ধি থাকবে সে যেকোনো মানুষ বা প্রাণীর মনের কথা বুজতে পারবে এবং তার মনকে প্রভাবিত করতে পারবে। বজরংবলী অষ্ট সিদ্ধির অধিকারী হওয়ায় তার এই ক্ষমতা ছিলো।

 

বজরংবলীকে নিয়ে ধারাবাহিক এই আলোচনা আশা করি আপনাদের ভালো লেগেছে।

ফিরে আসবো আগামী পর্বে ধারাবাহিক শাস্ত্রীয় আলোচনা নিয়ে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।