পন্ডিতজি ভৃগুর শ্রীজাতক
চলতি বছরে অম্বুবাচী প্রবৃত্তিঃ অর্থাৎ শুরু হবে ২২ জুন অর্থাৎ ৬ আষাঢ় এবং নিবৃত্তি হবে ২৬ জুন অর্থাৎ ১০ আষাঢ়। আধ্যাত্মিক ভাবে অত্যান্ত তাৎপর্যপূর্ণ এই সময়ে কয়েকটি পর্বে আপনাদের জানাবো কি এই অম্বুবাচি এবং কিভাবে ও কেনো এই ধর্মীয় উৎসব পালন করা হয়।
আষাঢ় মাসে মৃগশিরা নক্ষত্রের তিনটি পদ শেষ হলে অম্বুবাচী কালের সূচনা হয় হন|শুরুর দিনটি অম্বুবাচী প্রবৃত্তি ও ও শেষের দিনটি হলো অম্বুবাচী নিবৃত্তি|
সনাতন ধর্মে পৃথিবী কোনো জড় বস্তু নয় বসুন্ধরাকে কে আমরা এক দেবী বা মাতৃ রূপে দেখি ও পূজা করি তাই স্বাভাবিক ভাবেই এক নারী যেমন সন্তান ধারনের পূর্বে ঋতুমতী হয় ধরিত্রী ও তেমন ফসল উৎপাদনের পূর্বে রজঃস্বলা হয় ও পরবর্তীতে ফসল উৎপাদনের জন্য আরো বেশি উর্বর হয়ে ওঠে|জীবন চক্রের এই বিশেষ পর্যায়কেই অম্বুবাচি বলা হয়।
এই সময়ে কৃষকরা কৃষি কাজ থেকে বিরত থাকেন ও ধরিত্রী কে বিশ্রাম দেন|আবার অম্বুবাচী উপলক্ষে উড়িষ্যায় ভূদেবীর বিশেষ পূজা মেলা ও উৎসবের আয়োজন করা হয় ও ব্যাপক জন সমাগম হয়|ভূদেবী কে উড়িষ্যায় স্বয়ং জগন্নাথ দেবের স্ত্রী হিসেবে কল্পনা করা হয় এবং তার ঋতুমতী হওয়ার সময় কাল কে চারদিনের রজ উৎসব হিসেবে পালন করা হয়|চারদিনের এই উৎসব কে চারটি আলাদা পর্যায় উদযাপন করা হয় প্রথম দিনকে বলা হয় পহিলি রজ। দ্বিতীয় দিন মিথুন সংক্রান্তি| তৃতীয় দিন ভূদহ বা বাসি রজ এবং চতুর্থ দিন বসুমতী স্নান। বাংলাও কোনো কালে পিছিয়ে ছিলোনা এই শাস্ত্রীয় অনুষ্ঠান পালনে অম্বুবাচী উপলক্ষে গ্রামবাংলার বিধবা মহিলারা তিন দিন ধরে ব্রত রাখেন|দেশ তথা বাংলার প্রায় সব গুলো শক্তি পীঠেই নিষ্ঠার সাথে অম্বুবাচী পালন হয় ও সেই উপলক্ষে বিশেষ উৎসব এবং কোথাও কোথাও মেলার আয়োজন করা হয়|অম্বুবাচি সর্বাধিক জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পালন করা হয় আসামে|দেশের অন্যতম শক্তি পীঠ কামরূপ কামাখ্যায় অম্বুবাচী একটি মহোৎসবের রূপ নেয়|কামাখ্যার অম্বুবাচী পালন নিয়ে আছে অসংখ্য রহস্য, কিংবদন্তি ও গল্প যার সাথে জড়িয়ে আছে সনাতন ধর্মের বহু গূঢ় তত্ত্ব|সে সব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো আগামী পর্বগুলিতে।
অম্বুবাচিতে দেবী পুজো হয়না তবে অম্বুবাচী তন্ত্র সাধনার ও শাস্ত্র মতে গ্রহ দোষ খণ্ডনের জন্য অন্যতম শ্রেষ্ঠ সময়। ফিরে অম্বুবাচি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বহু তথ্য ও শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা নিয়ে।
পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।