বাংলার কালী – রানীগঞ্জের অলৌকিক কালীপুজো 

47

বাংলার কালী – রানীগঞ্জের অলৌকিক কালীপুজো

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

এই বাংলা বরাবরই কালী সাধনার ক্ষেত্র এখানে পুরনো কালী মন্দির আছে যেখানে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে একই পরম্পরা মেনে একই রীতিতে পুজো চলছে। এমনই এক পুরনো মন্দির রয়েছে রাজ্যের শিল্পশহর রানিগঞ্জে। যেখানে রয়েছে তিনশো বছরের পুরনো বড়মা কালী মন্দির।

 

একটা সময় রানিগঞ্জের বড়বাজার এলাকা ছিল শ্মশানভূমি। শ্মশানভূমির পাশ দিয়ে বয়ে যেত দামোদর নদ। আজ থেকে তিনশো বছর আগে এক মধ্যরাতে অন্ডালের বাসিন্দা তারাচরণ চট্টোপাধ্যায় দেবী কালীর স্বপ্নাদেশ পান। সেই স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী তারাচরণ ছুটে আসেন রানিগঞ্জের জঙ্গলে। প্রতিষ্ঠা করেন দেবী বড়মা কালীর। তারপর থেকে নিয়মিত অন্ডাল থেকে যাতায়াত করেই দেবী কালীর নিত্যপূজা সামলেছেন তিনি এবং পরবর্তীতে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা । আজও বংশপরম্পরায় সেই রীতি বহাল রয়েছে এই মন্দিরে।

 

যুগ পাল্টেছে সেই শ্মশানভূমি আজ ব হয়ে উঠেছে ব্যস্ত শহর।কিন্তু বড়মার পুজো আজও একই রীতিতে হয়।সময়ের হাত ধরে এই মন্দিরে বেড়েছে ভক্তদের ভিড়। প্রতিদিন এই মন্দিরে দেবীর হাতের খাঁড়া-ধোয়া জল পান করতে ভিড় করেন অজস্র ভক্ত। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তো বটেই, দূর-দূরান্ত থেকে এখানে ছুটে আসেন ভক্তরা। তাঁরা দেবীর খাঁড়া ধোয়া জল পান করেন। ভক্তদের দাবি, এই জল পান করে নাকি তাঁদের নানা রোগ-ব্যাধি সেরে যায়। সবার সব মনোস্কামনা পূর্ণ হয়।দেবীর খাঁড়া ধোঁয়া জলে অলৌকিক শক্তি আছে এটা ভক্তরা বিশ্বাস করে। কথায় বলে বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহু দূর। বিশ্বাস এবং ভক্তির কাছে যুক্তি ম্লান হয়ে যায়।

 

এই মন্দিরে তিনশো বছর আগে থেকেই রয়েছে একটি কুয়ো। সেই কুয়ো রয়েছে মন্দিরের চত্বরের মধ্যে। যা ঢেকে রাখা হয়। সাধারণত বলা হয়, সূর্যের আলো না-পড়লে কুয়োর জল নষ্ট হয়ে যায়। অলৌকিক ভাবে এখানকার কুয়োর জল কিন্তু অত্যন্ত স্বচ্ছ । শুধু তাই নয়, এই জল সারাবছর থাকে। গ্রীষ্মে দামোদরের খাতে জল শুকিয়ে যায়। গরমে খনি অঞ্চল রানিগঞ্জে জলাভাব দেখা যায়। কিন্তু, এই কুয়োর জল কিছুতেই কমে না।

 

এ সবই বড়োমায়ের কৃপায় হয় অন্তত এমনটাই দাবি ভক্তদের।প্রতি অমাবস্যায় বহু দর্শণার্থীদের সমাগম হয় এই মন্দিরে।

 

ফিরে আসবো বাংলার কালীর পরবর্তী পর্ব নিয়ে। থাকবে আরো একটি প্রাচীন কালী মন্দিরের কথা। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।