দেবী মাহাত্ম – ডুমুরদহর ডাকাত কালী পুজো

110

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

বাংলায় মা কালীর সঙ্গে ডাকাতদের যোগ বেশ আত্মিক।যখন গৃহস্ত বাড়িতে কালী আরাধনা সেই ভাবে শুরু হয়নি সেই সময়ে রাতের অন্ধকারে ডাকাতদের গোপন আস্তানায় চলত মা কালীর আরাধনা। পুজো শেষে মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে রওনা দিত ডাকাতেরা। সেই ডাকাতরা না থাকলেও তাদের সেই সব পুজো আজও হয়।
আজ লিখবো এমনই এক ডাকাত কালী পুজো নিয়ে।

বাংলার হুগলি জেলার প্রাচীন এক জনপদ ডুমুরদহ। গঙ্গাতীরবর্তী দ্বীপ বা দহ থেকেই এই নাম। এই ডুমুরদহে রয়েছে এক অতি প্রাচীন কালী মন্দির। যা লোকমুখে বুনো কালী নামে পরিচিত। পিরামিড আকৃতি চারচালাযুক্ত একতলা সাদামাটা মন্দিরটির স্থাপত্যে আজ আধুনিক ছাপ পড়েছে বহু বার সংস্কারের পরে নানা পরিবর্তন হয়েছে বটে তবে ইতিহাস ঘাঁটলেই জানা যায় এই মন্দির এবং প্রতিমা বহু প্রাচীন। এই মন্দিরের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ডুমুরদহের বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, ওরফে বিশে ডাকাতের নাম। ইতিহাস বলছে
সেই উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে যখন
বাংলার ডাকাত দলগুলিকে সামলাতে হিমশিম খেতেন স্বয়ং ইংরেজ শাসকরা। সেসময় এই বিশে ডাকাত ছিল ইংরেজদের ত্রাস।তার শাসন চলতো এই অঞ্চলে। সবাই তাকে ভয় এবং ভক্তি করতো।

সেই সময়ে লেখা কিছু বইয়ে পাওয়া যায় ডাকাত বিশ্বনাথবাবুর অধীনে ডাকাতরা নৌকাযোগে যশোহর পর্যন্ত ডাকাতি করতেন। জানা যায় এই বিশে ডাকাত এই মন্দিরে পুজো দিয়েই ডাকাতি করতে যেতেন। বাবু সম্মোধন এর কারন সেই সময়ে ডাকাতি করে বহু অর্থ রোজগার করে প্রায়
জমিদার বোনে গেছিলেন বিশে ডাকাতের ন্যায়।বহু ডাকাত।

সমাচার-দর্পনে প্রকাশিত একটি সংবাদে পাওয়া যায় যে একসময় এখানে নরবলিও হতো
যদিও বর্তমানে বৈষ্ণব মতে পুজো হয়।
একটি অদ্ভুত রীতি ও নাকি পালন হয় যেখানে একটি ছাগলের কান কেটে বেলপাতায় করে অর্ঘ্য দেয়া হয় দেবীকে। এই প্রথা কতোটা মানবিক বা সমর্থন যোগ্য সেটা আলাদা বিষয়। সবটাই আস্থা এবং বিশ্বাসের উপর দাঁড়িয়ে আছে।

ডুমুরদহের বুনো কালী মাতার মন্দিরের পাশে রয়েছে একটি চারচালা ভৈরব মন্দির। মন্দিরটি বর্তমানে অবক্ষয়প্রাপ্ত তবে টেরাকোটার কাজ অপূর্ব।

আসন্ন আষাড় অমাবস্যা ও অম্বুবাচি উপলক্ষে
চলতে থাকবে দেবী মাহাত্ম নিয়ে আলোচনা।আগামী ১৭ ই জুন তারাপীঠে গ্রহ দোষ
খন্ডনের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন।
পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।