কালী কথা – কালী ঘাটের কালী

20

কালী কথা – কালী ঘাটের কালী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আসন্ন ফল হারিণী অমাবস্যা উপলক্ষে আবার শুরু করছি কালী কথা। বাংলার বিভিন্ন কালী মন্দিরের ইতিহাস এবং অলৌকিক ঘটনা নিয়ে আলোচনা করবো ধারাবাহিক ভাবে।

আজকের পর্ব মহা তীর্থ কালীঘাট নিয়ে।

 

কলকাতার ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করা ব্যক্তি দের একটি বড়ো অংশ মনে করেন এই কলকাতা নাম টির উৎপত্তি হয়েছে কালী কালী ঘাটের কালী থেকে। কালী খেত্র থেকে কলিকাতার উৎপত্তি |অর্থাৎ কলকতার নামের পেছনেও আছে এই বিশেষ কালী মন্দিরের অবদান।

 

পীঠ মালা তন্ত্র মতে সতীর ডান পায়ের চারটি আঙ্গুল পতিত হয়েছিলো এই পবিত্র স্থানে|যদিও অন্য একটি মত অনুসারে সতীর একটি মাত্র আঙ্গুল পতিত হয়েছিলো কালীঘাট এর পবিত্র স্থানে|দেবীর ভৈরব রূপে এখানে বিরাজমান নকুলেশ্বর|দেবী এখানে দক্ষিনা কালী রূপে বিরাজ করছেন।

 

জনশ্রুতি আছে বহু প্রাচীন কালে যখন এই

অঞ্চল ছিলো ঘন অরণ্যে ঢাকা তখন এই গঙ্গা তীরবর্তী দুর্গম অঞ্চলে কষ্টি পাথরের দেবী মূর্তি গড়ে তাতে প্রান প্রতিষ্ঠা করেন ব্রহ্মনন্দ গিরি ও আত্মারাম ব্রহ্মচারি নামে দুই সন্ন্যাসী|বর্তমানে আমরা যে কালীঘাট মন্দির টি দেখতে পাই তা নির্মাণ করেন বিখ্যাত সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের শিবদাস চৌধুরী 1809 সালে ও পরবর্তীতে মন্দির টি সংস্কার করেন এই পরিবারের অন্য আরেক জমিদার সন্তোষ চৌধুরী|

 

কালী ঘাট মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত দেবী মূর্তি কষ্ঠি পাথরে নির্মিত|দেবীর জিভ, দাঁত মুকুট, এমনকি মুন্ড মালাটিও সবই স্বর্ণ দ্বারা নির্মিত |মন্দিরের মধ্যে একটি বিশেষ কক্ষে একটি সুরক্ষিত সিন্দুকে দেবীর প্রস্তরীভূত অঙ্গ টিও স্বজত্নে রক্ষিত আছে যা কখনো জন সমক্ষে আনা হয় না|

 

বর্তমান মন্দির টি তৈরী হয়েছে এক বিঘের কিছু বেশি পরিমান জমিতে এবং আনুমানিক খরচ হয়েছিলো তিন লাখ টাকা |মন্দির টির উচ্চতা নব্বই ফুট|পাশ দিয়ে বয়ে গেছে আদি গঙ্গা ও অদূরে কেওড়া তলা মহা শ্মশান|চার পাশে ছড়িয়ে রয়েছে আরো অনেক গুলি রাধা কৃষ্ণ ও শিবের মন্দির|সব মিলিয়ে সর্বদা এক ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক পরিবেশ বিরাজ করছে এই বিশেষ শক্তি পীঠ কে কেন্দ্র করে যা ঠিক ভাষায় প্রকাশ করা যায়না অনুভব করতে হয়, শ্রদ্ধা ও ভক্তি দিয়ে|

 

এক কালে কালী ঘাটের গঙ্গা ছিলো প্রশস্ত এবং ব্যাস্ত তম গঙ্গার ঘাট ছিলো এটি। দেশ বিদেশ থেকে বহু তীর্থ যাত্রী জল পথে আসতেন দেবীক দর্শন করতে। ডাকাত এবং হিংস্র জীব জন্তুর

ভয় উপেক্ষা করে তারা পুজো দিতেন মায়ের মন্দিরে। তন্ত্র সাধকরা আসতেন তন্ত্র সাধনা করতে। তবে সেই সময় আর নেই। গঙ্গায় জলস্তর কমেছে। পরিবেশে লেগেছে আধুনিকতার ছোয়া। শুধু অটুট রটে ভক্তি এবং শ্রদ্ধা।

 

এমনিতে প্রায় প্রতিদিনি ভক্ত দের ভিড় উপচে

পড়ে কালীঘাটে তবে কিছু বিশেষ বিশেষ তিথিতে বিশেষ পূজাঅর্চনা অনুষ্ঠিত হয় |প্রতি বছর পয়লা বৈশাখ, দুর্গাপূজা ও দীপান্বিতা কালীপূজার দিন মন্দিরে প্রচুর ভক্ত ও পু্ণ্যার্থীর সমাগম ঘটে|

 

আজ কালী ঘাট নিয়ে আলোচনা এখানেই

থামাচ্ছি ফিরে আসবো আগামী দিনে পরবর্তীকালী কথা পর্ব নিয়ে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।