দেবীমাহাত্ম – মানিকোড়ের ডাকাত কালী পুজো

111

বাংলার ডাকাতদের কালী পুজো নিয়ে বহু কিংবদন্তী প্রচলিত আছে যার কিছু কিছু আমি আপনাদের আগেই বলেছি। আজও একটি প্রসিদ্ধ ডাকাত কালীর পুজোর কথাই লিখবো যা অবস্থিত ভারত বাংলা দেশ সীমান্তের একটি প্রত্যন্ত এবং ছোট্ট গ্রামে। গ্রামটির নাম মান কোড়।কালী পুজোর রাতে অমাবস্যার তিথিতে আজও দেবী মাতাকে শিকলে বেঁধে এবং সামনে সাদা কাপড় ঝুলিয়ে প্রথম পাঠাবলি দেওয়া হয়। আর যতক্ষণ পাঠাবলির রীতি চলবে ততক্ষণ জ্বলবে দাউদাউ করে অসংখ্য মশাল । অখন্ড ভারত থাকাকালীন ডাকাতদের হাতে শুরু হওয়া এই পুজোর আজও প্রাচীন নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে আসছেন হবিবপুর ব্লকের মানিকোড়া কালী পুজো কমিটির সদস্যরা। মালদার আদিবাসী অধ্যুষিত হাবিবপুর ব্লক ।পুজোড় বয়স প্রায় প্রায় ৫০০ বছর।এই কালীপুজো নিয়ে অনেক অদ্ভুত এবং অলৌকিক ঘটনা শোনা যায় । শোনা যায়পুজোর সময় আশ্চর্যজনক ভাবে দেবী রূদ্র মূর্তি ধারণ করেন। দেবী কালী এখানে ঘোর কৃষ্ণ বর্ণের নরমুন্ডধারিণী তার দিগম্বরী ও এলো কেশি মূর্তি দেখলেই ভক্তি ও শ্রদ্ধা জাগরিত হয় ভক্তদের মধ্যে।প্রতি অমাবস্যায় বিশেষ করে কালী পুজোর রাতে আজও দেবী মাতাকে শিকলে বেঁধে এবং সামনে সাদা কাপড় ঝুলিয়ে পাঠাবলি দেওয়া হয় এবং বিভীন্ন তান্ত্রিক উপাচার পালন করা হয়।যতক্ষণ এই সব উপাচার চলে ততক্ষণ দাউদাউ করে অসংখ্য মশাল জ্বলে চার পাশে।আঞ্চলিক ইতিহাস থেকে জানা যায় ব্রিটিশ আমলে দুর্ধর্ষ এক ডাকাত দল মানিকোড়া গ্রামে এসে জঙ্গলের মধ্যে দেবী কালীর পুজো শুরু করেন। সেই সময়ে এইখান দিয়ে বয়ে যেতো পুনরভবা নদী সেই নদী দিয়ে যেসব বণিকেরা বাণিজ্য করতে যেতেন এবং তাদের ওপর লুঠপাট চালাতো ডাকাত দল।তারপর তন্ত্র মতে চলতো মাতৃ সাধনা। সেই মাতৃ সাধনা আজও চলছে সমান ভাবে।দেবী মূর্তিকে বেঁধে রাখার কারন পাঠাবলির সময় সামনের দিকে অদ্ভুত ভাবে কিছুটা ঝুঁকে যায় মায়ের রুদ্রমূর্তি। মাকে শান্ত করার জন্য ভক্তেরা দেবী মাতাকে পিছনে শিকল দিয়ে কিছুটা সময়ের জন্য বেঁধে রাখেন।অন্তত প্রত্যক্ষদর্শী এবং প্রাচীন কাল থেকে চলে আসা জনশ্রুতি তাই বলছে।প্রথম পাঠাবলির সময় সামনে সাদা কাপড় টাঙিয়ে দেওয়া হয়। আর চতুর্দিকে জলে মশাল। এমন ভাবেই যুগ যুগ ধরেই মানিকোড়া গ্রামের দেবী কালীমাতা পূজিত হয়ে আসছেন।মানকোড়েড় ডাকাত কালী খুবই জাগ্রতা এবং সব ভক্তের মনোস্কামনা পূর্ণ করেন বলে বিশ্বাস তাই বহু মানুষ আসেন পুজো দিতে। প্রার্থনা জানাতে।ফিরে আসবো পরের পর্ব নিয়ে। থাকবে এমনই অদ্ভুত ও রোমাঞ্চকর কালী পুজোর কথা। থাকবে নতুন কোনো মন্দিরের রহস্য। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।