কৃষ্ণ কথা – শ্রী কৃষ্ণ এবং গয়না চোর
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
ভগবান শ্রী কৃষ্ণ লীলা ধর।তিনি যে কার সাথে কখন কি লীলা করবেন তা বোঝা দায়। আজ কৃষ্ণ কথায় শ্রী কৃষ্ণের এক অদ্ভুত লীলা অপনাদের শোনাবো।
এক সময়ে সময়ে বৃন্দাবনে গোবর্ধন নামে এক কুখ্যাত চোর ছিল। একদিন রাজকর্মচারীরা তাকে ধরার জন্য তাড়া করছিল। পালতে গিয়ে সে এক ভগবত পাঠের আসরে ঢুকে পরে। রাজ কর্ম চারীরা ভগবত পাশের আসরে প্রবেশ না করে ফিরে যায়।
সেই সময় সেখানে আলোচনাটি চলছিল ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শৈশব সম্পর্কে। কথাকার উল্লেখ করেছিলেন যে শ্রীকৃষ্ণ একজন সাত বা আট বছরের শিশু। তিনি প্রতিদিন গরু চরানোর সময় একটি সোনার লাঠি বহন করেন এবং একটি সোনার মুকুট পরেন।তার গায়ে থাকে বহু মূল্য সোনার গহনা।সেই চোর মনে মনে ভাবতে লাগলো বনে একা একটি ছোট ছেলেকে ডাকাতি করা সহজ হবে।এ সুযোগ ছাড়া যাবেনা। সেই বালককে খুঁজে বের করতেই হবে।
আলোচনা শেষ হলেই চোর বক্তাকে সেই ছেলের ঠিকানা জিগেস করলো।কথাকার বললেন সে অনেক দূরে, মথুরার বৃন্দাবনে থাকে। তার বাবার নাম নন্দ বাবা।তারপর পুরো ঠিকানাও দিলো আর ছলে যাওয়ার সময় তাকে পরামর্শ দিলো যে সে চোরদেরও নেতা। সে এত সহজে ওকে ডাকাতি করতে পারবে না। চোর স্বগর্বে ঘোষণা করল, আমি শপথ করছি, যতক্ষণ না আমি ওই ছেলেটিকে ডাকাতি করি, ততক্ষণ আমি জল স্পর্শ করবো না।তার জেদ দেখে তিনি বললেন কিছু মাখন এবং চিনি তোমার সাথে নিয়ে যাও। এতে সে খুশি হতে পারে।চোর তাই করলো।
বেচারা চোর, ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত অবস্থায় বৃন্দাবনের পথে পথে ঘুরতে লাগলো । যাদের জিজ্ঞাসা করেছিল তারা সবাই তাকে বলেছিল যে শ্রী কৃষ্ণ আর নেই এখনে। সে অনেক যুগ আগের কথা। ভগবানের দর্শন পাওয়া এযুগে ওতো সোজা না অনেক তপস্যা করতে হয়।কিন্তু চোর হাল ছাড়বেনা। কৃষ্ণকে তার চাই। সেই সব সোনার গহনা তার চাই।
অবশেষে একদিন সে দেখতে পেল অনেক সুন্দর গরু এবং রাখাল তার সামনে এসে হাজির। তাদের মধ্যে সেই মনোমুগ্ধকর শিশু কৃষ্ণও ছিল যার জন্য তার এখানে আসা। সেই সব গহনা। মুকুট এবং সোনার লাঠি সবই আছে।চোর এগিয়ে গিয়ে ভগবানকে বললেন তোমার সমস্ত অলংকার খুলে আমাকে দাও।শ্রী কৃষ্ণ ভীত না হয়ে মৃদু হেসে অসম্মতি জানালেন।চোর এবার বললো আমি তোমার জন্য মাখন এবং চিনি এনেছি। এই কথা শুনে ভগবান খুশি হলেন এবং সব অলংকার এবং সোনার লাঠি তার হাতে দিলেন।
সেই মুহূর্তে চোরের বোধদয় হলো।সে বুঝলো এসব তুচ্ছ। স্বয়ং ভগবানের দর্শন পেয়েছে সে। সব ত্যাগ করে নিজের দেহ মন সেই মুহূর্তে ভগবানের চরণে সমর্পন করে উদ্ধার লাভ করলো কুখ্যাত গোবর্ধন চোর। ভগবান ও তাকে কৃপা করলেন কারণ এক জন চোর হয়েও সে ভগবানে আস্থা রেখেছে। সব ভুলে তার জন্য ব্যাকুল হয়ে ছুটে বেরিয়েছে।
পরবর্তী পর্বে আরো এক কৃষ্ণ লীলা নিয়ে আপনাদের জন্য ফিরে আসবো কৃষ্ণ কথায়।
পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।