জামাই ষষ্ঠীর শুভেচ্ছা

452

আজ জামাই ষষ্টি, বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বনের এও এক অন্যতম পার্বন|আজকের দিন টায় জামাই রা তাদের শশুর বাড়িতে যান নতুন পোশাকে সেজে উপহার নিয়ে, আবার শশুর বাড়ির পক্ষ থেকেও জামাইকে আপ্যায়ন করা হয় উপহার দিয়ে|আরো উপাচার আছে যা এই দিন বাংলার ঘরে ঘরে পালিত হয়|তবে এতো গেলো উৎসবের বাহ্যিক দিক|আসলে এই জামাই ষষ্ঠীর একটি আধ্যাত্মিক দিক আছে, ধর্মীয় ব্যাখ্যা আছে|

জামাই ষষ্টি নিয়ে সুন্দর লোককাহিনী প্রচলিত আছে বহু প্রাচীন কাল থেকে, কথিত রয়েছে, একবার এক গৃহবধূ স্বামীর ঘরে নিজে মাছ চুরি করে খেয়ে দোষ দিয়েছিলেন বিড়ালের উপর। ফলে তাঁর সন্তান হারিয়ে যায়। তাঁর পাপের ফলেই এই ঘটনা ঘটে বলে মনে করা হয়। তখন সেই মহিলা বনে গিয়ে ষষ্ঠীদেবীর আরাধনা শুরু করেন৷ দেবী তুষ্ট হন৷ ফলে বনেই তিনি নিজের সন্তানকে ফিরে পান। এই জন্যই ষষ্ঠীদেবীর অপর নাম অরণ্যষষ্ঠী। এদিকে মাছ চুরি করে খাওয়ার জন্য শ্বশুর-শাশুড়ি ওই বধূর পিতৃগৃহে যাওয়া বন্ধ করে দেন। এই অবস্থায় মেয়েকে দেখার জন্য ব্যাকুল মা-বাবা একবার ষষ্ঠীপুজোর দিন জামাইকে সাদরে নিমন্ত্রণ জানান। জামাইষষ্ঠী পুজোর দিনে সস্ত্রীক উপস্থিত হলে আনন্দের বন্যা বয়ে যায় বাড়িতে।ষষ্ঠীপুজো রূপান্তরিত হয় জামাইষষ্ঠীতে।

অর্থাৎ ষষ্ঠীদেবীর পার্বণ থেকে এই প্রথার উদ্ভব।
শাস্ত্রে বর্ণনা আছে, ষষ্ঠীদেবী দ্বিভুজা, দুনয়না, গৌরবর্ণা, দিব্যবসনা, সর্বসুলক্ষণা ও জগদ্ধাত্রী শুভপ্রদা। তিনি মাতৃত্বের প্রতীক। বিড়াল তাঁর বাহন। মূলত সন্তানের কল্যাণ ও সংসারের সুখ-শান্তি নিশ্চিত করাই এই পুজোর উদ্দেশ্য|

সঠিক ভাবে সূচনা কাল বলা মুশকিল তবে মনে করা হয় বৈদিক যুগ থেকেই জামাইষষ্ঠী পালন
হয়ে আসছে। প্রতিবছর জ্যৈষ্ঠ মাসের ষষ্ঠী তিথিতে প্রথম প্রহরে ষষ্ঠী পুজার আয়োজন করা হয়। ষষ্ঠীর প্রতিমা কিংবা আঁকা ছবিতে পুজা নিবেদন করা হয়। কেউ কেউ ঘট স্থাপন করেও এই পুজো করে থাকেন।

বাঙালি হিন্দুসমাজে এ উৎসবের সামাজিক গুরুত্ব অনস্বীকার্য। বিশেষত যে পরিবারে সদ্য বিবাহিতা কন্যা রয়েছে সেই পরিবারে এই পার্বণটি ঘটা করে পালন করা হয়। পুজোর সময় পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের জন্য পৃথক মালসার মধ্যে নতুন বস্ত্র, ফলফলাদি, পান-সুপারি, ধান-দূর্বা ও তালের পাখা রাখা হয়। ভক্তরা উপোস রেখে মায়ের পূজা করেন। মালসা থেকে নতুন বস্ত্র পরিধান করে ফলফলাদি খেতে হয়।

আনন্দে কাটান জামাই ষষ্টি, অনেক শুভেচ্ছা