আগামী 28 তারিখ অমাবস্যা|স্বাভাবিক ভাবেই তন্ত্র ও শক্তি সাধনার উপযুক্ত তিথি|আজ তারাপীঠের কিছু রহস্যজনক বিষয় আপনাদের সামনে উপস্থাপন করবো|বাংলার তন্ত্র সাধনায় তারাপীঠ একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে যুগ যুগ ধরে আর এই তন্ত্র সাধনায় পঞ্চমুন্ডির আসনের একটা বড়ো ভূমিকা থাকে, তারাপীঠের পঞ্চমুণ্ডের আসন একটি রহস্যময় বিষয়। পঞ্চ মুন্ডির পাঁচটি মুণ্ড সাপের, ব্যাঙের, খরগোশের, শিয়ালের এবং মানুষের। এই আসনে বসেই বহু যুগ পূর্বে দেবীকে তুষ্ট করে তারাপীঠকে সিদ্ধপীঠে পরিণত করেছিলেন ঋষি বশিষ্ঠ। সাধক বামাখ্যাপাও এই আসনে বসে তন্ত্রসাধনায় সিদ্ধি লাভ করেন অর্থাৎ|সেই আসন আজও বিদ্যমান।অশুচি চিত্তে আসনে বসেছিল বসলে সাধক শাস্তি পায় বলে বিশ্বাস|দেবী তারার রূপের মধ্যে লুকিয়ে আছে বহু রহস্য এবং তারাপীঠ মহা শ্মশান ও রহস্য দিয়ে ঢাকা|তারাপীঠ শ্মশান দেবী তারার আবাস। তারাপীঠের মহাশ্মশানেও জ্যোতিরূপে বাস করেন দেবী। তা ঠিক যেন একটি তারার মিটমিটে আলো|দেবীর সঙ্গে থাকেন যোগিনীরা। অনেকেই তারাপীঠের মহাশ্মশানে অন্ধকারের মধ্যে এই মিটমিটে আলো দেখতে পান। লোকবিশ্বাস বলে, সেই আলো দেখে কাছে যেতে নেই। তাতে দেবী রুষ্টা হন! দেবীর উপস্থিতিই এই শ্মশানের তিন মহারহস্যের মধ্যে প্রথম।তারাপীঠের মহাশ্মশানের মাহাত্ম্য বুঝতে গেলে তাকাতে হবে তারার তন্ত্রোক্ত রূপবর্ণনায়।দেবীর বামপদ অগ্রগামী, তাই দেবী ‘বামাকালী’ নামেও পরিচিতা।দেবীর গাত্রবর্ণ ঘননীল। অগ্নিময় শ্মশানে জ্বলন্ত চিতার মধ্য থেকে বিনির্গতা এই দেবী লোলজিহ্বা, লম্বোদরী, নবযৌবনা এবং মুণ্ডমালিনী। দেবীর আসনস্বরূপ জ্বলন্ত চিতা জ্ঞানাগ্নির প্রতীক। চতুর্ভুজা এই দেবীর ডানদিকের উপরের হাতে খড়্গ এবং নিচের হাতে কাটারি। বামদিকের উপরের হাতে পদ্মফুল এবং নিচের হাতে নরকপাল। দেবীর কটিদেশ ব্যাঘ্রচর্মে আবৃত। দেবীর মস্তকে ‘পঞ্চমুদ্রাবিভুষিত’ পিঙ্গলবর্ণের একজটা। ‘পঞ্চমুদ্রা’ অর্থাৎ শ্বেত অস্থি নির্মিত চারটি পটি দিয়ে ত্রিকোণাকারে গাঁথা পাঁচটি নরকরোটি। মু্ণ্ড জ্ঞানের প্রতীক। এখানে পঞ্চমুণ্ড শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস ও গন্ধের প্রতীক।তারাপীঠের মহাশ্মশানের আরো একটি রহস্য লুকিয়ে আছে শ্মশান-সংলগ্ন দ্বারকা নদীর জলে।দ্বারকা নদী উত্তরবাহিনী অর্থাৎ এর স্রোত বইছে উত্তর দিকে। হিন্দু ধর্মে উত্তরবাহিনী নদী বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কেন না, ভারতের প্রায় সব নদীই নেমেছে উত্তর দিকে স্থিত হিমালয় থেকে। অতএব, তাদের ধারা কখনই উত্তর অভিমুখী হবে না। হলে তা বইবে উল্টো খাতে। একমাত্র কাশীতে গঙ্গা উত্তরবাহিনী। আর বীরভূমে দ্বারকা। তাই দ্বারকা নদী মহাশক্তির উৎস। কথিত আছে এই নদীজলে স্নান করলেই সিদ্ধিলাভের যোগ্যতা অর্জন করেন মানুষ। ফিরে আসবো আগামী পর্বে আরো অনেক রহস্য ও পৌরাণিক তথ্য নিয়ে|আগামী অমাবস্যায় অর্থাৎ 28 তারিখ থাকছি এই তারাপীঠে সেই মহাযজ্ঞ ও আপনারা দেখতে পাবেন যথা সময়ে পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|