দশ মহাবিদ্যা – দেবী কালী

463

সামনেই কৌশিকী অমাবস্যা আর কৌশিকী অমাবস্যা মানেই শক্তি সাধনার দুর্লভ যোগ এই আদ্যা শক্তি আরো অনেক গুলি রূপে প্রকাশিত হয়েছে যারা মধ্যে অন্যতম দশ মহাবিদ্যা রূপ|দেবীর এই দশ মহাবিদ্যা প্রথম রূপ হল কালী।শুম্ভ ও নিশুম্ভ বরে অজেয় হওয়ায় তাদের অত্যাচারে দেবগণের প্রার্থনায় দেবী দুর্গার ভ্রকুটি থেকে বেরিয়ে এলেন কালী। যার চার হাতের ডান দিকে হাতে খঙ্গ ও চন্দ্রহাস। বাম দিকের হাতে চর্ম ও পাশ। গলায় নরমুণ্ড, দেহ পশু চর্ম আবৃত। বড় বড় দাঁত,রক্ত চক্ষু ও বিস্তৃত মুখ, স্থুল কর্ণ। দেবীর বাহন কবন্ধ বা মস্তক বিহিন দেহ।শাস্ত্রে দেবীকে শান্ত ও উগ্র দুই রূপেই বর্ণনা করা আছে।শাস্ত্রে বলা আছে, কালী দুর্গার ললাট থেকে উৎপন্না হয়েছে, এই বাক্যের তাৎপর্য যে, ললাটের সংকোচনেই ক্রোধভাব প্রকাশিত হয় বলে সদা ক্রোধান্বিতা,রণরঙ্গিনী করাল-বদনা কালীকে ললাট-সম্ভবা বলা হয়েছে। বাস্তবিক কালীও দুর্গার রূপান্তর বিশেষ। ক্রোধাবস্থাপন্না শক্তিকেই কালী বলা হয়েছে।কালী নাম ও এক রহস্য, কাল-এর স্ত্রীলিঙ্গ হল কালী। আর শিব-কেও কাল নামে ডাকা হয়। কাল মানে অনন্ত সময়। এই সময়েরই স্ত্রীলিঙ্গ বোধক হচ্ছে কালী। শাস্ত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে যে কাল সর্বজীবকে গ্রাস করে, সেই কালকে আবার যিনি গ্রাস করেন-তাঁকেও কালী বলা হয়।বাঙালির ঘরে ঘরে কালী পুজোর প্রচলন শুরু হয়তন্ত্র সাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগিশ এর মাধ্যমেকৃষ্ণানন্দ একবার মহামায়াকে বললেন, ‘‘মা, তোমার যে রূপের পূজা আমি করব আমাকে সে রূপ দেখিয়ে দাও’’। তখন মা বললেন, ‘‘যে ভঙ্গীতে আমার এই বিগ্রহের পূজা তোমার দ্বারা প্রচলিত হবে, তা আমি মানবদেহের মাধ্যমেই দেখিয়ে দেব। এই রাত শেষে সর্ব প্রথম যে নারীকে যে রূপে যে ভঙ্গীতে দেখবে, ঐরকম মূর্তিতে আমার পূজার প্রচলন করবে। মায়ের নির্দেশমত পরদিন ভোরে কৃষ্ণানন্দ গঙ্গার দিকে কিছু দূর অগ্রসর হওয়ার পর এক শ্যামাঙ্গিনী বালিকাকে দেখতে পান। ওই বালিকা তখন অপরূপ ভঙ্গীতে কুটিরের বারান্দার উপরে এবং বামপদ ভূতলে দিয়ে দাড়িয়ে ছিলেন। তিনি একতাল গোময়যুক্ত ডান হাত এমনভাবে উচু করে ধরেছিলেন যা দেখে বরাভয় মুদ্রার মত মনে হয়েছিল। বাম হাত দিয়ে তিনি কুটিরের দেয়ালে মাটির প্রলেপ দিচ্ছিলেন। তিনি ক্ষুদ্র পরিসরে একটি শাড়ি পড়ে ছিলেন। তাই কৃষ্ণানন্দকে দেখে তিনি লজ্জায় জিভ কেটেছিলেন।তাঁর এরকম ভঙ্গী দেখে কৃষ্ণানন্দের মায়ের প্রত্যাদেশের কথা মনে পড়ে গেল। তারপরই তিনি মায়ের ঐরকম মূর্তি রচনা করে পূজার প্রচলন করলেন।ফিরে আসবো দশ মহাবিদ্যা, তন্ত্র এবং কৌশিকী অমাবস্যা নিয়ে আরো অনেক আলোচনা নিয়ে|পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|