দশ মহাবিদ্যা – দেবী তারা

436

দশ মহাবিদ্যা,তন্ত্র বা কৌশিকী অমাবস্যা নিয়ে আলোচনা শুরু করলে দেবী তারা ও তারাপীঠ প্রসঙ্গ আসবেই কারন কৌশিকী অমাবস্যা হলো তারা নিশি যা দেবী কৌশিকীর আবির্ভাব তিথি রূপে পালিত হয়, দেবী কৌশিকীর একটি বিশেষ রূপ দেবী তারা,আবার দেবী তারা দশ মহাবিদ্যার অন্যতম দেবী|দশ মহাবিদ্যার দ্বিতীয় রূপ হল তারা। ভীষণ দর্শনা দেবী কালীর ভয়ে মহাদেব ভীত হলে সতী দ্বিতীয় বার আবির্ভূত হন তারা রূপে। তাঁর গায়ের রং নীল, নব যৌবনা, পরিধানে ব্যাঘ্র চর্ম। দেবীর চারটি হাত। দেবীর অবস্থান প্রজ্জলিত চিতার মধ্যে। তাঁর বাম পা শিবের বুকে অবস্থিত। তন্ত্রশাস্ত্রে ইনি মহানীল সরস্বতী।বাংলার তারাপীঠে অধিষ্টান করছেন দেবী তারা|জ্যোতিষ ও তন্ত্র জগতে প্রসিদ্ধ এই তারাপীঠ এবং তারাপীঠ মহা শ্মশান যা তন্ত্র সাধনার এক উৎকৃষ্ট স্থান কারন এটি কোনো সাধারণ শ্মশান নয় এটি মহা শ্মশান এই মহাশ্মশানেই জীবন আর মৃত্যুর পটভূমি নিত্য রচনা করে চলেন দেবী তারা|প্রচলিত বিশ্বাস বলে তারাপীঠের মহাশ্মশানেও জ্যোতিরূপে বাস করেন দেবী|কিংবদন্তী অনুসারে দ্বারকা নদী মহাশক্তির উৎস। এই নদীজলে স্নান করলেই সিদ্ধিলাভের যোগ্যতা অর্জন করেন মানুষ। দূর হয় সব পাপ|আশ্চর্যজনক ভাবে এই নদী উত্তর মুখী|তারাপীঠের পঞ্চমুন্ডীর আসন ও জগৎ প্রসিদ্ধ এই পঞ্চমুণ্ডের আসন আলাদা। এখানে পাঁচটি মুণ্ড সাপের, ব্যাঙের, খরগোশের, শিয়ালের এবং মানুষের। এই আসনে বসেই বহু যুগ পূর্বে দেবীকে তুষ্ট করে তারাপীঠকে সিদ্ধপীঠে পরিণত করেছিলেন ঋষি বশিষ্ঠ পরবর্তীতে বামা ক্ষেপা|মাতারার মুল প্রস্তর নির্মিত মূর্তি টি রয়েছে একটি ধাতব মূর্তির অভ্যন্তরে|এই মূর্তিটি ভীষণা চতুর্ভূজা, মুণ্ডমালাধারিণী এবং লোলজিহ্বা মূর্তি। এলোকেশী দেবীর মস্তকে রয়েছে একটি রৌপ্যমুকুট |বহির্মূর্তিটি সাধারণট শাড়ি-জড়ানো অবস্থায় গাঁদা ফুলের মালায় ঢাকা অবস্থায় থাকে। মূর্তির মাথার উপরে থাক একটি রূপোর ছাতা|প্রতিকৃতি বিগ্রহের নিচে গোলাকার বেদীতে দুটি রূপোর পাদপদ্ম থাকে|যারা তারা পীঠ মন্দির ও দেবীকে দর্শন করেছেন তারা জানেন উত্তরমুখী আটচালা মন্দিরটি লাল ইঁটে নির্মিত এবং মন্দিরের চূড়ায় একটি তামার পতাকাসহ ত্রিশূল ত্তিনটি পদ্ম ভেদ করে উঠেছে|প্রাচীন কালে বণিক জয় দত্তের তৈরি করে দেওয়া তারামায়ের মন্দিরটি আজ আর নেই। বর্তমানের মন্দিরটি ১২২৫ বঙ্গাব্দে তৈরি করান মল্লারপুরের জগন্নাথ রায়|যারা বিশ্বাস করেন তারাপীঠ একটি সিদ্ধ পীঠ তারা মনে করেন দেবী সতীর চোখের ঊর্ধ্বনেত্রের মণি অর্থাৎ তারা পড়ায় দ্বারকা নদীর পুব পাড়ের চণ্ডীপুর আজ তারাপীঠ|তারাপীঠ সিদ্ধ পীঠ না কেবল মাত্র একটি জাগ্রত শক্তি পীঠ বা উপপীঠ এ নিয়ে বিতর্ক ও মতান্তর বহু যুগ ধরে চলে আসছে|কথিত আছে বশিষ্ট দেব সাধনা করতেন কামাখ্যায় কিন্তু কোনো কারনে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি কামাখ্যা ত্যাগ করেন ও বাংলার বীরভূমের এই বিশেষ স্থানে এসে পঞ্চমুন্ডীর আসন প্রতিষ্ঠা করে দেবী উগ্রতারার সাধনা শুরু করেন ও দুর্লভ কৌশিকী অমাবস্যা তিথিতে তিনি সিদ্ধি লাভ করেন|পরবর্তীতে ধীরে ধীরে এই স্থান মাহাত্ম লোক মুখে প্রচারিত হয় ও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তারাপীঠ|ফিরে আসবো দশ মহাবিদ্যা, তন্ত্র এবং কৌশিকী অমাবস্যা নিয়ে আরো অনেক আলোচনা নিয়ে|পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|