আবির্ভাব তিথি উপলক্ষে বিশেষ পর্ব
শ্রী শ্রী বামা ক্ষ্যাপা ও তারাপীঠ
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
বামা ক্ষ্যাপার সঙ্গে তারা মায়ের সম্পর্ক মানে মা ছেলের সম্পর্ক আর তারা পীঠ বামা ক্ষ্যাপার কাছে মায়ের কোলের মতো। বামা তারা মাকে বলতেন বড়মার এবং মা মৌলাক্ষীকে বলতেন ছোটমা। শুধু বামা নন অনেক সাধকই মনে করেন এই দুই দেবী আসলে দুই বোন। যাই ফিরে আসি বামা ক্ষ্যাপার কথায়।
তারা পীঠে আসার পর শুরুর দিন গুলিতে বামাক্ষ্যাপার কাজগুলো ছিল অদ্ভুত। কখনো কখনো সারাদিন পূজা করতেন। কখনও কখনও তিনি দু তিন দিন পূজা করেন না। কখনো দেবীকে মালা পরাতেন আবার কখনো নিজে পরতেন।কখনো নিজে খেয়ে ভোগ দিতে যাচ্ছেন আবার কখনো ভোগ তুলে নিজে খেয়ে নিচ্ছেন। সাধনার এই পর্যায়কে শাস্ত্রীয় পূজা পদ্ধতির সাথে বাকি পান্ডারা মেলাতে পারতেন না। তারা ভাবতেন বামা উন্মাদ। অশাস্ত্রীয় আচরণ করছেন।যদিও পরে তাদের ভুল ভাঙে।
একদিন খবর রটে যায় বামা ভোগ নিবেদন করার আগেই দেবীর প্রসাদ খেয়েছেন এবং এতে ঘোর পাপ হয়েছে।দেবী রাগান্বিত হবেন, সারা গ্রামকে তার ক্রোধ বহন করতে হবে তাই গ্রামবাসীরা বামাচরণকে কঠোরভাবে মারধর করে। তাকে শ্মশানে নিয়ে গিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। তার মন্দিরে প্রবেশ কার্যত নিষিদ্ধ ঘোষণা হয়।
যখন জ্ঞান ফিরল তখন বামাক্ষ্যাপা মায়ের উপর রেগে গেল। মাতারার উদ্যেশ্যে বামা বললেন আমি কি দোষ করেছি যে আপনি আমাকে মারধর করলেন। আপনাকে দেওয়ার আগে খাবারটি সুস্বাদু কি না তা পরীক্ষা করছিলাম। এতে আমার কি ভুল ছিল? ওরা অকারণে আমাকে মারধর করেছ তাই আমি এখন আর তোমার কাছে আসব না।
তারা মা তার সন্তানের যন্ত্রণা সইতে পারেননি।
সেই রাতেই রানীর স্বপ্নে দেখা দিল মা তারা
রাগান্বিত মা রাণীকে ভর্ৎসনা করলো-তোমার পুরোহিতরা আমার ছেলেকে আঘাত করেছে। আমি তোমার মন্দির ছেড়ে চলে যাচ্ছি। এখন তোমাকে ও তোমার রাজ্যকে আমার ক্রোধ সইতে হবে, তুমি যদি তা এড়াতে চাও, কাল আমার ছেলেকে ফিরিয়ে এনে মন্দিরে পূজার দায়িত্ব দাও, নইলে পরিণতি ভোগ করতে প্রস্তুত থাকো।
আতঙ্কে সারা রাত জেগে কাটালানে রানীমা ভোরে তিনি মন্দিরে ছুটে গেলেন। সব শুনলেন তারপর সেই সব পান্ডা দের তিরস্কার করলেন এবং তাদের মন্দিরে প্রবেশ নিষিদ্ধ করলেন। তারপর তার ভৃত্যদের আদেশ দিলেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বামাখেপাকে নিয়ে আসতে। বামা ক্ষ্যাপা প্রথমে আসতে রাজি হলেননা।অবশেষে রানী নিজেই পৌঁছে গেলেন বামা খ্যাপার কাছে । বামার কিছুক্ষনের মধ্যেই প্রশমিত হলো। তিনি তারাপীঠ মন্দিরে যেতে রাজি হলেন। সেই দিন রানীমা আদেশ জারি করেন এই মন্দিরের পুরোহিত বামাক্ষ্যাপা। সে স্বাধীন। তার পথে কেউ আসলে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে।শুধু তাই না তারাপীঠে আগে বামা ক্ষ্যাপাকে ভোগ নিবেদন হবে তারপর তারা মাকে ভোগ দেয়া হবে।অর্থাৎ সন্তানকে খাইয়ে তারপর মা খাবেন। এই রীতি আজও একই ভাবে চলছে।
বামা ক্ষ্যাপার আবির্ভাব তিথি উপলক্ষে তার অলৌকিক জীবন এবং মহিমা নিয়ে
ধারাবাহিক এই আলোচনা চলতে থাকবে।
ফিরে আসবো আগামী পর্বে।পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।