কালী সাধনা – ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
বাংলার আধ্যাত্মিক জগতে সব থেকে বেশি আলোচিত হন শক্তির উপাসকরা। আরো সহজ করে বললে বলা যায় বহু অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন মাতৃ সাধক বা কালী সাধকরা এই বাংলার পুন্য ভূমিতে আবীরভূত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই আবার মাকালীর সাক্ষাৎ দর্শন পেয়ে ধন্য হয়েছেন বলে মনে করা হয়। তাদের জীবন তাদের সাধনা এবং তাদের উপলব্ধি নিয়ে আগামী কয়েকটি দিন লিখবো । আজ শুরু করবো
ঠাকুর রামকৃষ্ণ দেবের কালী সাধনা দিয়ে।
রানী রাসমণি দক্ষিনেশ্বর মন্দির প্রতিষ্ঠা করার পর দাদা রামকুমারের হাত ধরে গদাধর দক্ষিনেশ্বরে এসে ছিলেন পুরোহিত হিসেবে পুজোর কাজে সাহায্য করতে। প্রথম যেদিন মন্দির বিগ্রহের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলেন, সেদিন কিন্তু তিনি সাধক ছিলেন না। শুরুর দিকে তিনি নির্জনে ধ্যান জপ করতেন, তন্ময় হয়ে গান গাইতেন, শিবপূজা করতেন এবং মাঝেমধ্যে ভাবসমাধিতেও ডুবে যেতেন। ধীরে ধীরে মা ভবতারিণীর সান্নিধ্যে এসে তার মধ্যে মা কালীর প্রতি অমোঘ টান জন্মায় এবং বহু অভিজ্ঞতা এবং সাধনার মধ্যে দিয়ে গিয়ে তিনি হয়ে উঠলেন মাতৃ সাধক রামকৃষ্ণ। নিজের অন্তরে উপলব্ধি করলেন কালীকে। মৃন্ময়ী মাতৃ প্রতিমার মধ্যে খুঁজে পেলেন সাক্ষাৎ জগৎ জননীকে।
একাধিক বার তিনি মা কালীকে আকুল ভাবে বলতেন ‘মা তুই রামপ্রসাদকে দেখা দিয়েছিস, আমায় কেন তবে দেখা দিবি না? আমি ধন, জন, সুখভোগ কিছুই চাই না, আমায় দেখা দে’অর্থাৎ মা কালী কে সাক্ষাৎ দর্শন করার এক ব্যাকুলতা তার মধ্যে সৃষ্টি হয়ে ছিলো। তার পুজো পক্রিয়া ছিলো ব্যতিক্রমী।পুজোর জন্য সকালে ফুল তুলে মালা গেঁথে দেবীকে সাজাতেই অনেকটা সময় চলে যেত। পূজায় বসে যথাবিধি নিজের মাথায় একটা ফুল দিয়েই ধ্যানস্থ হয়ে মাঝে মাঝে বসে থাকতেন আবার অন্ননিবেদন করে মা গ্রহণ করছেন ভেবে অনেকক্ষণ কাটিয়ে দিতেন । দেবীকে প্রসন্না করতে কখনও পূজার মাঝখানে গান ও গেয়ে উঠতেন।কাঁদতে কাঁদতে চোখের জলে বুক ভেসে যেত মাঝে মাঝে।তার এই মতী গতি দেখে অনেকেই তাকে পাগল ভাবতেন। অনেকে সমালোচনা করতেন আবার বিজ্ঞ জনেরা বুঝতেন এ মহান সাধকের লক্ষণ।
তার এই ভাব তন্ময় অবস্থা দিনে দিনে চরম পর্যায় যায়।কখনো পূজাসন ছেড়ে মা-র কাছে গিয়ে তাঁর চিবুক ধরে আদর করছেন। নানা রকম পরিহাস করছেন। হাত ধরে নাচছেন।পূজা না করে ভোগ নিবেদন করে দিচ্ছেন কিংবা নিবেদিত ভোগ নিজহাতে দেবীকে খাওয়াতে যাচ্ছেন আবার কখনো নৈবেদ্যর খানিকটা নিজেই খেয়ে দেবীকে খাওয়াতে চেষ্টা করছেন। বৈষ্ণব দর্শনে এই অবস্থা কে বলে সখা ভাব। অর্থাৎ ভক্ত এবং ভগবানের মধ্যে তৈরী হয় এক প্রকার বন্ধুত্ব মুছে যায় সব রকম ভেদাভেদ।
পরবর্তীতে ঠাকুর তন্ত্র সাধনা করেছেন। ইসলাম এবং খিস্টান মতে সাধনা করেছেন। আবার তোতা পুরী মহারাজের সান্নিধ্যে এসে দীক্ষা ও নিয়েছেন। সব শেষে তিনি আবিষ্কার করেছেন যত মত ততো পথ। সব পথ গিয়ে সেই পরম শক্তিতে মিশেছে সেই শক্তি তার কাছে মা কালী স্বয়ং যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে মাতৃ রূপে। স্বয়ং মা সারদার মধ্যেও তিনি মা কালীকে দেখছেন তার পুজোও করছেন তিনি।
এমন বহু মাতৃ সাধক আছেন যাদের জীবন জুড়ে আছে অসংখ্য অলৌকিক ঘটনা এবং আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা। আগামী পর্বে আবার এক মাতৃ সাধক এবং সাধনা নিয়ে আলোচনা করবো বিশেষ
এই পর্বে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।