গুরু কথা – শ্রী শ্রী রাম ঠাকুর

1827

গুরু পূর্ণিমা উপলক্ষে আমার এই ধারাবাহিক লেখনী প্রায় রোজই নিয়ম করে আপনাদের সামনে আনছি|প্রতিটা পর্ব শেয়ার হচ্ছে অসংখ্য গ্রূপে কয়েক হাজার মানুষ তা পড়ছেন, অনেকেই পছন্দ করছেন এবং কেউ কেউ নিজের প্রতিক্রিয়াও জানাচ্ছেন|এই এতো সব কিছুর পেছনে প্রকৃত উদ্দেশ্য কিন্তু একটাই, আমাদের দেশের প্রাচীন গুরু শিষ্য পরম্পরা কে সহজ ভাবে তুলে ধরে তার গুরুত্ব নিরুপন করা|আপনাদের আশীর্বাদ ও ভালো বাসায় এই প্রচেষ্টা নিশ্চই সফল হবে এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস|

সহজ ভাবে বলতে গেলে গুরুতত্ত্ব হলো গুরু-বিষয়ক তত্ত্ব, গুরুর সম্যক রূপের ব্যাখ্যা, গুরুর স্বরূপ তত্ত্ব|আর গুরুর স্বরূপ সম্পর্কে বলা যায় তিনি পথপ্রদর্শক কখনো আবার তিনি ইহজগতের প্রধান ভরসাস্থল আবার গুরু কখনো স্বয়ং পরব্রহ্ম পরমাত্মা|তিনি শিষ্যের ভগবান-স্বরূপ| গুরুই হলেন স্বয়ং ত্রাতা শিষ্যের সব ভালোমন্দের দায়িত্ব গুরুর নিজের|এই সকল ভূমিকা যিনি দক্ষতার সঙ্গে পালন করবেন তিনি হবেন প্রকৃত গুরু|

এমনই এক প্রকৃত গুরুর কথা আজ বলবো তিনি শ্রী শ্রী রাম ঠাকুর যার সন্যাস জীবনের পূর্বের নাম ছিলো রাম চন্দ্র চক্রবর্তী|১৮৬০সালে বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলয় শ্রীঁরাধামাধব চক্রবর্তী ও শ্রীমতি কমলাদেবীর সন্তান হিসাবে শ্রীশ্রী রামঠাকুর জন্মগ্রহণ করেন|রাম ঠাকুরের আরেক যমজ ভাই ছিলো তার নাম ছিলো লক্ষণ|তাদের পারিবারিক গুরু ছিলেন শ্রীঁমৃত্যুঞ্জয় ন্যায়পঞ্চানন|

বালক রামচন্দ্র শৈশব থেকেই আধ্যাত্মিক চেতনার অধিকারী ছিলেন|শাস্ত্রে তার খুব আগ্রহ ছিলো মাঝে মাঝেই ঈশ্বর চিন্তা করে তিনি ভাব তন্ময় হয়ে যেতেন |ঈশ্বরে কে কেন্দ্র করে নানা আধ্যাত্মিক প্রশ্ন তার মনে ঘুরপাক খেতো এই ঈশ্বরের খোঁজেই ১৮৭২ সালে সকলের অজ্ঞাতে অজানাকে জানার লক্ষ্যে গৃহত্যাগী হন|পরে পৌঁছান পৌঁছালেন আসামের শ্রীশ্রী কামাক্ষ্যাদেবীর মন্দিরে এবং এক অক্ষয় তৃতীয়ার দিন শ্রীশ্রী রামঠাকুর দেখেন জটাধারী, দীর্ঘাঙ্গী এক জ্যোতির্ময় মহাপুরুষ সামনে দাঁড়িয়ে|গুরু হিসাবে তিনি সেই দিব্য পুরুষ কে গ্রহন করলেন শুরু হলো তার সাধনা ও আধ্যাত্মিক যাত্রা|

কঠিন সাধনায় একসময় তিনি হয়ে উঠলেন অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন রাম ঠাকুর অষ্টসিদ্ধি লাভ করলেন তিনি |এরপর গুরুর এদেশে গৃহে ফিরে মাতৃ সেবা কর্ম জীবনে কিছুকাল নিজেকে নিয়োজিত করলেন|এসবের মধ্যে থেকেও তার আধ্যাত্মিক শক্তি ও জ্ঞান গোপন রইলো না বেশি দিন|পরবর্তীতে নিজেকে পুরাপুরি সপেঁ দেন জগৎ কল্যানে ও মানব সেবায়|তার কাছে, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, শুচি, অশুচির কোনও ভেদ ছিল না|জীবনের দীর্ঘ সময় কঠিন যোগ সাধনায় মগ্ন থেকেও ভক্ত দের তিনি নিঃস্বার্থ ভাবে জীব সেবা করতে শিখিয়ে গেছেন|তার জীবন ও দর্শন তার অগণিত ভক্ত ও শিষ্য দের কাছে এক আদর্শ স্বরূপ|

শ্রীশ্রী রামঠাকুরের নির্দেশে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে ১৯৩০ সালে কৈবল্যধাম আশ্রম এবং ১৯৪২ সালে কলকাতার যাদবপুরে কৈবল্যধাম আশ্রম তৈরি হয় যেগুলি তার ভক্ত ও শিষ্য দের কাছে আজ তীৰ্থ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে|এছাড়াও ১৯৪৩ সালে তার জন্মভিটা ডিঙ্গামানিক গ্রামে সত্যনারায়ণ সেবা মন্দির তৈরি হয় যা তার আদর্শ কে সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে চলছে|এই মহা মানব ও মহান গুরুর চরনে আমার শত প্রনাম|

আজকের পর্ব এখানেই শেষ করলাম, পরের পর্বে গুরুতত্ত্ব নিয়ে আরো কিছু কথা ও এক মহান গুরুর জীবন কাহিনী নিয়ে ফিরে আসবো|আপনাদের ভালো লাগলেই আমার এই পরিশ্রম সার্থক|আর আমার জ্যোতিষ ও তন্ত্র আপনাদের কাজে লাগলে তাতেই আমি ধন্য|গুরু পূর্ণিমার পবিত্র তিথিতে আপনাদের হৃদয়েশ্বরী সর্ব মঙ্গলা মায়ের মন্দিরে বিশেষ পুজো হোম যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হবে ও শাস্ত্র মতে গ্রহ দোষ খণ্ডনের সকল ব্যবস্থা থাকবে আপনারা উল্লেখিত নাম্বারে যোগাযোগ করবেন যেকোনো প্রয়োজনে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|