আজ সাধক কথায় এমন এক আধ্যাত্মিক গুরুর কথা বলবো যিনি এক কালে ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবের সৈনিক আবার পরবর্তীতে যোগ গুরু হিসাবে জনপ্রিয়তার শীর্ষে আরোহন করেছিলেন|তিনি ঋষি অরবিন্দ|
আলিপুর বোমামামলা বদলে দিয়েছিল বিপ্লবী অরবিন্দের জীবন।অরবিন্দের হয়ে মামলা লড়েছিলেন উদীয়মান ব্যারিস্টার চিত্তরঞ্জন দাশ।
অলিপুর বোমা মামলার আসামী হিসেবে অরবিন্দকে জেলে কাটাতে হয় প্রায় একবছর।আর জেলে থাকাকালীনই তার মধ্যে এক দিব্য চেতনার সঞ্চার হয়।তাঁর কথায় তিনি ‘কৃষ্ণকে দর্শন করেছেন। যে উপলব্দধির কথা তিনি উল্লেখ করেন-‘কারা কাহিনী ‘ বই এ।
পরবর্তীতে চিত্তরঞ্জন অরবিন্দকে পণ্ডিচেরী থেকে ফিরিয়ে আনতে গেলে অরবিন্দ মৃদু হেসে চিত্তরঞ্জনকে বলেছিলেন, “আমি আর বিপ্লবী অরবিন্দ নই, আমি এখন যোগী অরবিন্দ।আমার পক্ষে ফেরা সম্ভব নয়।”
চিত্তরঞ্জন তখন বললেন, ” তা বেশ। আপনি যখন রাজনীতিতে ফিরবেন না তখন রাজনৈতিক দীক্ষা আর দিতে হবে না আমায়। আপনি বরং আমায় যোগ দীক্ষা দিন।” একথা শুনে অরবিন্দ চিত্তরঞ্জনকে বললেন-” আপনি বাংলার বিপ্লবী আন্দোলের একজন প্রবীন এবং শেষ প্রতিনিধি। আপনি রাজনীতি ছাড়বেন না। আপনি অনেকের অনুপ্রেরণা। আর রাজনীতির সংসর্গ ত্যাগ না করলে আপনার পক্ষে যোগের পথে অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া আপনার স্বাস্থ্যও ভেঙে পড়েছে।” অরবিন্দু তখন অন্য মানুষ বিপ্লবের কথা বলছেন না বলছেন। বলছেন আধ্যাতিক কথা। আত্মিক উন্নতির কথা।
প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে সরলেও দেশের জন্য কলম ধরেছিলেন ‘কর্মযোগীন’ আর ‘ধর্ম’ পত্রিকার হয়ে। কিন্তু শুনলেন তার নামে ইংরেজরা ওয়ারেন্ট বের করছে। সব শুনে তার কি মনে হল একখানা নৌকো নিয়ে সোজা চলে গেলেন চন্দননগর। আশ্রয় নিলেন বিপ্লবী মতিলাল রায়ের বাড়িতে। তারপরই নিলেন এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। পন্ডিচেরী যাওয়ার। অরবিন্দ পন্ডিচেরীতে কাটিয়েছিলেন জীবনের চল্লিশ বছর। অরবিন্দ পণ্ডিচেরীতে প্রায় সারাদিন যোগাভ্যাস করতেন। ধীরেধীরে গড়ে ওঠে শ্রী অরবিন্দ আশ্রম|
বরোদায় অরবিন্দ ছিলেন অনেকটা সময়।।আর সেখানে থাকাকালে এক ইঞ্জিনিয়ার বন্ধু দেবধরের কাছ থেকে প্রাণায়াম শেখেন তিনি। যদিও সে সময় অরবিন্দের যোগের প্রতি তীব্র বিরোধিতা ছিল। অরবিন্দের ধারনা বদলায়, যখন বারীনের কঠিন হিল ফিভারকে এক নাগা সাধু মুহূর্তের মধ্যে কেবল মন্ত্রপুত জল খাইয়েই ঠিক করে দিয়েছিল তা দেখে। যোগের প্রতি আকর্ষন তাকে নিয়ে যায় সেসময়ের বিখ্যাত মহারাষ্ট্রীয়ান যোগী বিষ্ণু ভাস্কর লেলের কাছে। তাঁর কাছেই যোগে হাতেখড়ি অরবিন্দের।
তার অসংখ্য ভক্ত ও শিষ্য দের কাছে ঋষি অরবিন্দর আশ্রম এক তীর্থ স্থান,অরবিন্দের পণ্ডিচেরী আশ্রমে এসেছিলেন অনেক বিখ্যাত মানুষজন,যার মধ্যে রবীন্দ্রনাথ, গান্ধীপুত্র দেবদাস, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের পুত্র দিলীপ রায়, ঠাকুরবাড়ির সরলাদেবী ও আরও অনেকের নাম রয়েছে।আমি নিজেও ব্যাক্তিগত ভাবে ঋষি অরবিন্দুর আশ্রম দর্শন করে অভিভূত হয়েছি|
অরবিন্দর বয়স তখন প্রায় আটাত্তর। শরীর অসুস্থ। ওষুধ তিনি খাবেন না। কারন, দীর্ঘ চল্লিশ বছরের জীবনে একবারের জন্যেও ওষুধের প্রয়োজন হয় নি তাঁর। শ্রীরামকৃষ্ণকে যেভাবে নিজের ক্যান্সার সারিয়ে নেওয়ার জন্য ভক্তরা বলেছিলেন ঠিক একইভাবে অরবিন্দকে তাঁর ভক্তরা বললেন- “যোগশক্তি প্রয়োগ করছেন না কেন? ” অরবিন্দ মৃদু হেসে বললেন -“বোঝাতে পারব না, তোমরা বুঝবে না।” সেই রহস্য রহস্যই থেকে যায় ১৯৫০ এর ৫ ডিসেম্বর মধ্যরাতে হঠাৎ করে চলে গেলেন যোগী অরবিন্দ। পাঁঁচ দিন পর তার দেহ সমাধিস্থ করা হয় পণ্ডিচেরী আশ্রমের এক গাছতলায়।যে গাছের ফুল আজও ঝরে পড়ে তার সমাধির ওপর।
মহান এই গুরু ও সাধক কে আমার শ্রদ্ধা ও প্রনাম জানিয়ে শেষ করছি আজকের গুরু কথা|চলতে থাকবে এই ধরবাহিক আলোচনা|পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|