জগন্নাথ দেবের চন্দন যাত্রা

142

জগন্নাথ দেবের চন্দন যাত্রা

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

বাঙালির দূর্গাপুজোর সূচনা যেমন মহালয়া থেকে হয়ে যায় তেমনই প্রভু জগন্নাথের রথ যাত্রার তোড়জোড় শুরু হয়ে যায় পবিত্র চন্দন যাত্রার দিন থেকেই। এই চন্দন যাত্রা নিয়ে নানা পৌরাণিক কাহিনী প্রচলিত আছে। আজ থেকে এক সপ্তাহ জুড়ে চন্দন যাত্রা সহ জগন্নাথদেব সংক্রান্ত নানা শাস্ত্রীয় বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে লিখবো। আজ শুরু করবো স্নান যাত্রার মহাত্ম দিয়ে।

কথিত আছে শ্রীজগন্নাথদেব মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্নকে স্বপ্নে দর্শন দিয়ে বৈশাখী শুক্লা অক্ষয় তৃতীয়াতে সুগন্ধি চন্দন দ্বারা তার শ্রী অঙ্গে লেপন করার নির্দ্দেশ দিয়েছিলেন। সেদিন থেকে শুরু হয় চন্দন যাত্রা। উৎসব। গ্রীষ্ম ঋতুতে প্রভু জগন্নাথ কর্পূর এবং চন্দন লেপনের মাধ্যমে গরমের কষ্ট থেকে রেহাই পান তাই এই রীতি তিনি নিজে শুরু করেছিলেন বলে মনে করা হয়।আয়ুর্বেদ মতে
চন্দন হল সর্বশ্রেষ্ঠ প্রলেপন। যেহেতু ভারতে বৈশাখ মাস অত্যন্ত উষ্ণ থাকে তাই চন্দনের শীতল গুণ ভগবানের আনন্দ প্রদান করে। জগন্নাথের দুই চক্ষু ব্যতীত সর্বাঙ্গে চন্দন লেপন করা হয়ে থাকে। এই সময়ে বিগ্রহগকে নিয়ে শোভাযাত্রা করা হয় এবং জগতের নাথকে মন্দির পুষ্করিণীতে নৌকাবিহার করানো হয়ে থাকে।

প্রতি বছর অসংখ্য ভক্তদের উপস্থিতিতে বিখ্যাত চন্দন যাত্রা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ঐতিহ্য অনুসারে এই দিনই বিখ্যাত রথযাত্রার
রথ নির্মাণের সূচনা হয়।

শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে চন্দন যাত্রা সম্পর্কে এই সুন্দর অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ আছে যেখানে দেখা যাচ্ছে বৃন্দাবনে পরম বৈষ্ণব শ্রীমাধবেন্দ্র পুরীকে স্বপ্নে তাঁর আরাধ্য শ্রীগোপাল বলছেন, “আমার শরীরের তাপ জুড়োচ্ছে না। শ্রী ক্ষেত্র থেকে চন্দন নিয়ে এসো এবং তা ঘষে আমার অঙ্গে লেপন কর, তা হলে তাপ জুড়োবে।” বৃদ্ধ মাধবেন্দ্র পুরী পূর্বভারতে নীলাচলে জগন্নাথধাম পুরীতে এসে রাজার কাছে পূর্ব স্বপ্নগত সমস্ত কথা বললেন। রাজা তার আরাধ্য গোপালের জন্য এক মণ সুগন্ধি চন্দন দেন। চন্দন নিয়ে ফেরার মাধবেন্দ্র পুরী রেমুনা নামক স্থানে অবস্থিত শ্রীগোপীনাথ মন্দিরে আসেন। সেই রাত্রে তার আরাধ্য গোপাল তার স্বপ্নে এসে বলেন “হে মাধবেন্দ্র পুরী, আমি ইতিমধ্যেই সমস্ত চন্দন ও কর্পূর গ্রহণ করেছি। এখন কর্পূর সহ এই চন্দন ঘষে ঘষে শ্রীগোপীনাথের অঙ্গে লেপন কর। গোপীনাথ ও আমি অভিন্ন।

পরের দিন মাধবেন্দ্র পুরী পুরীরর রাজা কে সব বলেন এবং ঠিক হয় দীর্ঘ ২১ দিন ধরে প্রত্যহ একজন পূজারী প্রভু গোপীনাথের শ্রীঅঙ্গে চন্দন লেপন করবেন । তাই হয়। সেইদিন থেকেই চন্দন যাত্রা শুরু হয়। সেই রীতি নীতি আজও সমান ভাবে চলছে।তবে বর্তমানে পুরীর জগন্নাথ দেবের চন্দন যাত্রা সর্বাধিক জনপ্রিয় এবং প্রসিদ্ধ। চন্দন যাত্রার পর দেবস্নান পূর্ণিমায় হবে স্নান যাত্রা এবিং সব শেষে রথ যাত্রা

প্রভু জগন্নাথ সম্পর্কে আরো অনেক তথ্য এবং ঘটনা নিয়ে চলতে থাকবে ধারাবাহিক আলোচনা। ফিরে আসবো আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।