গুরু কথা – আনন্দময়ী মা

688

আগামী 24 এ জুলাই আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের পূর্ণিমা তিথিতে দেশ জুড়ে পালিত হবে গুরু পূর্ণিমা|জীবের অন্ধকারাচ্ছন্ন মনকে শ্রীগুরুই জ্ঞানালোক দ্বারা আলোকিত করতে পারেন । গীতা তে স্পষ্ট বলা হচ্ছে যিনি শিষ্য কে সকল জাগতিক বন্ধন থেকে মুক্ত করে আধ্যাত্মিক মার্গে চালনা করবেন ও জন্ম মৃত্যুর আবর্ত থেকে নিষ্কৃতির পথ দেখবেন তিনিই প্রকৃত গুরু|অর্থাৎ পরম জ্ঞান লাভ হয় যার আশ্রয়ে, যার শিক্ষায়, তিনিই প্রকৃত গুর এই গুরু শিষ্য পরম্পরা ভারতের সংস্কৃতির ভিত্তি এবং এই গুরু শিষ্য পরম্পরাকে উদযাপন করা হয় এবং উৎসব আকারে পালন করা হয় গুরু পূর্ণিমায়|

আজ থেকে গুরু পূর্ণিমা উপলক্ষে শুরু করছি একটি ধারাবাহিক লেখনী|লিখবো ভারতের আধ্যাত্মিক জগতের কয়েকজন বিখ্যাত গুরুকে নিয়ে|আজ প্রথম পর্বে পরম শ্রদ্ধেয় আনন্দময়ী মা|

১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার খেওড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন|
আন্দময়ীর প্রকৃত নাম ছিলো নির্মলা সুন্দরী
তাঁর মধ্যে ঈশ্বরচেতনার বিকাশ হয় শৈশব থেকেই।তখন থেকেই হরিনামকীর্তন শুনে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন|

১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে বিক্রমপুরের রমণীমোহন চক্রবর্তীর সঙ্গে তার বিবাহ হয়। ১৯২৬ সালে যখন সিদ্ধেশ্বরীতে কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা হয় ধর্মকর্মে আত্মনিয়োগ করেন আনন্দ নির্মলাদেবী |এই মন্দিরেই একদিন দিব্যভাবে মাতোয়ারা নির্মলা আনন্দময়ী মূর্তিতে প্রকাশিত হন এবং তখন থেকেই তার নাম হয় আনন্দময়ী মা। স্বামীও পরবর্তীকালে সন্ন্যাস গ্রহণ করে ভোলানাথ নামে পরিচিত হন|১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে আনন্দময়ী স্বামীর সঙ্গে উত্তর ভারতের দেরাদুনে চলে যান এবং সেখানে তার লীলাক্ষেত্র ক্রমশ সম্প্রসারিত হয়|পরবর্তীতে সারা দেশ ভ্রমণ করেন আনন্দময়ী মা, অসংখ্য মানুষ তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহন করেন|তৈরি হয় একাধিক আশ্রম|

আনন্দময়ী মা বলতেন, ”খণ্ড আনন্দে প্রাণ তৃপ্ত হইতেছে না, তাই মানুষ অখণ্ড আনন্দ পাইবার জন্য অখণ্ডের সন্ধান করিতেছে।’ এই আনন্দের জন্যই তাঁর জীবন কেটেছে সাধনায়। কৈশোরে এবং পরবর্তীকালে বিবাহিত জীবনেও তিনি ভাবজগতে বেশিরভাগ সময় ডুবে থাকতেন|

শোনা যায় আনন্দময়ী মা-কে তাঁর ভক্তরা কখনও ছিন্নমস্তার মূর্তিতে, কখনও ভুবনেশ্বরী মূর্তিতে আবার কখনও বা সরস্বতী রূপে দেখতেন|

ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন আনন্দময়ী মায়ের অন্যতম প্রধান শিষ্যা। সুভাষচন্দ্র বসু, কমলা নেহরু, পরমহংস যোগানন্দ ও মাধব পাগলার মতো ব্যাক্তিত্বরা মা আনন্দময়ীর শিষ্যত্ব গ্রহন করেছিলেন|

1982 সালে মহাসমাধিতে লীন হয়ে যান ভারতের এই মহান সাধিকা ও আধ্যাত্মিক গুরু|তাঁর দেহত্যাগের পর শিষ্যা ইন্দিরাগান্ধী শোক জানিয়ে বলেছিলেন ”আমার জীবনে মা আনন্দময়ীর আশীর্বাদ ছিল প্রধান শক্তি ও ভরসা। আজ আমার মর্মবেদনা জানাবার ভাষা নেই।” মহান সাধক ও গুরুরা স্থূল দেহ ত্যাগ করলেও তাদের আধ্যাত্বিক কর্মকান্ড তাদের দেয়া আধ্যাত্বিক শিক্ষা ও জ্ঞান তাঁদের অমরত্ব প্রদান করে|আনন্দময়ী মাও তাঁর অসংখ্য ভক্ত শিষ্য দের মনে সদা বিরাজমান|

এই মহান গুরু ও সাধিকা কে প্রনাম জানিয়ে শেষ করছি আজকের পর্ব|আগামী পর্বে আবার দেখা হবে|যাওয়ার আগে জানিয়ে যাই অনলাইন পরিষেবার পাশাপাশি আপাতত আবার নিয়মিত ভাবে চেম্বারে বসে সরাসরি ভাগ্যগণনার কাজে আরম্ভ করেছি যারা জ্যোতিষ সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে আসতে চান উল্লেখিত নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারেন নির্দ্বিধায়|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|