বিশেষ পর্ব – রথ যাত্রার ইতিহাস

208

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

আজ পবিত্র রথ যাত্রা আজকের এই বিশেষ
পর্বে পুরীর রথ যাত্রার ইতিহাস ও সেই সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য আপনাদের সামনে রাখবো।

ঠিক কখন পুরীর রথযাত্রা শুরু হয়েছিল তা নিদ্দিষ্ঠ করে বলা কঠিন। একাধিক প্রাচীন শাস্ত্রে এবং পুরানে রথ যাত্রার উল্লেখ পাওয়া যায়।
‘মাদলা পঞ্জি’ নামে ষোড়শ শতাব্দীতে প্রণীত এক পঞ্জিকায় উল্লেখ আছে, একদা জগন্নাথ মন্দির এবং গুন্ডিচা মন্দিরের মধ্যে মালিনী নামে একটি নদী ছিল যা বড় নাই অথবা বড় নদী নামেও খ্যাত।

সে সময়ের রাজা ৬টি রথ নির্মাণ করেন। সুদর্শন চক্রসহ জগন্নাথ এবং বলরাম ও সুভদ্রার বিগ্রহের জন্য তিনটি রথ নদী পর্যন্ত আনতে ব্যবহৃত হতো। তারপর বিগ্রহগণ নদীর অপর প্রান্তে আনা হলে, সেই স্থান থেকে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রাকে গুন্ডিচা মন্দিরে আনতে তিনটি অতিরিক্ত রথ নিযুক্ত করা হতো। রাজা বীর নরসিংহের শাসনামলে নদীটি মাটি দ্বারা পূর্ণ করা হয় এবং তারপর থেকে গুন্ডিচা মন্দির পর্যন্ত যাওয়ার জন্য শুধু তিনটি রথ প্রয়োজন হয়।ভগবান বাসুদেবের রথ গরুড় ধ্বজ সুভদ্রার রথ পদ্মধ্বজ বলরামের রথ তালধ্বজ নামে পরিচিত।

যে ‘রথ চকড়’ নামে প্রাচীন গ্রন্থ পুরীতে পাওয়া যায় তাতে লেখা আছে যে রাজা যযাতি অষ্টম শতাব্দীতে রথযাত্রা উদযাপন করেন।

আবার স্কন্দপুরাণ অনুসারে মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্নের শাসনামলে রথযাত্রা উদযাপিত হয়, যখন তিনি জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রা বিগ্রহ স্থাপন করেন।
এখানে এক জায়গায় নারদমুনি বললেন, “প্রিয় রাজা, ভগবানের ভ্রমণের জন্য সুন্দরভাবে সজ্জিত তিনটি রথ প্রস্তুত করতে হবে। এই রথ গুলো রত্ন, অলঙ্কার, পাটের শাড়ি, মালা এবং বিভিন্ন মূল্যবান রত্নদ্বারা আবৃত করতে হবে। স্কন্দ পুরাণে আরো বর্ণিত আছে যে, স্বর্গের স্থপতি বিশ্বকর্মা নারদ মুনি কর্তৃক নির্দেশিত হয়ে একই দিনে তিনটি রথ নির্মাণ করেন। তখন নারদ মুনি বৈদিক রীতি অনুসারে রথসমূহ স্থাপন করেন।শুরু হয় রথ যাত্রা।

পুরীতে অধিষ্টিত জগন্নাথ এই জগতের শাসন কর্তা
তার কাছে সবাই সব সময় পৌঁছাতে পারেন না তার কিছু বিশেষ কারন আছে আছে কিছু বিধি নিষেধ। কিন্তু ভগবান তার ভক্তদের প্রতি সদা স্নেহশীল এবং সেই জন্য তিনি নিজেই ভক্তদের সামনে আসেন বছরের এই বিশেষ দিনে। শুধু দর্শন নয় এই দিন তাকে স্পর্শ এমনকি আলিঙ্গন অবধি করা যায়। তার পথ পরিষ্কার করেন স্বয়ং পুরী নরেশ। ভক্ত আর ভগবানের মিলন উৎসব
এই রথ যাত্রা।এই দিন জাত ধর্ম বর্ণ সব ভক্তি এবং
শ্রদ্ধার কাছে পরাজিত হয়।

সবাইকে জানাই পবিত্র রথ যাত্রার অসংখ্য শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।