শিব মাহাত্ম – সিদ্ধেশ্বর শিব মন্দিরের ইতিহাস 

29

শিব মাহাত্ম – সিদ্ধেশ্বর শিব মন্দিরের ইতিহাস

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

শিব মাহাত্মর আজকের পর্বে আপনাদের বীরভূম জেলার মল্লারপুরে অবস্থিত বিখ্যাত সিদ্ধেশ্বর শিবমন্দিরের ইতিহাস এবং তার পৌরাণিক তাৎপর্য সম্পর্কে নিয়ে আলোচনা করবো।

 

শোনা যায় মহাভারতের পাণ্ডবজননী কুন্তী এখানেই মহাদেবের পূজা করেছেন। মহালিঙ্গেশ্বর তন্ত্র যেখানে স্বয়ম্ভূ শিবমন্দিরের তালিকা আছে, সেখানেও সিদ্ধিনাথ নামে এখানকার ওঁ আকৃতি যুক্ত মহাদেবের উল্লেখ আছে। এই মন্দির এমন এক তীর্থ যেখানে পুরাণ ও ইতিহাস একসাথে মিশে গেছে।

 

সিদ্ধেশ্বর শিব মন্দিরে বিরাজ করছেন এক

অনাদি এবং অখণ্ড শিবলিঙ্গ।আজ থেকে প্রায় এক হাজার বছর আগে মল্লারপুরের রাজা ছিলেন মল্লেশ্বর। তিনি এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই শয়ম্ভু শিবই নাকি তারাপীঠের দেবী তারার ভৈরব।

 

এখানকার শিবলিঙ্গর ওপরে রয়েছে ওঁ চিহ্ন যা খুবই দুর্লভ।মল্লেশ্বর শিবমন্দিরের পাশের মন্দিরেই রয়েছেন দেবী মল্লেশ্বরী বা সিদ্ধেশ্বরী। এই মল্লেশ্বর শিব মন্দিরের পিছনে তান্ত্রিকাচার্য শ্রীকৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের জীবন্ত সমাধি বা ইচ্ছাসমাধির বেদী রয়েছে। এই কৃষ্ণানন্দই ছিলেন কালীসাধক রামপ্রসাদের গুরুদেব।তিনি বৃহৎতন্ত্রসার গ্রন্থ রচনা করে প্রসিদ্ধ হয়ে ছিলেন।

 

সিদ্ধেশ্বর শিব মন্দিরের কারুকাজ এবং সৌন্দর্য এক কথায় অপূর্ব। এই মন্দির চত্বরে রয়েছে চারচালা রীতি মেনে স্থাপিত আরও কিছু মন্দির।এই মন্দির তৈরির পর থেকে সেবাইতরা বংশ পরস্পরায় এখানে পুজো করে আসছেন। অন্যান্য শিবলিঙ্গ মাটির ওপরে থাকে। এখানে শিবলিঙ্গের বেশিটাই রয়েছে মাটির নীচে। তাই একে গুপ্ত শিবলিঙ্গ বলা হয়। এখানে শিবকে মাটি খুঁড়ে পাওয়া গিয়েছে বা স্বয়ং প্রকট হয়েছেন দেবাদিদেব এই শিবলিঙ্গ আলাদা করে এনে প্রতিষ্ঠা করা হয়নি।

 

এখানে শিব লিঙ্গের চার পাশে বিশেষ বিশেষ সময়ে জল লক্ষ করা যায়।শিবলিঙ্গকে ঘিরে যে জলধারা অবস্থান করছে তা আসলে গঙ্গা।শুধু জল নয় মাঝে মাঝে শিবের অনুচর নাগ দেবতার দর্শন ও পাওয়া যায়।সব মিলিয়ে সিদ্ধেশ্বর শিব মন্দিরে অলৌকিকতা, পৌরাণিক প্রেক্ষাপট এবং ইতিহাসের সংমিশ্রনে সৃষ্টি এক অদ্ভুত আধ্যাত্মিক

পরিবেশ অনুভব করা যায়।প্রতি বছর চৈত্র এবং শ্রাবন মাসে এই সিদ্ধেশ্বর শিব মন্দিরে বিশেষ পুজো উপলক্ষে বহু ভক্তের ভিড় হয়।

 

আবার আগামী পর্বে অন্য এক প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক শিব মন্দির নিয়ে আলোচনা হবে। চলতে থাকবে শিব মাহাত্ম। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।