গুরু কথা – মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্য দেব

109

গুরু কথা – মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্য দেব

 

পন্ডিতজি ভৃগুর শ্রী জাতক

 

ভারতের মহান আধ্যাত্মিক গুরুদের কথা বলা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে যদি বাংলার নবজাগরনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব ও মহান বৈষ্ণব সাধক শ্রী চৈতন্যদেবের কথা না বলা হয়।আসুন আজকের পর্বে জেনে নিই তার জীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ

দিক এবং কিছু অলৌকিক ঘটনা|

 

১৪৮৬ সালের এক দোল পূর্ণিমায় বাংলার শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চার তৎকালীন পীঠস্থান নবদ্বীপে জন্মে ছিলেন গৌরাঙ্গ যিনি কৃষ্ণ সাধনায় নিজেকে সম্পূর্ণ রূপে বিলিয়ে দিয়ে হয়ে উঠলেন মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্য|নিম গাছের ছায়ায় তিনি জন্মে ছিলেন তাই নাম রাখা হয়ে ছিলো নিমাই।তার জন্মের বহু পূর্বেই একাধিক প্রাচিন শাস্ত্রে তার আবির্ভাব সম্পর্কে ভবিষ্যতবাণী করা হয়েছে।

 

বৈষ্ণবরা মহাপ্রভুকে বিষ্ণুর অংশ হিসেবেই দেখেন এবং তার সাথে নৃসিংহ অবতারের তুলনাও করা হয়। যুক্তি হিসেবে বলা হয় মহাপ্রভু সিংহ রাশিতে জন্মে ছিলেন। তার দেহের রঙ্গ ছিলো সিংহের ন্যায় সোনালী এবং উজ্জ্বল। তার কেশরাশি এবং হাঁটা চলার সাথেও সিংহের তুলনা করা হয়। সর্বোপরি তার ব্যাক্তিত্ব ছিলো রাজকীয়।

 

টোলে অধ্যাপনা ছেড়ে, সংসার ছেড়ে নিমাই যখন কৃষ্ণ প্রেমে মজেছেন তখন তার কৃষ্ণনাম এবং নগর সংকীর্তন সেই সময়ে অসংখ্য যুবককে আকর্ষণ করে এবং তারা মহাপ্রভুর শিষ্যত্ত গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে শ্রী ক্ষেত্রে মহাপ্রভু মহা প্রভু

হয়ে ওঠেন অসংখ্য বৈষ্ণবের গুরু এবং পরম আশ্রয়।

 

একবার মহপপ্রভু শ্রীনিবাস ঠাকুরেরর বাড়িতে এক অপূর্ব অলৌকিক লীলা প্রদর্শন করেন। তখন প্রবলভাবে সংকীর্তন হচ্ছিল। তিনি ভক্তদের জিজ্ঞাসা করলেন যে, তাঁরা কি খেতে চান, এবং তাঁরা জানালেন যে, তাঁরা আম খেতে চান, তখন তিনি আমের আটি চাইলেন। তখন আমের সময় ছিল না, আঁটিটি যখন তাঁর কাছে আনা হল, তখন তিনি সেটি শ্রীনিবাস ঠাকুরের অঙ্গনে পুঁতলেন এবং তৎক্ষণাৎ সেই আঁটিটি অঙ্কুরিত হয়ে ক্রমন্বয়ে বর্ধিত হতে লাগল। অচিরেই সেটি একটি আম গাছে পরিণত হল এবং সেই গাছে এত সুপক্ব আম ধরল যে, ভক্তরা তা খেয়ে শেষ করতে পারলেন না। গাছটি শ্রীনিবাস ঠাকুরের অঙ্গনেই রইল এবং ভক্তরা সেটি থেকে তাঁদের যত ইচ্ছে আম নিয়ে খেল। ভক্তরা মহাপ্রভুর এই অপ্রাকৃত লীলা দেখে মুগ্ধ হলো|এখনও সেই গাছ শ্রীনিবাস গৃহের উঠোনে বর্তমান|

 

শোনা যায় মহাপ্রভু যখন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হরি নাম করতে করতে এগোতেন তখন বনেরা হিংস্র পশুরাও তার হিংসা ভুলে মোহিত হয়ে তার নাম সংকীর্তন শুনতো।

 

সারা বিশ্ব কে তিনি দিয়েগেছেন কৃষ্ণ নাম যে

নাম আজ ছড়িয়ে পড়ছে দাবানলের মতো সারা পৃথিবীতে|জাতী ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মহা প্রভু সবাইকে আপন করে নিয়ে ছিলেন|তার সাধনা ছিলো একটাই মানুষকে ভালো বাসা, আর কৃষ্ণের চরণ যুগলে নিজেকে সম্পূর্ণ রূপে সপেঁ দেয়া, তার সাধনার পদ্ধতিও ছিলো সরল মৃদঙ্গ ও হরে কৃষ্ণ মহা মন্ত্র|আজও গুরু পরম্পরার মধ্যে দিয়ে গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজ এবং ইস্কন মহাপ্রভুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে কৃষ্ণ নাম কে জগতের সর্বত্র পৌঁছে দিচ্ছে।

 

গুরু কথায় এখনো অনেক এমন মহান

আধ্যাত্মিক গুরুদের নিয়ে আলোচনা

বাকি আছে।ফিরে আসবো আগামী পর্বে।

অন্য এক গুরুকে নিয়ে।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।