বাংলার কালী মন্দির এবং কালী পুজোর ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করতে হলে স্বাভাবিক ভাবেই এক কালের দুর্ধর্ষ ডাকাত এবং তাদের দ্বারা পূজিতা কালীর কথা এসে পড়ে। কারন কৃষ্ণানন্দ আগমবাগিশ পূর্ববর্তী বাংলায় কালী ছিলেন মুলত ডাকাত এবং তন্ত্র সাধকদের উপস্য দেবী। আজকের বাংলার কালী পর্বে চিত্তেশ্বরী কালী বা চিতু ডাকাতের কালী কালী পুজো নিয়ে লিখবো।
কলকাতার প্রাচীন কালী মন্দির গুলির মধ্যে একদম প্রথম সারি তে রয়েছে চিত্তেশ্বরী কালী মন্দির|বর্তমান চিৎপুর অঞ্চলে অবস্থিত এই প্রাচীন মন্দির নিয়ে রয়েছে অজস্র কিংবদন্তী ও অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ|
এই মন্দিরের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রতিষ্ঠার সঠিক সময় নিয়ে ঐতিহাসিক ও গবেষক দের মধ্যে রয়েছে মতবিরোধ|অনেকেই বিশ্বাস করেন কথিত, ষোড়শ শতকে এই মন্দির বানিয়েছিলেন তৎকালীন ধনী জমিদার মনোহর ঘোষ যিনি একসময়ে আকবরের মনসাবদার টোডর মলের রাজ কর্মচারী ছিলেন|আবার কেউ কেউ মনে করেন এই মন্দির নির্মান করেন ও দেবীকে এখানে প্রতিষ্ঠা করেন সেই সময়ের এই অঞ্চলের কুখ্যাত ডাকাত চিতে বা চিতু|তার নাম থেকেই নাকি এই অঞ্চলের নাম হয় চিৎপুর এবং দেবীর নাম চিত্তেশ্বরী |তবে চিত্তেশ্বরী’ মন্দির থেকেই এলাকার নাম হয় চিৎপুর হয় একথা প্রায় সবাই বিশ্বাস করেন।
ভক্তদের বিশ্বাস যে এই মন্দিরে দেবী সাক্ষাৎ
অবস্থান করছেন |এখানে মূল মন্দিরে দেবী সর্বমঙ্গলা ছাড়াও আছে তিনটি শিব মন্দির। লোকমুখে শোনা যায় এককালে এই এলাকা
ছিলো অত্যান্ত দুর্গম|ছিলো ভয়ঙ্কর বাঘ ও দুর্ধর্ষ ডাকাতের উৎপাত|সত্যি মিথ্যে প্রমান করা মুশকিল তবে লোক মুখে শোনা যায় এক কালে ডাকাতরা নাকি এখানে নরবলি দিয়ে ডাকাতি করতে বেরোতো|ডাকাত দের আতঙ্কে জমিদার পরিবার এই স্থান ত্যাগ করে চলে যান এলাকা চলে যায় চিতু ডাকাত এবং তার দলের হাতে।
একটি প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে একবার মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে গঙ্গার জলে ভেসে আসা নিম কাঠ সংগ্রহ করে তাই দিয়ে মা চণ্ডীর বিগ্রহ তৈরি করেন চিতু ডাকাত৷ মা চিত্তেশ্বরী দশভুজা দুর্গা রূপে পূজিতা হন এখানে আর মায়ের সামনে রয়েছে একটি বাঘ|শোনা যায় চিতে ডাকাতের মৃত্যুর পরে তৎকালীন জমিদার মনোহর ঘোষ ও নৃসিংহ ব্রহ্মচারী পুনরায় এই স্থানে নিজেদের প্রভাব প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠা করেন এবং এই মন্দিরে রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব গ্রহন করেন এবং আজীবন তারা নিষ্ঠা সহকারে পূজা করে যান সেই প্রথা আজও চলে আসছে|
বর্তমানে সাবর্ণ রায়চৌধুরীর বংশধররা এই মিন্দিরের দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করে থাকেন|দূর্গাপুজোর সময়ে এবং কালী পুজোর সময় বিশেষ পুজো হয়।আজও এখানে
নিমকাঠের বিগ্রহতেই দেবীর পুজো হয়।
যথা সময়ে বাংলার কালী নিয়ে আবার ফিরে আসবো আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।