কালী কথা – গোঘাটের কালী পুজো

110

কালী কথা – গোঘাটের কালী পুজো

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

পশ্চিম বঙ্গের হুগলি জেলার আরামবাগ মহকুমার প্রত্যন্ত একটি জনপদ হল গোঘাট।এই গোঘাটে রয়েছে এক হাজার বছরের প্রাচীন কালী মন্দির। মাতৃ সাধক সন্ন্যাসী অহরলাল গোস্বামী এই স্থানে মন্দির প্রতিষ্ঠা করে মা কালীর আরাধনা শুরু করেন। আজকের কালী কথায় এই কালী পুজো নিয়ে লিখবো।

 

যে গ্রামে কালী মন্দির আছে তার নাম আগাই গ্রাম। আজ থেকে হাজার বছর আগে এই স্থান ছিল জঙ্গলে ঘেরা।পায়ে হাঁটা মেঠো পথে ডাকাত আর জংলী প্রাণী দের আনাগোনাই বেশি ছিলো। সন্ধ্যের পর এই গ্রামে রাস্তা দিয়ে মানুষ যাতায়াত করত না।

 

সেই সময়ে বর্ধমান রাজ পরিবারের আর্থিক সাহায্যে গোঘাটের এই আগাই গ্রামে চারটি জলাশয় কেটে গড় প্রতিষ্ঠা করে মা কালীর পুজো শুরু হয়েছিলো গোস্বামী পরিবারের হাত ধরে।

 

যদিও মন্দির প্রতিষ্ঠা হওয়ার বহু আগে থেকে দেবী কালী এই স্থানে বিরাজ করতেন। গোস্বামী বাড়ির কাছে একটি পুকুরের পাড়ে বিশাল এক নিম গাছ ছিল। সেই নিম গাছের তলাতেই মা কালীর প্রথম পুজো হতো। এই নিম গাছের তলায় ডাকাত দল পুজো করে ডাকাতি করতে যেত।পরবর্তীতে নিম গাছের তলায় পুজোর পর মূল মন্দিরে দেবীর আরাধনা হত।

 

সেই অতীত আজ শুধুই স্মৃতি আর কিছুটা জনশ্রুতি তবে এখনও বহু প্রাচীন রীতি প্রচলিত আছে।নিমগাছের নিচে যখন পুজোপাঠ শুরু হয় তখন গোট গ্রাম নিশুতি হয়ে যায়। অন্ধকারে গোটা গ্রাম ঢেকে যায়। কারুর বাড়িতে কোনও আলো জ্বলে না। একটা গা ছমছমে ও রহস্যময় পরিবেশ পুরোহিত ঠাকুর নিমগাছের তলায় মা কালিকে আহ্বান জানান।গভীর রাতে এই মন্ত্র উচ্চারণ যেনো এক মায়াবী পরিবেশ সৃষ্টি করে।

 

আজও প্রথমে মঙ্গল ঘট স্থাপন করে শুরু হয় পুজো।তারপর দেবী মূর্তির চক্ষুদান করা হয় এবং সেই সময় বলী প্রথার রীতি রয়েছে। তন্ত্র মতেই সম্পন্ন হয় পুজো। সবমিলিয়ে এখনও বেশ নিষ্ঠার সঙ্গে ও প্রাচীন প্রথা মেনে আগাই গ্রামে মা কালীর পুজোপাঠ হয়।বিশেষ বিশেষ তিথিতে বহু দর্শণার্থী আসেন মনোস্কামনা নিয়ে।গোঘাটের জাগ্রত কালী সব ভক্তের মনোস্কামনা পূর্ণ করেন বলে বিশ্বাস।

 

ধারাবাহিক কালী কথা চলতে থাকবে।

ফিরে আসবো পরবর্তী পর্বে।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।