বামা খ্যাপার সিদ্ধি লাভ

179

আবির্ভাব তিথি উপলক্ষে বিশেষ পর্ব

 

বামা খ্যাপার সিদ্ধি লাভ

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

তারাপীঠ শক্তি না হলেও সিদ্ধ পীঠ তো বটেই। একাধিক সাধক এই তারাপীঠে সাধনা করে সিদ্ধি লাভ করেছেন তাদের মধ্যে যেমন আছেন বশিষ্ট দেব তেমনই আছেন স্বয়ং বামা ক্ষ্যাপা। আজকের পর্বে বামা ক্ষ্যাপার সিদ্ধি লাভ নিয়ে লিখবো।

 

গুরু কৈলাশ পতি বাবার দেখানো পথে তারাপীঠে অবস্থিত এক স্বেত শিমুল বৃক্ষের নিচে পঞ্চ মুন্ডির আসনে বসে সিদ্ধি লাভ করেছিলেন বামা ক্ষ্যাপা।

এই পঞ্চমুন্ডির আসন সকলকে গ্রহণ করে না! সাধনার উচ্চস্তরে পৌঁছতে না পারলে পঞ্চমুণ্ডির আসনে বসা দুঃসহ হয়ে ওঠে সাধকের।বামা নিজ সাধনা বলে এবং মা তারার আশীর্বাদে এবং গুরুর সান্নিধ্যে সেই যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন।

 

বামাক্ষ্যাপার সিদ্ধিলাভ নিয়েও প্রচলিত আছে

বহু আখ্যান। তবে সবাই একমত যে এক কৌশিকী অমাবস্যার রাতের তিথিই সাক্ষী ছিল সেই

মহা সাধনার।প্রথমে কৈলাসপতি বাবার কুটিরে গিয়ে সম্পন্ন হয়েছিল দীক্ষার অনুষ্ঠান। তখন মাতৃদর্শনের পর বাহ্যজ্ঞান লোপ পেয়েছে বামাচরণের। সে দিন অন্ধকারেও যেন এক অপার্থিব জ্যোতি ছড়িয়ে ছিল কৈলাসপতি বাবার কুটিরজুড়ে। বেদমন্ত্র পাঠ করে দীক্ষার উপচার সম্পন্ন করেছিলেন কৈলাসপতি বাবা।

 

তার পর সন্ধ্যায় বামাকে নিয়ে শ্মশানে এলেন কৈলাসপতি বাবা। শ্বেত শিমূল বৃক্ষের তলায় পঞ্চমুণ্ডির আসনে বসিয়ে দিলেন শিষ্যকে। বললেন বীজমন্ত্র জপ করতে। মন্ত্র জপ করতে করতে ভাবে বিভোর হয়ে গেলেন বামাচরণ। কখন যে রাত ভোর হতে শুরু করেছে তার খেয়াল নেই। এমন সময়ে এক নারী কণ্ঠের ডাকে জ্ঞান ফিরল বামাচরণের। সেই ডাক স্বয়ং তাঁর বড়মায়ের। সিদ্ধিলাভের কথা নিজের ছেলেকে স্বয়ং বলছেন বড়মা। একই সঙ্গে ভবিষ্যদ্বাণী করছেন ওই শিমূল গাছ পড়ে যাওয়ার।কিছুক্ষণ পরেই পড়ে গেল শিমূল গাছ। সেই জায়গায় জ্যোতির মধ্যে আবির্ভূতা হলে স্বয়ং মা তারা।শুধু তাই না সেই রাতে দশমহাবিদ্যার দশ রূপে ধরা দিয়েছিলেন বামাচরণের বড়মা।সিদ্ধি লাভের পর বামা ক্ষ্যাপা অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী হন এবং সারা জীবন জুড়ে অসংখ্য অলৌকিক ঘটনা ঘটান।

 

বামা ক্ষ্যাপা পরবর্তী সময়েও বহু সাধক সেই পঞ্চমুন্ডির আসনে বসে সাধনা করেন এবং তাদের মধ্যে অনেকেই সিদ্ধি লাভ করেছিলেন বলে শোনা যায়। তবু বামা খ্যাপার উচ্চতায় হয়তো আর অন্য কেউ পৌঁছতে পারেননি। বামা ক্ষ্যাপা একজনই এবং তার তুলনা নেই। তিনি অতুলনীয়।

 

আজ আবির্ভাব তিথি উপলক্ষে প্রণাম জানাই এই মহান সাধককে। পরবর্তীতে পর্বে যথা রীতি

ফিরে আসবো শিব রাত্রি সংক্রান্ত আধ্যাত্মিক আলোচনা নিয়ে।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।