গুরু পূর্ণিমার এই পবিত্র তিথী উপলক্ষে গুরু তত্ব নিয়ে বা জগৎ বিখ্যাত গুরুদের বলা এক অনন্য সাধারণ অনুভূতি যে অনুভূতি আপনাদের সাথে ভাগ করে নিতে পেরে আমি অত্যান্ত আনন্দিত|এখনো অনেক কথাই বলা বাকি রয়ে গেলো, সেটাই স্বাভাবিক কারন এই বিষয় অতি বিশাল এবং বিস্তৃত|তবুও যতটা সম্ভব সহজ সরল করে এই দর্শন আপনাদের সামনে তুলে ধরছি এবং আমার এই প্রয়াস আপনাদের ভালো লাগছে তা ইতিমধ্যে বেশ বুঝতে পারছি, ধন্যবাদ আপনাদের|
আজকের পর্বে আমি আমার গুরুর কথাই বলবো|তিনি পরম পূজনীয় শ্রী শ্রী অনুকূল ঠাকুর|তার কথা যতই বলা হোক কথা শেষ হয় না এমনই অদ্ভুত তার অলৌকিক জীবন ও আধ্যাত্মিক সাধনা|তাই আজ আরো একবার গুরু কথায় গুরুদেব কে স্মরণ করবো|
জন্ম সূত্রে আমার পরিবার ওপার বাংলার অর্থাৎ অধুনা বাংলাদেশ|পারিবারিক সূত্রেও আমরা অনুকূল ঠাকুরের আশীর্বাদধন্য কারন আমার নিজের বড়োমামা ছিলেন স্বয়ং ঠাকুরের ছায়া সঙ্গী ও তার একজন একনিষ্ট ভক্ত|সেই সূত্রে ছোটো থেকেই ঠাকুরের মহিমাশুনে বড়ো হওয়া| তাঁর আধ্যাত্মিক শক্তির উপর আস্থা ও শ্রদ্ধা সেই সময় থেকেই পরবর্তীতে জীবনের এক কঠিন সময়ে অনুকূল ঠাকুরের অনুগত হয়ে দীক্ষিত হই|আশ্চর্য ভাবে দীক্ষা গ্রহনের পর থেকেই জীবনে ভালো সময় আসতে শুরু করলো|অন্ধকার কাটিয়ে আলোয় ফিরলাম, সকল দিক দিয়েই সফল হলাম জীবনে|একে ঠাকুরের মহিমা ছাড়া আর কিবা বলি|আজও ঠাকুরের প্রতিকৃতি বিরাজমান আমার গৃহ মন্দিরের সিংহাসনে|আজও প্রতিটা দিন তাঁর কাছে প্রার্থনা করে আমার দিন শুরু হয়|
অনুকূলচন্দ্র চক্রবর্তী ১৮৮৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের পাবনা জেলার হিমায়তপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন|তাঁর পিতার নাম শিবচন্দ্র চক্রবর্তী এবং মাতার নাম ছিলো মনমোহিনী দেবী|
হিমায়তপুর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু হয় পরে নৈহাটী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে স্কুল জীবনের পড়া শেষ করে তিনি কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন|
অনুকূল চন্দ্রের ছিলো উত্তর ভারতের যোগীপুরুষ শ্রী শ্রী হুজুর মহারাজের শিষ্য তবে ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র মায়ের কাছেই দীক্ষা গ্রহন করেন|কঠোর পরিশ্রম ও দক্ষতার সঙ্গে তিনি জীবনে এগিয়ে চলেন, অনুকূলচন্দ্র ছিলেন একাধারে কবি, লেখক, ডাক্তার ও সর্বোপরি এক আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় গুরু|তিনি ছিলেন হিন্দু সমাজের একজন মহাপুরুষ, বিশ্ব মানবতাবাদী এবং পরম কৃষ্ণ ভক্ত।সারা জীবন তিনি চেষ্টা করে গেছেন কি ভাবে মানুষ ভাল থাকবে, সুস্থ থাকবে, শান্তিপূর্ণ ভাবে সবাই মিলে মিশে থাকবে|সেজন্য ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র সব সময় চাইতেন, তার অনুসারিরা সব সময় কৃষ্ণ ভক্তির পথে থাকুক|তাঁর এই দর্শন ও আদর্শ সাফল্যের সাথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাঁর পরিবার ও অগণিত ভক্ত শিষ্যরা|
লোক শিক্ষার জন্য অনুকূলচন্দ্র ঠাকুর প্রায় ৪৬টি পুস্তক রচনা করেন|এগুলোতে ধর্মশিক্ষা, সমাজ সংস্কার প্রচলন প্রভৃতি বিষয়ে আদর্শ ও উপদেশসমূহ বর্ণিত হয়েছে|এগুলি ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে অত্যান্ত গুরুত্ব পুর্ন গ্রন্থ হিসেবে সর্বত্র সমাদৃত |বই গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য, সত্যানুসরণ, পুণ্যপুথি, অনুশ্রুতি, চলার সাথী, শাশ্বতী, বিবাহ বিধায়না,সমাজ সন্দীপন ইত্যাদি|
পাবনা শহরের কাছে হেমায়েতপুর গ্রামে শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন সৎসঙ্গ আশ্রম ও মন্দির যা আজ লক্ষ লক্ষ ভক্ত শিষ্যর কাছে এক মহান তীর্থ ক্ষেত্র|1946 সালে অনুকূল ঠাকুর পাবনা থেকে দেওঘর আসেন ও দেওঘর আশ্রম তৈরি করেন|এই দেওঘরেই 1969 সালে ঠাকুর পরলোক গমন করেন|আজ এই আশ্রম ও ঠাকুরের সংগ্রহশালা দেও ঘরের মুখ্য আকর্ষণ হয়ে উঠেছে|
আমার পরম পূজনীয় গুরুকে প্রনাম ও শ্রদ্ধা জানিয়ে এই পর্ব শেষ করলাম|তবে চলবে আমার এই ধারাবাহিক লেখা গুরু পূর্ণিমা অবধি আর তার সাথে টিভি ও ইউ টিউবে তো নিয়মিত আসছি|আপনারাও আসতে পারেন যেকোনো জ্যোতিষ সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে, চেম্বারে বা অনলাইনে| শুধু উল্লেখিত নাম্বারে একবার ফোন করতে হবে |আমি থাকবো আপনাদের পাশে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|