পদ্মনাভ মন্দির

1168

দুর্গোৎসব, দীপাবলি, ধনতেরাস,একের পর এক ধর্মীয় উৎসব পেরিয়ে এলাম|জ্যোতিষ জগতেও এই সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ|অসংখ্য মানুষের ভাগ্যবিচার ও জ্যোতিষ প্রতিকারের কাজ সামলে স্বাভাবিক ভাবেই কিছুটা ক্লান্তি এসেছিলো তাই কটা দিন বিশ্রামের পর আবার ফিরলাম কাজের জগতে, আবার কলম ধরলাম আধ্যাত্মিক লেখা লেখির জন্যে|এবার শুরু করছি সম্পূর্ণ নতুন এক ধারাবাহিক লেখা,মন্দির রহস্য|দেশ ও বিদেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কিছু বিখ্যাত মন্দির ও তাদের সাথে জড়িত রহস্য নিয়ে হবে এই ধারাবাহিক লেখা|একেকটা পর্বে লিখবো একেকটা মন্দির নিয়ে|আজ প্রথম পর্বে কেরলের বিখ্যাত ও বিতর্কিত পদ্মনাভ মন্দির|

মনে করা হয় খৃষ্টীয় অষ্টম শতাব্দীতে এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত|ত্রাভাংকোর প্রসিদ্ধ রাজাদের মধ্যে অন্যতম মার্তন্ডা বর্মা এই মন্দিরটির প্রমুখ সংস্করণ করান এবং বর্তমান শ্রী পদ্মনাভস্বামী মন্দিরটির গঠন তারই মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে|1750 খৃষ্টাব্দে মার্তন্ডা বর্মা ত্রাভাংকর রাজ্যটিকে ভগবান পদ্মনাভর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন|

এই মন্দিরটির উল্লেখ কিছু পুরাণেও পাওয়া যায়, যেমন, স্কন্দ পুরাণ ও পদ্ম পুরাণ|ভগবান বিষ্ণুর 108 টি পবিত্র মন্দিরগুলির মধ্যে এটি অন্যতম। এই মন্দিরের মূল দেবতা হলেন, ফনা তুলে থাকা অনন্তনাগের উপরে আঁধশোয়া অবস্থায় বা অনন্ত শয্যায় ভগবান বিষ্ণু|

শ্রীপদ্মনাভস্বামী মন্দিরের বিষ্ণু মুর্তিটি গঠন শৈলীর জন্য জগৎ প্রসিদ্ধ, যার মধ্যে রয়েছে নেপালের গন্ডকী নদীর তীর থেকে নিয়ে আসা 12008 টি শালগ্রাম শিলা|মন্দিরের গর্ভ গৃহে একটি পবিত্র বেদীর উপর আঠেরো ফুট দৈর্ঘ্যর দেবমূর্তিটি রয়েছে যা তিনটি ভিন্ন দরজা থেকে দর্শন করা যায়|ক্রমানুসারে মস্তক এবং বক্ষ প্রথম দরজা দিয়ে, হস্তগুলি দ্বিতীয় দরজা দিয়ে এবং পদযুগল তৃতীয় দরজা দিয়ে দর্শন করা যায়|

পাথর এবং ব্রোঞ্জের তৈরী 80 ফুট উচ্চতার ধ্বজ স্তম্ভ বিশিষ্ট এই মন্দিরে বিষ্ণু ছাড়াও রয়েছেন নৃসিংহ দেব, গণপতি ও গজলক্ষী|মণ্ডপের ছাদে চিত্রিত রয়েছে নব গ্রহের চিত্র|

এই মন্দির কে ঘিরে সাম্প্রতিক কালে লেখা লেখি কিছু কম হয়নি যার মুলে আছে এক রহস্য|কয়েকবছর আগে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অনুসন্ধান চালিয়ে এই মন্দিরের অভ্যন্তরে ৬টি প্রকোষ্ঠের সন্ধান পাওয়া যায়, যার প্রত্যেকটি থেকে উদ্ধার হয় বিপুল পরিমাণ সোনা। সব মিলিয়ে কয়েক লক্ষ কোটি টাকার সোনা ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিস এখান থেকে পাওয়া যায়|তবে মূল রহস্য এই ৬টি প্রকোষ্ঠ ছাড়িয়ে ৭ নম্বরে প্রকোষ্ঠ কে কেন্দ্র করে । এই প্রকোষ্ঠটি আজ পর্যন্ত খোলা সম্ভব হয়নি যার প্রধান কারন ধর্মীয় বিশ্বাস ও কিছুটা আইনি জটিলতা| এই প্রকোষ্ঠের দরজায় দুটি সাপের চিহ্ন আঁকা রয়েছে। কিন্তু কোনও স্ক্রু, তালা বা অন্য কিছু নেই, যা দিয়ে তা খোলা যেতে পারে|

একটি কিংবদন্তি অনুসারে এই প্রকোষ্ঠের দরজা ‘নাগবন্ধনম’ দ্বারা আবদ্ধ যা কেবল মাত্র একটি নিদ্দিষ্ট মন্ত্রের বিশেষ উচ্চারণেই খুলতে পারে|আজও এক রহস্য এই বন্ধ দরজা,বন্ধ দরজায় কান পাতলে নাকি ভিতরে জলের স্রোতের শব্দ শোনা যায় এমনকি প্রকোষ্ঠের ভিতরে সাপের হিস-হিস শব্দও শোনা গিয়েছে বলে অনেকে জানান|কিন্তু সবথেকে বড়ো প্রশ্ন হলো কি আছে এই বন্ধ দরজার ওপারে|কেউ কেউ মনে করেন ওই বন্ধ প্রকোষ্টে রয়েছে অপার ঐশ্বর্য, ধন সম্পদ আবার কেউ কেউ বিশ্বাস করেন এর মধ্যে রাখা রয়েছে সৃষ্টিরহস্যের চাবিকাঠি|হয়তো কিছু রহস্য চিরকাল রহস্যই থেকে যাবে|হয়তো ভগবানের তাই ইচ্ছে|

আজ প্রথম পর্ব এখানেই শেষ করছি|ফিরবো আগামী পর্বে অন্য কোন মন্দিরের রহস্য নিয়ে|পড়তে থাকুন|যারা জ্যোতিষ পরামর্শ ও প্রতিকার নিয়ে কথা বলতে চান ফোন করুন উল্লেখিত নাম্বারে|আপাতত নিজ গৃহ মন্দিরে প্রতিদিন ও অনলাইনে সর্বদা আছি আপনাদের পাশে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|