লাল মাটির দেশে

420

লাল মাটির দেশ, মানে বীরভূম আমার বরাবরই বেশ প্ৰিয় স্থান, বহু বার এসেছি পেশাগত কারনে তবে এবার নিছক ঘুরতে, স্বপরিবারে, ছুটির মেজাজে, বীরভূমের প্রতি আমার বিশেষ টানের একটি কারন অবশ্যই আধ্যাত্মিক কারন এই একটি ছোট্ট জেলায় রয়েছে বেশ কয়েকটি শক্তি পীঠ|

বিগত দিনে বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মায়ের মন্দির ও সাধক কমলা কান্তের মন্দির দর্শন করেছি আপনাদের সাথে সেই অপূর্ব অভিজ্ঞতা ভাগও করে নিয়েছি, আজ প্রথমে এলাম একান্ন পীঠের সর্ব শেষ পীঠ কঙ্কালী তলা দর্শনে|

পীঠ নির্ণয় তন্ত্র কঙ্কালী তলায় দেবীর কঙ্কাল পড়েছিলো তাই এই পীঠঠের নাম হয় কঙ্কালী তলা তবে ভরত চন্দ্রের অন্যদামঙ্গল এ আবার অন্য কথা বলা হচ্ছে,ভরত চন্দ্রের মতে এখানে দেবীর কাঁক বা কোমর পড়ে ছিলো,সেই থেকেই কঙ্কালী তলা|

মন্দিরের পাশেই এক রহস্য ময় কুন্ডর অবস্থান, প্রচলিত বিশ্বাস এই কুন্ডর জল কোনো দিনও শোকায় না আর এই কুন্ডর মধ্যেই আছে এক শীলা খন্ড বা জীবাশ্ম যা প্রকৃত পক্ষে দেবীর কাঁক বা কোমরের প্রস্তরীভূত রূপ, এই শীলা খন্ড কিছু কিছু বিশেষ বিশেষ তিথি তে তুলে এনে ভক্তিভরে পূজা করা হয় |

দেবী এখানে দেবগর্ভা রূপে পূজিতা হন,তার কোনো মূর্তি নেই, তিনি একটি পটে চিত্রিত |কিংবদন্তী অনুসারে কোনো এক অলৌকিক কারণে দেবীর মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় নি, এবং এই ভাবেই দেবীর পূজা হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে|মন্দিরের পাশেই শিব একটি বিশেষ রূপে পূজিত, তার এই বিশেষ রূপ টির নাম “রুরু ” |

এরপরের গন্তব্য শক্তি পীঠ ফুল্লরা, দেবী ভাগবত পুরান অনুসারে দেবী সতীর খণ্ডিত ওষ্ঠের নিম্ন ভাগ পড়ে ছিলো যে স্থানে সেখানেই সৃষ্টি হয়েছে ফুল্লরা নামক শক্তি পিঠ টি |আশ্চর্যর অত্যন্ত প্রসিদ্ধ ও জনপ্রিয় এই মন্দিরে দেবীর কোনো বিগ্রহ নেই তার বদলে আছে এক রহস্যময় শিলা খন্ড যা দেবীর প্রতিভূ হিসেব পূজিতা হয়ে আসছেন যুগ যুগ ধরে|দেবীর আরেক নাম অট্টহাস |আর মন্দিরের পাশেই আছে এক বিরাট পুকুর, কিংবদন্তী যদি সত্যি হয় রাম যখন দূর্গা পূজা করে ছিলেন এই পুকুর থেকে হনুমান সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়ে ছিলেন একশ আট টি পদ্ম |এই পুকুরের আরেকটি নাম দেবী দহ, কথিত আছে এই পুকুরের জল কখনো শোকায় না|

কিছু ইতিহাসকার মনে করেন, সুলতান গজনীর ভারত আক্রমণ এর সময়ে একদল নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ আশ্রয় নিতে আসেন বাংলার এই স্থানে তাদের মধ্যেই কেউ সাথে নিয়ে আসেন এই বিগ্রহ|পরে বর্মন রাজারা এই দেবীকে প্রতিষ্ঠিত করেন |প্রথম মন্দির তৈরা করান কৃষ্ণা নন্দ গিরি, বর্তমান মন্দির টি তৈরী করান যাদব লাল বন্দোপাধ্যায় |

শোনা যায় এক সময় মন্দির চূড়ায় শোভা পেতো স্বর্ণ কলস, কালের নিয়মে সেই জৌলুস হয়তো অনেকটাই ম্লান কিন্তু এই স্থানের আধ্যাত্মিক ও ধার্মীক গুরুত্ব কমে নি এতোটুকু

বোলপুরে এসে কোপাই নদীর কথা না বললেই নয়, এই কঙ্কালী তলার পাশ দিয়েই বয়ে গেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্ৰিয় নদী কোপাই|শান্তি নিকেতনে থাকা কালীন রবীন্দ্রনাথ বলতেন, কোপাই আমার প্রতিবেশী|রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই নদীর বর্ণনায় লিখেছেন-

” আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকেবৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে”

এ কবিতা ছোটবেলায় আমরা প্রায় সবাই পড়েছি, এই কোপাই এর তীরে কিছুটা সময় কাটানো মনে এক অদ্ভুত প্রশান্তি এনে দেয়, আমি তা বেশ অনুভব করছি|

এরপরে কিছুটা নদীর গতি পথ ধরেই পৌঁছে যাবো সোনাঝুরির হাটে, সেই বিখ্যাত গ্রামীণ হাট যেখানে গেলে শোনা যায় বাউল গান আর পাওয়া যায় গ্রামের শিল্পী দের নিজে হাতে তৈরি রকমারি সব জিনিস… সে অভিজ্ঞতাও আপনাদের সাথে ভাগ করে নেবো যথা সময়ে|আপাতত এই টুকু থাক|

বুঝতেই পারছেন আপাতত একটু অবসর যাপন, তাই যারা জ্যোতিষী ভৃগুশ্রী জাতক কে খুঁজছেন বা যোগাযোগ করছেন, তারা তারা দুদিন পর থেকে আবার যোগাযোগ করতে পারেন যেমন টা করে থাকেন, আর ফোন করতে চাইলে পোস্টে উল্লেখিত নাম্বার টি ব্যবহার করবেন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|