তিরুপতি বালাজি

1514

মন্দির রহস্য নিয়ে এই ধারাবাহিক আলোচনা শুরুতেই বেশ জমে উঠেছে তা আপনাদের প্রতিক্রিয়া থেকে বেশ বুঝতে পারছি তাই আর দেরি না করে আজ দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে আমি আপনাদের সামনে উপস্থিত|আজকের পর্ব লিখবো দক্ষিণ ভারতের তিরুপতি বালাজি মন্দির নিয়ে|

মনে করা হয় কলিযুগের দুঃখ ও যন্ত্রণা থেকে মানব সমাজকে মুক্ত করতে ভগবান বিষ্ণু তিরুমালায় ‘ভেক্টেশ্বর’ রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন|
অন্ধ্রপ্রদেশের চিত্তুর জেলার অন্তর্গত তিরুপতির তিরুমালা শৈলশহরে অবস্থিত ভগবানের ভেঙ্কটেশ্বরের তিরুমালা মন্দির যা বালাজি মন্দির নামেও প্রসিদ্ধ এবং ধন সম্পদের দিক দিয়ে বিশ্বের বিশ্বের ধনিতম মন্দির গুলির অন্যতম|

বহু পুরান কাহিনী,কিংবদন্তি ও রহস্য জড়িয়ে আছে এই মন্দির ঘিরে যার কিছু আজ আমি আপনাদের সামনে আনবো|অনেকেই জানেন এই মন্দিরের দেবতার উদ্দেশ্যে মাথার চুল নিবেদন করা হয়|কিন্তু কেনো? তা জানতে হলে একটি পৌরাণিক ঘটনা জানতে হবে|

একবার ভগবান ভেঙ্কটেশ্বরের মাথায় এক নাবালক রাখাল নিজের অজান্তেই আঘাত করেছিলেন যার ফলে ভগবানের মাথার কিছু অংশের চুল ছিঁড়ে পড়ে যায়। নীলাদেবী নামে এক গন্ধর্ব রাজকুমারী এই ঘটনাটি দেখতে পান| নীলাদেবী মনে করেন, ভগবান ভেক্টেশ্বরের সৌন্দর্যে কোন ক্ষুত থাকা উচিত নয় তিনি তখন নিজের মাথার চুল কেটে জাদুশক্তির সাহায্যে ভগবান ভেক্টেশ্বরের মাথায় প্রতিস্থাপন করেন|নীলাদেবী যেহেতু নিজের সৌন্দর্যের কথা না ভেবে ভগবান ভেক্টেশ্বরের সৌন্দর্যের বিষয়ে ভেবে নিজের মাথার চুল তাঁকে দান করেছিলেন, তাই ভগবান ভেক্টেশ্বরও রাজকুমারী নীলাদেবীকে এক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন|সেই প্রতিশ্রুতি অনুসারে এই ভেক্টেশ্বর মন্দিরে আগত প্রত্যেক ভক্ত তাঁদের নিজের মাথার চুল অর্পণ করবেন ভগবান ভেক্টেশ্বরকে। এবং সেই চুল প্রকৃত অর্থে পাবেন রাজকুমারী নীলাদেবী।সেই প্রথা আজও চলে আসছে|

কেনো তিরুপতি মন্দিরে এতো ধন সম্পদ দান করেন ভক্তরা তাও এক রহস্য যা জানতে হলে আমাদের আরো একটা পৌরাণিক ঘটনা জানতে হবে|তিরুমালার রাজকুমারী পদ্মাবতীর সঙ্গে শ্রীবিষ্ণুর বিবাহ স্থির হয় এবং এই বিবাহের জন্যই বিষ্ণু সম্পদের দেবতা কুবেরের কাছ থেকে বিবাহ উপলক্ষে বিপুল ঋণ গ্রহণ করেন।ঋণ করার কারণ পদ্মাবতীর বাবা এই অর্থ দাবি করেছিলেন। কুবের এই শর্তে ঋণ দান করেন যে, বিষ্ণু যতদিন পর্যন্ত এই ঋণ শোধ করতে পারছেন না, ততদিন তিনি বৈকুণ্ঠে প্রবেশ করতে পারবেন না। সেই থেকে আজ পর্যন্ত বিষ্ণু কুবেবের ঋণ পরিশোধ করতে পারেননি। ভক্তরা ভগবানকে বিপুল অর্থ ও সম্পদ প্রদান করেন, যাতে তিনি ঋণমুক্ত হন|আজও অগণিত ভক্ত ভগবানের ঋণ পরিশোধ করতে মুক্ত হস্তে দান করে চলেছেন|

ভগবান ভেঙ্কটেশ্বরের চোখ কেনো ঢাকা তারও নানা রকম ব্যাখ্যা হয়|অনেকে বিশ্বাস করেন এই বিপুল ঋণের কারণেই লজ্জিত বালাজি নাকি চোখের অর্ধাংশ ঢেকে রাখেন|কিছু শাস্ত্রজ্ঞ মনে করেন ভগবান বিষ্ণুর অন্যতম অবতার বুদ্ধ। বুদ্ধের একটি রূপ হল অবলোকিতেশ্বর। এই রূপে বুদ্ধের চোখ অর্ধনিমিলিত থাকে। বালাজির মূর্তি আসলে অবলোকিতেশ্বরেরই মূর্তি|তবে স্থানীয়রা মনে করেন বালাজির তিরুপতির চোখ যাতে ঢাকা থাকে, তা আসলে তিলক|বালাজির দৃষ্টি অতীব অলৌকিক শক্তি সম্পন্ন। এই শক্তির প্রভাব সকলের সহ্য হবে না তাই ওই বিশেষ তিলক দ্বারা তাঁর নয়নকে অর্ধনিমিলিত রাখা হয়|

রহস্য একটি দুটি নয় অনেক|প্রচলিত বিশ্বাস ভগবানের বুকে কান পাতলে শোনা যায় সমুদ্রের শব্দ|ভগবানের কপালে জমে বিন্দু বিন্দু ঘাম|ভগবানের চুল ও কোনো সাধারণ চুল নয়,তা আসল, অকৃত্তিম|বালাজির পূজা সামগ্রীও আসে একটি মাত্র নিদ্দিষ্ট গ্রাম থেকে|এই প্রথা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে|আমি নিজেও তিরুপতি বালাজি মন্দির দর্শন করে ধন্য হয়েছি|

আজ এখানেই থামছি|আবার পরের পর্বে ফিরে আসবো নতুন এক মন্দির ও তার রহস্য নিয়ে|আবার অনলাইন ভাগ্য বিচারের পাশাপাশি চেম্বারে বসাও শুরু করেছি|যারা ভাগ্য বিচার, জ্যোতিষ পরামর্শ ও প্রতিকারের ব্যাপারে আগ্রহী তারা উল্লেখিত নাম্বারে যোগাযোগ করে সরাসরি কথা বলতে পারেন আমার সাথে|ভালো থাকুন ধন্যবাদ