তারাপীঠ ভ্রমণ

1694

এতক্ষনে নিশ্চই সবাই বুঝেই গেছেন কোন বিশেষ কারনে আমার এই ছুটি কাটানো বা স্বপরিবারে তীর্থ ভ্রমণ|হ্যাঁ আজ তেইশে জানুয়ারি আমার জন্মদিন|যারা ফোন করে, ম্যাসেজ করে বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন তাদের জানাই অনেক ধন্যবাদ|আপনাদের ভালোবাসা, সমর্থন ও আশীর্বাদ আমার আগামী দিনের পথ চলা আরো সুগম করবে|

বিগত দুদিন ধরে বর্ধমান ও বীরভূমের বেশ কিছু উল্লেখ যোগ্য তীর্থ ক্ষেত্র দর্শন করেছি এবং সেই অভিজ্ঞতাও আপনাদের সাথে ছবি ও লেখার মাধ্যমে|আপনাদের তা বেশ ভালো লেগেছে বুঝতে পেরে স্বাভাবিক ভাবেই উৎসাহ বেড়ে গেছে কয়েক গুন|তাই আজ অর্থাৎ এই বারের ভ্রমণের শেষ দিনের ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও আপনাদের সামনে তুলে ধরবো|

আজ এসে পৌঁছেছি বীরভূমের অন্যতম আকর্ষণ তারাপীঠে|বহু বার এসেছি তারাপীঠে, কাজে বা নিছক ঘুরতে বা মা তারার দর্শন লাভ করে ধন্য হতে|তবে যতবারই আসি নতুন করে রোমাঞ্চ অনুভব করি, মুগ্ধ হই|তারাপীঠ একা ধারে বাংলার তন্ত্র সাধনার প্রান কেন্দ্র, বশিষ্ঠমুনির সিদ্ধি লাভের স্থান আবার বামা খেপার লীলা ক্ষেত্র|এখানে আসা বা থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা নিয়ে তো আর নতুন কিছু বলার নেই তাই আজ নতুন করে বরং তারাপীঠের আধ্যাত্মিক তাৎপর্য ও ইতিহাস আপনাদের সাথে ভাগ করে নিই|

তন্ত্র সাধনায় তারাপীঠের গুরুত্ব অপরিসীম কারন
তন্ত্রে তারাকে বলা হয়েছে দ্বিতীয় মহাবিদ্যা|এই বিষয়ে আমি আগেই আলোচনা করেছি দশমহাবিদ্যা লেখনীর মাধ্যমে|তারাপীঠ শ্মশান তন্ত্র সাধনার এক উৎকৃষ্ট স্থান কারন এটি কোনো সাধারণ শ্মশান নয় এটি মহা শ্মশান এই মহাশ্মশানেই জীবন আর মৃত্যুর পটভূমি নিত্য রচনা করে চলেন দেবী তারা|প্রচলিত বিশ্বাস বলে তারাপীঠের মহাশ্মশানেও জ্যোতিরূপে বাস করেন দেবী|কিংবদন্তী অনুসারে দ্বারকা নদী মহাশক্তির উৎস। এই নদীজলে স্নান করলেই সিদ্ধিলাভের যোগ্যতা অর্জন করেন মানুষ। দূর হয় সব পাপ|আশ্চর্যজনক ভাবে এই নদী উত্তর মুখী|তারাপীঠের পঞ্চমুন্ডীর আসন ও জগৎ প্রসিদ্ধ এই পঞ্চমুণ্ডের আসন আলাদা। এখানে পাঁচটি মুণ্ড সাপের, ব্যাঙের, খরগোশের, শিয়ালের এবং মানুষের। এই আসনে বসেই বহু যুগ পূর্বে দেবীকে তুষ্ট করে তারাপীঠকে সিদ্ধপীঠে পরিণত করেছিলেন ঋষি বশিষ্ঠ পরবর্তীতে বামা ক্ষেপা|

মাতারার মুল প্রস্তর নির্মিত মূর্তি টি রয়েছে একটি ধাতব মূর্তির অভ্যন্তরে|এই মূর্তিটি ভীষণা চতুর্ভূজা, মুণ্ডমালাধারিণী এবং লোলজিহ্বা মূর্তি। এলোকেশী দেবীর মস্তকে রয়েছে একটি রৌপ্যমুকুট |বহির্মূর্তিটি সাধারণট শাড়ি-জড়ানো অবস্থায় গাঁদা ফুলের মালায় ঢাকা অবস্থায় থাকে। মূর্তির মাথার উপরে থাক একটি রূপোর ছাতা|প্রতিকৃতি বিগ্রহের নিচে গোলাকার বেদীতে দুটি রূপোর পাদপদ্ম থাকে|যারা তারা পীঠ মন্দির ও দেবীকে দর্শন করেছেন তারা জানেন উত্তরমুখী আটচালা মন্দিরটি লাল ইঁটে নির্মিত এবং মন্দিরের চূড়ায় একটি তামার পতাকাসহ ত্রিশূল ত্তিনটি পদ্ম ভেদ করে উঠেছে|প্রাচীন কালে বণিক জয় দত্তের তৈরি করে দেওয়া তারামায়ের মন্দিরটি আজ আর নেই। বর্তমানের মন্দিরটি ১২২৫ বঙ্গাব্দে তৈরি করান মল্লারপুরের জগন্নাথ রায়|যারা বিশ্বাস করেন তারাপীঠ একটি সিদ্ধ পীঠ তারা মনে করেন দেবী সতীর চোখের ঊর্ধ্বনেত্রের মণি অর্থাৎ তারা পড়ায় দ্বারকা নদীর পুব পাড়ের চণ্ডীপুর আজ তারাপীঠ|

তারাপীঠ সিদ্ধ পীঠ না কেবল মাত্র একটি জাগ্রত শক্তি পীঠ বা উপপীঠ এ নিয়ে বিতর্ক ও মতান্তর বহু যুগ ধরে চলে আসছে|কথিত আছে বশিষ্ট দেব সাধনা করতেন কামাখ্যায় কিন্তু কোনো কারনে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি কামাখ্যা ত্যাগ করেন ও বাংলার বীরভূমের এই বিশেষ স্থানে এসে পঞ্চমুন্ডীর আসন প্রতিষ্ঠা করে দেবী উগ্রতারার সাধনা শুরু করেন ও সিদ্ধি লাভ করেন|পরবর্তীতে ধীরে ধীরে এই স্থান মাহাত্ম লোক মুখে প্রচারিত হয় ও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তারাপীঠ|

পরবর্তীতে আরেক মহাপুরুষের আবির্ভাব ঘটে এই মহা তীর্থে, তিনি সিদ্ধ পুরুষ বামা ক্ষেপা|বামা ক্ষেপাও তারাপীঠে পঞ্চমুন্ডীর আসনে বসে সিদ্ধি লাভ করেন ও দেবীর দর্শন লাভ করে ধন্য হন|সেই পরম্পরা চলেছে বহু যুগ ধরে একাধিক তান্ত্রিক সাধক ও মাতৃ সাধকের সাধনার প্রধান কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে তারাপীঠ|হয়ে উঠেছে দেশের আধ্যাত্মিক সাধনা ও বিশেষত তন্ত্র সাধনার অন্যতম প্রান কেন্দ্র|লাল মাটির দেশ বীরভূমে অবস্থিত তারাপীঠের পরিবেশ ও অতি মনোরম ও তন্ত্র সাধনার আদর্শ|রয়েছে মন্দির সংলগ্ন মহাশ্মশান ও অদূরেই অতি পবিত্র দ্বারকা নদী|
কিছু দুরে আটলা গ্রামে বামদেবের জন্মভিটেও একটি দর্শনীয় স্থান|

লক ডাউনে তিন মাস বন্ধ ছিলো তারাপীঠ মন্দির|লক ডাউন খোলার পর এই আমার প্রথম তারাপীঠ দর্শন তাই আনন্দ ও উৎসাহ ভাষায় প্রকাশ করা যায়|তবে ভাবলে একটু খারাপ লাগছে আবার ফিরে যেতে হবে কর্মব্যাস্ত জীবনে, আবার পেশাদার জ্যোতিষ চর্চা|সে যাই হোক কর্ম ও এক ধরণের সাধনা|কর্ম তো করে যেতে হবে|কাল থেকে আবার আপনারা আমার উল্লেখিত নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারেন জ্যোতিষ সংক্রান্ত কাজ নিয়ে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|