কালী কথা – হংস গেড়িয়ার কালী মন্দির
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
মগরাহাটের গোখুণ্ডি গ্রাম পঞ্চায়েতে মধ্যে পড়ে হংসগেড়িয়া গ্রাম। বহু কাল আগে এই অঞ্চল ছিলো দক্ষিণ সুন্দরবনের অংশ। সেই সময়ে
এই গ্রাম ছিল হেতাল, গড়ান, গেঁওয়া গাছে ঘেরা আর হিংস্র জীব জন্তুর আস্তানা। তার সাথে ছিলো ডাকাতের ভয় সেই সময়ে সেই সময়
থেকেই হংসগেড়িয়ার শ্মশানে দেবী কালীর অধিষ্টান।
গভীর জঙ্গলের মধ্য থেকে পাওয়া দু ফুট
পাথরের মা কালীর প্রথম পুজো করেন তান্ত্রিক কৈলাস পণ্ডিত।সেই সময়ে আদিগঙ্গার তীরে বটগাছের কোঠরে বাস করতেন পণ্ডিত কৈলাস । জঙ্গল থেকে আবির্ভাব হয় পাথরের কালী মূর্তির। পরে সেই মা কালী কৈলাস পণ্ডিতের হাত ধরেই প্রতিষ্ঠিত হন। এমনই মানুষের বিশ্বাস।এই স্থানে পঞ্চ মুন্ডির আসনে বসে তন্ত্র সাধনা করতেন কৈলাশ পন্ডিত। বহু জটিল সাধনায় সিদ্ধি লাভ করে তিনি হয়ে উঠেছিলেন অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী।
এই কৈলাশ পন্ডিত পরবর্তীতে বীরভূমে গিয়ে তারাপীঠে তন্ত্র সাধনা শুরু করেন এবং তার খ্যাতি ছড়িয়ে পরে চারদিকে। তার শিষ্য হন স্বয়ং বামা ক্ষেপা।
তবে সেই কালী পুজো কখনো বন্ধ হয়নি
ভক্তের ভক্তি আর বিশ্বাস থেকে চলে আসছে হংসবেড়িয়া মহাশ্মশানের কালী আরাধনা। বছরের প্রতিদিনই কালী ভক্তের সমাগম থাকলেও হাজার হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে অমাবস্যা
তিথি গুলিতে।
পার্শবর্তী বনসুন্দরী নিবাসি এক ধনী ব্যাবসায়ী ১৩৬৬ সালে নির্মাণ করেন ৬ ফুট উচ্চতার মা কালীর মূর্তি । নির্মিত হয় মন্দিরও। আজও নির্মিত মূর্তির পাশে বিরাজমান পাথরের ২ ফুট কালী।
বর্তমানে তান্ত্রিক পরম্পরা মেনে সেবায়েতরা সব দেখাশোনা করেন।দীপান্বিতা অমাবস্যায় পঞ্চমুণ্ডি আসনে পুজোর পর শুরু হয় দেবীর আরাধনা। আজও আদি গঙ্গা থেকেই তোলা হয় পুজোর জল।বেল গাছ, অশ্বথ্থ গাছ, নিম গাছ তিনটি গাছের নিচে থাকা পণ্ডিত কৈলাসের বেদিতে পুজোর পর শুরু হয় কালী আরাধনা। দৈনন্দিন পুজো হয় এখানে। বলি প্রথা নেই এই মন্দিরে। পুজো ঘিরে উৎসব মুখর হয় গ্রামের মানুষ। মনস্কামনা পূর্ণ করতে কেবল দক্ষিন সুন্দরবন নয়। দুর দুর থেকে হাজার হাজর ভক্তরা
আসেন হংসগেড়িয়ার মা কালীর কাছে।
আবার পরের পর্বে এমনই এক প্রাচীন এবং
ঐতিহাসিক কালী মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে
ফিরে আসবো।পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।