জগন্নাথদেব এবং ভক্ত রঘু

118

জগন্নাথদেব এবং ভক্ত রঘু

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

চন্দন যাত্রার মধ্যে দিয়ে পুরী সহ গোটা বিশ্বে শুরু হয়ে গেছে রথ যাত্রার প্রস্তুতি। বিশেষ এই সময়ে আমি শুরু করছি জগন্নাথ দেবকে নিয়ে ধারাবাহিক লেখালেখি ।আজ প্রভু জগন্নাথের একটি বিশেষ লীলা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করবো। এই লীলাতে প্রভুর সখা ভাব ফুটে উঠেছে।

 

গ্রীষ্মে বাঙালির অন্যতম প্রিয় ফল কাঁঠাল। এই কাঁঠাল জগন্নাথদেবের ও অত্যন্ত প্রিয়। নিজের প্রিয় ফলপেতে একবার এক কান্ড ঘটিয়েছিলেন জগন্নাথ।একবার ভগবান জগন্নাথ তার এক ভক্ত রঘুকে বালক রূপে দর্শন দিলেন এবং তাঁকে রাজার বাগান থেকে কাঁঠাল চুরি করতে তাঁর সঙ্গে যেতে বললেন। রঘু বলল, “তুমি কেন কাঁঠাল চুরি করতে চাও? তোমার যদি কাঁঠাল খাবার ইচ্ছা হয়, আমাকে বল-আমি তোমার জন্য সুন্দর একটি কাঁঠাল এনে দেব।” বালকরূপী জগন্নাথ সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বললেন কৃষ্ণরূপে আমি অন্যদের বাড়িতে মাখন চুরি করতে যেতাম। চুরি করা দ্রব্য ভোজনে বিশেষ আনন্দ আছে। আজ তোমাকে আমি উপলব্ধি করাব-চুরি করা কি আনন্দের। আমার সঙ্গে এসো।” রঘু বুঝলো এ প্রভুর লীলা|নিরুপায় হয়ে রঘু প্রভুর প্রস্তাবে সম্মত হল এবং তাঁর সঙ্গ নিল।

 

এরপর চুপিসারে তারা দুজনে রাজার বাগানে প্রবেশ করলেন। জগন্নাথ রঘুকে বললেন, “তুমি গাছে চড়বে। আমি মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকব। তুমি সবচেয়ে সুন্দর ও বড় কাঁঠালটি পাড়বে এবং মাটিতে ফেলবে। আমি এখানে দাঁড়িয়ে থাকব। তারপর আমরা উভয়ে কাঁঠাল নিয়ে পালাব।” রঘু যথাযথভাবে প্রভুর নিদের্শ অনুসরণ করল। রঘু কাঁঠাল গাছে উঠে সবচেয়ে বড় ও ভাল কাঁঠালটি খুঁজে বের করল এবং সেটা পাড়ল। ‘জগন্নাথ’, চাপাস্বরে রঘু জগন্নাথকে ডাকল। ‘তুমি কি তৈরি?’ জগন্নাথ উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি তৈরি, নিচে ফেল !’ রঘু কাঁঠাল নিচে ফেলল- জগন্নাথ সেটা ধরবেন ভেবে। কিন্তু কোথায় জগন্নাথ ! তিনি ইতিমধ্যেই বাগান থেকে অদৃশ্য হয়েছেন।কাঁঠাল ধরার জন্য কেউই সেখানে ছিল না। সশব্দে কাঁঠালটি মাটিতে পড়ে ফেটে চৌচির হল। যখন রাজার বাগানের মালী ঐ শব্দ শুনল তখন রঘু

ধরা পড়লো এবং রাজার কাছে খবর গেলো|

 

রাজা তাঁর মন্ত্রীদের সাথে নিয়ে বাগানে গেলেন। রাজা জানতেন রঘু জগন্নাথদেবের অত্যন্ত প্রিয় ভক্ত। নিছক চুরি করার জন্য তিনি এই কাজ করবেন না। নিশ্চই এর পেছনে অন্য কোনো রহস্য আছে।রাজা রঘুকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘প্রভু, তোমার যদি কাঁঠাল খাওয়ার ইচ্ছা হয়ে থাকে, তাহলে গভীর রাত্রে আমার বাগানে এসে গাছে চড়ার কি প্রয়োজন ছিল? তুমি আমাকে একবার বলতে পারতে। আমি কাঁঠাল পাড়ার ব্যবস্থা করে তোমার বাড়িতে পাঠিয়ে দিতাম!’ রঘু তখন প্রভু জগন্নাথ কিভাবে তাঁকে ঠকিয়েছে- সব বৃত্তান্ত বলল। সেখানে উপস্থিত সবাই প্রভুর রম্য এই লীলা শুনে খুবই আনন্দ পেল এবং সকলেই হাসতে লাগল। তাঁরা রঘুর সৌভাগ্যর জন্য তাঁর গুনগান করলেন।

 

সখ্যরসে এই ভাবে প্রভু জগন্নাথ তার ভক্ত দের সঙ্গে বহু বার বহু লীলা করেছেন।পরবর্তী পর্বে আবার ফিরে আসবো প্রভু জগন্নাথ সংক্রান্ত ধারাবাহিক আলোচনা নিয়ে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।