গুরু কথা – শ্রী শ্রী রাম ঠাকুর 

66

গুরু কথা – শ্রী শ্রী রাম ঠাকুর

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

গুরু কথার আজকের পর্বে যে গুরুকে নিয়ে আলোচনা করবো তিনি শ্রী শ্রী রাম ঠাকুর যার সন্যাস জীবনের পূর্বের নাম ছিলো রাম চন্দ্র চক্রবর্তী। তার জীবন এবং সাধনা ভারতের আধ্যাত্মিক জগতে আদৰ্শ স্বরূপ। আজও দেশে বিদেশে তার অসংখ্য ভক্ত রয়েছে।

 

অবিভক্ত বাংলায় ১৮৬০ সালে ফরিদপুর জেলায় শ্রী রাধামাধব চক্রবর্তী ও শ্রীমতি কমলাদেবীর সন্তান হিসাবে শ্রীশ্রী রামঠাকুর জন্মগ্রহণ করেন|

শ্রী শ্রী রাম ঠাকুরের আরেক যমজ ভাই ছিলো তার নাম ছিলো লক্ষণ। তার সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায়না।তাদের পারিবারিক গুরু ছিলেন

শ্রী মৃত্যুঞ্জয় ন্যায়পঞ্চানন|

 

শৈশব থেকেই ধীরে ধীরে বালক রামচন্দ্রের মধ্যে কিছু দৈব্য ক্ষমতা বা সাধকের গুনাবলি প্রকাশ পেতে শুরু করে।বাল্যকাল থেকেই শাস্ত্রে তার খুব আগ্রহ ছিলো মাঝে মাঝেই ঈশ্বর চিন্তা করে তিনি ভাব তন্ময় হয়ে যেতেন |ঈশ্বরে কে কেন্দ্র করে নানা আধ্যাত্মিক প্রশ্ন তার মনে ঘুরপাক খেতো এই ঈশ্বরের খোঁজেই ১৮৭২ সালে সকলের অজ্ঞাতে অজানাকে জানার লক্ষ্যে গৃহত্যাগী হন এবং নানা স্থানে ঘুরে শেষে পৌঁছালেন আসামের শ্রীশ্রী কামাক্ষ্যাদেবীর মন্দিরে এবং এক অক্ষয় তৃতীয়ার দিন শ্রীশ্রী রামঠাকুর দেখেন জটাধারী, দীর্ঘাঙ্গী এক জ্যোতির্ময় মহাপুরুষ তার সামনে দাঁড়িয়ে|গুরু হিসাবে তিনি সেই দিব্য পুরুষ কে গ্রহন করলেন শুরু হলো তার সাধনা এবং

আধ্যাত্মিক যাত্রা|

 

বহু কঠিন সাধনায় সিদ্ধি লাভ করে একসময়

তিনি হয়ে উঠলেন অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন রাম ঠাকুর। পরবর্তীতে আরো কঠোর সাধনা করে তিনি অষ্টসিদ্ধি লাভ করলেন এরপর গুরুর এদেশে গৃহে ফিরে মাতৃ সেবা এবং কর্ম জীবনে কিছুকাল নিজেকে নিয়োজিত করলেন|এসবের মধ্যে থেকেও তার আধ্যাত্মিক শক্তি এবং জ্ঞান গোপন রইলো না বেশি দিন।ধীরে ধীরে তার চারপাশের মানুষরা বুঝতে পারেন তিনি আর কোনো সাধারণ মানুষ নেই।তার মধ্যে অলৌকিক আধ্যাত্মিক শক্তি জন্ম নিয়েছে।

 

শ্রী শ্রী রামঠাকুর রামঠাকুর অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন, তিনি একই সাথে দুই স্থানে থাকতে পারতেন, মানুষের মনের কথা পড়তে পারতেন, অদৃশ্য হতে পারতেন|এমন বহু ঘটনা তিনি তার জীবদ্দশায় ঘটিয়েছেন।

 

শ্রী শ্রী রাম ঠাকুরের কাছে, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, শুচি, অশুচির কোনও ভেদ ছিল না|জীবনের দীর্ঘ সময় কঠিন যোগ সাধনায় মগ্ন থেকেও ভক্ত দের তিনি নিঃস্বার্থ ভাবে জীব সেবা করতে শিখিয়ে গেছেন|তার জীবন ও দর্শন তার অগণিত ভক্ত ও শিষ্য দের কাছে এক আদর্শ স্বরূপ|শ্রীশ্রী রামঠাকুরের নির্দেশে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে ১৯৩০ সালে কৈবল্যধাম আশ্রম এবং ১৯৪২ সালে কলকাতার যাদবপুরে কৈবল্যধাম আশ্রম তৈরি হয় যেগুলি তার ভক্ত ও শিষ্য দের কাছে আজ তীৰ্থ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে|এছাড়াও ১৯৪৩ সালে তার জন্মভিটা ডিঙ্গামানিক গ্রামে সত্যনারায়ণ সেবা মন্দির তৈরি হয়। অসংখ্য ভক্ত তার আদর্শে দীক্ষিত। আজও বহু রাম ঠাকুর ভক্ত তার দেখানো

ভক্তি মার্গে চলছেন এবং নানা রকম জন সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন।

 

এই মহা মানব এবং মহান গুরু শ্রী শ্রী রাম ঠাকুরের চরনে আমার শত প্রনাম জানিয়ে শেষ করছি আজকের গুরু কথা|গুরু পূর্ণিমা উপলক্ষে চলতে থাকবে গুরু কথা। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।