শিবের ত্রিশূলের রহস্য

279

দেবাদিদেব মহাদেবেকে নিয়ে আলোচনা অসম্পূর্ণ থেকে যায় যদি তার চির সঙ্গী ত্রিশূলের কথা না বলা হয়। সংহার কর্তা মহাদেবের প্রধান অস্ত্রতার ত্রিশূল। আবার এই ত্রিশূলই তিনি তুলে দেন দেবী দুর্গার হাতে মহিষাসুর বধের সময়ে।শুধু অস্ত্র নয় শুভ শক্তির প্রতীক এই ত্রিশূল বাস্তু এবং জ্যোতিষ শাস্ত্রেও ব্যবহার হয়। সে বিষয়ে পরে আসছি আগে ত্রিশূলের শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা টা জেনে নেয়া প্রয়োজন।পুরান অনুসারে শিব হলেন স্বয়ম্ভু তার আদি অন্ত কিছুই নেই। তার সৃষ্টি নেই তার বিনাশ ও নেই।নিজের চেতনায় নিজ ইচ্ছায় সৃৃষ্ট হন এবং যাকিছু অশুভ বা সৃষ্টির জন্যে বিপদজনক তা সংহার করার দায়িত্বে থাকেন তিনি। কিন্তু সংহার কর্তার এই সংহার লীলার জন্যে প্রয়োজন অস্ত্র, এই অস্ত্র নির্মাণের ভার স্বাভাবিক ভাবেই গিয়ে পরে দেব শিল্পী বিশ্বকর্মার উপর|বিষ্ণুপুরান অনুসারে সূর্যের তেজ ও রশ্মির ব্যবহার করে দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা ত্রিশূল নির্মাণ করেন এবং তা শিবকে প্রদান করেন|এতে শিব ও তার অস্ত্র পান এবং সূর্যের তেজ কিছুটা কমে তাতে বিশ্বকর্মার কন্যা এবং সূর্যর পত্নী সংজ্ঞা স্বামীর অতিরিক্ত তেজ থেকে কিছুটা স্বস্তি পান|এখানে ত্রিশুল একসাথে দুটি সমস্যার সমাধান করে।আগেই বলেছি ত্রিশূল শুধু শিবের নয় দেবী দূর্গারও অস্ত্র কারন মহিষাসুর বধের জন্য বিভিন্ন দেবতা যখন দেবীকে বিভিন্ন অস্ত্রদান করেন তখন ভগবান শিব তাকে এই ত্রিশূলটি দান করেছিলেন,দেবী মহিষাসুরকে ত্রিশূল দিয়েই বধ করেন|আবার ত্রিশূল দিয়ে শিব দ্বারা গণেশের মুন্ড ছেদের ঘটনারও উল্লেখ আছে শাস্ত্রে|ত্রিশূল শুধু অস্ত্র নয় সনাতন ধর্মে ত্রিশূল সমৃৃদ্ধির প্রতীক আবার ত্রিশূলের তিনটি ফলার আলাদা আলাদা ব্যাখ্যা ও তাৎপর্য রয়েছে|মনে করা হয় তিনটি ফলা যথাক্রমে সৃষ্টি-স্থিতি-বিনাশ কে চিহ্নিত করে আবার অন্য একটি বাখ্যা অনুসারে তিনটি ফলার অর্থ যথাক্রমে অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত যা শিব তথা মহাকালের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে|শিবের ত্রিশূলে সব সময় বাঁধা থাকে ডমরু। এই ডমরু বেদ এবং তার উপদেশের প্রতীক যা আমাদের জীবনে এগিয়ে চলার রাস্তা দেখায়|শুধু হিন্দু নয় বৌদ্ধ ধর্মেও ত্রিশূল একটি পবিত্র প্রতীক হিসেবে সমাদৃত|এবার আসি বৈদিক বাস্তু শাস্ত্রের দিকে, অশুভ শক্তিকে দূরে রাখতে ত্রিশূল ব্যাবহার হয়|বাস্তু শাস্ত্র মতে গৃহের প্রধান ফটকে ত্রিশূল চিহ্ন বা ত্রিশূল রাখলে গৃহে অশুভ শক্তি প্রবেশ করেনা ও গৃহে সুখ ও সমৃদ্ধি বিরাজ করে|জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে শ্রাবন মাসে শিবকে ত্রিশূল অর্পণ করলে শিব সন্তুষ্ট হন এবং মনোস্কামনা পূর্ণ করেন।কবচ আকারে পবিত্র ত্রিশুল ধারন করলেও ভালো ফল পাওয়া যায় বলে অনেকে বিশ্বাস করেন।শ্রাবন মাস জুড়ে চলতে থাকবে শিব নিয়ে আলোচনা আগামী পর্বে আবার কোনো নতুন বিষয় নিয়ে আসবো আপনাদে সামনে|পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন।ধন্যবাদ।