গুরু কথা – শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী বাবা
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
আজকের গুরু কথায় পরম শ্রদ্ধেয় এবং মহান গুরু শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর জীবন এবং সাধনা নিয়ে লিখবো।
১৭৩৫ খ্রিস্টাব্দে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার
চাকলা গ্রামে লোকনাথ বাবার জন্ম হয়েছিল। তার পিতার নাম ছিল রামনারায়ন এবং মায়ের নাম ছিল কমলাদেবী। পিতা-মাতার চতুর্থ সন্তান ছিলেন তিনি। ছোটো থেকেই তার মধ্যে আধ্যাত্মিক জগৎ এবং পরম ব্রহ্মকে জানার অন্তত জিজ্ঞাসা দেখা যায়।তার যখন এগারো বছর বয়সে তখন তাকে উপনয়ন করিয়ে পাশের গ্রামের ভগবান গাঙ্গুলীর হাতে সন্ন্যাস এর জন্য তুলে দেওয়া হয়েছিল। তার বাল্যবন্ধু ছিল বেণীমাধব।ছোট্ট বেণীমাধব এবং লোকনাথ গুরুর হাত ধরে নানা স্থান পরিক্রমা করে বেড়াতে শুরু করেন। এই সময় তিনি ধ্যান জপ এবং সাধনার আরো অনেক কৌশল শেখেন।
গুরু ভগবান গাঙ্গুলি নানা ভাবে তার শিষ্যর পরীক্ষা নিয়েছেন।তিনি বালক লোকনাথের মনোসংযোগের পরীক্ষা নেয়ার জন্য প্রতিকূল পরিবেশে তাকে ধ্যানে বসতে বলতেন। এমনকি ধ্যান চলা কালীন চিনি চড়িয়ে পিঁপড়ে দের আকর্ষণ করতেন। প্রথম দিকে ধ্যান ভঙ্গ হলেও ধীরে ধীরে লোকনাথ তার ইন্দ্রিয় জয় করতে শিখলেন এবং একে একে সাধনার একেকটি কঠিন ধাপ পেরিয়ে হয়ে উঠলেন সিদ্ধ যোগী।
একাধিক অলৌকিক ঘটনা আছে বাবা লোকনাথের জীবনে। বরোদাতে থাকার সময়ে একবার অহংকারী সাধক লোকনাথ বাবাকে সিদ্ধিলাভের প্রমাণ দিতে বলেন। তিনি বলেছিলেন লোকনাথ বাবা যদি সিদ্ধপুরুষ হন তবে তিনি তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করবেন। লোকনাথ বাবাকে ধুতরা ফুল ও ভয়ংকর সাপের বিষ দেওয়া হয়েছিল। সেই বিষকে পরাজিত করে বাবা লোকনাথ অক্ষত ছিলেন।
বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের বারদী আশ্রমে তিনি সমাধিস্থ হয়েছিলেন। জানা যায় যে এক ভক্ত পুত্রের যক্ষ্মারোগ তিনি নিজের শরীরে ধারণ করেছিলেন তাতে বালকটি পুরো সুস্থ হয়ে ওঠে এবং এই ঘটনার কিছুদিন পর যক্ষ্মা রোগে বাবা লোকনাথের মৃত্যু ঘটে। একশো ষাট বছর বয়সে লোকনাথ বাবা পরলোক গমন করেন।
আজ সারা দেশে তার অসংখ্য ভক্ত।অনেকেই তাঁকে শিবের অবতার বলে মনে করেন।প্রতি বছর তার জন্ম তিথি এবং তিরোধান দিবসে জন্ম স্থান চাকলা ধাম সহ প্রতিটি লোকনাথ
বাবার মন্দিরে বহু ভক্তের সমাগম হয়। আজীবন তিনি মানুষকে সর্বদা সত্যের পথে চলতে নির্দেশ দিয়ে গেছেন।
আবার গুরু কথার আগামী পর্বে অন্য এক মহান গুরুর জীবন এবং সাধনার কথা নিয়ে
ফিরে আসবো। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।