গুরুকথা – শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র

1718

গুরু পূর্ণিমার এই পবিত্র তিথী উপলক্ষে গুরু তত্ব নিয়ে বা জগৎ বিখ্যাত গুরুদের বলা এক অনন্য সাধারণ অনুভূতি যে অনুভূতি আপনাদের সাথে ভাগ করে নিতে পেরে আমি অত্যান্ত আনন্দিত|এখনো অনেক কথাই বলা বাকি রয়ে গেলো, সেটাই স্বাভাবিক কারন এই বিষয় অতি বিশাল এবং বিস্তৃত|তবুও যতটা সম্ভব সহজ সরল করে এই দর্শন আপনাদের সামনে তুলে ধরছি এবং আমার এই প্রয়াস আপনাদের ভালো লাগছে তা ইতিমধ্যে বেশ বুঝতে পারছি, ধন্যবাদ আপনাদের|

আজকের পর্বে আমি আমার গুরুর কথাই বলবো|তিনি পরম পূজনীয় শ্রী শ্রী অনুকূল ঠাকুর|তার কথা যতই বলা হোক কথা শেষ হয় না এমনই অদ্ভুত তার অলৌকিক জীবন ও আধ্যাত্মিক সাধনা|তাই আজ আরো একবার গুরু কথায় গুরুদেব কে স্মরণ করবো|

জন্ম সূত্রে আমার পরিবার ওপার বাংলার অর্থাৎ অধুনা বাংলাদেশ|পারিবারিক সূত্রেও আমরা অনুকূল ঠাকুরের আশীর্বাদধন্য কারন আমার নিজের বড়োমামা ছিলেন স্বয়ং ঠাকুরের ছায়া সঙ্গী ও তার একজন একনিষ্ট ভক্ত|সেই সূত্রে ছোটো থেকেই ঠাকুরের মহিমাশুনে বড়ো হওয়া| তাঁর আধ্যাত্মিক শক্তির উপর আস্থা ও শ্রদ্ধা সেই সময় থেকেই পরবর্তীতে জীবনের এক কঠিন সময়ে অনুকূল ঠাকুরের অনুগত হয়ে দীক্ষিত হই|আশ্চর্য ভাবে দীক্ষা গ্রহনের পর থেকেই জীবনে ভালো সময় আসতে শুরু করলো|অন্ধকার কাটিয়ে আলোয় ফিরলাম, সকল দিক দিয়েই সফল হলাম জীবনে|একে ঠাকুরের মহিমা ছাড়া আর কিবা বলি|আজও ঠাকুরের প্রতিকৃতি বিরাজমান আমার গৃহ মন্দিরের সিংহাসনে|আজও প্রতিটা দিন তাঁর কাছে প্রার্থনা করে আমার দিন শুরু হয়|

অনুকূলচন্দ্র চক্রবর্তী ১৮৮৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের পাবনা জেলার হিমায়তপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন|তাঁর পিতার নাম শিবচন্দ্র চক্রবর্তী এবং মাতার নাম ছিলো মনমোহিনী দেবী|
হিমায়তপুর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু হয় পরে নৈহাটী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে স্কুল জীবনের পড়া শেষ করে তিনি কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন|

অনুকূল চন্দ্রের ছিলো উত্তর ভারতের যোগীপুরুষ শ্রী শ্রী হুজুর মহারাজের শিষ্য তবে ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র মায়ের কাছেই দীক্ষা গ্রহন করেন|কঠোর পরিশ্রম ও দক্ষতার সঙ্গে তিনি জীবনে এগিয়ে চলেন, অনুকূলচন্দ্র ছিলেন একাধারে কবি, লেখক, ডাক্তার ও সর্বোপরি এক আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় গুরু|তিনি ছিলেন হিন্দু সমাজের একজন মহাপুরুষ, বিশ্ব মানবতাবাদী এবং পরম কৃষ্ণ ভক্ত।সারা জীবন তিনি চেষ্টা করে গেছেন কি ভাবে মানুষ ভাল থাকবে, সুস্থ থাকবে, শান্তিপূর্ণ ভাবে সবাই মিলে মিশে থাকবে|সেজন্য ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র সব সময় চাইতেন, তার অনুসারিরা সব সময় কৃষ্ণ ভক্তির পথে থাকুক|তাঁর এই দর্শন ও আদর্শ সাফল্যের সাথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাঁর পরিবার ও অগণিত ভক্ত শিষ্যরা|

লোক শিক্ষার জন্য অনুকূলচন্দ্র ঠাকুর প্রায় ৪৬টি পুস্তক রচনা করেন|এগুলোতে ধর্মশিক্ষা, সমাজ সংস্কার প্রচলন প্রভৃতি বিষয়ে আদর্শ ও উপদেশসমূহ বর্ণিত হয়েছে|এগুলি ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে অত্যান্ত গুরুত্ব পুর্ন গ্রন্থ হিসেবে সর্বত্র সমাদৃত |বই গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য, সত্যানুসরণ, পুণ্যপুথি, অনুশ্রুতি, চলার সাথী, শাশ্বতী, বিবাহ বিধায়না,সমাজ সন্দীপন ইত্যাদি|

পাবনা শহরের কাছে হেমায়েতপুর গ্রামে শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন সৎসঙ্গ আশ্রম ও মন্দির যা আজ লক্ষ লক্ষ ভক্ত শিষ্যর কাছে এক মহান তীর্থ ক্ষেত্র|1946 সালে অনুকূল ঠাকুর পাবনা থেকে দেওঘর আসেন ও দেওঘর আশ্রম তৈরি করেন|এই দেওঘরেই 1969 সালে ঠাকুর পরলোক গমন করেন|আজ এই আশ্রম ও ঠাকুরের সংগ্রহশালা দেও ঘরের মুখ্য আকর্ষণ হয়ে উঠেছে|

আমার পরম পূজনীয় গুরুকে প্রনাম ও শ্রদ্ধা জানিয়ে এই পর্ব শেষ করলাম|তবে চলবে আমার এই ধারাবাহিক লেখা গুরু পূর্ণিমা অবধি আর তার সাথে টিভি ও ইউ টিউবে তো নিয়মিত আসছি|আপনারাও আসতে পারেন যেকোনো জ্যোতিষ সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে, চেম্বারে বা অনলাইনে| শুধু উল্লেখিত নাম্বারে একবার ফোন করতে হবে |আমি থাকবো আপনাদের পাশে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|