গুরুকথা – স্বামী প্রনবানন্দ মহারাজ

38

গুরুকথা – স্বামী প্রনবানন্দ মহারাজ

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজকের গুরু কথা দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক গুরু এবং সিদ্ধ যোগী পুরুষ স্বামী প্রনবানন্দ সরস্বতী কে নিয়ে|জানবো তার জীবন কাহিনী এবং একজন আধ্যাত্মিক গুরু হিসেবে তার যাবতীয় কর্মকান্ড|

 

পরাধীন ভারতে ১৮৯৬ সালে ২৯ জানুয়ারি একে মাঘী পূর্ণিমার দিন তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার মাদারীপুরে অত্যান্ত সাধারন এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বালক প্রনবানন্দ|পিতার নাম বিষ্ণুচরন ভূইঞা ও মাতা এবং মাতা সারদা দেবী। তার সন্ন্যাস পূর্ব নাম ছিলো বিনোদ।

 

প্রণবানন্দকে স্বয়ং বাবা মহাদেবের বরপুত্র

বলা হয়।|ছোটো বেলা থেকেই ঈশ্বর চিন্তা এবং আধ্যাত্মিকতায় গভীর আকর্ষণ ছিলো তার|মাত্র সতেরো বছর বয়সে স্বামী গম্ভীরনাথ এর কাছে দীক্ষা নেন তিনি|মাত্র ২০ বৎসর বয়সে সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেন এবং ১৯২৪ সালে প্রয়াগে অর্দ্ধকুম্ভমেলায় স্বামী গোবিন্দানন্দ গিরির নিকট আনুষ্ঠানিক সন্ন্যাস গ্রহণ করেন ও হয়ে যান স্বামী প্রনবানন্দ|

 

স্বামী প্রণবানন্দ একাধারে ছিলেন সন্যাসী, সমাজ সংস্কারক এবং স্বাধীনতার যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী এক বীর সন্ন্যাসী|ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতার যুদ্ধে যোগ দিয়ে তিনি গ্রেপ্তার ও হয়ে ছিলেন।

সারা জীবন তিনি একাধিক প্রাচীন হিন্দু তীর্থ ক্ষেত্র সংস্কার করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন|তবে স্বামী প্রনবানন্দর সর্ব শ্রেষ্ঠ অবদান অবশ্যই ভারত সেবাশ্রম তৈরি|তিনি ভারত সেবাশ্রম সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন 1917 সালে|বিশ্ব জুড়ে সমাজ সংস্কার, সেবা মূলক কর্ম সূচি ও সনাতন ধর্মের প্রচারে ভারত সেবাশ্রম আজ এক অতি পরিচিত নাম। একজন আধ্যাত্মিক গুরু হিসেবে তিনি অসংখ্য ভক্ত শিষ্যকে মানব সেবা এবং সমাজ সংস্কারের কাজে উদ্বুদ্ধ করেছেন।

 

সারাটা জীবন ধরে স্বামী প্রনবানন্দ সক্রিয় ছিলেন দেশের হিন্দু সমাজকে ঐক্য বদ্ধ করতে এবং সংকীর্ণ জাতপাতের বেড়া জাল থেকে সনাতন ধর্ম ও সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে|তিনি সকল রকম ধর্মীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ছিলেন|তিনি ব্যক্তি চরিত্র নির্মাণ, আদর্শ পরিবার গঠন যথাযত শিক্ষা ইত্যাদিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতেন|তিনি বলেছিলেন – হিন্দুদের মধ্যে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, চণ্ডাল আদির কোন ভেদ নেই|অর্থাৎ সব হিন্দু সমান, সবার সমান অধিকার এবং সবাইকে সমান চোখে দেখতে হবে|

 

স্বামী প্রণবানন্দর জীবন এক আদর্শ স্বরূপ|নিজেকে সম্পূর্ণ রূপে তিনি উৎসর্গ করে ছিলেন দেশ সেবায় ও সনাতন ধর্ম রক্ষার কাজে|আজও তিনি ঘরে ঘরে পূজিত হন এক আদর্শ গুরু ও এক অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাধক হিসেবে|১৯৪১ সালে ৮ জানুয়ারি মাত্র ৪৫ বৎসর বয়সে তিনি দেহ ত্যাগ করেন|কিন্ত তিনি অমরত্ব লাভ করেছেন তার ত্যাগ, জন সেবা ও আদর্শের মাধ্যমে। আজও তার অগণিত ভক্ত এবং তার সংগঠনের সদস্যরা তার দেখানো পথে সনাতন ধর্মের স্বার্থে কাজ করে চলেছে।জাতী ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের সেবাই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য।

 

ভারত গুরু পরম্পরার দেশ। আমাদের দেশে এমন বহু আধ্যাত্মিক গুরু জন্মগ্রহণ করেছেন যাদের জীবন এবং সাধনা আমাদের দেশকে এবং আমাদের জীবনকে নানা ভাবে সমৃদ্ধ করেছে। আবার গুরুকথার পরবর্তী পর্বে অন্য

এক গুরুর জীবনী নিয়ে

ফিরে আসবো।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।